একজন ক্রিকেটপ্রেমী বা ক্রিকেটার হিসেবে ক্রিকেট বল আপনার হাতের সামনে পেয়েছেন আর আপনি সেটা দিয়ে বল করার চেষ্টা করেননি তা তো হতেই পারে না। কিন্তু আপনি কী কখনও ভেবে দেখেছেন অথবা আপনি কী জানেন আপনার করা গতিশীল বলটি মাটিতে পড়ার পর কেন সুইং করে? কেনই বা ইনসুইং, আবার কেনই বা আউট সুইং অথবা রিভার্স সুইং হয়েছে?
আপনারা হয়তো জেনে থাকবেন, স্পোর্টসের সঙ্গে সায়েন্সের একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে। ক্রিকেটেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ক্রিকেট ও সায়েন্স একে অপরের পরিপূরক। আপনারা লক্ষ্য করলেই দেখবেন ক্রিকেটে সায়েন্সের (বায়ো- মেকানিক্স, পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন ফর্মুলা, ম্যাথম্যাটিকাল ইকোয়েশন) নিয়মিত ব্যবহার করা হয় অথবা ব্যবহার করতে হচ্ছে। যে কারণেই আধুনিক ক্রিকেটে দিনকে দিন ক্রিক সাইন্সের প্রতি জোর দেওয়া হচ্ছে। আর এই ক্রিক সাইন্সের কারণেই ক্রিকেটের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো নিয়ে ইঞ্জিনিয়াররা প্রতিনিয়ত গবেষণা করে যাচ্ছেন।
একজন বোলার কীভাবে বল করলে বল ইনসুইং ও আউট সুইং হয়, কীভাবে একজন ব্যাটার শট খেললে বল বেশি দূরে যায়, কী কারনে একজন উইকেট কিপার / ফিল্ডার খুব সহজেই উঁচুতে লাফিয়ে বল ধরতে পারে, এমন আরও অনেক কিছু। একজন ক্রিকেটার যদি এই সায়েন্সগুলো আগে থেকেই জেনে নেয় ম্যাচে তার জন্য এগুলো প্রয়োগ করা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে এবং ভালো ফলাফলও আশা করা যাবে। কারণ আমাদের হিউম্যান ব্রেইন যে বিষয়টি আগে থেকে জানে সে বিষয়ে ঠিকঠাকভাবে রেসপন্স করতে পারে।
আপনাদের মধ্যে অনেক বোলার আছেন যারা খুব গতিতে বল করে থাকেন। অনেক ভালো সুইং বলও করে থাকেন। কিন্তু সত্যি বলতে আপনাদের মধ্যে অনেকেই জানেই না কেন আপনাদের বল সুইং হয়। কেন আপনাদের বল মাটিতে পড়ার পর ইনসুইং ও আউট সুইং অথবা রিভার্স সুইং হয়। অনেকেই এটাও বলতে পারেন না কেন বলের একটা পার্শ্ব নিয়মিত ঘষে ঘষে শাইনিং বা উজ্জ্বল করে থাকে। আর বলের এক পার্শ্ব শাইনিং বা উজ্জ্বল করলে লাভ কী হয়। আপনারা বল শাইনিং করেন কারণ আপনাদের কোচ অথবা সিনিয়র কেউ শাইনিং করতে বলছে তাই করেন।
কিন্তু বল শাইনিং করলে প্রকৃতপক্ষে কোনো বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায় কি না তা আপনাদের মধ্যে অধিকাংশই জানে না। তাহলে চলেন জেনে নেওয়া যাক কেন আপনার করা গতিশীল বল মাটিতে পড়ার পর সুইং করে, কেনই বা ইনসুইং, কেনই বা আউট সুইং অথবা রিভার্স সুইং হয় ।
আপনারা যারা ক্রিকেটের সাথে যুক্ত তারা সকলেই জেনে থাকবেন, ক্রিকেট বল সাধারণত চামড়া ও কর্কের সংমিশ্রণে তৈরি হয়ে থাকে। সেইসঙ্গে ক্রিকেট বলের চামড়াতে মাঝ বরাবর যে সেলাই দেওয়া হয়ে থাকে ক্রিকেটের ভাষায় তাকে বলা হয় সীম। এই সীম খুবই কাজে আসে বোলারদের সুইং বোলিং করতে। সুইং বল করতে হলে বলটিকে এমনভাবে ছুঁড়তে হয় যাতে করে বলটি সীম বরাবর ঘুরতে পারে। এ ছাড়াও সুইং বোলিংয়ে অনেক কিছুই প্রভাব ফেলে যেমন : বলের গতি, কীভাবে বল ছোড়া হয়েছে, বলের ওজন,বলের অবস্থা, সেইসাথে বাতাসের চাপ ও গতি।
বোলার কর্তৃক বল ছোড়ার পর সেই বলটিকে ঘুরতে বাতাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ও বলটিকে ঘুরতে সাহায্য করে। বল মাটিতে পড়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বল বাতাসে ভাসতে থাকে। ঠিক ওই সময়ে বলের সাথে বাতাসের সংঘর্ষ শুরু হয়। বলের যেই পার্শ্বটাকে নিয়মিত ঘষে ঘষে শাইনিং বা উজ্জ্বল করা হয় সেই পার্শ্বে বায়ুপ্রবাহ সচল থাকে। যার কারণে শাইনিং পার্শ্বটি বাতাস কে ভেদ করে মাটিতে আগে পড়ে ডান দিকে বাঁক নেয় যেটাকে আমরা ক্রিকেটের ভাষায় ইনসুইং বলে থাকি।
অন্য দিকে বলের অন্য পার্শ্বটি রাফ বা অমসৃণ হওয়ায় বায়ু প্রবাহে বাধাগ্রস্ত হয়। তাই বাতাসকে ভেদ করে মাটিতে পড়তে একটু সময় নেয়। বোলার যদি ইনসুইং বল করতে চায় তখন তাকে শাইনিং সাইডটিকে বাইরের দিকে রাখতে হয় এবং রাফ সাইডটিকে ভেতরের দিকে রাখতে হয়। আবার বোলার যদি আউট সুইং করতে চায় তাহলে রাফ সাইডটিকে বাহিরের দিকে এবং শাইনিং সাইডটিকে ভেতরের দিকে রাখতে হয়। সাধারণত নতুন বলে ইনসুইং ও আউট সুইং বেশি হয় কিন্তু বল যখন বেশি নষ্ট হতে থাকে তখন বল রিভার্স সুইং হয় । রিভার্স সুইং করতে হলে আউট সুইং এর নিয়ম অনুসরণ করতে হয়।
আশা করি আজকের এই লেখাটির মাধ্যমে সুইং বোলিংয়ের বিষয়ে কিছুটা হলেও জানতে পেরেছেন যা কিনা আপনাদেরকে ম্যাচে কিছুটা হলেও কাজে দিবে।
ইন্জিনিয়ার মো. সাইফুল ইসলাম শিবলু : ক্রিকেটার, ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগ, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড
মন্তব্য করুন