ড. মইনুল ইসলাম
প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৪, ১১:১৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ঋণখেলাপিদের শাস্তি ছাড়া ব্যাংক একত্রীকরণে সুফল মিলবে না

প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।

সম্প্রতি পাঁচটি দুর্বল ব্যাংককে পাঁচটি বড় ব্যাংকের সঙ্গে একত্রীকরণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রাইভেট খাতের এক্সিম ব্যাংক সবচেয়ে দুর্বল প্রাইভেট ব্যাংক পদ্মা ব্যাংককে অধিগ্রহণ করেছে সবার আগে, এরপর সিটি ব্যাংককে বেসিকের সঙ্গে একীভূত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। তারপর সোনালী ব্যাংক বিডিবিএলকে অধিগ্রহণ করার ঘোষণা এসেছিল, ১২ মে ২০২৪ তারিখে এই দুই ব্যাংক একীভূত হওয়ার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এরপর একীভূত হওয়ার ঘোষণা এসেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের। এটা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।

সবশেষে ঈদুল ফিতরের ছুটি শুরু হওয়ার আগের দিন একীভূত হওয়ার ঘোষণা এসেছিল প্রাইভেট ব্যাংক ইউসিবি ও ন্যাশনাল ব্যাংকের। কিন্তু, ন্যাশনাল ব্যাংকের নবগঠিত পর্ষদ এই একীভূতকরণের ঘোষণার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা নাকি ন্যাশনাল ব্যাংককে আবার নিজের পায়ে দাঁড় করাবে। এভাবে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে অপেক্ষাকৃত সবল ব্যাংকের সঙ্গে একত্রীকরণের সিদ্ধান্ত ‘ভলান্টারি’ ছিল কি না, কিংবা কেন ও কী শর্তে গ্রহণ করা হয়েছিল, তা এখনো জানা যায়নি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক চাপ দিয়ে এই ব্যাংকগুলোকে মার্জারের দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, সেটা গুরুতর অভিযোগ।

‘মার্জার’ দুটি সংস্থার ‘ভলান্টারি’ বা স্বপ্রণোদিত সিদ্ধান্ত না হলে তা বুমেরাং হওয়ার আশঙ্কাই বেশি থাকে। কিন্তু সিদ্ধান্তগুলো বিশেষজ্ঞদের কিংবা ওইসব ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পছন্দসই হয়নি বোঝা যাচ্ছে। বেসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোনো বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার পরিবর্তে অন্য কোনো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন। তাই বলা প্রয়োজন, পাঁচটি দুর্বল ব্যাংকের মধ্যে তিনটির ব্যাপারে একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এগিয়ে যাওয়ার পর বোঝা যাবে একত্রীকরণের সিদ্ধান্ত সঠিক হয়েছে কি না। আরও পাঁচটি দুর্বল ব্যাংককে ‘মার্জার’-এ দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এই সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। শর্তগুলো বিস্তারিত না জেনে বর্তমান পর্যায়ে মার্জারের সুফল এবং কুফল সম্পর্কে মন্তব্য করা সময়োচিত না-ও হতে পারে। তবুও কয়েকটি মন্তব্য সমীচীন মনে করছি।

এক্সিম ব্যাংককে নাকি অন্য আরেকটি ব্যাংক অধিগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চাপ প্রদান করা হয়েছিল, কিন্তু তারা পদ্মা ব্যাংককে বেছে নিয়েছে। এ সিদ্ধান্তের পেছনে নিশ্চয়ই তার কিছু হিসাবনিকাশ রয়েছে। সোনালী ব্যাংক এবং বিডিবিএল একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্তটি যৌক্তিক। এখন দীর্ঘমেয়াদি শিল্প ঋণ দেওয়ার জন্য আলাদা ব্যাংক থাকার ভালো যুক্তি নেই, কারণ এতদিনে সব বাণিজ্যিক ব্যাংকই দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়ায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।

