প্রকৌ: মু: মাহবুব হোসেন
প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:৫৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি, অর্থপাচার এবং বিত্ত-বৈষম্যের অজানা বাস্তবতা

প্রকৌ: মু: মাহবুব হোসেন। ছবি : সংগৃহীত
প্রকৌ: মু: মাহবুব হোসেন। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির পরিমাণ নিয়ে বিবিধ জল্পনা-কল্পনা, গল্প, কাহিনি আছে, খুব অল্পসংখ্যক ক্ষেত্র ব্যতীত বেশিরভাগই বাস্তব বা সত্য থেকে যথেষ্ট দূরে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক জমায়েতে প্রায়ই আলোচনায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ হয়ে থাকে আমার। মানুষের বেশির ভাগ মন্তব্যই ধারণাপ্রসূত অথবা শোনা কথা- কখনো পরিচিত কারও মুখ থেকে, কখনো পত্রিকা পরে, আবার কখনোবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কোনো কনটেন্ট দেখে। সহজাত প্রক্রিয়ায়ই বেশিরভাগ মানুষের অন্যের নেতিবাচক ব্যাপারগুলোতে জানার এবং সেগুলো নিয়ে সুযোগ পেলেই আলোচনা-পর্যালোচনা করার মাধ্যমে সেগুলো ছড়িয়ে দেবার আগ্রহ থাকে বেশি। ঠিক এই- কারণেই খবরের কাগজ হোক বা ব্রডকাস্ট মিডিয়া হোক, নেতিবাচক খবরকে জমকালোভাবে পরিবেশন করে নিজেদের কাটতি বাড়াতে মরণাপন্ন তারা। আর এই পথভ্রষ্ট সামাজিক অবস্থার সুযোগে নেতিবাচক কনটেন্ট (অরিজিনাল হোক বা ভুয়া) তৈরির বাজার বেশ রমরমা।

আমি ঠাট্টার ছলে বন্ধু মহলে প্রায়ই বলে থাকি- যুগ যুগ ধরে জাতি হিসেবে আমরা ছিলাম গরিব, দাসত্বপ্রিয়, আজকের ভাষায় যাকে বলা যেতে পারে ‘ফইন্নি’ জাত। এই ফইন্নিজাতের মানুষের সামনে দিয়ে কল্পনারও অতীত বড় বড় কাজ আর তার সাথে সংশ্লিষ্ট হাজারো কোটি টাকা উড়ে গেলে, কতজনই বা হাত ঝাপটা না দিয়ে থাকতে পারে, বলেন! অনেকেই মুখে স্বীকার না করলেও বুকে জানেন, এখনো আমাদের দেশের একটা বড় অংশের মানুষই হয় কুশিক্ষিত নয়তো অশিক্ষিত, আর সুযোগ এবং সাহসের অভাবে চরিত্রবানের বেশ ধরে থাকে। একজন দায়িত্বশীল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে এ কথা এতটা সরাসরি বলা রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত কিনা এ ব্যাপারে সন্দেহ নিয়েই সত্য হিসেবে বলে ফেললাম।

দেশের মানুষের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি দেশের মানুষের জীবনমানের টেকসই উন্নয়নের স্বপ্ন দেখে, পরিকল্পনা সাজিয়ে, সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে দুর্বার গতিতে দেশের মানুষকে সাথে নিয়ে এগিয়ে চলার সক্ষমতা বর্তমান সরকার করে চলেছে- এই সত্যকে অস্বীকার করা টিনের চশমা পরা মাত্রই নয় কি? অনেক সমালোচনা করার মতো কাজও যে হয় নাই তাও নয়। তবে বাংলাদেশকে, দেশের মানুষকে আমূল বদলে দিতে পেরেছে বর্তমান সরকার- এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। টিনের চশমা পরে আলোকে অন্ধকার হয়তো বলার চেষ্টা করা যেতে পারে, তবে সত্যকে অস্বীকার করা যায় না, বিরোধের জন্য বিরোধ করা যায় মাত্র।

