আমাদের বিজ্ঞানী ও প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম. জাহিদ হাসানের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী আবারো বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান জার্নাল নেচার-এ একটি আর্টিকেল প্রকাশ করেছেন। এই আর্টিকেলের কাজের মাধ্যমে তিনি এবং তার দল কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের নতুন মাইলফলক ছুঁয়েছেন। তারা তুলনামূলক উচ্চ তাপমাত্রায় আরোনোভ-বোম ইন্টারফিয়ারেন্স ব্যবহার করে কোয়ান্টাম প্রভাব পর্যবেক্ষণ করেছেন যা এর আগে কেউ করেনি বা হতে পারে বলে প্রেডিক্টও করেনি। এ গবেষণাপত্র অনুযায়ী, জাহিদ হাসান ও তার দল বিসমাথ ব্রোমাইড সংকরের টপোলজিক্যাল ইনসুলেটরে আরোনোভ-বোম ইন্টারফিয়ারেন্স ব্যবহার করে কোয়ান্টাম প্রভাব পর্যবেক্ষণ করেছেন।
এটি ভবিষ্যতের বিভিন্ন প্রযুক্তি, যেমন উচ্চ গতির দ্রুততর কম্পিউটার ও অতি সুরক্ষিত যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তুলতে বড় ভূমিকা রাখবে। এতদিন যে কোয়ান্টাম দশা শুধু পরম শূন্য তাপমাত্রার কাছাকাছি পাওয়া গেছে, সেটা তিনি ও তার দল তুলনামূলক উচ্চ তাপমাত্রায় পর্যবেক্ষণ করেছেন। এ রকমটা আগে কখনো দেখা যায়নি। বলা যায়, এর ফলে বৈদ্যুতিক যন্ত্রে এ ধরনের পদার্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরেক ধাপ এগিয়েছেন তারা। কংগ্রাচুলেশন্স জাহিদ হাসান। আমরা আপনাকে নিয়ে গর্ববোধ করি।
তাদের এই কাজটির সংবাদ প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের ওয়েবসাইটে ফলাও করে প্রকাশ করেছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নিয়মিত কাজ। শুধু বিভাগের ওয়েব সাইট না বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদপত্র, ক্যাম্পাস রেডিও ইত্যাদিতেও সংবাদটি হাইলাইট আকারে প্রকাশিত হয়। আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের কাজী মাতিন উদ্দিন আহমেদ নেচার জার্নাল-এর সমতুল্য আরেক জার্নাল ‘সাইন্স’ একটি আর্টিকেল ২০২২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল যেটি আবার সেই ইস্যুর কাভার পিকচারও হয়েছিল। ওই কাভার পিকচার আসলে ছিল বাংলাদেশের ছবি। সেটি কি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবপেইজে ফলাও করে প্রকাশ করেছিল? সেই বিভাগের ওয়েবসাইটে কি হাইলাইটেড হয়েছিল? বাংলাদেশ থেকে নেচার কিংবা সায়েন্স জার্নালে প্রকাশ করা কি চারটি খানিক কথা?
আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে `ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বার্তা’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়। সেই পত্রিকায় কি কাজী মতিন উদ্দিন আহমেদ সাইন্স জার্নালে প্রকাশিত আর্টিকেলটির সংবাদ ফলাও করে প্রকাশ করেছিল? আমাদের দেশ থেকে ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর ৩ ওয়ালা জার্নালে আর্টিকেল প্রকাশ করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বার্তায় ফলাও করে প্রচার করা উচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বার্তা এমন একটি পত্রিকা যেখানে প্রথম আর শেষ পাতা জুড়ে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বা প্রোভিসির সংবাদই থাকে।
এইটা শুধু আজকের ব্যাপার না। এইটা অনেক বছর ধরে এমনই হয়ে আসছে। কেউ এই ধারা পরিবর্তনের চেষ্টা করেনি। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় বার্তা পত্রিকাতে ছাত্রদের কথা শিক্ষকদের গবেষণার সংবাদ বেশি বেশি প্রকাশিত হওয়া উচিত। বিশ্ববিদ্যালয় মানেই ছাত্র ও শিক্ষকদের লেখাপড়া, খেলাধুলা ও গবেষণা কর্মকান্ড। এইসব সংবাদই বেশি বেশি প্রকাশিত হলে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা অনুপ্রাণিত হয়। এই culture টিই আমরা এখনো তৈরি করতে পারিনি। কত জন মানুষ জানে কাজী মতিন উদ্দিন নিয়মিত নেচার ও সাইন্স জার্নালসহ বিশ্বখ্যাত জার্নালে আর্টিকেল প্রকাশ করে চলেছেন। (অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুনের ফেসবুক পোস্ট থেকে নেওয়া)
ড. কামরুল হাসান মামুন: অধ্যাপক, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মন্তব্য করুন