অর্থ পাচার বাংলাদেশে নতুন কোনো বিষয় নয়। স্বাধীনতার পর থেকেই বিভিন্ন সময়ে সীমিত অথবা ব্যাপক আকারে অর্থ পাচার হয়েছে। জিডিপির আকার বড় হওয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও বেড়েছে। আর ততই দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হয়েছে। দুর্নীতি যত বেড়েছে অর্থপাচারও তত বেড়েছে। ১৯৭২-৭৩ সালে বাজেটের আকার ছিল খুবই কম। ফলে দুর্নীতির সুযোগও ছিল কম। বাজেটের ৫ শতাংশ অর্থ আত্মসাৎ করলেও সেটি খুব বড় অংকের হতো না। বর্তমান বাজেটের আকার বিবেচনায় ২ বা ৩ শতাংশ অর্থ আত্মসাৎ করলেও তার পরিমাণ অনেক বড় হবে এটাই স্বাভাবিক।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণের ফলে বিভিন্ন খাত থেকে অর্থ আয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে। বৈধ এবং অবৈধ বিভিন্ন জায়গা থেকেই অর্থ আয় হতে পারে। বৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ কিন্তু কর না দেওয়ায় অপ্রদর্শিত হয়ে যেতে পারে। আবার ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আয়ের সুযোগও বেড়েছে। সব মানুষই চায় অর্জিত অর্থ ভোগ করতে। কিন্তু ভোগের জন্য বাংলাদেশে যথেষ্ট সুযোগ নেই।
বিলাসবহুল হোটেল বা ক্রুজ শিপ বা আইসল্যান্ড এ দেশে নেই। ফলে তারা চাইবে বাইরে গিয়ে জীবন উপভোগ করতে। নিয়ম যদি এমন হতো— যে কেউ চাইলে অর্থ বাইরে নিয়ে ভোগ করতে পারবে, তাহলে হয়তো অধিকাংশই ঘোষণা দিয়ে অর্থ নিত। বাংলাদেশে যেহেতু অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন এবং তা বাইরে নিলে শাস্তির বিধান রয়েছে তাই তারা লুকিয়ে অর্থ বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যারা শাস্তি নিশ্চিত করবে তাদের অনেকেই এ ধরনের ভোগে মত্ত। তারা দুর্নীতি করলে ধরা কঠিন। রক্ষকই যখন ভক্ষক তখন কোনো আইনের প্রয়োগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে বাধ্য। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাটি বিশ্বের অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত।
প্রশ্ন হলো- অর্থ পাচারের কারণেই কি বাংলাদেশের আজকের অর্থনৈতিক সংকট? যেখানে ২০২০ সালে সরকার বলেছিল বাংলাদেশ দ্রুত সিঙ্গাপুর হয়ে যাবে। মাথাপিছু আয় ২০০০ ডলার থেকে ২০৪১ সালে ১৬ হাজার ডলারে চলে যাবে। যদিও লক্ষ্যকে পরিবর্তন করে বলা হচ্ছে, ২০৪১ সালে মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে সাড়ে ১২ হাজার ডলার। উন্নত বাংলাদেশের পথে যাত্রা করার ঘোষণার এক বছর পরই কেন আমরা চিন্তা করছি শ্রীলঙ্কা হয়ে যাব? সরকার থেকে বিভিন্নভাবে বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হবে না। প্রশ্ন হলো, হঠাৎ করে বাংলাদেশ কেন এত খারাপ অবস্থায় চলে গেল নাকি আগে থেকেই পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছিল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব বিশ্বের অনেকের ওপরই পড়েছে। কিন্তু কয়টি দেশ আমদানি ব্যয় মেটাতে পারবে না, ঋণখেলাপি হয়ে যাবে— এ ভয় পাচ্ছে? ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে, সে জায়গায় দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে কেন? ভারতেও মুদ্রার অবমূল্যায়ন হয়েছে। কিন্তু তারা আমদানি ব্যয় মেটাতে পারবে না, ঋণখেলাপি হয়ে যাবে— সে ভয় পাচ্ছে না। পাকিস্তান ইতোমধ্যে সে জায়গায় চলেই গেছে।
বিষয়টি শুধু অর্থ পাচারের ব্যাপার না। মূল বিষয় হলো সরকার অনেক বেশি উচ্ছ্বসিত ছিল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, রিজার্ভ, ফার্ম অ্যাকাউন্টের স্থিতিশীলতা নিয়ে। সে উচ্ছ্বাস থাকার কারণে সরকার দেশি-বিদেশি উৎস থেকে অনেক বেশি ঋণ নিয়েছে। গত পাঁচ বছরে ডলারে যে হারে ঋণ নেওয়া হয়েছে তাতে দেশের ঋণ অধিক হয়েছে। বেসরকারি খাতও ডলারে ঋণ নিয়েছে। এখন ফেরত দেওয়ার সময়ে এসে সমস্যা তৈরি হয়েছে। যদিও পরিসংখ্যান বলছে, জিডিপি অনুপাতে দেশের ঋণ এখনো নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে।
