বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আবারো বিএনপিসহ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হিংস্র আচরণ শুরু করেছে।
গত ২৯ জুন ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে ও ১ জুলাই সারাদেশে সব মহানগরে এবং গতকাল সারাদেশের সব জেলা শহরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আয়োজিত শান্তিপূর্ণ সমাবেশে সরকারদলীয় সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হিংস্র আক্রমণ চালিয়ে তাদের গুরুতর জখম করার ন্যক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এক বিবৃতিতে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
বুধবার (৩ জুলাই) এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নাটোর জেলা বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশস্থলে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র হামলা চালিয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, নাটোর জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম বাচ্চুসহ অনেক নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করে।
পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সমাবেশে যাওয়ার পথে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএনপি নেতাকর্মীদের গাড়িবহরে অতর্কিত হামলা চালিয়ে কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর এবং কলাপাড়া উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক—মামুন সিকদারসহ অনেক নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করে। সকাল থেকে বাগেরহাট জেলা বিএনপি কার্যালয়ের ভিতর বিএনপির গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীমসহ নেতৃবৃন্দকে পুলিশ বাহিনী অবরুদ্ধ করে রাখে।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানা বিএনপি নেতা ও দুবতারা ইউনিয়ন বিএনপি নেতার ওপর আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলা ও তাদেরকে গুরুতর আহত করা হয়েছে। ৩০ জুন ২০২৪ তারিখ কামরাঙ্গীরচর থানার একটি মিথ্যা মামলায় থানা বিএনপির ১ম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজি মো. জহিরুল হকসহ মোট ৬ জন নেতাকর্মী এবং কোতোয়ালি থানার একটি মিথ্যা মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শ্রমিক দলের আহ্বায়ক সুমন ভূঁইয়ার জামিন বাতিল ও তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এছাড়াও গত মঙ্গলবার রাত ২:৩০ মিনিটে রাজধানীর শিশু হাসপাতাল থেকে ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মারজুক আহমেদ আল আমিনকে সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে যায়। এখনো পর্যন্ত তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। গত ৩০ জুন দুপুরে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা কৃষকদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. কামরুজ্জামানকে রতনপুরস্থ নিজ বাড়ি থেকে গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত তার খোঁজ পাওয়া যায়নি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, গত সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সহসভাপতি আতিকুর রহমান রাসেলকে রাজধানীর আজিমপুর অগ্রণী স্কুলের সামনে থেকে গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত তার সন্ধান মেলেনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ৭ জানুয়ারি ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে জোর করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারী আওয়ামী অবৈধ শাসকগোষ্ঠী বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর ব্যাপক সহিংস আক্রমণ শুরু করেছে। নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদেরকে গুরুতর জখমসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতনের উদ্দেশ্যই হলো—আওয়ামী অবৈধ শাসন নিয়ে কেউ যেন প্রতিবাদ করতে সাহস না পায়। বিএনপিসহ সমমনা দল এবং গণতন্ত্রকামী মানুষের চলমান আন্দোলন—কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করতেই অবৈধ আওয়ামী দখলদার সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও তাদের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে পৈশাচিক উন্মত্ততায় মেতে উঠেছে। এই ধরনের বর্বরতার বিরুদ্ধে ধিক্কার জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। নিষ্ঠুরতা, পৈশাচিকতা, বর্বরতা, অমানবিকতার দৃষ্টান্ত হচ্ছে আওয়ামী লীগ।
বিএনপি মহাসচিব বিবৃতিতে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় গুরুতর আহত নেতাকর্মীদের আশু সুস্থতা কামনা করেন। তিনি উল্লিখিত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তি এবং নিখোঁজ নেতাদের অবিলম্বে তাদের পরিবারের নিকট ফিরিয়ে দেওয়ার জোর আহ্বান জানান।
মন্তব্য করুন