বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মের ১৩ বছর আগে চীনের এক নম্বর বিশ্ববিদ্যালয় Tsinghua University-র জন্ম। টাইমস এশিয়া ইউনিভার্সিটি রেঙ্কিং-এ এটি এখন এশিয়ার ১ নম্বর বিশ্ববিদ্যালয়। আর QS ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি রেঙ্কিং-এ এর অবস্থান ২৫! এই বিশ্ববিদ্যালয় কয়েক ক্যাটাগরির শিক্ষক নিয়োগ দেয়। একটা হলো topnotch ফ্যাকাল্টি। এই ক্যাটেগরিতে দরখাস্ত করার কন্ডিশন হলো নোবেল জয়ী অথবা ফিল্ডস অ্যাওয়ার্ড জয়ী কিংবা আবেল প্রাইজ জয়ীদের রেফারেন্স লাগবে। তাদের বিভাগের চেয়ারের পদ দেওয়া হবে। এই ক্যাটাগরির অধ্যাপক একটি ফিল্ডে গবেষণা গ্রুপকে নেতৃত্ব দিতে পারতে হবে। সব প্রকার সুবিধা দেওয়া হবে। এমন সুবিধা যেন নির্বিঘ্নে নিশ্চিন্ত মনে গবেষণা ও অন্যান্য কাজে মনোনিবেশ করতে পারে। বাসা দেওয়া হবে।
তারপর আছে অউটস্টান্ডিং ফ্যাকাল্টি। এই ক্যাটেগরিতে দরখাস্ত করার কন্ডিশন হলো বিশ্বের খ্যাতিমান টপক্লাস বিশ্ববিদ্যালয় বা টপক্লাস রিসার্চ ইনস্টিটিউটে গবেষণার অভিজ্ঞতা থাকতে। সেইসব টপ প্রতিষ্ঠানে যেমন বেতন দেওয়া হতো তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই বেতন ও অন্যান্য সুবিধা দেওয়া হবে। গবেষণার জন্য স্টার্ট আপ ফান্ড দেওয়া হবে। তারা যেন যথেষ্ট সংখ্যক পিএইচডি ও পোস্ট-ডক ফেলো পায় সেটা নিশ্চিত করে হবে।
তারপর আছে ইয়ং ফ্যাকাল্টি নিয়োগ। বয়স ৪০ এর মধ্যে হতে হবে। বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রিসহ শিক্ষকতা ও গবেষণার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। পদ হবে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর। কম্পিটিটিভ স্যালারি দেওয়া হবে। গবেষণার জন্য ৩০ লাখ টাকা স্টার্টআপ হিসেবে দেওয়া হবে। প্রয়োজনমতো পিএইচডি ছাত্র ও পোস্ট-ডক ফেলো দেওয়া হবে।
এইটা হলো চীনের ট্যালেন্ট হান্ট প্রজেক্ট। একটা দেশকে উন্নত করতে হলে সেই দেশের শিক্ষার মান বিশেষ করে উচ্চশিক্ষার মানকে উন্নত করতে হবে। উচ্চশিক্ষার মানকে উন্নত করতে হলে অত্যন্ত মেধাবীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। তার জন্য শিক্ষকতা পেশাকে অত্যন্ত আকর্ষণীয় করতে হবে। শিক্ষক নিয়োগের নামে ভোটার নিয়োগ দিলে হবে না। মেধাবীদের যথাযোগ্য মর্যাদা না দিলে হবে না। এই জন্যই শিক্ষায় বরাদ্দ জিডিপির কমপক্ষে ৫.৫% করতে হবে। অথচ সরকার শিক্ষকতা পেশাকে দিন দিন দুর্বল করছে। ফলে মেধাবীরা বিদেশে চলে যাওয়ার ঢল নেমেছে। এদেশের সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের টাকায় স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে ঠিক যখন দেশকে দেওয়ার সময় হয় তারা চলে যাচ্ছে। আসলে বলা উচিত চলে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। এইভাবে চললে দেশে কখনো সত্যিকারের উন্নয়ন হবে না।
পৃথিবীর অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন দরখাস্ত জমা দেওয়ার কোনো নির্দিষ্ট ডেডলাইন থাকে না। পৃথিবীর অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন প্রার্থীর জাতীয়তা দেখা হয় না। কেবল মেধা দেখা হয়। পৃথিবীর অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজাল্ট দেখে না। ওগুলো দেখিয়ে পিএইচডি পোস্ট-ডক করে ফেলেছে। দেখে পিএইচডির মান, গবেষণার মান, পিয়ার ও সুপারভাইজারের রেকমেন্ডেশন, রিসার্চ স্টেটমেন্ট। এইসব নিয়মকানুন আধুনিকায়ন না করলে আমরা কেবল পিছিয়ে যেতে থাকব। ফলে এমন মানুষ তৈরি করব যারা হবে প্রচণ্ড স্বার্থপর। স্বার্থপর না হলে আমলারা কীভাবে তাদের সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় দাবি করে? (অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুনের ফেসবুক পোস্ট থেকে নেওয়া)
ড. কামরুল হাসান মামুন : অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মন্তব্য করুন