প্রশ্ন হলো, জিডিপির পরিসংখ্যান কি সঠিক বার্তা দিচ্ছে? প্রতিবছর যে হারে প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছে সেটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ কারণেই কি জিডিপি বৃদ্ধির সঙ্গে রাজস্ব বৃদ্ধির কোনো সম্পর্ক নেই? এ কারণে প্রবৃদ্ধি অনেক উঁচু হলেও তার সঙ্গে আনুপাতিক হারে বিনিয়োগ বাড়তে দেখছি না। রপ্তানি বৃদ্ধি পেতে দেখি না। কর্মসংস্থান বাড়ছে না। এ কারণে রাজস্ব বৃদ্ধির হার কম। এসব দেখে যে কারোই প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে সন্দেহ তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কর-জিডিপি অনুপাত না বাড়ার অন্যতম কারণ পরিসংখ্যানগত অসঙ্গতি। সরকার যদি জিডিপির প্রবৃদ্ধি একটু বেশি করে দেখায় তাহলে ট্যাক্স বাড়লেও জিডিপির তুলনায় তা বাড়বে না।
রিজার্ভ প্রসঙ্গে কিছু কথা বলতেই হয়। বাংলাদেশের রিজার্ভের পরিমাণ সর্বকালের রেকর্ড গড়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলার হয়েছিল বলে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু আজ ডলারের রিজার্ভ সরকারের হিসাবে কমে ৩১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের হিসাব মতে, এর পরিমাণ ২৪ বিলিয়ন ডলার। ডলারের চাহিদার তুলনায় জোগান কম হওয়ায় সরকার আমদানি নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু ডলার সংকটের শুরুটা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে তৈরি হয়নি, শুরুটা হয়েছে কৃত্রিম উপায়ে ডলারের দাম ধরে রাখায়।
টাকার মান ধরে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে ডলার ছেড়েছে। পরে দেখা গেল, এক বছরেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যাপক আকারে কমে গেছে, সঙ্গে সঙ্গে টাকার মানও কমেছে। কৃত্রিম উপায়ে ডলারের দাম ধরে রাখায় হঠাৎ করেই এ চাপ তৈরি হয়েছে, যা সামাল দেওয়ার সক্ষমতা বাংলাদেশের নেই।
এ মুহূর্তে সংকটটি নতুন মাত্রা লাভ করেছে। দেশের আমদানি পণ্যের একটি বড় অংশ উৎপাদনশীল খাতে ব্যয় হয়। আমদানি নিয়ন্ত্রণ করায় উৎপাদনশীল খাত বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। উৎপাদন কমে গেলে রপ্তানি কমে যাবে, ডলার আয় কমে যাবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না। ফলে অর্থনীতি নতুন করে স্থবির হয়ে পড়বে। আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে সরকার অনেক পণ্যে শুল্ক বাড়িয়েছে। শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়ার ফলে স্থানীয় বাজারে দাম বেড়ে যাচ্ছে। মুনাফা বেড়ে যাচ্ছে ফলে ব্যবসায়ীরা বেশি আমদানি করতে চাইবে। সরকার ডলার দিতে পারছে না। ব্যবসায়ীরা সবসময়ই চাইবে আমদানির মূল্যটা কম দেখিয়ে শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার জন্য। কারণ পণ্য আমদানিতে দেশে গড়ে ৩০ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। এক্ষেত্রে হুন্ডিতে অর্থ পরিশোধ তাদের জন্য সুবিধাজনক। হুন্ডিতে ডলার পাঠাতে ৫ শতাংশ বেশি দিলেও ২৫ শতাংশ সুবিধা পাওয়া যাবে। এই ২৫ শতাংশের মধ্যে খানিকটা ঘুষ দিয়েও ১৫-২০ শতাংশ মার্জিন থাকে, তাতে সুবিধা হয়।
