ড. মইনুল ইসলাম
প্রকাশ : ২৮ জুন ২০২৪, ০৬:০৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ঋণখেলাপি, অর্থ পাচারকারী ও লুটপাট সহায়ক বাজেট

ড. মইনুল ইসলাম
ড. মইনুল ইসলাম। ছবি : সৌজন্য
ড. মইনুল ইসলাম। ছবি : সৌজন্য

গত ৬ জুন ২০২৪ তারিখে ৭,৯৭,০০০ কোটি টাকার বাজেট-প্রস্তাব সংসদে পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এই বাজেটকে ‘সংকোচনমূলক বাজেট’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, যার প্রধান উদ্দেশ্য ঘোষিত হয়েছে অর্থনীতিতে বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির হারকে ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। আমাদের প্রতিবেশী দেশ শ্রীলংকা ও ভারত তাদের মূল্যস্ফীতির হারকে ইতোমধ্যেই পাঁচ শতাংশের নিচে নামিয়ে ফেলেছে, অথচ আমরা পারিনি প্রধানত এ দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে অদক্ষ ও অর্থনীতি সম্পর্কে কম-জ্ঞানসম্পন্ন সাবেক অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামালের নিষ্ক্রিয়তা, কায়েমী স্বার্থ ও অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে। এখন অভিজ্ঞ অর্থমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, যিনি ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে যোগদানের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন দু’বছর।

কূটনীতিকের চাকরি পরিত্যাগ করে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করায় তিনি এ দেশের একজন ‘সূর্যসন্তান’ হিসেবে সম্মানের পাত্র। গত সংসদীয় মেয়াদে তিনি অর্থ-মন্ত্রণালয় সম্পর্কীত সংসদীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। অতএব, চলমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা সম্পর্কে তিনি ওয়াকিবহাল থাকার কথা। তাঁর বাজেট-বক্তৃতাকে আমি প্রশংসা করব অর্থনীতির চলমান সমস্যাগুলোর বাস্তবানুগ স্বীকারোক্তি হিসেবে।

সাবেক অর্থমন্ত্রী জনগণের কাছ থেকে বাস্তবতাকে আড়াল করার যে প্রবণতা তাঁর ‘গিমিকে-ভরা বাজেট-উপস্থাপনায়’ দেখিয়ে যেতেন এবারের বাজেট-বক্তৃতা সেখান থেকে অনেকখানি সরে এসেছে। তবে ওয়াকিবহাল মহল বাজেট-প্রস্তাবকে যেভাবে ‘গতানুগতিক’ বলে সমালোচনা করছেন তাকে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। এর মানে, ওয়াকিবহাল মহল বাজেটে আরও অনেক বেশি সাহসী নতুন নীতিমালা আশা করেছিল মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পুঁজিপাচার, খেলাপিঋণ, হুন্ডি-দমন ও দুর্নীতি সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে। কারণ, অর্থনীতি বর্তমানে যেসব সমস্যায় জর্জরিত তার বেশিরভাগই সাবেক অর্থমন্ত্রীর ভুলের খেসারত বলাই সমীচীন। (অবশ্য, আমাদের দেশে প্রধানমন্ত্রীই সব নীতি গ্রহণ করে থাকেন বলে মনে করা হয়)! এগুলোকে মোকাবিলা করার জন্য আরও সাহসী ও উদ্ভাবনমূলক পদক্ষেপের প্রয়োজন।

