হীরেন পণ্ডিত
প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৪, ০১:২৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

শেখ হাসিনার ভারত সফরের মাধ্যমে বন্ধুত্ব ও উন্নয়নের পথে নবযাত্রা শুরু

হীরেন পণ্ডিত। ছবি : সংগৃহীত
হীরেন পণ্ডিত। ছবি : সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শুধু একটি কূটনৈতিক সৌজন্য নয়, বরং পারস্পরিক স্বার্থকে এগিয়ে নেওয়ার, সম্পর্ক জোরদার করার এবং বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলোকে একসঙ্গে মোকাবিলা করার একটি কৌশলগত সুযোগ। বাংলাদেশ ভারত কূটনৈতিক সম্পর্ক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করবে। নেতাদের বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তাসহ বিস্তৃত বিষয়ে আলোচনা ও আলোচনার সুযোগ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে দুই দেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থার পথ খুলেছে, ভারত একটি দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি এবং একজন বিদেশি নেতার সফর বাণিজ্য চুক্তি, বিনিয়োগের সুযোগ এবং ব্যবসায়িক সহযোগিতার মাধ্যমে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে বাড়িয়ে তুলতে পারে।

সাংস্কৃতিক বিনিময় দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং উপলব্ধি বৃদ্ধি এই সাংস্কৃতিক কূটনীতি বিভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরিতে সাহায্য করেছে। কৌশলগত অংশীদারত্ব, ভূরাজনৈতিকভাবে ভারত কৌশলগত গুরুত্ব রাখে। প্রধানমন্ত্রীর একটি সফর কৌশলগত অংশীদারত্বের পুনর্নিশ্চিত বা প্রতিষ্ঠা করা বিশেষ করে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতার মতো ক্ষেত্রে।

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ১০ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। শনিবার ২২ জুন দুপুরে নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে ১০ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে । যে ১০ চুক্তি এগুলো হলো বাংলাদেশ-ভারত ডিজিটাল পার্টনারশিপ। ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ গ্রিন পার্টনারশিপ, সমুদ্র সহযোগিতা ও সুনীল অর্থনীতি, স্বাস্থ্য ও ওষুধসংক্রান্ত পুরোনো সমঝোতা নবায়ন, ভারতের ইন-স্পেস এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সমঝোতা, দুই দেশের রেল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সংযোগ সংক্রান্ত সমঝোতা, সমুদ্রবিষয়ক গবেষণায় দুই দেশের সমঝোতা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও প্রশমনে ভারতের ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি, বাংলাদেশ ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যমান সমঝোতা নবায়ন। মৎস্যসম্পদের উন্নয়নে বিদ্যমান সমঝোতা নবায়ন। কৌশলগত ও অপারেশনাল খাতে সামরিক শিক্ষা সহযোগিতায় ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজ, ওয়েলিংটন-ইন্ডিয়া এবং মিরপুর ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের মধ্যে সমঝোতা।

এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও সেখানে উপস্থিত বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এর আগে দিল্লির স্থানীয় সময় ৯টার দিকে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে যান শেখ হাসিনা। সেখানে তাকে জাঁকজমকপূর্ণ সংবর্ধনা ও গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। এরপর শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ দেশটির মন্ত্রী ও পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এ সময় নরেন্দ্র মোদিও সেখানে উপস্থিত বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

