ড. মইনুল ইসলাম
প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৪, ০৪:৪৭ পিএম
আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২৪, ০৫:২০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
ড. মইনুল ইসলামের নিবন্ধ

বাংলাদেশের জীবনযাত্রার মান কি পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে ভালো?

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আমরা অনেকেই হয়তো জানি না যে গড় মাথাপিছু জিএনআই এর দিক থেকে বাংলাদেশের জনগণ পশ্চিমবঙ্গের জনগণকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। (জিএনআই হলো জিডিপি ও নিট রেমিট্যান্সের যোগফল)। পশ্চিমবঙ্গের মাথাপিছু জিএনআই ভারতের গড় মাথাপিছু জিএনআই এর সমান হলেও ওখানকার গ্রামীণ মাথাপিছু জিএনআই অনেক কম। কোলকাতা, দুর্গাপুর, খড়গপুর, হলদিয়া, বর্ধমান এবং শিলিগুড়ি পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির মূল সমৃদ্ধি-কেন্দ্র রয়ে গেছে। কিন্তু, জীবনযাত্রার মানের দিক থেকে এখনো পশ্চিমবঙ্গের মানুষ বাংলাদেশের মানুষের চাইতে খানিকটা ভাল রয়েছে বলে আমার বিশ্বাস। 

এর পেছনে প্রধান কারণটি হলো, বেশিরভাগ নিত্য-প্রয়োজনীয় দ্রব্য ও সেবার দাম পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের চাইতে অনেক কম। কোলকাতা বেড়াতে যাওয়া বাংলাদেশীরা হাড়ে হাড়ে টের পান যে ওখানে প্রায় সবকিছুর দাম ঢাকার চাইতে কম। পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য শহরে এবং গ্রামাঞ্চলেও এ-কথাটি সহজেই বোঝা যায়। 

খাদ্যদ্রব্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা--যেগুলোকে ‘মৌল চাহিদা’ বলা হয় সেগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট প্রায় সব পণ্য ও সেবার দাম বাংলাদেশে পশ্চিমবঙ্গের চাইতে বেশি। পশ্চিমবঙ্গে আয়বৈষম্য বাংলাদেশের চাইতে আনেক কম। উপরন্তু, পশ্চিমবঙ্গের জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতা আমাদের দেশের জনগণের চাইতে অনেক বেশি হওয়ায় ওখানকার কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার ও গ্রাম-পঞ্চায়েতের শাসনব্যবস্থা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি জনবান্ধব। কিন্তু, গত সাড়ে চার দশক ধরে এই দুই অঞ্চলের অর্থনীতিতে বড় ধরনের পালাবদল ঘটে চলেছে যা এই কলামে তুলে ধরছি। 

১৯৭১ সালে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল থেকে একনদী রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জনকারী বাংলাদেশ ছিল একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত এবং চরম দারিদ্র্য-কবলিত দেশ, যেখানে জনসংখ্যার ৮২ শতাংশই ছিল দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থানকারী জনগোষ্ঠী। সুতরাং, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অব্যবহিত পর পশ্চিমবঙ্গের মানুষ দারিদ্র্যপীড়িত হলেও বাংলাদেশের মানুষের চাইতে জীবনযাত্রার মানে অনেকখানি এগিয়ে ছিল। এমনকি বিংশ শতাব্দীর আশির দশক ও নব্বই দশকে বাংলাদেশের এবং পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জীবনযাত্রার মানের তুলনা করলেও যে বিষয়গুলো সামনে চলে আসবে সেগুলো হলো, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ বামফ্রন্টের দীর্ঘ শাসনামলে যথাযথ গুরম্নত্ব পাওয়ায় এবং অপারেশন বর্গার মত কৃষি সংস্কারের সুফল পাওয়ায় বাংলাদেশের মানুষের চাইতে জীবনযাত্রার মানে আরো এগিয়ে গিয়েছিল। 