প্রস্তাবিত বাজেটকে সংকোচনমূলক বলা হলে তা যথাযথ বলা হবে, কারণ গত অর্থ-বছরের ৭,৬২,০০০ কোটি টাকার বাজেটের তুলনায় মূল্যস্ফীতির বিবেচনায় আগামী অর্থ-বছরের বাজেটটি ‘ক্ষুদ্রতর আকারের’। সামষ্টিক অর্থনীতির তত্ত্বে এটাকে contractionary fiscal policy অভিহিত করা হয়, যেখানে সরকানি ব্যয়কে কমিয়ে ফেলা হয় মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য সামষ্টিক চাহিদাকে হ্রাস করার জন্য। এদিক থেকে বিবেচনা করলে সরকারি ব্যয়-সংকোচন অত্যন্ত সময়োচিত প্রস্তাব। এখানে সরাসরি সংঘর্ষ বাধবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারকেও বর্তমান ৫.৮ শতাংশ থেকে আগামী অর্থবছরে ৬.৭৫ উন্নীত করার উদ্দেশ্যের সাথে। (বিশ্ব ব্যাংক প্রক্ষেপণ করেছে আগামী অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার হবে ৫.৭ শতাংশ)। আমার বিশ্বাস, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারকে ৬ শতাংশের ওপরে নিয়ে যাওয়া বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হবে। অবশ্য, এই উদ্দেশ্য একেবারে অসম্ভব না-ও হতে পারে কিছু বিষয় বিবেচনা করলে।

সরকারি ব্যয় এখন দেশের মোট জিডিপি’র ১৪.৫ শতাংশের মত, যার মধ্যে সরকারি রাজস্ব-জিডিপি’র অনুপাত হলো মাত্র সাড়ে আট শতাংশের মত। বাকি সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ ছিল বাজেট ঘাটতি। এই বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য আমাদেরকে বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সূত্র ও বৈদেশিক সূত্র থেকে ঋণ করতে হয়েছে। গত অর্থ-বছরে বৈদেশিক সূত্রসমূহ থেকে আমরা যথেষ্ট পরিমাণ ঋণ পাইনি। তদোপরি, সাবেক অর্থমন্ত্রীর অযোগ্যতার কারণে রাজস্ব-জিডিপি’র অনুপাতও ছিল বেশ কয়েক বছর ধরে ক্রমহ্রাসমান। এখন দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের রাজস্ব-জিডিপি’র অনুপাত সর্বনিম্ন। এটা চলতে দেওয়া যায় না। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে রাজস্ব-জিডিপি’র অনুপাতকে কমপক্ষে ১২ শতাংশে উন্নীত করাটা এখন আমাদের জন্য ‘ফরজ’ হয়ে গেছে বলা উচিত।

আগামী অর্থবছরে রাজস্ব-জিডিপি’র অনুপাতকে ৯.৭ শতাংশে বাড়ানোর এবং বাজেট ঘাটতি-জিডিপি’র অনুপাতকে ৪.৬ শতাংশে নামানোর লক্ষ্য ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী, আমি এটাকে সাধুবাদ জানাই। এটা অত্যন্ত কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে নিঃসন্দেহে, কিন্তু এটা সঠিক পদক্ষেপ। এ-ব্যাপারে আমাদের সফল হতেই হবে। এদেশে যাদের কর দেওয়ার ক্ষমতা আছে তারা দুর্নীতির সহায়তায় কর-ফাঁকি দিয়ে চলেছে, এটা চলতে দেওয়া যায় না। সাবেক অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ী ছিলেন, তাই তিনি প্রধানত ব্যবসায়ীদেরকে সুবিধা দেওয়ার জন্য এই ব্যাপারে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণে অনীহ ছিলেন।

এবারের বাজেটে অনেকগুলো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। মোবাইল টেলিফোনে কথা বলার ওপর কর বাড়ানো হয়েছে, মোবাইল সিমের খরচ বাড়ানো হয়েছে, ফ্রিজ, এসি ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক গ্যাজেটের ওপর আরোপিত কর বাড়ানো হয়েছে, সকল প্রকার সফ্ট ড্রিংকসের ওপর কর বাড়ানো হয়েছে, আইসক্রিমের ওপর আরোপিত কর বাড়ানো হয়েছে, সিগারেটের ওপর আরোপিত কর বাড়ানো হয়েছে, গাড়ি আমদানির ওপর শুল্ক-কর বাড়ানো হয়েছে, ২৫০ সিসি’র বেশি ক্যাপাসিটির মোটরসাইকেলের শুল্ক বাড়ানো হয়েছে, কাজুবাদামের ওপর আরোপিত কর বাড়ানো হয়েছে, সংসদ সদস্যদের আমদানিকৃত গাড়ির ওপর শুল্ক আরাপের প্রস্তাব করা হয়েছে, গিফটের ওপর কর আরোপিত হয়েছে, বিনোদন পার্কে ভ্রমণের ওপর কর আরোপিত হয়েছে। এর বিপরীতে অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর আরোপিত কর ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশে নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই পদক্ষেপগুলো প্রশংসনীয়। তবে, করপোরেশন ইনকাম ট্যাক্সে প্রদত্ত সুবিধাগুলো এবার না দিলেই ভালো হতো।

