সৈয়দ সাফিউল হাসান চিশতী
প্রকাশ : ২১ জুন ২০২৪, ০৬:১০ পিএম
আপডেট : ২১ জুন ২০২৪, ০৬:৩৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

যার ওপর বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে

গ্রাফিক্স : কালবেলা
গ্রাফিক্স : কালবেলা

উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তার ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন করতে যাচ্ছে। ১৯৪৯ সালের প্রতিষ্ঠিত হওয়া আদর্শভিত্তিক এ রাজনৈতিক দলটি নানা চড়াই উতরাই, ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে সমসাময়িক বিশ্বে ক্ষমতায় আসীন থাকা বিশ্বের অন্যতম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। অনেকেই বলে থাকেন আওয়ামী লীগের ইতিহাস আছে, ঐতিহ্য আছে।

কিন্তু ইতিহাস, ঐতিহ্য আসলে কী? ইতিহাস হচ্ছে সময় পরিক্রমায় ঘটে যাওয়া বিভিন্ন দেশ জনপদ বা ভূখণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। আওয়ামী লীগের সৃষ্টিই ছিল ব্রিটিশ শাসন পরবর্তীতে এ উপমহাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা। আর ঐতিহ্য হচ্ছে আমাদের পরিচয়ের অংশ যা আমাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে সংজ্ঞায়িত করে। ’৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ’৬৬ এর ছয় দফা, ’৭০ এর নির্বাচন, ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ঐতিহাসিক ঐতিহ্যে পরিগণিত করেছে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের চারটি মূলনীতি যেন তার ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে চমকপ্রদভাবে তুলে ধরেছে। মূলনীতিগুলো যেন কালোত্তীর্ণ, সব সময়ের জন্য প্রযোজ্য। নীতিগুলো বিশ্বের আদর্শভিত্তিক অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর থেকে আওয়ামী লীগকে করেছে ব্যতিক্রমী। বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা কালক্রমে বাংলাদেশের স্তম্ভে পরিণত হয়েছে। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৮-১৯ তারিখ স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রথম কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় চারটি মূলনীতি গৃহীত হয়।

পরবর্তীতে চার মূলনীতি বাংলাদেশ সংবিধানে গৃহীত হয়। যদিও বিভিন্ন সরকারের সময় তা কাটা ছেড়া হয়েছে। পিলারের ক্ষতি করলে যা হয়, বিল্ডিং কাঠামো ধসে পড়ার সম্ভাবনা থাকে, বাংলাদেশও কার্যত সে অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিল। তবে পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। আবারও ১৯৭২ সালের সংবিধানে ফিরে যায় তবে বাস্তবিক অর্থে তা অনেক বোদ্ধার কাছে কাগজে-কলমেই আছে। এই যেমন বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটকে সামনে নিয়ে এসে অর্থনীতি পরিচালনার নীতির ক্ষেত্রে সরকারের সরে আসা। তবে চার মূলনীতির আজকের দিনে আবেদন কিন্তু একটুও কমেনি বরং বেড়েছে। এ চার নীতি যেন স্তম্ভে পরিণত হয়েছে। যার ওপর শুধু আওয়ামী লীগ নয় যেন বাংলাদেশটাই দাঁড়িয়ে আছে।

বাঙালি জাতীয়তাবাদ :

শুরুটা হোক বাঙালি জাতীয়তাবাদ দিয়ে। জাতীয়তাবাদ কিন্তু একটি চেতনা। এই স্পিরিট বা চেতনা ১-২ বছর বা কয়েক বছরের ফসল নয়। দীর্ঘদিনের বিশেষ কিছু বিষয়ের বহিঃপ্রকাশ। প্রথমে আমাদের একটি দ্বিধা কাটিয়ে নেই। আমাদের নাগরিকত্ব বাংলাদেশি, আমাদের জাতীয়তা বাংলাদেশি, আমাদের জাতীয়তাবাদ বাঙালি জাতীয়তাবাদ। দ্বিধাটা ’৭৫ পরবর্তীতে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় যারা আসেন তারাই তৈরি করেছেন। জানি না জ্ঞানত: তারা করেছেন কিনা। তবে পরিস্থিতি সাপেক্ষে এটা জাতিকে বিভক্ত করার পাঁয়তারা বলে মনে হয়। সে আলোচনায়ও যাচ্ছি না।