আমি আমার স্বার্থ দেখব সাধারণ নাগরিক হিসেবে, কোনো নেতা বা রাজনৈতিক দলের কোনো বিশেষ ব্যক্তির ফায়দার জন্য আমি দেশের এবং আমার, তথা জনগণের স্বার্থ নষ্ট হোক তা চাইব না কখনোই। ২০০৮ সাল পর্যন্ত আমরা কেমন ছিলাম, আর গত ১৫ বছরে আমরা কোথায় এসেছি, কার নেতৃত্বে আসতে পেরেছি- সেটা দেখেও না দেখার মতো অন্ধ আমি অন্তত হতে চাই না।

সরকারি প্রকল্পসমূহে ব্যাপক দুর্নীতির ব্যাপারে হাজারো অভিযোগ আছে, যা পুরোপুরি মিথ্যা এ কথা বলা যাবে না। তবে, হাতেকলমে সরকারি ক্রয়প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত না থাকলে শুধু পেপার পত্রিকার খবর পড়ে প্রকল্পের প্রকৃত ব্যয় কিংবা কীভাবে, কোথায় দুর্নীতি হয় সেটা বোঝা অসম্ভব। পত্রিকার যারা খবর লিখেন, তাদের কারিগরি বা ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পর্কে জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে (বহু প্রমাণসহ)। আমি দুর্নীতির পক্ষে সাফাই গাইছি না, অল্পকথায় একেবারে বাস্তব চিত্র তুলে তুলে ধরার চেষ্টা করছি মাত্র। একবারের জন্যও বলছি না- দুর্নীতি হয় না বা হওয়া ঠিক।

দীর্ঘ প্রায় দুই দশকের সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন প্রকৌশলীর জায়গা থেকে কতিপয় অধিক প্রচারিত বা ভাইরাল অভিযোগের ব্যাপারে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও বিশ্লেষণ তুলে ধরার চেষ্টা করছি:

১) রাস্তা তৈরি বা অন্য অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে খরচ বেশি হয়:

প্রথমত, খুব অস্বাভাবিক কিছু সামাজিক বা অপারেশনাল কারণে বাংলাদেশের বেশিরভাগ উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় আপাত দ্রষ্টব্য ব্যয়ের থেকে বেশি হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ- বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে যে সকল উন্নয়ন কাজে ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন পড়ে, সেই সকল কাজ এক দেড় দশক আগে পর্যন্ত জমির মালিকের মামলার ঠেলায় কখনো শুরুই করা যেত না, বা শুরু করলেও অনন্তকাল ধরে চলত। এ সমস্যার সমাধানের জন্য বর্তমান সরকারকে বাজারদরের প্রায় ৩ গুন দাম পরিশোধ করে জমি কিনতে হয়। বহু উদাহরণ আছে যেখানে ৩ গুন দাম গ্রহণ করে পরবর্তীতে আরও বেশি টাকা দাবি করে মামলা করা হয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে অযাচিত কারণে অনেক বেশি সময় লেগে যায়। যে কোনো কাজে সময় যত বেশি লাগে, খরচ তত বাড়তে থাকে। উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে সম্ভব বৃহত্তর সামষ্টিক লাভ আটকে রেখে পাওনার চেয়ে অতিরিক্ত ব্যক্তিগত লাভ নিশ্চিত করতে এহেন কর্মকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশ, আর বদনাম হয় সরকার এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা!