ব্যক্তিগত আয়করের সর্বনিম্ন সীমা অপরিবর্তিত রাখা হলেও সর্বোচ্চ আয়করের হার ৩০ শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আমি মনে করি, আয়করের জালকে প্রসারিত করার উদ্দেশ্যে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ভাল হতো। আর একটা ব্যাপার আমার কাছে কখনোই গ্রহণযোগ্য মনে হয় না, সেটা হলো কালো টাকাকে সাদা করার ব্যাপারটা। যেখানে সর্বোচ্চ আয়কর হার প্রস্তাব করা হয়েছে ৩০ শতাংশ, সেখানে মাত্র ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকাকে বিনা-প্রশ্নে সাদা করার ব্যবস্থার প্রস্তাব করা কতখানি ‘নৈতিক’ হয়েছে সে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক।

বাজেটের দুটো বাজে দিক্ হলো শিক্ষা খাতের বাজেটকে এবার জিডিপি’র ১.৬৯ শতাংশে নামিয়ে ফেলার প্রস্তাব করা হয়েছে এবং জিডিপি’র শতাংশ হিসেবে স্বাস্থ্যখাতের ব্যয়-বরাদ্দকেও গত বছরের চাইতে কমিয়ে ফেলা হয়েছে। সরকার যখন ২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হয়েছিল তখন শিক্ষাখাতে সরকারি ব্যয় ছিল ২.০৪ শতাংশ, যা ধীরে ধীরে বেড়ে ২.৫ শতাংশে পৌঁছেছিল ২০১৬ সালে। তারপর থেকে ক্রমেই এই ব্যয়-বরাদ্দ জিডিপি’র শতাংশ হিসেবে কমছে। ইউনেস্কোর কাছে বাংলাদেশ অঙ্গীকার করেছে শিক্ষা খাতে ব্যয়-বরাদ্দকে ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে জিডিপি’র ৬ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হবে। ভারতে শিক্ষা খাতে সরকারি ব্যয় ইতোমধ্যেই ৪ শতাংশ অতিক্রম করেছে। টাকার অংকে এই দুই খাতের বাজেট-বরাদ্দ গত বছরের চাইতে বেশি দেখানো হলেও মূল্যস্ফীতির বিবেচনায় তা প্রকৃতপক্ষে কম। যোগাযোগ ও পরিবহন খাত, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত এবং পল্লী উন্নয়ন খাতে সরকারি ব্যয়-বরাদ্দ গত বছরের তুলনায় কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে টাকার অংকে।

বাজেটে ব্যাংকের খেলাপিঋণ আদায়ের জন্য কোনো কঠোর পদক্ষেপ খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্বীকার করতে হবে যে দেশের খেলাপি ব্যাংকঋণের পরিমাণ নিশ্চিতভাবে পাঁচ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে, এবং এসব খেলাপিঋণের আশি শতাংশেরও বেশি ‘ইচ্ছাকৃত রাঘববোয়াল ঋণখেলাপিদের’ কাছে বছরের পর বছর ধরে আটকে রয়েছে। এগুলো ব্যাংকে ফেরত আসবে না। এসব রাঘববোয়াল ঋণখেলাপিদেরকে ট্রাইব্যুনালের বিচারের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে না পারলে এই সমস্যার কোন সমাধান পাওয়া যাবে না। এই বিপুল খেলাপিঋণের বেশিরভাগই দেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়ে গেছে, এগুলো কখনোই বর্তমান বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যাংকে ফেরত আনা যাবে না। আইনমন্ত্রী আরও কয়েকটি অর্থঋণ আদালত গঠনের যে প্রস্তাবের কথা বলেছেন সেটা একেবারেই বেফজুল প্রস্তাব।