একই কথা প্রযোজ্য রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রেও। হুন্ডিতে অর্থ পাঠালে বেশি অর্থ মেলে। ফলে প্রবাসীরা হুন্ডিতেই বেশি পাঠাতে চাইবে। এক্ষেত্রে বিষয়টি ঔচিত্যবোধ, দেশপ্রেম দিয়ে দেখলে হবে না। সরকার আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে, কিন্তু হুন্ডিতে মিলছে ১৫-২০ শতাংশ বেশি। এতে হুন্ডির দিক থেকে একটা চাহিদা তৈরি হয়েছে। হুন্ডির মাধ্যমে আসা অর্থ দেশে ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু অনানুষ্ঠানিক হওয়ায় রিজার্ভে সেটি যোগ হচ্ছে না। অন্যদিকে যারা ব্যাংকে টাকা জমা রাখে, তারা সুদ পায়। সে সুদে সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে কয়েক বছর। অথচ দেশে ৮ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি বিদ্যমান। এতে মনে হয় ব্যাংকে টাকা রাখাটা লাভজনক নয়। গ্রাহকরা ব্যাংকে টাকা রাখা লাভজনক মনে না করায় সিদ্ধান্ত নিল ব্যাংকে টাকা রাখবে না, টাকা কোথায় রাখবে তাহলে? এর কোনো বিকল্প দৃশ্যমান নয়, তবে বিকল্প হিসেবে স্বর্ণ কিনে রাখা যায়। বিশ্ববাজারে পূর্বের তুলনায় স্বর্ণের দাম তো বেড়েছেই। আর কি হতে পারে? ডলার কিনে রাখা। সরকার ডলার দিতে পারছে না, দাম নিশ্চয়ই বাড়বে। এরই মধ্যে ডলারের দাম ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়েছে।
শেয়ার বাজারে চাহিদা চুপসে গেছে। ফ্লোর প্রাইস দিতে হচ্ছে বারবার। যখন কার্ব মার্কেট এবং হুন্ডি মার্কেটে চাহিদা তৈরি হচ্ছে তখন আনুষ্ঠানিক চ্যানেল থেকে ডলার চলে যাচ্ছে। এতে আনুষ্ঠানিক খাতের সংকট আরও স্পষ্ট হয়েছে। অনেকে এ সংকটটাকে ব্যাখ্যা করতে চাইছে যে, অনেক ডলার বাইরে চলে গেছে। চলে যাওয়ার কারণেই এ সংকটটা তৈরি হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি কী এতটাই সরল?
বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে ডলার ছাড়লে বাজারে টাকার স্বল্পতা দেখা দেওয়ার কথা। সেটি কী দেখা যাচ্ছে? অনেকে বলছেন গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি রিপোর্ট অনুযায়ী ২০০৮-৯ থেকে ২০১৭-১৮ পর্যন্ত বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশ থেকে পাচার হয়েছে। বিষয়টি কী আসলেই তাই। প্রকৃত বিষয়টি হচ্ছে গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি রিপোর্ট বলছে, বাংলাদেশের আমদানি রপ্তানির তথ্যে মিচম্যাচ আছে এবং তার পরিমাণ এত বিলিয়ন ডলার। এর মানে এই নয় যে, দেশ থেকে এত ডলার চলে গেছে। বাংলাদেশ চীন থেকে পণ্য আমদানি করছে। এটি বাংলাদেশ সরকার যেমন হিসাব করছে তেমনি চীনও করছে। উভয়ের তথ্যের মধ্যে গরমিলের বিষয়টি এ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।
একইভাবে ইউরোপ ও বাংলাদেশের বাণিজ্যের তথ্যে মিচম্যাচ রয়েছে। প্রশ্ন উঠতে পারে, পার্থক্যটা কেন হচ্ছে? এখানে দুটি বিষয় ঘটতে পারে। এক. চীন কমিয়ে বলতে পারে। দুই. বাংলাদেশের আমদানিকারকরা বাড়িয়ে দেখিয়েছে। প্রতিবেদনে শুধু বলেছে, প্রতি বছর ৮ বিলিয়ন ডলারের একটা মিসপ্যাচ দেখা যাচ্ছে। আমদানির মূল্য যদি কমিয়ে দেখানো হয়, শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয় ইত্যাদি বিষয় খতিয়ে দেখা যেতে পারে। তবে তার মানে এই নয় যে, পুরো অর্থ পাচার হয়ে গেছে। এ কথা ঠিক এটি সঠিকভাবে ট্রাক করা গেলে সরকারের রাজস্ব বাড়ত। তবে যাই হোক না কেন, তথ্যের মিচম্যাচ মানে অর্থ পাচার না।