উপরন্তু সরকারি টাকায় সকল ঠিকাদারি কাজের (চুক্তিমূল্যের স্তর অনুযায়ী) মোট ৯.৫% থেকে ১৪.৫% টাকা উৎসে কর্তনযোগ্য ভ্যাট ও ট্যাক্স হিসেবে পুনরায় সরকারের কাছে ফিরে যায়। এ ছাড়া বিগত সরকারগুলোর ৩৫-৪০ বছরে অজ্ঞতা বা রিসোর্সের অভাবে সরকারের সংগ্রহে মাটির কোয়ালিটি, নদীর নাব্য, মাটির নিচের পাইপলাইন নেটওয়ার্ক ইত্যাদিবিষয়ক যথেষ্ট পরিমাণ কারিগরি তথ্য না থাকার কারণে কাজ চলাকালীন বিভিন্ন অভাবনীয় কারিগরি চ্যালেঞ্জ চলে আসে যার ফলে ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এর পাশাপাশি, বেশিরভাগ কাজের ক্ষেত্রে প্রকল্প পরিচালনায় অদক্ষ ও দুর্নীতিপরায়ণ অফিসার, প্রকৌশলী ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঠিকাদারসহ যৌথ সিন্ডিকেট বিভিন্ন যোগসাজশ করে প্রকল্পের খরচ বৃদ্ধির চেষ্টা করে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সফল হয়। এরা কিন্তু আমার আপনার আশপাশের মানুষেরাই। এ ধরনের সামষ্টিক কারণে কোনো কোনো প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যায়, যার একটা অগ্রহণযোগ্য অংশ দুর্নীতিবাজদের পকেটে অবশ্যই যায়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা সকল সামাজিক ও কারিগরি চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় প্রয়োজনের চেয়ে ৫-৭ শতাংশের বেশি হয় না। পাশাপাশি আগের চেয়ে কাজের মান বেশ ভালো হয়েছে এ কথা অনস্বীকার্য। আমি একেবারে ফার্স্টহ্যান্ড অভিজ্ঞতা থেকে এই কথাগুলো বলছি। তবে অযাচিত খরচ কমাতে গিয়ে আমাকে বা অন্য ব্যবসায়ীদেরও প্রায়ই বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়, যোগ্যতম হওয়া সত্ত্বেও কাজ হারাতে হয়, পাওনা টাকা আদায়ে দীর্ঘসূত্রতাসহ বিভিন্ন কারণে আর্থিক ক্ষতির সন্মুখীন হতে হয়। তবে দিনশেষে বৃহত্তর স্বার্থে নিজের দেশের সিস্টেমের সাথে নিজেদের স্বার্থেই লড়াইটা চালিয়ে যেতে হয়, একটু একটু করে পরিবর্তনের পথ উন্মুক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয় নিজের ওপর আঘাত সহ্য করেও।

২) স্যাটেলাইট ব্যয়ের ক্ষেত্রে ভারতের সাথে তুলনা:

স্যাটেলাইট প্রযুক্তির অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার ক্ষেত্রে ভারতের সাথে তুলনা একেবারেই কাণ্ডজ্ঞানহীন এবং অর্থহীন। কারণ, বাংলাদেশের জন্মের আগে ১৯৬৯ সালে ভারতের ISRO এর জন্ম। ভারত ৮০-৯০ শতাংশ লোকাল কম্পোন্যান্ট বা স্থানীয় কাঁচামাল ব্যবহার করে রকেট বা স্যাটেলাইট তৈরি করে অন্তত ২৫ বছর আগে থেকে। বেশিরভাগ কম্পোন্যান্ট স্থানীয় পর্যায়ে তৈরি করা হয় বলে ভারতের খরচ আমাদের চেয়ে অন্তত ৭৫ ভাগ কম হবে। আমাদের সবে সক্ষমতা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটালাইটের উৎক্ষেপণের মাধ্যমে।