বিডিবিএল এর আগে দুটি শিল্পায়ন অর্থায়ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে ধুঁকে ধুঁকে টিকে ছিল—একটি বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক, অন্যটি বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা (বিএসআরএস)। চার দশক ধরে এই দুটি প্রতিষ্ঠান খেলাপি ঋণে জর্জরিত ছিল। পরে ওগুলোকে সাধারণ বাণিজ্যিক ব্যাংকে রূপান্তর করা হলেও ব্যর্থ হয়েছে ব্যাংকগুলো। বিডিবিএল এর খেলাপি ঋণগুলো দীর্ঘদিনের। এগুলো আদায় হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এত বেশি খেলাপি ঋণের বোঝা সোনালী ব্যাংক কীভাবে সামলায়, সেটা দেখার অপেক্ষায় রইলাম। কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের মার্জারও যৌক্তিক। আমার মতে আলাদা করে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তটিই ভুল ছিল, কৃষি ব্যাংকের শাখা বাড়ানোর মাধ্যমে দেশের উত্তরাঞ্চলের আঞ্চলিক কৃষি ঋণের চাহিদা পূরণের দায়িত্বটি পালন যথাযথ হতো।

বেসিক অত্যন্ত ভালো একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ছিল, যার খেলাপি ঋণের অনুপাত দেড় দশক আগেও ৩-৪ শতাংশের বেশি ছিল না। কিন্তু শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে বহাল রেখে কয়েক বছর লুটপাট করতে দেওয়া হয়েছে। বহুদিন পর আবদুল হাই বাচ্চুকে অপসারণ করে তার পরিবর্তে নতুন চেয়ারম্যান করা হলেও ব্যাংকটিকে পতনের ধারা থেকে ফেরানো যায়নি। এখন এই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৬৮ শতাংশের বেশি। তাই আলাদাভাবে এই ব্যাংকটি চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। অতএব, মার্জারের মাধ্যমে ব্যাংকটির অবসায়নের প্রক্রিয়া শুরু করা সময়োচিত সিদ্ধান্ত। তবে একটি পতনোন্মুখ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের বোঝা অন্য বেসরকারি ব্যাংক কীভাবে বহন করবে—সেটা উদ্বেগের বিষয়।

একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর বেসিক ব্যাংকের আমানত প্রত্যাহারের হিড়িক পড়েছে। আশঙ্কার কারণ রয়েছে যে, এর ফলে যে কোনো সময় ব্যাংকের আমানতকারীদের আমানত ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে ব্যাংকটি ব্যর্থ হতে পারে। ন্যাশনাল ব্যাংক জন্মলগ্ন থেকেই লুটপাটের শিকার। অন্যতম ফার্স্ট-জেনারেশন প্রাইভেট ব্যাংক হিসেবে ১৯৮৩ সালে জন্মগ্রহণের পর একসময়ের বড় প্রাইভেট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত হলেও সিকদার পরিবারের দুই ভাই রণ হক সিকদার ও রিক হক সিকদারের হাতে পড়ার পর ব্যাংকটি লাটে ওঠার উপক্রম হয়েছে কয়েক বছর আগেই। (অবশ্য জনশ্রুতি রয়েছে যে, প্রথম থেকেই বিভিন্ন নেতৃস্থানীয় ব্যবসায়ীর লুটপাটের শিকার হয়েছিল ব্যাংকটি)। এরকম একটি নিমজ্জমান প্রাইভেট ব্যাংককে উদ্ধার করতে গিয়ে ইউসিবি নিজেই সংকটাপন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল। ন্যাশনাল ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান নিজেই দেশের একজন নেতৃস্থানীয় ব্যবসায়ী-শিল্পপতি, যার প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা ন্যাশনাল ব্যাংক পেয়ে গেলে মুনাফাদায়ক হবে। তিনি ব্যাংকটিকে উদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়ায় ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। সেজন্য ন্যাশনাল ব্যাংকের বর্তমান সিদ্ধান্তটি শাপেবর হতে পারে।