সকাল ১০টার দিকে শেখ হাসিনা দিল্লির রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান ও পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন। নয়াদিল্লির তাজ হোটেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে ভারতের শিল্পপতিদের সংগঠন কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি (সিআইআই)। এ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে ভারতের শিল্পপতিদের আহ্বান জানান। সন্ধ্যায় একই হোটেলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রাসহ দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ঘণ্টাব্যাপী চলে এ সৌজন্য বৈঠক। হাসিনা-মোদি শীর্ষ বৈঠকে যেসব বিষয় উপস্থাপিত হয়, সেসব নিয়েই বিস্তৃত পরিসরে আলোচনা করেন তারা। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ সফরের বহুমাত্রিক তাৎপর্য রয়েছে। বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের বিশেষ আগ্রহ স্পষ্ট হচ্ছে আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটেও।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সামরিক, নিরাপত্তাসহ নানা বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। সপ্তাহ দুয়েক পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন যাচ্ছেন। আর আগে ভারতের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এই সমঝোতা তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা দিচ্ছে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আলোচনার পর দুই দেশের মধ্যে ৭টি নতুন এবং পুরনো ৩টি নবায়নসহ মোট ১০টি সমঝোতা স্মারক সই হয়। তবে তিস্তা নদীর পানিবণ্টনের চুক্তি নিয়ে শুধু বলা হয়েছে, তিস্তা নিয়ে গবেষণার জন্য ভারত থেকে একটি কারিগরি দল বাংলাদেশ সফর করবে। তারা পানিবণ্টন না তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করবে তা বলা হয়নি। তবু সফর নিয়ে দুই প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত খুশি। তারা বলেছেন, বন্ধুত্ব ও উন্নয়নের পথে নবযাত্রা শুরু হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, বৈঠকে সামুদ্রিক নিরাপত্তা, মহাসাগরীয় অর্থনীতি, মহাকাশ ও টেলিযোগাযোগ এবং সামরিক খাতে সহযোগিতা সম্প্রসারণের জন্য সমঝোতা সই হয়েছে। এর মাধ্যমে নয়াদিল্লি নিজেকে একটি আঞ্চলিক ও চীনের পাল্টা শক্তি হিসাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে। দুই সপ্তাহ আগে নরেন্দ্র মোদি তৃতীয় মেয়াদে দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নয়াদিল্লি সফরকারী প্রথম বিদেশি নেতা হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় শনিবার চুক্তিগুলো স্বাক্ষরিত হয়।

সফরটি সময়োপযোগী। দুই দেশেই নতুন সরকার ক্ষমতায় ফিরে এসেছে। বৈঠকের পর নয়াদিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউসে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভারত আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী এবং বিশস্ত বন্ধু। দুই দেশের রাষ্ট্রনেতা এবং প্রতিনিধিদের এই বৈঠকে চূড়ান্ত হয়েছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ চুক্তির পথরেখা। তার মধ্যে অন্যতম, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় সমদ্রাঞ্চলে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা চুক্তি। সে প্রসঙ্গের উল্লেখ করে শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে মোদি বলেন, এই সমুদ্র সহযোগিতার মাধ্যমে নীল অর্থনীতির পথে একসঙ্গে চলবে দুই দেশ।

আঞ্চলিক সমুদ্রপথের নিরাপত্তায় এই দ্বিপক্ষীয় চুক্তি আগামী দিনে নয়াদিল্লি ও ঢাকার মধ্যে বন্ধন আরও নিবিড় করবে বলে মনে করা হচ্ছে। যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে দুই প্রধানমন্ত্রী জানান, ভারত ও বাংলাদেশ একটি সার্বিক অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তিতে আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে নরেন্দ্র মোদি বলেন, বাংলাদেশ আমাদের বৃহত্তম উন্নয়নসঙ্গী। তাদের স্বার্থকে ভারত সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়। অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সহযোগিতার পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি, মহাকাশ গবেষণা, সামরিক সহযোগিতা, রেল যোগাযোগ এবং পরমাণু গবেষণার ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে শনিবারের বৈঠকে। ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হয়েছে অংশীদারি নিয়েও। ভারতের সামুদ্রিক প্রতিবেশীদের আঞ্চলিক সহযোগিতা সম্প্রসারণ ও সুবিধার্থে তার ইন্দো-প্যাসিফিক মহাসাগর উদ্যোগে যোগদানের বাংলাদেশের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে মোদি বলেন, ঢাকার সঙ্গে চুক্তিগুলো তার দেশের প্রতিবেশী-প্রথম পদ্ধতি অনুসরণের অংশ।

প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা উৎপাদন ও সেনার আধুনিকীকরণে সাহায্য করবে ভারত। সন্ত্রাসবাদ ও কট্টরপন্থার মোকাবিলায় দুই দেশ সহযোগিতা করবে। গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। তিস্তার সংরক্ষণ নিয়ে শিগগিরই টেকনিক্যাল টিম বাংলাদেশ সফর করবে।

মোদি বলেন, বাংলাদেশ থেকে যারা চিকিৎসার জন্য ভারতে আসেন, তাদের জন্য দ্রুত ই-মেডিকেল ভিসা চালু করবে ভারত। বাংলাদেশের মানুষের সুবিধার জন্য রংপুরে অ্যাসিসটেন্ট হাইকমিশন অফিস খোলা হবে। এ ছাড়া মহাকাশের ক্ষেত্রে দুই দেশ সহযোগিতা করবে। মৈত্রী উপগ্রহ নিয়েও বৈঠকে কথা হয়েছে। ডিজিটাল ও বিদ্যুৎ ক্ষেত্র নিয়ে সমঝোতা হয়েছে। সিরাজগঞ্জে ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপোর কাজ ভারত শেষ করবে।