দীর্ঘদিন ধরে একই ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, আচরণ লালনকারী জনগোষ্ঠী, যাদের ভৌগোলিক অখণ্ডতা থাকবে, সেখানে এ বিষয়গুলো যখন সে জনগোষ্ঠীকে একতাবদ্ধের সুতায় বাঁধে তখন সেখানে জাতীয়তাবাদের প্রকাশ ঘটে। বাঙালি জাতীয়তাবাদও সে রকম কিছুই। এ জাতীয়তাবাদের মূল ভিত্তি হচ্ছে বাংলা ভাষা। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, তমুদ্দিন মজলিশ বা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, শেখ মুজিব বা গাজীউল হক সবার ঐকান্তিক চেষ্টা, সালাম বরকত রফিক জব্বারসহ অন্যান্য বীর শহীদদের মহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলা পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা লাভ করে। এই বাংলাতেই আমাদের দেশপ্রেমের চেতনা প্রোথিত হয়।

যদিও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কংগ্রেসের অবদান অপরিহার্য কিন্তু তাদের ভাবাদর্শে সরাসরি জাতীয়তাবাদের স্থান নেই যেটা আছে সেটা হচ্ছে গণতান্ত্রিক জাতীয়তাবাদ। কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টির আদর্শে জাতীয়তাবাদের স্থান আছে। প্রথম তারা হিন্দু জাতীয়তাবাদকে প্রাধান্য দিচ্ছে। কিন্তু ধর্মকেন্দ্রিক এ জাতীয়তাবোধ কি পুরো ভারতকে একসঙ্গে করতে পেরেছে? ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে কি মুসলমানদের অবদান নেই? তবে হ্যাঁ, তারা তাদের আদর্শ প্রচারে এখন ভারতীয় জাতীয়তাবাদকে টানছে। কিন্তু ভারতীয় জাতীয়তাবাদ যতটা না পুরো ভারতকে এক দেখায়, ঐক্য সংহতির জায়গায় নিয়ে যায়, হিন্দু জাতীয়তাবাদ ঠিক সেভাবে সংহতির জায়গাটাকে অমসৃণ করে তোলে। ভারতের রাষ্ট্রকেন্দ্রিক আচরণে গত কয়েক বছরে আমরা সেটাই লক্ষ্য করেছি।

হামাস কিংবা তুরস্কের দুই একটি রাজনৈতিক দল ব্যতীত ইসলামি জাতীয়তাবাদের কথা কোথাও দেখা যায় না। তবে আরব জাতীয়তাবাদের প্রসার দেখা যায় । ওসব অঞ্চল থেকে পশ্চিমাদের আধিপত্যবাদ হটানোর জন্য। এটাকে কিন্তু ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ বলা যায় না।

আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসেরও মূলনীতির একটি হচ্ছে আফ্রিকান জাতীয়তাবাদ। দীর্ঘদিন ধরে কলোনি শাসনে থাকার ফলে এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে এ জাতীয়তাবোধের উন্মেষ ঘটে। আর এই চেতনাই তাদের বিভিন্ন গোত্রের ভিন্ন ঐতিহ্যের লোকজনকে একই ছাতার মধ্যে নিয়ে আসে। তবে সমালোচনাও আছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক বা রিপাবলিকান কেউই জাতীয়তাবাদকে তাদের মূলনীতি হিসেবে ধরেনি। সেখানে জনগণের সংহতি ধরে রাখার জন্য এ মতবাদকে টানা হয় না যদিও নির্বাচন আসলে 'আমরা আমেরিকান' এ ধরনের স্লোগান দেওয়া হয়। ব্রিটেনে লেবাররা নয় বরং কনজারভেটিভ পার্টি জাতীয়তাবাদকে দলের নীতি হিসেবে নিয়েছে। তবে সেটা সরাসরি নয়। বরং সেটা ব্রিটিশ ইউনিয়নিষ্ট নীতির অংশবিশেষ।