আমানতের ওপর সুদহার ধরে রাখায় অনেকে ব্যাংকে টাকা রাখার চেয়ে ডলার কিনতে উৎসাহী হয়েছেন। যে ব্যক্তি ব্যাংকে টাকা রাখছেন, তিনি মনে করছেন ডলার রাখলে লাভ বেশি। মানুষ জানে অনেক দিন ধরে ডলারের মূল্য অ্যাডজাস্ট হয়নি ফলে টাকার দাম পড়বে। টাকার দাম ও রিটার্ন কম। ফলে রিয়েল এক্সচেঞ্জ রেটে পিছিয়ে যাচ্ছি। তাতে আমাদের রপ্তানি পণ্যকে কম প্রতিযোগী করে দিচ্ছে। বাংলাদেশে ডলারের অ্যাপ্রিসিয়েশন কিছুদিন আগেও সেভাবে হয়নি তাই সবাই ভাবছে এখানে একটা উল্লম্ফন ঘটবে। এক্সচেঞ্জ রেট ওভার শুটিংয়ের একটি প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে।, এর ফলে ডলারের চাহিদা বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক বছর ধরে কৃত্রিমভাবে ডলারের দাম ধরে রেখেছিল। করোনা পরবর্তী আমদানি বেড়ে ওঠায় ডলারের চাহিদাও বেড়ে ওঠে তখন বাংলাদেশ ডলারের জোগান দিতে গিয়ে রিজার্ভে টান পড়ে। হঠাৎ করেই ডলারের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। বর্তমানেও কৃত্রিম উপায়ে ডলারের দাম ধরে রাখা হচ্ছে। এর জন্য ডলারের জোগানও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ফলে উৎপাদনমুখী খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটির আবার চক্রবৃদ্ধি প্রভাব রয়েছে। উৎপাদন না বাড়লে আয় বাড়বে না, আয় না বাড়লে কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে অর্থনীতি শ্লথ হয়ে পড়বে। তাই বিদ্যমান বাস্তবতায় ডলারের দাম বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়াই উত্তম।
সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা ধরে রাখার উদ্দেশ্য ছিল বিনিয়োগ বাড়বে, জিডিপির শতাংশে বিনিয়োগ বাড়বে। কিন্তু বিনিয়োগ বাড়েনি। ৮-১০ বছর ধরে এ প্রক্রিয়া চলছে। তাহলে কেন সুদহার ধরে রাখা হচ্ছে? প্রতিবছর ৬-৭ শতাংশ হারে মূল্যস্ফীতি ঘটছে। এর ফলে সবকিছুর মূল্য বেড়ে যাচ্ছে। এদিকে দেশে কৃত্রিমভাবে ডলারের রেট ধরে রাখলেও বিশ্বে প্রতিবছর ডলারের দাম বাড়ছে। এতে রপ্তানিকারকরা নিরুৎসাহিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ডলারের বর্তমান সংকটের জন্য অনেকে অর্থ পাচারকে দায়ী করছেন। কিন্তু ডলারের পাচারের কারণে যে আজকের সংকট তৈরি হয়েছে বিষয়টি তথ্য-উপাত্ত দিয়ে প্রমাণ করা যাচ্ছে না। মানুষ কেন ডলার বাইরে পাঠাচ্ছে এবং রেমিট্যান্সপ্রবাহ কেন কম এর কারণ অনুসন্ধান জরুরি। বর্তমান সংকটের সমাধান প্রশ্নে আমদানি বাড়াতে হবে। কারণ যদি আমদানি না বাড়াতে পারি, তাহলে আমদানির সঙ্গে উৎপাদন, উৎপাদনের সঙ্গে রপ্তানি এবং আল্টিমেটলি চাহিদার ওপর তার প্রভাব পড়বে। এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। সমাধান করতে গিয়ে আমরা যে ডলার শূন্য হয়ে যাচ্ছি তা নয়। ডলারের দাম সমন্বয় করতে হবে। সেটি কৃত্রিমভাবে ধরে রাখা কোনো যৌক্তিক সমাধান নয়। রপ্তানিকারক, আমদানিকারক, রেমিট্যন্সপ্রেরণকারী—একেকজনের জন্য একেক দামে ডলার কেনাবেচা কোনো সমাধান বয়ে আনবে না। ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হোক অথবা বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো একটা মেকানিজম দিয়ে করুক। কোনো গোষ্ঠীর হাতে এর দাম নির্ধারণের ভার দেওয়া যাবে না।
উৎপাদনের দিক থেকে দেশের কোন খাত কতটা আমদানি সেন্সিটিভ, তা দেখতে হবে। প্রায়োরিটি ঠিক করে একটা মাত্রা পর্যন্ত পণ্য আমদানি করতে দিতে হবে। ডলার রিজার্ভ রক্ষা করতে গিয়ে মূলধনী যন্ত্রপাতি ও মূলধনী পণ্য আমদানি হ্রাস পেলে তা উৎপাদনকে প্রভাবিত করবে।
ডলার সংকটের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার আটকে রাখবে না ছেড়ে দিবে- এ প্রশ্নে বলা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনই বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে পারবে না। যেহেতু একটা নির্দেশিত পথে কিছু জায়গায় সুযোগ দিতে হবে। এক্ষেত্রে নির্দেশিত পথ ছাড়া বাজারে ছেড়ে দিতে পারবে না। এতে সুদহার বাড়বে, কিন্তু বিনিময় হারের ক্ষেত্রে একটু সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে।
ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন : অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মন্তব্য করুন