প্রসঙ্গত, আগামী ৯ জুলাই চীন সফরে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। তার আগে হাসিনাকে পাশে নিয়ে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ভারত মহাসাগর নিয়ে ভারতের ভিশনকে সমর্থন করেছে বাংলাদেশ। সেজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পাবে। আর ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে। ভারতও ২০২৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারত হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভারত হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী। ভারত বাংলাদেশকে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহায্য করেছে। মুক্তিযোদ্ধার পাশাপাশি ভারতের সেনাও শহীদ হয়েছে। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মোদি যোগ দিয়েছিলেন। তার জন্য তিনি কৃতজ্ঞ। শেখ হাসিনা বলেন, আমি ২০২২ সালে এসেছি। ২০২৩ সালে জি-২০ বৈঠকে ভারতের আমন্ত্রণে এসেছি। কয়েকদিন আগে মোদির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে এসেছি। মোদি তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন বলে তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। পানিবণ্টন, জ্বালানি, শক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমঝোতা হয়েছে। দুই দেশের বন্ধুত্ব বাড়তে থাকবে। মোদিকে বাংলাদেশ সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন হাসিনা।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, চীন সফরের আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশে মহাসাগরে নিরাপত্তাসংক্রান্ত সমঝোতার কারণে নতুন বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারসাম্যের কূটনীতি বজায় রাখতে হবে। কারণ বাংলাদেশ চীনের সঙ্গেও সুসম্পর্ক উপভোগ করে। পাশাপাশি বেশির ভাগ কাঁচামাল আমদানির জন্য চীন বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্য অংশীদার। কিন্তু বেইজিংয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখাও বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জিং। কারণ চীনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হবে বাংলাদেশকে।

বাংলাদেশের পোশাকশিল্প, যা রপ্তানি থেকে ৮০ শতাংশর বেশি বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসে, সেই পোশাকশিল্পের কাঁচামালের জন্য চীনের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল বাংলাদেশ। এর আগে শেখ হাসিনা নয়াদিল্লিতে সাংবাদিকদের বলেন, দুই দেশ নদীর পানিবণ্টন এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতীয় শিল্প খাতের নেতারা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় শেখ হাসিনা তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আমন্ত্রণ জানান- যাতে বড় বন্দর, নৌপথ, রেল ও সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নের পরিকল্পনা নয়েছে। সেই অবকাঠামো সম্প্রসারণে সহায়তার জন্য ভারত গত আট বছরে বাংলাদেশকে ৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে।

শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ দল ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে, তিনি বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ভারতীয় জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর বিষয়ে নয়াদিল্লির উদ্বেগের সমাধান করার জন্য কাজ করেছেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লাইন অব প্রেজেন্টেশনে দুই দেশের মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পরিচয় করিয়ে দেন। রাষ্ট্রপতি ভবনের এ কর্মসূচি শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রাজঘাট যান। সমাধিসৌধে পৌঁছলে রাজঘাট সমিতি তাকে স্বাগত জানায়। ভারতের এ মহান নেতার সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে প্রধানমন্ত্রী কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় তিনি সমাধিতে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দেন। পরে তিনি পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন।

আগরতলা দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ষষ্ঠ রেলপথ চালু হয়েছে জানিয়ে মোদি বলেন, খুলনা-মোংলা বন্দর দিয়ে আমাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় কার্গো সার্ভিস শুরু হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে ভারতীয় রুপির বাণিজ্য শুরু হয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গঙ্গা (পদ্মা) নদীর ওপর দিয়ে বিশ্বের দীর্ঘতম রিভার ক্রুজ সম্পন্ন হয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম আন্তসীমান্ত মৈত্রী পাইপলাইন সম্পন্ন হয়েছে। ভারতীয় গ্রিড ব্যবহার করে নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি আঞ্চলিক সহযোগিতার উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আমরা আমাদের জনগণ ও দেশের উন্নতির জন্য একে অন্যের সঙ্গে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছি। যেহেতু নতুন সরকার গঠনের মাধ্যমে ঢাকা ও দিল্লি নতুনভাবে পথচলা শুরু করেছে, সে ধারাবাহিকতায় আমরা ‘রূপকল্প-২০৪১’-এর মাধ্যমে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা এবং ‘বিকশিত ভারত-২০৪৭’ অনুসরণ নিশ্চিত করার জন্য ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করেছি। বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নয়াদিল্লির সচিবালয়ে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর তিনি রাষ্ট্রপতি ভবনে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