যে কথাটি জোর দিয়ে বলা প্রয়োজন তা হলো, এই পাঁচটি দুর্বল ব্যাংককে বর্তমান অবস্থায় নিয়ে আসার জন্য যারা দায়ী তাদের শাস্তির আওতায় না এনে ব্যাংকগুলো মার্জারের মাধ্যমে অন্য পাঁচটি ব্যাংকের অধিগ্রহণে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াটি একটি বড় ধরনের ‘মরাল হ্যাজার্ডের’ জন্ম দিচ্ছে। পদ্মা ব্যাংকের জন্ম হয়েছিল ফার্মার্স ব্যাংক হিসেবে, ওটার মূল উদ্যোক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী, এমপি এবং সরকারের সাবেক আমলা ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর। একটি নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বিশ কোটি টাকা তার সারা জীবনের বৈধ আয় থেকেও সংগ্রহ করা অসম্ভব। সরকারের পক্ষ থেকে তাকে হয়তো পুরস্কৃত করা হয়েছিল তার ১৯৯৬ সালের ‘জনতার মঞ্চের’ ভূমিকার জন্য। কিন্তু, প্রথম থেকেই ফারমার্স ব্যাংক লুটপাটের শিকার হয়ে লাটে ওঠার জোগাড় হওয়ায় পদ্মা ব্যাংক নাম দিয়ে ব্যাংকটিকে সরকার বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল।

বোঝা যাচ্ছে, সরকারের ওই প্রয়াস ফেল মেরেছে। কিন্তু ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীরের কী শাস্তি হয়েছে? এবার এমপি নমিনেশন না পেলেও তিনি তো বহাল তবিয়তেই রয়েছেন! বেসিকের আবদুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে শেষমেশ দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা করেছে, তিনি নাকি এখন পলাতক। কিন্তু কয়েক বছর আগেই তো বেসিককে ধ্বংস করে দিয়েছিল বাচ্চু। কই, তখন তো সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি? রণ হক সিকদার এবং রিক হক সিকদার বেশ কয়েক বছর আগেই বন্দুকের নল মাথায় ঠেকিয়ে এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ দিতে বাধ্য করার ঘটনায় হাতেনাতে ধরা পড়েছিল। ওই ঘটনার জন্য তাদের কি কোনো শাস্তি পেতে হয়েছে?

আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে পুরোনো এবং সবচেয়ে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে খেলাপি ঋণ সমস্যা। বর্তমানে দেশের প্রায় সাড়ে ১৮ লাখ কোটি টাকা প্রদত্ত ব্যাংক ঋণের মধ্যে কমপক্ষে সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকা খেলাপি ঋণে পরিণত হয়ে গেছে, কিন্তু নানা কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক তিন মাস পরপর প্রকাশিত ‘ক্ল্যাসিফাইড লোনের’ হিসাবে মাত্র ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকাকে ক্ল্যাসিফাইড দেখানো হচ্ছে। বাকি খেলাপি ঋণকে ‘টেকনিক্যাল কারণে’ হিসাবের বাইরে রাখতে হচ্ছে।

এর মধ্যে আড়াই লাখ কোটি টাকার বেশি অর্থঋণ আদালত, হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ঝুলে থাকা মামলায় বছরের পর বছর আটকে থাকায় টেকনিক্যালি ওগুলোকে ‘ক্ল্যাসিফাইড’ বলা যাচ্ছে না। এর সঙ্গে যুক্ত হবে ৬৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি পাঁচ বছরের বেশি পুরোনো ‘মন্দঋণ’, যেগুলো বিভিন্ন ব্যাংক ‘রাইট অফ’ করে দেওয়ায় ওগুলোকেও আর বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রকাশিত ‘ক্লাসিফাইড লোনে’ অন্তর্ভুক্ত করা যাচ্ছে না। এর পাশাপাশি আড়াল হয়ে যাচ্ছে বারবার নিয়মবহির্ভূতভাবে ‘রিশিডিউল’ করা ‘পরিশোধের নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়া’ বিপুল পরিমাণ ঋণ, যেগুলোর প্রকৃত পরিমাণ বাংলাদেশ ব্যাংকেরও অজানা। আর একটা ক্যাটাগরির ঋণও অনিয়মিত: যেগুলো নতুন ঋণের সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করে ‘নিয়মিত’ দেখিয়ে চলেছে বিভিন্ন ব্যাংক। এ ব্যাপারটাও বাংলাদেশ ব্যাংক ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।