সর্বোচ্চ সফলতার মাধ্যমে এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপটি নেওয়ার ক্ষেত্রে সকল কম্পোন্যান্ট, প্রযুক্তি এবং সার্ভিসের ক্ষেত্রে ফ্রান্সে তৈরি সর্বোচ্চমানের ব্যবহার, সর্বাধুনিক বেইজ স্ট্যাশন, আগামী এক দশকের অপারেটিং ব্যয়সহ বিভিন্ন প্রারম্ভিক ব্যয় যুক্ত করা হয়েছে, ভারতের ক্ষেত্রে যার বেশিরভাগই দুই দশক আগে থেকে আছে। সংশ্লিষ্ট ডিপিপি স্টাডি করার সুযোগ হয়েছিল আমার এবং আমি হলফ করে বলতে পারি, সামগ্রিকভাবে ব্যয় যা ধরা হয়েছে, তা শতভাগ যুক্তিযুক্ত। বরং আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়েছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রাক্কলিত ব্যয় অপ্রতুল হতে পারে।

৩) মেট্রোরেল প্রকল্পের খরচ:

অনেকেই মেট্রোরেল প্রকল্প নিয়ে বিভিন্ন দেশের খরচের সঙ্গে তুলনা করে দুর্নীতির আশংকা বা সরাসরি অভিযোগ করেছেন, এর প্রধান কারণ হলো তাদের অনভিজ্ঞতা। জাইকা বা অন্য যে কোনো অর্থায়নকারী সংস্থার অর্থায়নকৃত প্রকল্পের খরচ থেকে শুরু করে প্রতিটি বিষয় সরাসরি সেই অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় বা প্রসেসে তাদের নির্ভরযোগ্য জনবলের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। আমি নিজে জাইকাসহ প্রায় সকল অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নকৃত প্রকল্পে সরাসরি একজন সার্ভিস প্রোভাইডার বা কন্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করেছি। কাজেই এসব প্রজেক্টে ঠিক কীভাবে কতটুকু দুর্নীতি হয় বা হতে পারে সে ব্যাপারে আমার ফার্স্টহ্যান্ড অভিজ্ঞতা থেকে বলছি- খরচের যুক্তিযুক্ত কারিগরি বা অন্য কারণ না থাকলে একটি অতিরিক্ত পয়সাও খরচ করা যায় না।

কাজেই এসব প্রকল্পে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া আকাশকুসুম দুর্নীতির অভিযোগ করা অজ্ঞতা বা অনভিজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই না। যারাই এই ধরনের তথ্য-উপাত্তহীন অভিযোগ তোলেন বা প্রচার করেন, তাদের প্রতি সবিনয় অনুরোধ করব- মেট্রোরেলের ডিপিপিগুলো ভালো মতো পড়ে দেখবেন, যদি পর্যাপ্ত কারিগরি জ্ঞান থাকে তাহলে অবশ্যই বোঝা সম্ভব হবে যে, জাইকা গঞ্জিকা সেবন করে দুর্নীতি করার জন্য অতিরিক্ত টাকা অনুমোদন করে নাই। মোটা দাগে অনেক কথা বলা যায়, তবে মাঠে চিকন দাগ দিয়ে না হাঁটলে আসল ঘটনা বোঝা সম্ভব না।

৪) অর্থপাচারের অভিযোগ ও তার প্রভাব:

পত্র-পত্রিকায় ও সামাজিক মাধ্যমে অর্থ পাচার সংশ্লিষ্ট নানাবিধ অভিযোগের কথা শুনতে পাওয়া যায় বা দেখা যায়। এগুলো প্রমাণসাপেক্ষ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রমাণহীনতায় দুষ্ট হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ- ছাত্রলীগের কোনো এক নেতার ২০০০ কোটি টাকা পাচারের খবর ব্যাপক সাড়া ফেলে। আর্থিক খাত ও আন্তর্জাতিক ব্যবসার সাথে দীর্ঘ সময়ের সংশ্লিষ্টতার কারণে এতটুকু বলতে পারি, ২/৪/৫ জন মিলে ২০০০ কোটি টাকা হুন্ডি করে বা অবৈধ পথে বাংলাদেশ কেন, যে কোনো দেশ থেকে বের করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। কোনো বড় ব্যবসা অথবা ব্যবসায়িক গ্রুপের সরাসরি সম্পৃক্ততা ছাড়া। এ ক্ষেত্রে বড় কোনো ব্যবসায়ী গ্রুপ এই ধরনের অবৈধ কাজে নিজেদের জড়িত করে নিজেদের সামগ্রিক ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে এই ব্যাপারটা বোধহয় বাস্তবসম্মত নয়। ৫/১০/২০ কোটি হলে বিশ্বাস করলেও করা যায়, তবে ২০০০ কোটি প্র্যাকটিক্যালি শুধু কঠিন নয়, প্রায় অসম্ভব।