পশ্চিমবঙ্গের গেদে থেকে ভুটান সীমান্তবর্তী ডালগাঁও পর্যন্ত বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ট্রেন চালাতে চায় ভারত। এ বিষয়ে আগে প্রস্তাব দেওয়া হলেও গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। আলোচনা হয়েছে তিস্তা প্রকল্প নিয়েও। সেই সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সুসংহত করার পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদারে ১০টি সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) সই করেছে বাংলাদেশ ও ভারত। নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউজে গতকাল দুপুরে দুই দেশের সরকারপ্রধানের মধ্যে একান্ত ও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে তাদের উপস্থিতিতেই এসব এমওইউ সই হয়। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

বর্তমানে পাঁচটি রুটে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ট্রেন চলে। তিনটি যাত্রীবাহী ইন্টারচেঞ্জ, বাকি দুটি পণ্যবাহী। বর্তমান নিয়মানুযায়ী, ভারতীয় ট্রেন সীমান্তে আসার পর বাংলাদেশি ইঞ্জিনে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আসে। বাংলাদেশি লোকোমাস্টার (চালক) তা চালিয়ে আনেন। ফিরে যাওয়ার সময়েও একই নিয়ম অনুসরণ করা হয়। এখন ভারত পশ্চিমবঙ্গের গেদে থেকে ভুটান সীমান্তবর্তী ডালগাঁও পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রেন চালু করতে চায়। এক্ষেত্রে সময় ও দূরত্ব কমাতে ব্যবহার করতে চায় বাংলাদেশের রেলপথ। অর্থাৎ দর্শনা দিয়ে ঢুকে ঈশ্বরদী-আব্দুলপুর-পার্বতীপুর হয়ে চিলাহাটি পর্যন্ত বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতীয় ট্রেনটি আবার ভারতে প্রবেশ করবে।

দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও এমওইউ সই অনুষ্ঠান শেষে গতকাল বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের রেলপথ ব্যবহার করে ভারতের একটা অংশ থেকে আরেক অংশে রেলওয়ে সংযোগ চালু করতে চায়। এ নিয়ে দুই দেশের নেতার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে।’

হীরেন পণ্ডিত: প্রাবন্ধিক, গবেষক ও কলামিস্ট

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বন্যা নিয়ে দুঃসংবাদ দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রীর

জিম্মিদের মুক্তিতে মার্কিন প্রস্তাবে সম্মত ফিলিস্তিনিরা

নিজ এলাকায় চিকিৎসা নিতে এমপিদের অনুরোধ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

দেশের প্রথম আইন বিশ্ববিদ্যালয় হবে শিবচরে : আইনমন্ত্রী

তাঁতীবাজার সড়ক অবরোধ / গান-কবিতায় বেগবান হচ্ছে জবি শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলন

প্রথম কার্য দিবসে কী করবেন যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী?

এসিআইয়ে অভিজ্ঞতা ছাড়া চাকরি, আছে বিদেশ ভ্রমণের সুবিধা

বাবাকে খুঁজে পেতে নড়াইলের তরুণী পাবনায়

এবার বেনজীরের ডুপ্লেক্স বাড়ি জব্দ

লিপি মনোয়ারকে বাংলাদেশ লেখিকা সংঘের স্বর্ণপদক প্রদান

১০

নৌকাডুবে প্রাণ গেল দুই বন্ধুর

১১

১৩০০ বছর আগের ঐতিহাসিক ‘জাদুর’ তলোয়ার উধাও!

১২

সুপার স্পেশালাইজডের বিদ্যমান আইনে নতুন সংযোজন প্রয়োজন : বিএসএমএমইউ উপাচার্য

১৩

ছাত্রলীগের বাধা উপেক্ষা করে ঢাবিতে কোটাবিরোধী বিক্ষোভ শুরু

১৪

এশিয়া কাপের আম্পায়ারিং প্যানেলে জেসি

১৫

যে কারণে ইয়ামালকে পুরো ম্যাচ খেলাচ্ছে না স্পেন?

১৬

দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে আরেক ট্রাকের ধাক্কা, নিহত ২

১৭

চমেক হাসপাতালে বার্ন ইউনিটের নির্মাণকাজ সেপ্টেম্বরে শুরু : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

১৮

পুলিশি বাধায় সড়কেই বসে পড়ল জবি শিক্ষার্থীরা

১৯

আকর্ষণীয় বেতনে রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট নেবে সিপিডি

২০
X