বর্তমান অর্থঋণ আদালত, হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের মামলাগুলোতে তিন লক্ষাধিক কোটি টাকার বেশি খেলাপি ঋণ বছরের পর বছর ধরে ঝুলে রয়েছে, যেগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফাইড লোনে’র হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায় না। ঋণখেলাপিরা তাদের আর্থিক ক্ষমতা ব্যবহার করে এই মামলাগুলোকে বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রাখতে সক্ষম হচ্ছে বলেই এই সমস্যার কোন সমাধান মিলছে না। নতুন আরো কয়েকটি অর্থঋণ আদালত প্রতিষ্ঠা করলে আরও বহুজনের ঘুষ-দুর্নীতির মওকা বাড়বে নিঃসন্দেহে, কিন্তু সমস্যার সমাধানের পথে কোন অগ্রগতি হবে না। অতএব, এই বেফজুল প্রস্তাব থেকে সরে আসাই উত্তম! আমি বুঝি না ট্রাইব্যুনালে বিচারের প্রস্তাবে কোন সরকার রাজি হচ্ছে না কেন? এই প্রস্তাবটি ১৯৯৮ সালে করেছিলেন তদানীন্তন মহামান্য রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন, যিনি এ দেশের প্রধান বিচারপতিও ছিলেন। দেশের বিচার ব্যবস্থার অব্যবস্থা ও দুর্নীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন বলেই তিনি সকল ব্যাংকের শীর্ষ দশ ঋণখেলাপির বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনালের প্রস্তাব করেছিলেন। পাঠকদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে অন্য কোন আদালতে আপিল করা যায় না। ফলে, সাথে সাথে ঐ রায় কার্যকর করা যায়। বছরের পর বছর বিভিন্ন আদালতে ঝুলে থাকা খেলাপিঋণের মামলাগুলো ট্রাইব্যুনালে গেলে রাঘববোয়াল ঋণখেলাপিদের জেলের ভাত খাওয়ানো এবং তাদের সম্পত্তি ক্রোকের পথে আর কোনো বাধা থাকত না। সেক্ষেত্রে ঋণখেলাপিরা হয়তো দেশ থেকে ভেগেই যাবে, কিন্তু ব্যাংকিং খাত লুটপাটের কবল থেকে রক্ষা পেয়ে যাবে।

বর্তমান সরকার যে খেলাপিঋণ সমস্যার কোনো প্রকৃত সমাধান চায় না তার বড় প্রমাণ হলো দেশের সবচেয়ে বড় ঋণখেলাপি এখন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা! একইসাথে, হুন্ডি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোন দমনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণেরও প্রস্তাব করা হয়নি। এটা সকলেরই বোঝা প্রয়োজন যে হুন্ডি ব্যবসাকে দমন না করলে দেশ থেকে বিদেশে পুঁজি পাচার কোনমতেই কমানো যাবে না, যার মানে ফর্মাল চ্যানেলে প্রবাসীদেরকে রেমিট্যান্স প্রেরণে উৎসাহিত করা যাবে না। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের বিপজ্জনক পতনের ধারাকে থামানো যাবে না। এরূপ পদক্ষেপের মধ্যে হুন্ডিওয়ালাদের দেশীয় এজেন্টদেরকে গ্রেফতার, এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো কিছুদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা এবং পাকা বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে ফর্মাল চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণের ব্যাংক-সার্টিফিকেট কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিলের বাধ্য-বাধকতা অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

আরেকটি ব্যাপারে বাজেট-বক্তৃতায় কিছু না পেয়ে হতাশ হয়েছি, সেটা হলো নবায়নযোগ্য সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রণোদনা প্রদানের ব্যবস্থা না করা। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী নবায়নযোগ্য সূত্রগুলো থেকে মোট বিদ্যুতের ৪০ শতাংশ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার কথা বলেছেন। কিন্তু, কত বছরের মধ্যে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে তা বলেননি। এক্ষেত্রে প্রয়োজন হবে সোলার প্যানেল ও ব্যাটারির ভর্তুকি-দাম কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সৌরবিদ্যুতের যন্ত্রপাতির উপর আরোপিত শুল্ক হ্রাস এবং যুগোপযোগী ‘নেট মিটারিং’ পদ্ধতি চালু করা। সম্প্রতি বেশ কয়েকদিন ধরে ভারতের সাধারণ নাগরিকদের বাড়ির ছাদে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপনের জন্য ‘প্রধানমন্ত্রীর সূর্যোদয় যোজনা’ বা ‘পিএম রুফটপ সোলার যোজনা’ চালুর বিস্তারিত বিবরণ সোশ্যাল মিডিয়ার ইউটিউবে প্রচারিত হয়ে চলেছে।