অর্থ পাচারের অভিযোগগুলোর প্রমাণ সাপেক্ষতাকে এড়িয়ে সার্বিকভাবে জাতীয় পর্যায়ে অর্থ পাচারের সম্ভাব্য প্রভাব গাণিতিকভাবে পর্যালোচনা করে দেখা যেতে পারে। সম্প্রতি বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সমীক্ষা ও তথ্যসূত্রের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে গাণিতিক উপাত্তে দেখা যায়, সর্বোচ্চ আনুমানিক পাচারকৃত অর্থ ধরলেও তা বাংলাদেশের মোট জিডিপির কমবেশি ০.৫% এর বাইরে যায় না, যা আসলে সামগ্রিক অর্থনীতির আকারের তুলনায় যথেষ্ট নগন্য এবং বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বড় কোনো সমস্যা তৈরির জন্য যথেষ্ট নয়। একটু সহজ করে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করি।

গত পাঁচ বছরেই বাংলাদেশ থেকে অবৈধ পথে পাচার হওয়া অর্থের অতি আনুমানিক পরিমাণ যদি এক লাখ কোটি টাকাও হয়, ডলারের পরিবর্তন করলে তা দাঁড়ায় প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, পাচারকৃত অর্থের অনুমিত এই বিশাল অঙ্কটা বাস্তবসম্মত নয়, আসল পরিমাণটা একচেয়ে ঢের কম হবে বলে আমার বিশ্বাস। অপরপক্ষে, বিগত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের মোট জিডিপি প্রায় ২০০০ বিলিয়ন ডলার। অনুমিত ১০ বিলিয়ন ডলার, ২০০০ বিলিয়ন ডলারের ০.৫% মাত্র, যা বাংলাদেশের মতো একটি শক্তিশালী অর্থনীতির দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় কোনো বড় ধরনের সমস্যা তৈরির ক্ষেত্রে নগণ্যই বটে। বাংলাদেশের অর্থনীতি কেমন করে শক্ত, তা আমার চেয়ে অনেক অভিজ্ঞ বিশিষ্টজনেরা ব্যাখ্যা করেছেন। আমার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও গাণিতিক ব্যাখ্যা প্রয়োজনে অন্য কোনো সময় লিখব সুযোগ পেলে।

৫) ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক বা বিত্ত বৈষম্য:

সার্বিকভাবে বৈশ্বিক অবস্থার তুলনায় অর্থনৈতিক বৈষম্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান কী তা একটু দেখে নেওয়া যেতে পারে প্রথমে। আইএমএফের ২০২২ সালের এ সংক্রান্ত রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বের সকল সম্পদের মধ্যে ৭৬% শতাংশের মালিক বিশ্বের ১০% জনগোষ্ঠী, অন্যদিকে ৫০% জনগোষ্ঠী মিলে ২% সম্পদের মালিক। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিবিসির একটি প্রতিবেদন মারফত জানা যায়, ৫০% শতাংশ জনগোষ্ঠীর কাছে আছে মোট সম্পদের প্রায় ২০ শতাংশ (১৯.৭৪%), অন্যদিকে ৫% শীর্ষ ধনী জনগোষ্ঠীর কাছে আছে প্রায় ২৮ শতাংশ (২৭.৮৯%)। বৈশ্বিক সূচকের তুলনায় অনেকটা ভালো অবস্থানে থাকলেও, এ অবস্থা মোটেই স্বস্তিদায়ক নয়।

