আপনি কী জানেন, অদূর ভবিষ্যতে সিঙ্গাপুর সিটির মতো হয়ে যেতে পারে আমাদের প্রিয় রাজশাহী সিটি, যদি উন্নয়নের অগ্রযাত্রা এভাবেই চলতে থাকে।
শুনতে অবাক লাগলেও রাজশাহীর কিছু অভূতপূর্ব উন্নয়ন এমনটাই ভাবায় আমাদের। আর সেগুলো হলো, র্যাপিড গ্রোথ। প্রায় ৩৪ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৯০ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠিত হলেও বিগত ১০ বছরে আমরা এই রাজশাহী শহরের যে পরিমাণ উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়ন দেখছি তা সত্যি আমাদের অবাক করে তোলে। রাজশাহী হচ্ছে এমন একটি শহর যা কি না শুধু বাংলাদেশ নয়, এশিয়া মহাদেশের মধ্যে খুব দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলা শহরগুলোর মধ্যে একটি।
সুপরিকল্পিত নগরী : আমরা একটা কথা সবাই জানি, বর্তমান যার ভালো, ভবিষ্যৎ তার উজ্জ্বল। অর্থাৎ আপনি যদি কোনো শহরের উন্নয়ন করতে চান তাহলে অবশ্যই প্রতিটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার এবং ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানকে আগামী ১০ বছর পর ব্যবহারযোগ্য যেন হয় সে চিন্তা মাথায় নিয়ে বর্তমানে কাজ শুরু করতে হয়। আর রাজশাহীতে ঠিক এমনটাই হচ্ছে। এখানে রাস্তাগুলো অনেক প্রশস্ত, পরিকল্পিতভাবে তৈরি এবং বেশকিছু ফ্লাইওভার ছাড়াও ওভারপাস তৈরি করা হচ্ছে যার ফলে রেলক্রসিং ও যানবাহনের জ্যামসহ বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ট্রাফিক জ্যাম ১০ বছর পরেও এড়িয়ে চলা সম্ভব।
সবুজ ও আলোর শহর : রাজশাহী একমাত্র শহর যেটি কি না একই সাথে সবুজ এবং আলোতে ঘেরা। এখানের রাস্তাগুলোতে দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা এবং বিভিন্ন ফুলগাছ আর ছোট ছোট বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে, যা দেখে আপনার চোখে এবং মনে শান্তি অনুভব হবে। এ ছাড়া রাজশাহীর পদ্মার পাড় এবং শহরের বেশকিছু জায়গা এত সুন্দর করে সাজানো গোছানো হয়েছে যা দেখে আপনার মনে হতে পারে পুরো শহরটি একটি পার্ক।
ভৌগোলিক অবস্থা : আপনি যদি কখনো ম্যাপ লক্ষ করেন তাহলে দেখবেন রাজশাহীর একপাশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী এবং এক পাশে শহর। আর এই পদ্মা নদীর ওই পাশে হচ্ছে ইন্ডিয়ান বর্ডার। খোঁজ নিলে জানতে পারবেন ১৯৬১ সালে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের আগে রাজশাহীর এই পদ্মা নদী ছিল ইন্ডিয়া থেকে পণ্য আনা-নেওয়া ও ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম মাধ্যম। সুতরাং পুনরায় এই নদীবন্দরটি পুরোদমে চালু করতে পারলে গড়ে উঠবে নদীকেন্দ্রিক শিল্প-কলকারখানা, সৃষ্টি হবে হাজার হাজার কর্মসংস্থান এবং ঘটবে ব্যাপক উন্নয়ন।
পর্যটন স্থান : যদি পদ্মা নদীকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক মানের কিছু পার্ক, বিনোদনকেন্দ্র বা পর্যটন এরিয়া তৈরি করা যায় তবে রাজশাহী হতে পারে এশিয়ার মধ্যে অন্যতম একটি পর্যটন সিটি। কারণ এখানে একই সাথে রয়েছে আকাশপথ, নৌপথ, রেলপথ, স্থলপথ এবং নদীপথ। আর এগুলো যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে দেশে এবং দেশের বাইরে থেকে বিপুল পরিমাণ পর্যটক অনায়াসে যাওয়া-আসা করতে পারবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনের কাছে আমাদের জোর দাবি থাকবে, যেন আমাদের বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং আমাদের নদীবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক নদীবন্দরে রূপান্তর করা হয়। তাহলে সিঙ্গাপুর সিটি বা অন্যান্য উন্নত শহরের মতো আমাদের শহরের দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার বিশাল দ্বার উন্মোচন হবে এবং রাজশাহী হবে বাংলাদেশের অন্যতম একটি পর্যটন হাব।
বিশাল কর্মসংস্থানের সুযোগ : যেহেতু আমাদের রাজশাহীতে পর্যাপ্ত পরিমাণে কলকারখানা এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি, তাই যদি আমাদের এই সুন্দর সবুজ শহরটিকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যায় তাহলে এগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান এবং বেকারত্বের দায়ভার থেকে মুক্তি পাবে রাজশাহীবাসী। ইতোমধ্যে আমরা লক্ষ করেছি রাজশাহী শহরের বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন রাস্তাঘাট ও পদ্মা নদীকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে নানা ধরনের রেস্টুরেন্ট এবং ছোটখাটো কিছু পর্যটনকেন্দ্র। পৃথিবীতে এমন অনেক সিটি আছে যেগুলো শুধুমাত্র পর্যটন নগরী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছে, সৃষ্টি করেছে কর্মসংস্থান, দূর করেছে বেকারত্ব। তাই রাজশাহী সিটি করপোরেশন এবং বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমাদের চাওয়া থাকবে রাজশাহীকে যেন একটি সুন্দর পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হয়।
শেষ কথা : আপনি চাইলে বাংলাদেশের মোট ১২টি সিটি করপোরেশন ও ৬৪টি জেলা শহর ভ্রমণ করে আসেন, এমনকি কিছু উন্নত দেশও ভ্রমণ করে আসেন আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি আপনি রাজশাহীকে পছন্দের তালিকায় নম্বর ওয়ানে রাখবেন।
পরিশেষে অনেক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাই সেসব মানুষকে এবং নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিশেষ করে রাজশাহী সিটি করপোরেশন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমাদের এত সুন্দর একটি সাজানো-গোছানো শহর উপহার দেওয়ার জন্য।
লেখক : আমিনুল ইসলাম, ভ্রমণকারী
মন্তব্য করুন