কিন্তু, সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে গত সাড়ে চার দশকে বাংলাদেশ থেকে যে এক কোটি পঞ্চান্ন লাখ অভিবাসী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অভিবাসন করেছেন ও বেশিরভাগ কর্মরত রয়েছেন তাঁদের পাঠানো ক্রমবর্ধমান রেমিট্যান্সের অর্থপ্রবাহ এদেশের গ্রামীণ জনগণের জীবনে স্বচ্ছলতার একটা বড়সড় উপাদান নিয়ে এসেছে, যা পশ্চিমবঙ্গে তেমন উলেস্নখযোগ্য নয়। এই একটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গকে এতখানি পেছনে ফেলে দিয়েছে যে এখন বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ অর্থনীতির চাইতে অনেক বেশি গতিশীল ও স্বচ্ছল হয়ে উঠেছে। 

২০১৫ সালে বিশ্ব ব্যাংকের ‘নিম্ন আয়ের দেশ’ ক্যাটেগরি থেকে বাংলাদেশ ‘নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ’ ক্যাটেগরিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। ক্ষুদ্র ঋণ আন্দোলনের সাফল্য গ্রামের ভূমিহীন নারীদের কাছে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ পৌঁছে দেওয়ার একটা অত্যন্ত কার্যকর হাতিয়ার বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছে। কয়েক হাজার এনজিও’র ক্ষুদ্রঋণের সহায়তায় গ্রামীণ নারীর স্বকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বাংলাদেশ বিশ্বে সফল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে। 

বাংলাদেশের গ্রামীণ দারিদ্র্য নিরসনে ক্ষুদ্রঋণ তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। বাংলাদেশের নারীদের প্রায় ৪১ শতাংশ বাড়ীর আঙিনার বাইরে অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষভাবে ক্রিয়াশীল। দেশের দ্রুত বিকাশমান পোষাক শিল্পে ৩৩ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আর এই শ্রমিকদের ৬০ শতাংশেরও বেশি নারী, যাদের সিংহভাগই গ্রাম থেকে এসে শহরে কর্মসংস্থানকে বেছে নিয়েছেন। সমাজের দরিদ্র ও প্রান্তিক অবস্থানের এসব নারীর প্রাতিষ্ঠানিক শিল্পখাতে কর্মসংস্থান তাদের বঞ্চনা ও চরম দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের বৃহদংশই তাদের আয়ের একটা অংশ গ্রামে থাকা মা-বাবা-সন্তানদের ভরণপোষণের জন্য গ্রামে পাঠিয়ে দেন, যা গ্রামের প্রান্তিক জনগণকে দারিদ্রের কষাঘাত থেকে রক্ষা করছে। 

এর উল্টোদিকে পশ্চিমবঙ্গে গত তিন দশক ধরে এক ধরনের ‘বি-শিল্পায়ন’ (de-industrialisation) প্রক্রিয়া ক্রিয়াশীল হয়ে উঠেছিল আক্রমণাত্বক ট্রেড ইউনিয়ন ও রাজনৈতিক হানাহানির কারণে। অনেক শিল্পপতি পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে তাঁদের শিল্প-কারখানা সরিয়ে নিয়েছেন বৈরী রাজনীতির শিকার হয়ে। এ-ব্যাপারে হয়তো পাঠকদের মনে আছে, বামফ্রন্টের আমলে মমতা ব্যানার্জীর রাজনৈতিক আন্দোলনে নাজেহাল হয়ে টাটা গ্রুপ কর্তৃক তাদের ‘টাটা ন্যানো’ গাড়ীর কারখানা পশ্চিমবঙ্গের সিংগুর থেকে গুজরাটে স্থানান্তরের ঘটনাটি সারা বিশ্বে প্রচন্ড আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। পরবর্তীতে নন্দীগ্রাম থেকে ইন্দোনেশিয়ার একটি শিল্পগ্রুপকেও পাততাড়ি গুটাতে হয়েছিল মমতা ব্যানার্জীর আন্দোলনের কারণে। 