উন্নয়নের পথে চলমান একটা অর্থনীতিতে দুর্নীতি এবং সাময়িকভাবে অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি হওয়াকে অস্বাভাবিক মনে করেন না অর্থনীতিবিদেরা। এই বৈষম্য কমানোর প্রক্রিয়াটি অবশ্যই সময় ও যাচাইসাপেক্ষ। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই বৈষম্য যেন সাময়িক থেকে স্থায়ী না হয়ে যায় সেই লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো ঠিক আছে কিনা।

ধনী গরিবের বৈষম্য কমাতে সরকারকে মোটাদাগে শহরের পাশাপাশি প্রান্তিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার সাথে সাথে ধনীর থেকে বেশি করে কর নিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতে যথেষ্ট পরিমাণ বরাদ্দ ও তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে যাতে করে তুলনামূলক দরিদ্র জনগোষ্ঠী দ্রুততর সময়ে এই বৈষম্য কমিয়ে আনার যথাযথ সুযোগ কাজে লাগাতে পারে।

বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ ক্রমান্বয়ে এই বৈষম্যের লাগাম টেনে আনার পক্ষে ইতিবাচক হিসেবে করে চলেছে ও কাজ করবে ভবিষ্যতে- এই ধারণা থেকেই বাংলাদেশকে এশিয়ার টাইগার ইকোনমি বলে থাকে বিশ্বের প্রায় সব অর্থনীতি বিশ্লেষক। খেয়াল করলে দেখা যায়, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের মোট বাজেটের যথাক্রমে ১৪.৫৫% (২০১৮-১৯), ১৬.৩২% (২০১৯-২০), ১৬.৮৩% (২০২০-২১) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসে দাঁড়িয়েছে ১৭.৮৩%। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দও বিগত বছরগুলোতে সামান্য কমবেশি হওয়ার মাধ্যমে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসে দাঁড়িয়েছে মোট বাজেটের যথাক্রমে ১১.৫৭% এবং ৫%। আলোচ্য তিনটি খাতেই বরাদ্দের পরিমাণ এখনো প্রয়োজনের তুলনায় কম হলেও, ক্রমান্বয়ে ঊর্ধ্বমুখী বা স্থিতিশীল প্রবণতা ইঙ্গিত বহন করে যে, এই খাতগুলোতে ক্রমবর্ধমান বরাদ্দের মাধ্যমে সরকার অর্থনৈতিক বৈষম্য কমানোর ব্যাপারে সচেষ্ট এবং ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে, যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক বৈষম্য কমিয়ে সামাজিক ভারসাম্যতা নিশ্চিতকরণে সফলতার স্তাহে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

অম্লমধুর শেষকথা

ইতিহাস নিশ্চিত করে, কোনো বড় ধরনের পরিবর্তন কখনোই নিষ্কলঙ্ক হয় না, তা সে মাহাতীরের মালয়েশিয়া হোক বা লি কুয়ানের সিংগাপুর হোক বা মাও সেতুংয়ের চীন হোক কিংবা শেখ হাসিনার বাংলাদেশ! জনজীবনে পরিবর্তনের ব্যাপ্তি এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের গুরুত্ব কলংকগুলোর চেয়ে হাজারো গুনে বেশি হয়। আমি অঙ্ক করে দেখিয়ে দিতে পারি পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, টার্মিনাল-৩, ডিপ সি পোর্ট, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মতো মেগা প্রকল্পগুলো থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার পর্যায়ের মাঝারি, ছোট প্রকল্পগুলো পর্যন্ত প্রত্যেকটা কাজ কেমন করে প্রতিদিন দেশের মানুষের আর্থ-সামজিক জীবনের উন্নতিসহ দেশের সার্বিক অর্থনীতির বিকাশে সুবিশাল দীর্ঘমেয়াদি অবদান রেখে চলেছে! এর সুফল ভোগ করবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে!