অন্যান্য দেশগুলোর বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তুলনায় বাঙালি জাতীয়তাবাদকে নিশ্চিত রূপে এগিয়ে রাখা যায়। আজকে যখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশ্বব্যাপী পালন হয়, সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা হয় বাংলা, বাংলাদেশের ঐতিহ্যের জায়গাগুলো নিয়ে আলোচনা হয়, বিভিন্ন খেলায় বড় ধরনের সাফল্যে সবাই এক হয়ে যায়, দলকে অভিনন্দিত করে, বোঝা যায় জনগণের সংহতির জায়গাটি বাড়ছে। এভাবেই বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রসার ঘটছে। জনগণের দল হিসেবে ভাষা আন্দোলন পরবর্তী যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬ দফা, গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীন বাংলাদেশ এসবের মূলে এ চেতনাই ছিল। এটাকে ধারণ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার প্রত্যয় বাঙালি জাতীয়তাবাদকে দলের মূলনীতি হিসেবে নেওয়াটা সম্পূর্ণরূপে যৌক্তিক ছিল বটে।

ধর্মনিরপেক্ষতা : আওয়ামী লীগের অন্যতম মৌলিক নীতি হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা। প্রথমেই বলছি বহুজন বহুভাবে বিভিন্ন সময়ে দ্বিধান্বিত করার চেষ্টা করেছে, এখনও করছে। কিন্তু মনে রাখবেন ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের জুন মাসে সোহরাওয়ার্দীতে, পরবর্তীতে নভেম্বরে মহান সংসদে এ কথাটিই বলেছেন। এখানে যে যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করতে পারবেন। সংবিধানেও তা গৃহীত হয়। ২০১০ সালে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে '৭২ এর সংবিধান পুনরায় প্রতিস্থাপিত হয়। কিন্তু এর মধ্যে জাতির ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। একে বাইরের দেশের মতো করে নাস্তিক্যবাদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগকে ইসলামবিরোধী দল হিসেবে দেখানোর চেষ্টা হয়েছে।

কিন্তু দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ধর্ম নিরপেক্ষতাকে মূলনীতি হিসেবে কেন বেছে নিল? জনগণের এই দল স্বাধীনতা আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে যখন সব ধর্মের, বর্ণের শ্রেণি, পেশার মানুষের অংশগ্রহণ দেখল, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের এই ভূখণ্ডে এ নীতি ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ছিল না বরং ইসলাম এ নীতিকেই প্রাধান্য দেয়। এটি হজরত মুহাম্মদ সা.-এর রাষ্ট্রব্যবস্থার পালনীয় নীতি। মদিনায় গড়ে ওঠা রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সব ধর্মের সমান অধিকার ছিল। মদিনার সনদও এর বড় উদাহরণ। মূলত রাষ্ট্রে সব ধরনের নাগরিকরা থাকবে, নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে, তবেই দেশের জনগণের মধ্যে সংহতি, ঐক্য তৈরি হবে। সবাই বাংলাদেশের হয়ে উঠবে। এ চেতনাই একে বেছে নেওয়ার কারণ।

অন্যতম বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতের কংগ্রেসের মূলনীতিই ধর্মনিরপেক্ষতা। ভারতের গড়ে ওঠার পেছনে এ নীতিকে সামনে রেখেই তারা স্বাধীনতার আন্দোলন করেছে। এখনও এ নীতিকে সামনে রেখেই তারা রাজনীতি করে। মানবিকতার দর্শনে গড়ে ওঠা বিজেপির মূলনীতি হিন্দুত্ববাদ যা হিন্দু জাতীয়তাবাদেরই সাংস্কৃতিক বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বক্তৃতা বিবৃতিতে বিজেপিও ধর্মনিরপেক্ষতাকে টানছে। তারা একে বলছে ‘পন্থ-নিরপেক্ষ’। অর্থাৎ এক সময়ের উগ্রবাদী দল হিসেবে পরিচিত বিজেপিও এখন বুঝতে চলেছে একটি দেশ বিশেষ কোনো ধর্মের হতে পারে না।

যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক পার্টি সেক্যুলারিজম চর্চা করে, তবে সেটা আওয়ামী লীগের ধর্মনিরপেক্ষতার আদলে নয়। তারা নাস্তিকদের ক্ষেত্রে বা ‘নানস’ দের ক্ষেত্রে নীরব। অন্যদিকে রিপাবলিকানরা দলে খ্রিষ্টান আধিপত্যকে মেনে নিয়ে, ইহুদিবাদকে প্রশ্রয় দিয়ে রাজনীতি করে।