২০১১ সালে মমতা ব্যানার্জীর তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতাসীন হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের এই নেতিবাচক ইমেজ এখনো দূর হয়নি। এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ যে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৫০ শতাংশ শ্রমজীবী মানুষ এখনো কৃষিখাতে কর্মরত, অথচ বাংলাদেশে কৃষিখাতে কর্মরত শ্রমশক্তি এখন ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে। ভারতের এক সময়ের নেতৃস্থানীয় শিল্পায়িত রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ বর্তমানে মহারাষ্ট্র, গুজরাট, কর্ণাটক ও তামিলনাড়–র তুলনায় শিল্পায়নের ক্ষেত্রে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে। ফলে, পশ্চিমবঙ্গের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারও আশানুরূপ বাড়ছে না গত চার দশকে। 

অন্যদিকে, কিছুদিন আগেও মনে করা হতো কৃষিখাতের অগ্রগতি বাংলাদেশের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে বেশি। অপারেশন বর্গার সাফল্য পশ্চিমবঙ্গকে এই অগ্রগতি অর্জনে সহায়তা করেছিল। ফলে, বিংশ শতাব্দীর আশি ও নব্বইয়ের দশকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ধান-চাল, মাছ, মুরগীর বাচ্চা ও ডিম, গরু ইত্যাদি বাংলাদেশে বৈধ-অবৈধ পথে আসাটাই নিয়মে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু এখন বাংলাদেশের কৃষিখাতেও সমৃদ্ধির ছোঁয়া লেগেছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর নেতৃত্বে কৃষি ও কৃষক-বান্ধব নীতিমালা গ্রহণের কারণেই কৃষিখাতে এই চমকপ্রদ সাফল্যের ধারা সূচিত হয়েছিল, এবং ১৯৯৮ সালের বন্যার ধ্বংসযজ্ঞ সত্ত্বেও ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ দীর্ঘ ৪২ বছর পর ধান উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতা অর্জনের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছিল। 

কিন্তু, দুঃখজনকভাবে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আওয়ামী লীগের কৃষি নীতিমালা পরিত্যাগ করে। ২০০৯ সালে মহাজোট আবার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর তাদের নিষ্ঠাবান প্রয়াসের ফলে ২০১১ সালে বাংলাদেশ মোটা ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ১৯৭২ সালে দেড় কোটি টন ধান লাগতো আমাদের, অথচ উৎপাদন করতে পারতাম মাত্র এক কোটি দশ লাখ টন। গত ২০২২ সালে এদেশে তিন কোটি বিরানব্বই লাখ টন ধান উৎপাদিত হয়েছে। সতের কোটির বেশি মানুষের খাদ্যশস্য যোগান দিয়েও এখন প্রায় প্রতি বছর মোটা ধান উদ্বৃত্ত হচ্ছে আমাদের। 

ধান, গম ও ভুট্টা মিলে ২০২২ সালে খাদ্যশস্য উৎপাদন ছিল চার কোটি ষাট লাখ টন। মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়, তরি-তরকারী উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ। আলু, হাঁস-মুরগীর ডিম ও মাংস উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। গরুর মাংস ও দুধ উৎপাদনে দেশে এখনো ঘাটতি রয়ে গেলেও মাংস উৎপাদনে কয়েক বছরের মধ্যেই স্বয়ম্ভরতা অর্জন করা যাবে। ঈদুল আজহার সময় অতীতে চোরাচালানে আসা ভারতীয় গরু গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও এখন তার প্রয়োজন হয় না, বরং মাঝে মাঝে কোরবানীর গরু উদ্বৃত্ত থাকছে। আম, আনারস, কলা, পেয়ারা ও কাঁঠালের মত কয়েকটি প্রধান ফল উৎপাদনেও বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। (প্রতি বছর আমরা ৫৫/৬০ লাখ টন গম আমদানি করি)। খাদ্যসাহায্য এখন আমাদের বৈদেশিক ঋণ/অনুদানের এক শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। 