এই বিবরণীতে দেখা যাচ্ছে, ভারতীয় ৪৭,০০০ (সাতচল্লিশ হাজার) রুপি খরচে তিন কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার সোলার প্যানেল বাড়ির ছাদে স্থাপন করতে চাইলে উল্লিখিত যোজনার কাছে আবেদন করার নিয়মগুলো ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই ব্যাখ্যা মোতাবেক মোট সাতচল্লিশ হাজার রুপি খরচের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ১৮,০০০ (আঠার হাজার) রুপি ভর্তুকি প্রদান করা হবে, আর সোলার প্যানেল স্থাপনকারী ভোক্তাকে ব্যয় করতে হবে ২৯,০০০ (উনত্রিশ হাজার) রুপি। মোট এক কোটি পরিবারকে ‘পিএম রুফটপ সোলার যোজনায়’ অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে ভারত। ইউটিউবে যোজনার বিবরণ পাঠ করার পর আমার কাছে মনে হয়েছে এই মডেলটি বাংলাদেশে প্রয়োগযোগ্য।

আমার মতে, ভারতের ‘প্রধানমন্ত্রী সূর্যোদয় যোজনা’র মত একটি কর্মসূচি অবিলম্বে বাংলাদেশে চালু করা প্রয়োজন, যেখানে সরকার রুফটপ সোলার প্যানেল স্থাপনের মোট খরচের এক-তৃতীয়াংশ বা তার-ও বেশি ভর্তুকি প্রদান করবে। বাড়ির মালিকদের জন্য এই ভর্তুকি কর্মসূচি তাদেরকে বাড়ির ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপনে উৎসাহিত করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। সংসদে বাজেট আলোচনায় কোন মাননীয় সংসদ সদস্য বিষয়টি বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করলে বাধিত হবো।

ড. মইনুল ইসলাম: সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আট মাসে বজ্রপাতে মৃত্যু ২৯৭

অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারের সময় আটক ৬

ডিবি কার্যালয়ে আয়নাঘর থাকবে না

টাইগারদের বিপক্ষে কেমন হবে ভারতের একাদশ?

শরীয়তপুরে ১০২ মণ্ডপে হবে দুর্গাপূজা, চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি

ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে কুমারী পূজা হচ্ছে

বদরুদ্দোজা চৌধুরীর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত

ইয়েমেনের ১৫ নিশানায় মার্কিন হামলা

‘বিরল’ এক সফরে পাকিস্তান যাচ্ছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

গাজীপুরে বাসচাপায় যুবক নিহত

১০

দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে মাঠে থাকবে বিএনপি : আজাদ

১১

সাড়ে ৩ কোটি টাকার চাল নিয়ে লাপাত্তা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা

১২

সাতক্ষীরায় ৯ মাস বেতন পাচ্ছেন না ৪২০ শিক্ষক

১৩

সিরাজগঞ্জে হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার

১৪

গাজীপুরে শান্তিপূর্ণভাবে চলছে পোশাক কারখানার উৎপাদন

১৫

বৃষ্টি আর কত দিন থাকবে, জানাল আবহাওয়া অফিস

১৬

ইসরায়েলি হামলায় সিরিয়া-লেবানন সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

১৭

দুপুরের মধ্যে ঝড় হতে পারে যেসব অঞ্চলে

১৮

আরেক দেশ থেকে ইসরায়েলে হামলায় ২ সেনা নিহত, আহত ২৪

১৯

বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে জবির স্লোগান ‘বিপ্লবে বলীয়ান নির্ভীক জবিয়ান’

২০
X