রাশিয়ার ক্ষমতাসীন ইউনাইটেড রাশিয়ার মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা নেই। তবে রাষ্ট্রের মূলনীতিতে তারা ১৯৯৭ সাল থেকে ধর্মনিরপেক্ষতাকে ধারণ করছে। অন্যদিকে দার্শনিক কনফুসিয়াসের দেশ চীনে এক সময় সেকুলারিজমের চর্চা ছিল। আসলে সেটা ছিল হিউম্যানিজম বা মানবিকতা। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির বিপ্লবে উন্নত চীন করার প্রয়াসে তারা ধর্মকে 'উন্নত' করা শুরু করে অর্থাৎ ধর্মীয় রীতি নীতি কেমন হবে সেই বিষয়ে হস্তক্ষেপ শুরু করে। সামাজিক সাম্যের সঙ্গে হস্তক্ষেপের চর্চা যে সাংঘর্ষিক সেটা তাদের কে বোঝাবে? যাই হোক অতি সম্প্রতি তারা অন্যান্য ধর্মের লোকজনদের স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করতে দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু নিয়মের বেড়াজাল তুলেনি।

গণতন্ত্র : গণতন্ত্র মানে জনগণের শাসন। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত প্রতিটি প্রশাসনিক বিন্যাসে জনগণ দ্বারা শাসন কার্য পরিচালিত হবে। সেটা হবে জনগণের দ্বারা প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে। সে প্রতিনিধিরা আইন তৈরি করবে জনগণের জন্য, শাসনকার্য পরিচালিত হবে তাদের জন্য। শোষিত মানুষের জন্য তারা কাজ করবে। তাইতো বঙ্গবন্ধু বললেন সাত মার্চের ভাষণে, ‘....আর জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।’

পাকিস্তানিরা তা হতে দেয়নি। ’৫৮ সাল থেকে তো সামরিক শাসন জারি করল। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জিতেও ক্ষমতায় যেতে পারেনি। ফলে জনগণ ক্ষোভে ফেটে পড়ল। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করল। আর এই গণতান্ত্রিক চেতনাই ফুটে উঠেছে গণতন্ত্রকে মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করার মাধ্যমে। স্বাধীনতা পরবর্তী দেশের প্রতিটি লড়াই সংগ্রামে, গণতান্ত্রিক ধারা সমুন্নত রাখতে আওয়ামী লীগ সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে।

ভারতের প্রাচীন দল কংগ্রেসের ভাবাদর্শে সরাসরি গণতন্ত্র নেই, যদিও দর্শনে আছে। যেটা আছে সেটা সামাজিক গণতন্ত্র। অর্থাৎ সমাজতন্ত্রের অধীনে থেকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গণতন্ত্রকে সমর্থন করা। গণতন্ত্র ইস্যুতে ডেমোক্রেটিক পার্টির নীতিও একই রকম, যা সামাজিক গণতন্ত্র। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকলেও বিজেপি বা রিপাবলিকান কারো মূলনীতিতেই গণতন্ত্র নেই। জনগণের জন্য কাজ করা যাদের স্লোগান, সেই চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মূলনীতিতেও তা নেই। যদিও গণতন্ত্রের অন্যতম মূলনীতি সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের শাসন সে জায়গায় জনগণের রায় নিয়েই তারা ক্ষমতায় আছে। যদিও বিভিন্ন সময় তাদের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন এসেছে। রাশিয়ার সংবিধানে গণতন্ত্রের স্বীকৃতি থাকলেও শাসন কার্য পরিচালনায় পুতিনের ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টির রক্ষণশীল ঘরানার রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃত।

সমাজতন্ত্র : সমাজতন্ত্র আওয়ামী লীগের চারটি মূলনীতির একটি। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতাত্তোর কালে অর্থনীতিকে সমাজতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থায় ঢেলে সাজাতে চেয়েছিলেন। সমাজতন্ত্রের কনসেপ্টে উৎপাদন ব্যবস্থা এবং মালিকানায় রাষ্ট্রের অবস্থান প্রত্যক্ষ থাকে। আওয়ামী লীগের মূলনীতিতে যে সমাজতন্ত্রের কথা বলা হয়েছে তা মূলত শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার জন্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সমতা আনয়নের প্রয়াস। সংবিধানেও এটিই মূলনীতি। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতি কিন্তু মিশ্র অর্থনীতির ধারাতেই পরিচালিত হচ্ছে। হতে পারে বিশ্ব অর্থনীতি পরিস্থিতি বিবেচনায় এটি এক ধরনের কম্প্রোমাইজ।