উচ্চফলনশীল প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার, সেচ ব্যবস্থার আওতায় আসায় দেশের অধিকাংশ জমিতে বোরো চাষের সম্প্রসারণ, যথাযথ ভর্তুকি প্রদান, কৃষিঋণ পদ্ধতির সহজীকরণ, ফসলের বহুধাকরণ, কৃষির লাগসই যান্ত্রিকীকরণ, উচ্চফলনশীল ফসল, তরিতরকারী, মাছ, হাঁস-মুরগী ও ফলমূল চাষের ব্যাপক প্রচলন, রাসায়নিক সার, বীজ ও কীটনাশকের সহজলভ্যতা, ইত্যাদি কৃষিখাতের উল্লেখযোগ্য সাফল্য। ফলে, উৎপাদনশীলতার উল্লম্ফন বাংলাদেশেও একটি কৃষি বিপ্লবের সূচনা করেছে। অবশ্য বাংলাদেশের জিডিপি’র মাত্র ১৩ শতাংশ এখন কৃষিখাত থেকে আসছে, যা ক্রমহ্রাসমান। কিন্তু, কৃষিতে এখনো দেশের ৪০ শতাংশ শ্রমজীবী মানুষ কর্মরত রয়েছে। 

উপরন্তু, বাংলাদেশের অভিবাসীরা ফরমাল চ্যানেলে প্রতি বছর যে ২১/২২ বিলিয়ন ডলার অর্থ এবং হুন্ডির মত অপ্রাতিষ্ঠানিক চ্যানেলে যে আরো ১৫-২০ বিলিয়ন ডলারের সমমূল্যের রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন তা গ্রামীণ অর্থনীতির জন্যে সবচেয়ে বড় শক্তির উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগণের দারিদ্র্য দ্রুত নিরসনের বড় কারণ এই রেমিট্যান্স প্রবাহ। রেমিট্যান্স প্রবাহের সুফলভোগী পরিবারগুলোর বর্ধিত ভোগ, সঞ্চয় ও বিনিয়োগে গ্রামীণ অর্থর্নীতিতে বড়সড় সমৃদ্ধির জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বাড়ীঘর পাকা হচ্ছে, অন্যান্য ধরনের বসতঘরেরও মান বৃদ্ধি পেয়েছে, ছেলেমেয়েরা ভাল স্কুল-কলেজে-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে, পরিবারের সদস্যদের আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সামর্থ্য বাড়ছে, শিশুমৃত্যুর হার কমছে, সেনিটারী পায়খানার প্রচলন বাড়ছে, ঘরে ঘরে টিউবওয়েল বসে গেছে, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ চলে এসেছে, কৃষির যান্ত্রিকীকরণ তরান্বিত হচ্ছে, গ্রামে শপিংমল স্থাপনের হিড়িক পড়েছে। গ্রামের রাস্তাঘাটেও আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা চালু হয়ে গেছে। 

এর ফলে, গ্রামীণ জনগণের মধ্যে প্রায় আশি লাখ পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ৪-৫ কোটি মানুষ এখন নিম্ন-মধ্যবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্ত অবস্থানে উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। কৃষিখাতের সাফল্যের পেছনেও বাংলাদেশী অভিবাসীদের অবদান অনস্বীকার্য। কৃষিতে উচ্চ ফলনশীল প্রযুক্তির প্রসার, সেচ ব্যবস্থার ব্যাপক প্রচলন, কৃষির যান্ত্রিকীকরণ, গ্রামীণ যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ, আধুনিক স্বাস্থ্য সুবিধা গ্রহণের পারঙ্গমতা বৃদ্ধি, গ্রামীণ জনগণের খাদ্যের পুষ্টিমান বৃদ্ধি, ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স বিপুল অবদান রাখছে। গ্রামীণ সড়ক-উন্নয়ন এবং আধুনিক পরিবহন চালুর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। গ্রামীণ বিদ্যুতায়নেও বাংলাদেশের সাফল্য পশ্চিমবঙ্গ থেকে বেশি। 