অতএব, খেলাপি ঋণের ওপরে উল্লিখিত সব ক্যাটাগরিকে যোগ করলে সন্দেহাতীতভাবে বলা যাবে যে, খেলাপি ঋণ সমস্যাটা ব্যাংকিং খাতের ‘নিরাময়-অযোগ্য ক্যান্সারে’ পরিণত হয়ে গেছে তিন দশক আগেই। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক হলো, সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা সমস্যাটির ওপরে উল্লিখিত মারাত্মক ডাইমেনশনগুলো সম্পর্কে অবহিত হওয়া সত্ত্বেও ৩০ বছর ধরে খেলাপি ঋণ সমস্যাটিকে কার্পেটের তলায় লুকিয়ে ফেলার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করে চলেছেন, সমস্যার সমাধানে তারা মোটেও আন্তরিক নন।

বরং, ২০০৯ সাল থেকে সরকার দফায় দফায় আরও ৩০টিরও বেশি নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স প্রদানের খামখেয়ালি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে, যার ফলে একত্রীকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগেই এদেশে মোট বাণিজ্যিক ব্যাংকের সংখ্যা ৬১-তে পৌঁছে গিয়েছিল। প্রয়াত সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিত প্রতিবারই নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স প্রদানের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে ক্ষমতানুযায়ী ওসব সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে গেছেন।

এসব নতুন ব্যাংকের মালিকদের মধ্যে তার বেশ কয়েকজন আত্মীয়স্বজন রয়েছেন এবং আওয়ামী লীগের নেতা রয়েছেন কয়েকজন, যাদের নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় বিশ কোটি টাকা মূলধন থাকারই কথা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। (হয়তো ওইসব ব্যাংকের ‘ব্যবসায়ী পরিচালকরাই’ লাইসেন্সের অর্থ পরিশোধ করে দিয়েছেন)! এভাবে ব্যাংক খোলার যথেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবারই সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছি আমি, কিন্তু শীর্ষ নেতৃত্বের কর্ণকুহরে ওই প্রতিবাদ পৌঁছায়নি। পাঠকদের জানাচ্ছি, দেশের ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা হচ্ছে ১ কোটি ৫৫ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি। তারা ফর্মাল চ্যানেলে কিংবা হুন্ডির মাধ্যমে যেভাবেই রেমিট্যান্স পাঠান না কেন, তার একটা বড় অংশ নিরাপত্তার খাতিরে ব্যাংকে আমানত হিসাবে জমা হয়ে যাবেই। এর ফলে, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে আমানতের একটা ঢল চলমান রয়েছে। সেজন্য খেলাপি ঋণ সমস্যা তিন দশক আগেই মহাসংকটে পরিণত হলেও ব্যাংকগুলো এখনো বড়সড় তারল্য সংকটে পড়তে হয়নি।

সরকারও যেহেতু ব্যাপারটা জানে, তাই খেলাপি ঋণ আদায়ে বিএনপি বা আওয়ামী লীগের সরকার কখনই সত্যিকার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে নিষ্ঠাবান ছিল না। ১৯৯৮ সালে তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত বিচারপতি সাহাবুদ্দীন বিআইবিএম আয়োজিত প্রথম নুরুল মতিন স্মারক বক্তৃতায় প্রতিটি ব্যাংকের শীর্ষ ১০ ঋণখেলাপির খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতির ওই প্রস্তাবে কর্ণপাতও করেনি তখনকার ক্ষমতাসীন সরকার, কিংবা পরবর্তী সময়ে ক্ষমতায় আসা ২০০১-০৬ মেয়াদের জোট সরকার এবং ২০০৭-০৮ সালের সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। বরং, বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর খেলাপি ঋণ লুকিয়ে ফেলাই ‘কালচারে’ পর্যবসিত হয়েছিল। উদাহরণ: আওয়ামী লীগ কর্তৃক ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত দেওলিয়া আদালতকে বিএনপি ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসেই একেবারে নিষ্ক্রিয় করে ফেলেছিল।