কংগ্রেসের অবস্থানও এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের মতোই। তাদের মূল দর্শনের একটি সমাজতন্ত্র। ডেমোক্রেটিক বা রিপাবলিক পার্টির এ সুযোগ নেই। কারণ তারা নিজেরাই পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে প্রমোট করছে। বিজেপিরও এক্ষেত্রে কোনো অবস্থান নেই। অর্থাৎ তাদের মতে চলমান অর্থব্যবস্থায় গ্রহণযোগ্য বিষয়টিকেই তারা গ্রহণ করছে।

চীনা কমিউনিস্ট পার্টি সম্পত্তি স্বত্ব, শ্রেণি সংগ্রামে মার্কস, লেলিনের সঙ্গে মাও সে তুং -এর মতবাদের মিশেলে নতুন এক ধরনের সমাজতন্ত্রের পথে চলছে। সমাজতন্ত্রের পতনের পর রাশিয়াও প্রত্যক্ষভাবে আর সেদিকে হাঁটছে না।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী প্রাক্কালে একথা দৃঢ়ভাবে বলাই যায়- বিশ্বের তাবৎ বৃহত্তম রাজনৈতিক দল এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে তুলনায় আওয়ামী লীগের চার তারকা, চার নীতি সংগঠনটিকে অনন্য করে তুলেছে। সে সময়ের ‘মুজিববাদ’ সংবিধানে সন্নিবেশিত হয়েছে। ২০১০ এর পরবর্তীতে আবারো সংবিধানেও তা ফিরে এসেছে। বাস্তবিক অর্থেই সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে এই মূলনীতিগুলোর সুষ্ঠু সমন্বয় ও পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন ঘটলে তা হবে দেশ এবং জাতির মঙ্গলজনক।

লেখক : পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক, আমরা কজন মুজিব সেনা, আহ্বায়ক, চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ (একটি আন্দোলন)। ই-মেইল : [email protected]

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ধামরাইয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রথযাত্রা আগামীকাল শুরু

আইইউবিএটির নতুন শিক্ষার্থীদের জন্য প্রি-ইউনিভার্সিটি ইংলিশ কোর্স চালু

তাসনিম সিদ্দিকী : হাতেকলমে গবেষণা শেখানোর এক বিরল কারিগর!

রাজনৈতিক শুভশক্তির অনুপস্থিতি ও পথভ্রষ্টের অগ্রগতি

উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে ‘ল’ অ্যালামনাই রিইউনিয়ন অনুষ্ঠিত

সরকার ভুল সিদ্ধান্ত নিলে অবশ্যই সমালোচনা করবেন : তথ্য প্রতিমন্ত্রী

ঢাকায় ম্যানেজার নেবে মদিনা গ্রুপ

সিমেন্ট শিল্পের সংকট ও সম্ভাব্য সমাধান শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

নাফীসের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানাল বিসিবি

মাসজুড়েই বন্যার শঙ্কা

১০

আবারও মহাসড়ক অবরোধ করলেন রাবি শিক্ষার্থীরা

১১

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে / চলমান শিক্ষক আন্দোলনের দ্রুত যৌক্তিক সমাধান জরুরি

১২

কোয়ার্টারে ব্রাজিলের ম্যাচে আর্জেন্টিনার রেফারি

১৩

তিস্তার পানির ব্যবস্থাপনায় পাশে থাকবে মোদি জানালেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

১৪

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেবে সেভ দ্য চিলড্রেন

১৫

চাঁদ জয়ের প্রস্তুতি নিতে শিশুদের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

১৬

৬ষ্ঠ দিনেও আন্দোলনে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

১৭

টিউলিপ কী মন্ত্রী হচ্ছেন?

১৮

বন্যা নিয়ে দুঃসংবাদ দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রীর

১৯

জিম্মিদের মুক্তিতে মার্কিন প্রস্তাবে সম্মত ফিলিস্তিনিরা

২০
X