সর্বোপরি ঠান্ডা মাথায়, নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করলে পরিষ্কারভাবে দেখা যায় যে, শত বাধা-বিপত্তি, ষড়যন্ত্র, বৈশ্বিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে বাংলাদশেকে শুধু অবকাঠামোগতভাবে আমূল বদলে দিয়েই নয়, প্রায় সকল ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সব শ্রেণির মানুষকে বড় হওয়ার, বড় কিছু করতে পারার সাহস, অনুপ্রেরণা জোগানো, অতঃপর যথাসম্ভব সুযোগ তৈরি করে দিয়ে আর্থ-সামাজিকভাবে বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পেরেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিগত তিন মেয়াদের সরকারগুলো!

গত ১৫ বছরে দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে ঘটে যাওয়া আমূল অবকাঠামোগত পরিবর্তনের কথা না হয় বাদই দিলাম, ওটা রাস্তাঘাট, কলকারখানা, অফিস আদালত এমনকি মোবাইল ফোনে ঢুকলেও অনুধাবন করা যায়। ১৫ বছর আগের জীবনের কথা আপনার কতটুকু পরিষ্কারভাবে মনে আছে এটা একটু যাচাই করে নিয়ে সততার সাথে নিশ্চিত করবেন যে, গত ১৫ বছরে আপনার বা আপনার আশপাশের কারও জীবনে কোনো উন্নতি হয় নাই, জীবনমান বাড়ে নাই, সুযোগ-সুবিধা বাড়ে নাই, জীবনের প্রায় সকল ক্ষেত্রে বড় বড় স্বপ্ন দেখার সাহস থেকে শুরু করে স্বপ্ন পূরণের পথ সহজ হয় নাই?

দিনের একটা বড় সময় বিদ্যুৎবিহীন থাকাটা জীবনের একটা মেনে নেওয়া অংশ ছিল ২০১০ পূর্ববর্তী সময়ে। সে সময় যখন পার্শ্ববর্তী দেশে গিয়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় দ্বিগুণ প্রোডাক্টিভিটি নিয়ে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করতাম, বিস্মিত হতাম! ভাবতাম, আমার দেশটায় কি কোনোদিন এমন দিন দেখতে পাব? এ রকম আরও শত উদাহরণ আমি লিখে যেতে পারি, যা ওই সময়ে বুদ্ধিসমত্ত সকলেই জানেন।

তাই যারা ১৫ বছর আগে এখনকার চেয়ে অনেক ভালো জীবন ছিল বলে হা-হুতাশ করেন মাঝে মধ্যে, তাদের উদ্দেশ্যে বিনীতভাবে বলতে চাই- আপনি ঠিক কেন ১৫ বছর আগের বছরগুলোতে এখনকার চেয়ে ভালো ছিলেন না এটা প্রাকটিক্যাল উদাহরণ দিয়ে না বললে আইনস্টাইনের পক্ষেও বোঝা কঠিন হবে বলে আমার ধারণা।

