দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান বলেছেন, পশ্চিমা সাংবাদিকরা কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে অপপ্রচার চালিয়েছে। মিথ্যা গুজব ছড়িয়েছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আড়ালে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জামায়াত এবং তাদের দোসররা আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে পরিচালনা করার জন্য পরিকল্পিতভাবে সারা দেশে ধ্বংসাত্মক হামলা চালিয়েছে। শিক্ষার্থীরা কোনো ধ্বংসযজ্ঞ চালায়নি।
বুধবার (২৪ জুলাই) সকালে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির জাতীয় সদরদপ্তরে জরুরি এক সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী জানান, দেশের ক্রান্তিকালে খেটে খাওয়া মানুষদের ত্রাণ সহায়তা প্রদানে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরে মেট্রোরেল, পদ্মা সেতুর মতো স্থাপনাগুলো। পদ্মা সেতু নির্মাণের মূল ভবন সেতু ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ অধিদপ্তর, আইসিটি, ১০০ কেভিএ বিদ্যুৎ ট্রান্সফরমার ইত্যাদিতে দুর্বৃত্তরা আক্রমণ চালিয়েছে। সরকারি স্থাপনা, গাড়ি গানপাউডার দিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করেছে। এভাবে দেশ-বিদেশে বাংলাদেশের সুনাম নষ্ট করার চেষ্টা করেছে। এ ক্ষতি পূরণে আমাদের অনেক সময় লাগবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, চলমান এই পরিস্থিতির জন্য বাংলাদেশের খেটে খাওয়া অসহায় মানুষ কাজ হারিয়ে বেকার হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সোমবার থেকে চিটাগাং সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে ত্রাণ কাযক্রম শুরু করেছি। বুধবার বিকেল ৪টা থেকে কল্যাণপুর বালিকা বিদ্যালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মিরপুর এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, অনতিবিলম্বে প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে দেশকে নিয়ন্ত্রণে এনেছেন। স্বাভাবিক অবস্থায় আমরা চলে এসেছি। কিন্তু এ ক্ষতি পূরণে আমাদের অনেক সময় লাগবে।
তিনি বলেন, জামায়াত, বিএনপি, স্বাধীনতাবিরোধী চক্র যত চক্রান্তই করুক না কেন, আমরা যারা স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ রয়েছি তারা যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে দেশকে সঠিক পথে নিয়ে যাব। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ কায়েমে আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতির মধ্যদিয়ে ঝুঁকি কাঁধে নিয়ে মোকাবিলা করব। দেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত করে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ব।
প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম ইউ কবীর চৌধুরী বলেন, এ ধ্বংসযজ্ঞ দেখে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আগে থেকেই যড়যন্ত্রকারীরা প্রস্তুত ছিল। পরিকল্পিতভাবে গানপাউডার দিয়ে পুড়িয়ে তারা ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকার স্থাপনার ক্ষতি হয়েছে। বিদেশি মিডিয়ার কাছে আমাদের মাথা নত করার জন্য বলেছে, এটা সরকার করেছে, লাঠিয়াল বাহিনী করেছে। আমরা আশা করব, সরকার গোয়েন্দার মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেবে।
তিনি বলেন, যেখানেই মানবতা সংকটাপন্ন সেখানেই রেড ক্রিসেন্ট মানবতার কল্যাণে এগিয়ে যায়। দেশের এই সংকটাপন্ন সময়ে আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা আহতদের কাঁধে করে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। দৃষ্কৃতকারীরা আমাদের স্বেচ্ছাসেবকদের আঘাত করেছে। এ ছাড়াও সহিংসতা চলাকালে রেড ক্রস, রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলনের ৭টি নীতিমালা মেনে স্বেচ্ছাসেবকরা প্রাথমিক চিকিৎসাসহ সোসাইটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে যাবে বলেও জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ছিন্নমূল মানুষের পাশে দাঁড়াতে শুকনো খাবার বিতরণ কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে রেড ক্রিসেন্ট। ভাসমান মানুষ, রিকশাচালক, শ্রমিক, দিনমজুর যারা আন্দোলন চলাকালীন সময়ে কাজ করতে পারেননি। ঢাকা শহরে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে প্রায় ২ হাজার পরিবারকে ৭ দিনের খাবার প্যাকেজ বিতরণ করা হবে। খাবার প্যাকেজে ৭ কেজি চাল, ১ কেজি করে ডাল, চিনি, সুজি, লবণ এবং ১ লিটার সয়াবিন তেল থাকবে।
আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান বলেন, তোমরা আমাদের সন্তান, নাতি-পুতি। তোমরা মেধা পেয়েছ। মেধাকে অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য তোমরা ক্লাসে ফিরে যাও। লেখাপড়া করো। কারো প্ররোচনায় কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ো না। আমাদের পুলিশ সদস্যদের অনেকে আহত-নিহত হয়েছেন। র্যাব বাহিনীকে নির্যাতন করা হয়েছে। বিজিবির গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলার পরিবেশ ফিরিয়ে এনেছে। প্রধানমন্ত্রীর নীতি, নির্দেশনার মাধ্যমে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ছাত্ররা তোমরা যা চেয়েছিলে তা পেয়েছ। তোমাদের মধ্যে কোনো অপশক্তিকে ঢুকতে দিও না। আমরা এখন সবাই একত্রিত হয়ে কাজ করব। আশা করব সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক।
জরুরি এ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সোসাইটির মহাসচিব কাজী শফিকুল আযম, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির পরিচালক আহমেদুল হক, আইএফআরসির ভারপ্রাপ্ত হেড অব ডেলিগেশন অভিষেক রিমাল, সোসাইটির ডিজাস্টার রেসপন্স বিভাগের পরিচালক মো. মিজানুর রহমান, ডিসিআরএম বিভাগের পরিচালক ইমাম জাফর সিকদার, স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এস এম হুমায়ুন কবির, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ দৌলতুজ্জামান ও উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ মোর্শেদ।
মন্তব্য করুন