ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ
প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০১:৪৫ পিএম
আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০৪:৪১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সবাই জিতে গেলাম!

ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ। ছবি : সৌজন্য
ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ। ছবি : সৌজন্য

বহুল আলোচিত সমালোচিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়ে গেল। এ নির্বাচনে আমরা সবাই জিতে গেলাম! নির্বাচনের পক্ষ শক্তি দেশ-বিদেশের নানা মহলের প্রতিবাদ, আলোচনা-সমালোচনা সত্ত্বেও নির্দিষ্ট দিনে নির্বাচন সম্পন্ন করেছে। ফলে তারা জিতে গেছে। নির্বাচনের বিপক্ষ শক্তি ব্যাপক ধরপাকড়, গ্রেপ্তার এবং ভয়ভীতি সত্ত্বেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পেরেছে। ফলে তারাও জিতে গেছে। ভোটকেন্দ্রে ভিড় না থাকায় যেসব ভোটার নির্বাচনে ভোট দিতে গেছে, তারা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পেরেছে। ফলে তারাও জিতে গেছে। যেসব ভোটার ভেবেছে ভোট দিলেও যে ফল, না দিলেও সেই ফল, তারা ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে বাড়িতে বসে মনের ক্ষোভ ঝেড়েছে। ফলে তারাও জিতে গেছে।

আর গুটি কয়েক ছাড়া বিরোধী শক্তিমুক্ত ফাঁকা নির্বাচনে যারা প্রাথী হয়েছিলেন তারা আগেই জিতে গেছেন। আমরা প্রত্যেকেই তো কোনো না কোনো জিতে যাওয়া গ্রুপের সদস্য। তাহলে এ নির্বাচনে আমরা সবাই জিতে গেলাম। কিন্তু দেশ মাতা কি জিততে পেরেছে? দেশ মাতা হারিয়েছে কতকগুলো নিরীহ সন্তানদেরকে যারা ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ফলে আগুনে পুড়ে নির্মম মৃত্যুর শিকার হয়েছে।

সবাই জিতে যাওয়াকে জেনারেল ইকুইলিব্রিয়াম বা সাধারণ ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা বলা হয় যা একটি দেশের জন্য একান্ত কাম্য। কিন্তু সেই ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা হতে হবে হিংসা বিদ্ধেষহীন উঁচু মানের। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে হয়েছে চরম হিংসা-বিদ্ধেষপূর্ণ এবং অত্যন্ত নিচু মানের যা দেশের জন্য মোটেও কাম্য না বিশেষ করে যে দেশ আর মাত্র দেড় যুগের মধ্যে উন্নত বিশ্বে পদার্পণের স্বপ্ন দেখে। এই হিংসা-বিদ্বেষ দেশ মাতার সন্তানদের মধ্যে চলমান বিভাজনকে আরও বহুগুনে বাড়িয়ে দেবে। ফলে দেশ স্থায়ীভাবে হিংসা-বিদ্বেষের দুষ্টচক্রে পতিত হলো। এর বলি হবে আবারও নিরীহ মানুষ। খালি হবে বহু মায়ের বুক।

কবি গুরুর কথা যেন আবারও সার্থক প্রতিধনিত হচ্ছে- দেশ মাতার সন্তানরা এখনও মানুষ হতে পারিনি। পাশাপাশি বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান সাহিত্যিক নিরোধ চন্দ্র চৌধুরীর বাঙালিকে ‘আত্মঘাতী বাঙালি’ হিসাবে তুলনা আবারও সার্থক হলো। 'মনে রেখো, মুখে হাসি বুকে বল তেজে ভরা মন, মানুষ হইতে হবে মানুষ যখন' - বঙ্গবন্ধুর এই বিখ্যাত উক্তির মর্ম হয়তো আমরা বুজতে পারিনি। তাই স্বাধীন দেশের মাটিতে পা রেখে বঙ্গবন্ধুর করা উক্তি - ‘কবিগুরু, তোমার কথা মিথ্যে হয়েছে, আমার বাঙালি আজ মানুষ হয়েছে’-এর মান আমরা রাখতে পারলাম না। যতই সমৃদ্ধি আসুক, হিংসা-বিদ্বেষে নিমজ্জিত এবং সর্বদা কলহরত অমানুষ সন্তানদের নিয়ে দেশমাতা নিশ্চয় গর্বিত নয়। আর এখানেই হেরে গেছে দেশ।

হে প্রভু, তুমি আমাদের প্রিয় দেশকে জিতিয়ে দিতে দেশমাতার সন্তানদেরকে অমানুষ থেকে মানুষ কর এবং আত্মঘাতী বাঙালি থেকে আত্মপ্রত্যয়ী জাতিতে পরিণত কর।

ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নারায়ণগঞ্জে ধানক্ষেতে পড়েছিল অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ

খানসামা উপজেলা ছাত্র অধিকার পরিষদের কমিটি গঠন

সোমবার বন্ধ থাকবে ঢাকা কলেজ

ঢাকা পলিটেকনিক ও বুটেক্সের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ

বগুড়ায় জাপার সাবেক এমপিসহ আ.লীগের ১৬৮ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

সিলেটে বাসদের মিছিল-সমাবেশ

তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ ঐক্যবদ্ধ : নয়ন

৩০ লাখ টাকা ছিনতাই করতে ছুরিকাঘাত, আটক ১

সচিব পদমর্যাদায় নিয়োগ পেলেন সৈয়দ জামিল আহমেদ

রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি ঘোষণা

১০

‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পশ্চিমা সংস্কৃতি দূর করতে হবে’

১১

পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক হিসাব জব্দ

১২

ব্রিটিশ বাজারে ‘গাজা কোলার’ বাজিমাত

১৩

ইহুদি তরুণদের মধ্যে বাড়ছে গাজায় হামলাবিরোধী মনোভাব

১৪

টাকা না দিলেই গায়ে সাপ ছেড়ে দেওয়ার হুঁমকি

১৫

খুলনায় তিন শতাধিক ব্যক্তির নামে মামলা, জানে না বাদী

১৬

অরবিস উড়ন্ত চক্ষু হাসপাতালের দ্বিতীয় সপ্তাহের প্রশিক্ষণ শুরু

১৭

মাদক সংশ্লিষ্ট কাউকে ধরিয়ে দিলেই ৫ হাজার টাকা পুরস্কার

১৮

তিন মাস পর চাঁবিপ্রবির শিক্ষা কার্যক্রম শুরু

১৯

সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে সোহরাওয়ার্দীর শিক্ষার্থীদের হামলা-ভাঙচুর  

২০
X