তবে এটা ঠিক ১৫ বছর আগে কর্মহীন বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয়স্বজনের সাথে ছাদে আড্ডা দেওয়া কিংবা শীতে জমিয়ে ব্যাডমিন্টন খেলা টাইপ নির্মল আনন্দগুলো এখন সকলের কর্মব্যস্ত জীবনের কারণে আর আগের মতো নিয়মিতভাবে হয়ে ওঠে না- যা আমি সত্যিই খুব মিস করি। গ্রামে গেলে বাস থেকে নেমে ঘুটঘুটে অন্ধকারে ভূতের ভয় বুকে নিয়ে জাহাঙ্গীরের রিকশায় ভাঙা রাস্তায় মগজ-নাড়ানি দুলুনি খেয়ে বাড়ি পর্যন্ত যাওয়ার রোমাঞ্চকর যাত্রা মিস করি, কারণ এখন পাকা রাস্তার কারণে সোজা বাড়ি অব্দি গাড়ি যায়, এলইডি বাতির উজ্জ্বল আলো মাখিয়ে। কিংবা মিস করি রাখালের অভাবে শূন্য গোয়াল ঘর, কারণ বাড়িতে মাসিক বেতনে কাজ করা রাখাল আজ নিজেই আধুনিক খামারের মালিক। মিস করি টিনের চালে বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজ, কারণ টিনের ঘর আজ পাকা দালানে বদলে গেছে। বাড়ির উঠানে মজাদার তিলের খাজা-ওয়ালা মামার ঝুনঝুনির আওয়াজ খুব মিস করি এখন, কারণ মামা এখন বাজারে রেস্টুরেন্ট খুলেছেন। মিস করি এইরকম আরও কত কি! এই মিস করাগুলোর কারণে গত ১৫ বছর মাঝেমধ্যে যে খারাপ লাগে না তা নয়। তাই এই সময়ের বদলে যাওয়া বাংলাদেশের অচিন্তনীয় সামাজিক ও অবকাঠামোগত সুযোগ ও সুবিধাকে উপভোগ করি না কিংবা অগ্রাহ্য বা অপছন্দ বা অস্বীকার করব, তা কেমন করে হয়!

সরকারের কোনো ভুলভ্রান্তি দেখলে তার বিরোধিতা করা আপনার আমার গণতান্ত্রিক অধিকার। তার মানে এই নয় যে, মতাদর্শের বিরোধিতা বা অন্য যে কোনো কারণে দেশে ঘটে যাওয়া ভালো যে কোনো কিছুর অযাচিত সমালোচনা করে বা তার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করতে হবে। সবার আগে বুঝতে হবে, সরকার আসবে, সরকার যাবে, দল তৈরি হবে, দল ভাঙবে, কিন্তু দেশ ঠিক থাকতে হবে। কোনো কিছুই আপনার আমার জন্য দেশের চেয়ে বড় হতে পারে না। তাই দেশকে ভালোবাসতে হবে, দেশের ক্ষতি হতে পারে এমন বিষয়ে কথা বলা বা এমন কোনো কাজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উৎসাহ দেওয়ার আগে অনেক বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে সবাইকেই।

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আজ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বসবে বিএনপি

সকালের মধ্যে দেশের ১৮ অঞ্চলে ঝড়ের আভাস

৫ অক্টোবর : নামাজের সময়সূচি

আজও কি দিনভর সারাদেশে বৃষ্টি হতে পারে?

শনিবার রাজধানীর যেসব এলাকায় যাবেন না

বিদ্যালয়ে কোনোরকম উচ্ছৃঙ্খলতা ছিল না

নারায়ণগঞ্জে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় কাপড় জব্দ

ইদানীং শিক্ষকদের এক ধরনের হেয় করার প্রবণতা তৈরি হয়েছে

মানুষ হয়ে ওঠার শিক্ষা খুব জরুরি

কক্সবাজার সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্রদল নেতা নিহত

১০

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে বন্ধন সেটি ছিন্ন হয়ে গেছে

১১

হত্যা মামলায় রসিকের সাবেক কাউন্সিলর মিলন গ্রেপ্তার

১২

শিক্ষকদের শিক্ষাবাণিজ্য থেকে বেরিয়ে আসতে হবে

১৩

হুইলচেয়ারে বসেই আলো ছড়াচ্ছেন ফয়সাল

১৪

হেঁটে এক টাকায় জ্ঞান বিলিয়ে যাচ্ছেন লুৎফর রহমান

১৫

সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী মারা গেছেন

১৬

ময়মনসিংহে মায়ের হাতে মেয়ে খুন

১৭

কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না : সুলতান সালাউদ্দিন টুকু

১৮

টিসিবির পণ্যসহ আটক বিএনপির সেই সভাপতিকে অব্যাহতি

১৯

বাংলা ভাষাকে ‘ধ্রুপদী ভাষা’র মর্যাদা দিল ভারত

২০
X