দেওলিয়া আইনটি এখনো বহাল থাকলেও দেওলিয়া আদালতের ঘুম গত ২৩ বছরেও ভাঙেনি। বরং, ২০০১ সাল থেকে খেলাপি ঋণ লুকিয়ে ফেলার সংস্কৃতি ২৩ বছরে ধাপে ধাপে এমনভাবে গেড়ে বসেছে যে, সদ্য সাবেক অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামাল অভূতপূর্ব কয়েকটি ‘অযৌক্তিক ও অন্যায় সুবিধা’ দিয়ে রাঘববোয়াল ঋণখেলাপিদের নিজেদের নাম ঋণখেলাপির তালিকা থেকেই উধাও করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে গেছেন। দেশের সবচেয়ে বড় ঋণখেলাপি এখন খোদ প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা! অতএব, খেলাপি ঋণের প্রতি সরকারের এহেন ন্যক্কারজনক দৃষ্টিভঙ্গি অব্যাহত রেখে ‘ব্যাংকের মার্জার’ ব্যাংকিং খাতকে সবল করে তুলবে আশা করা কি বাতুলতা নয়?

ড. মইনুল ইসলাম: বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ; অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মিছিলে বিএনপি নেতার গুলির প্রতিবাদে বিক্ষোভ

রৌমারীতে ব্যবসায়ীদের আহ্বায়ক কমিটির শপথ অনুষ্ঠিত

৬৫ ভরি স্বর্ণ ছিনিয়ে নেয়ায় মামুনের বিরুদ্ধে যুবদলের মামলা

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

ক্ষমা পেয়ে আমিরাত থেকে ১২ জন ফিরছেন চট্টগ্রামে

‘ছাত্র জনতার আন্দোলনে হাসিনা সরকার দুই ভাবে পরাজিত’

মহানবীকে (সা.) কটূক্তিকারী সেই যুবকের বিরুদ্ধে মামলা

শিবচর আঞ্চলিক সড়কে গ্রামবাসীর বৃক্ষরোপণ

মাদ্রাসাছাত্রকে বলাৎকার চেষ্টার অভিযোগ ধামাচাপা, ৭ দিন পর ফাঁস

১২ দিনেও মেলেনি রানীনগরে নিখোঁজ নার্গিসের সন্ধান

১০

দায়িত্বশীলদের নিয়ে সাতক্ষীরায় ছাত্র শিবিরের সমাবেশ

১১

আযহারী শিক্ষার্থীরা হবে বাংলাদেশ ও মিশরীয় ঐতিহ্যের সেতুবন্ধন : মিশরীয় রাষ্ট্রদূত

১২

রাজশাহীতে বস্তাভর্তি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার

১৩

আন্দোলনের ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রলীগ কর্মীকে গণধোলাই

১৪

আশুলিয়ায় গার্মেন্টস শ্রমিক অসন্তোষ ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে শ্রমিক সমাবেশ

১৫

কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি

১৬

পাকিস্তানের জলসীমায় বিপুল তেল-গ্যাস মজুতের সন্ধান

১৭

বিসিবির দুর্নীতির তদন্ত দাবি সাবেকদের

১৮

পাবিপ্রবি ছাত্রলীগ কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ

১৯

জেল খেটেছি তবু শেখ হাসিনার মতো পালিয়ে যাইনি : সাবেক এমপি হাবিব

২০
X