পশ্চিমবঙ্গের গ্রামগুলোর সাক্ষরতার হার এখনো বাংলাদেশের গ্রামীণ সাক্ষরতার হারের চাইতে অনেক বেশি। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষার মানও বাংলাদেশের চাইতে ভাল, উচ্চশিক্ষিত মানুষও পশ্চিমবঙ্গে অনেক বেশি। (মাদ্রাসা শিক্ষঅ বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে পেছনে টেনে ধরে রেখেছে)। তথ্য প্রযুক্তির প্রসারেও পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের চাইতে অগ্রগামী। পশ্চিমবঙ্গ থেকে আইটি সম্পর্কিত সেবা রফতানি চার বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। গ্রামীণ জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতা বাংলাদেশের চাইতে পশ্চিমবঙ্গে অনেক বেশি হওয়ায় স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা ওখানে অনেক কম দুর্নীতিগ্রস্ত। অথচ, বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগণের জীবনের সবচেয়ে বেশি দুর্দশা, যাতনা ও হয়রানি ঘটিয়ে চলেছে স্থানীয় সরকারের দুর্নীতি। এদেশের গ্রামীণ জনগণের জীবনের আরেকটি বিভীষিকার নাম শাসকদলের নেতা-কর্মীদের মাস্তানি ও গুন্ডামি। দেশ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন নির্বাসিত হয়ে গেছে। সেজন্যই প্রশ্ন উঠছে, অর্থনৈতিক অভাব-অনটন বেশ খানিকটা কমে গেলেও বাংলাদেশের মানুষ কি ভাল আছেন? 

অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গে সুষ্ঠু গণতন্ত্রের সুফল জনগণের তৃণমূল পর্যায়েও পৌঁছে গেছে। ওখানকার গ্রাম-পঞ্চায়েতগুলো জনগণের অংশগ্রহণমূলক ও জবাবদিহিমূলক স্থানীয় সরকারের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিধানসভা এবং লোকসভার নির্বাচনগুলোও পশ্চিমবঙ্গে জালিয়াতিমুক্ত বলা চলে। গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি’র ভরাডুবি তারই অকাট্য প্রমাণ বহন করছে। অবশ্য, বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার প্রায় ১৮-১৯ শতাংশ এখনো দারিদ্র্য সীমার নিচে অবস্থান করছে।  

ড. মইনুল ইসলাম: সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ওঅবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়  

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আজকের নামাজের সময়সূচি

প্রথম দিনে উইন্ডিজ তুলল ২৫০ রান

গাঁজা-জাল নোটসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের শীতবস্ত্র বিতরণ

উইন্ডিজের প্রতিরোধ ভেঙে বাংলাদেশের স্বস্তি

টাইম ম্যাগাজিনকে ড. ইউনূস / ট্রাম্প ব্যবসায়ী, আমরাও একজন ব্যবসায়িক অংশীদার চাই

২০২৪ সালের হাইয়েস্ট কালেকশন দরদের : শাকিব 

নায়িকা পরীমনির প্রথম স্বামী নিহত

রাজনীতিতে আ.লীগের পুনর্বাসন ঠেকাতে হবে: নুর

নির্বাচন যত দ্রুত হবে, সমস্যা তত কমে আসবে : মির্জা ফখরুল

১০

খাসজমির দখল নিয়ে সংঘর্ষে দুজন নিহত

১১

মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে ক্রীড়াঙ্গন অন্যতম একটি মাধ্যম : আমিনুল হক 

১২

তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল

১৩

আহত রানার পাশে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’

১৪

ফেসবুকে দাবি ‘মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ একই ব্যক্তি’, যা বলছে ফ্যাক্ট চেক

১৫

একদিকে প্রশান্তি, অশান্তিও বিরাজ করছে: শামা ওবায়েদ

১৬

চোর সন্দেহে খুঁটিতে বেঁধে যুবককে নির্যাতন

১৭

র‍্যানকন মটরসের সঙ্গে ক্র্যাক প্লাটুন চার্জিং সলুশনের চুক্তি

১৮

জনকল্যাণে কাজ করাই বিএনপির মূল লক্ষ্য : নয়ন

১৯

‘এক ফ্যাসিস্টকে হটিয়ে আরেক ফ্যাসিস্টকে ক্ষমতায় দেখতে চাই না’

২০
X