সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ড. কবিরুল বাশার
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০৩:৫২ এএম
আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০২:০৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
ড. কবিরুল বাশারের নিবন্ধ

ডেঙ্গুর আগ্রাসী বছর ২৩: কী হবে চব্বিশে?

ছবি : সৌজন্য
ছবি : সৌজন্য

দুর্ভাগ্যজনকভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত এবং মৃত্যুতে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্যমতে, ২০০০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্ত হয়েছিল ২ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫৬ এবং মৃত্যু হয়েছিল ৮৫৩ জনের। ২৩ বছরের হিসাব ছাড়িয়ে এক বছরেই আক্রান্ত প্রায় ৩ লাখ ২১ হাজার এবং মৃত্যু ১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে।

বাংলাদেশ করোনা সংক্রমণ খুব সফলভাবে মোকাবিলা করেছে। মানুষ থেকে মানুষের ছড়ানো এ ভাইরাসটি মোকাবিলা করা খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে করোনার বিরুদ্ধে জয়ী হতে পেরেছে বাংলাদেশ।

দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা পরিচিত শত্রু এডিস মশা এবং তার দ্বারা সংক্রমিত রোগ ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া। ২০০০ সাল থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রায় প্রতিবছরই কমবেশি ডেঙ্গু হয়েছে। ডেঙ্গু ও এর বাহক মশা সম্বন্ধে আমরা সবাই অবগত এবং এর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও আমাদের জানা। তারপরও আমরা কেন ব্যর্থ হচ্ছি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে?

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব গবেষণাগার সবসময়ই মশা ও মশাবাহিত রোগ নিয়ে গবেষণা করে। আমরা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা, মাঠপর্যায়ের এডিস মশার ঘনত্ব, বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা—এ কয়েকটি বিষয় নিয়ে মাল্টিভেরিয়েট অ্যানালাইসিস করে ফোরকাস্টিং মডেল তৈরি করি। যার মাধ্যমে ডেঙ্গু সম্বন্ধে আগাম ধারণা দিতে পারি। কেকেআর আমাদের বর্তমান ফোরকাস্টিং মডেল বলছে, আগামী বছরগুলোতে বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হবে। শুধু ঢাকায় নয়, বাংলাদেশের সব জায়গায় ডেঙ্গু আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যাবে। বাংলাদেশের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা একটি মডেল তৈরি করেছি। এ মডেলটি অনুযায়ী পাঁচ বছর কার্যক্রম চালাতে পারলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ হবে বলে আমি নিশ্চিত করতে পারি। ধারণা করা হয়, এ বছর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। আমার এ মডেলটি বাস্তবায়নে যে ব্যয় হবে তা মোট নিয়ন্ত্রণ ব্যয়ের চেয়ে অনেক কম হবে। মানুষের কষ্ট লাঘব হবে।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাবিত রূপরেখা বাস্তবায়নের জন্য অভিজ্ঞ কীটতত্ত্ববিদ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের দিয়ে আধুনিক এবং সময় উপযোগী গাইডলাইন তৈরি করে নিতে হবে। মশা নিয়ন্ত্রণের আধুনিক সরঞ্জামাদি এবং আধুনিক কীটনাশক নির্দেশিকা এ গাইডলাইনে থাকবে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সারা দেশের মশা এবং অন্যান্য বাহক নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি স্বতন্ত্র সেন্টার তৈরি করতে পারে। যেটির নাম হতে পারে বাংলাদেশ ভেক্টর কন্ট্রোল রিসার্চ সেন্টার। এ সেন্টারের মাধ্যমে সারা দেশের মশা এবং অন্যান্য বাহক নিয়ন্ত্রণ হতে পারে। এ সেন্টারে বছরব্যাপী মশা, অন্যান্য বাহক ও কীটনাশক নিয়ে গবেষণা হবে এবং তারাই নির্দেশনা দেবে কখন কোন কীটনাশক, কোন বাহক এর জন্য ব্যবহৃত হবে। বাহকের আচরণ এবং নতুন নতুন বাহকের ক্ষেত্রে কী ধরনের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে, সেটির দায়িত্ব তাদের ওপর থাকবে। এ সেন্টারে অভিজ্ঞ কীটতত্ত্ববিদ নিয়োগ দিতে হবে। এ সেন্টার দেশব্যাপী মশা ও অন্যান্য বাহক নিয়ন্ত্রণের অভিভাবক হিসেবে কাজ করবে। এ প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ কীটতত্ত্ববিদদের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন সেক্টরের জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের বাহকের আচরণ, প্রজনন এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ প্রদান করবে। সঙ্গে সঙ্গে মশা নিয়ন্ত্রণের আধুনিক সরঞ্জাম ও কীটনাশক সরবরাহ করবে।

ডেঙ্গু যেহেতু এখন সিটি করপোরেশনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, তাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোকে মশক নিধনে যুগোপযোগী করে তুলতে হবে। ইউনিয়ন, উপজেলা এবং জেলা পরিষদ প্রতিটি জায়গায় তাদের মশক নিয়ন্ত্রণবিষয়ক সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

প্রতিটি জেলায় জেলা কীটতত্ত্ববিদের একটি পদ রয়েছে। কোনো কোনো জেলায় এ পদে কর্মকর্তা রয়েছেন। যেসব জেলায় পদগুলো ফাঁকা রয়েছে, সেসব জেলায় এ পদগুলো পূরণ করে এই মশা নিয়ন্ত্রণ কাজ জোরদার করা প্রয়োজন। ডেঙ্গুর আগ্রাসী প্রভাবের বছর গেল ২০২৩। আগামী বছরগুলোয় ডেঙ্গু আক্রান্তের হারে ঢাকাকে ছাড়িয়ে অন্য জেলা শহরে নাজুক পরিস্থিতি তৈরি করবে। ভবিষ্যতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এবং জনগণকে যার যার অবস্থান থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভালো হয়ে গেলে নীতিনির্ধারকরা ভুলে যাবেন না। আগামী বছরগুলোর জন্য একটি টেকসই পরিকল্পনা তৈরি করার জন্য উদ্যোগী হবেন নিশ্চয়ই।

ড. কবিরুল বাশার: কীটতত্ত্ববিদ, গবেষক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বগুড়ায় জাপার সাবেক এমপিসহ আ.লীগের ১৬৮ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

সিলেটে বাসদের মিছিল-সমাবেশ

তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ ঐক্যবদ্ধ : নয়ন

৩০ লাখ টাকা ছিনতাই করতে ছুরিকাঘাত, আটক ১

সচিব পদমর্যাদায় নিয়োগ পেলেন সৈয়দ জামিল আহমেদ

রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি ঘোষণা

‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পশ্চিমা সংস্কৃতি দূর করতে হবে’

পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক হিসাব জব্দ

ব্রিটিশ বাজারে ‘গাজা কোলার’ বাজিমাত

ইহুদি তরুণদের মধ্যে বাড়ছে গাজায় হামলাবিরোধী মনোভাব

১০

টাকা না দিলেই গায়ে সাপ ছেড়ে দেওয়ার হুঁমকি

১১

খুলনায় তিন শতাধিক ব্যক্তির নামে মামলা, জানে না বাদী

১২

অরবিস উড়ন্ত চক্ষু হাসপাতালের দ্বিতীয় সপ্তাহের প্রশিক্ষণ শুরু

১৩

মাদক সংশ্লিষ্ট কাউকে ধরিয়ে দিলেই ৫ হাজার টাকা পুরস্কার

১৪

তিন মাস পর চাঁবিপ্রবির শিক্ষা কার্যক্রম শুরু

১৫

সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে সোহরাওয়ার্দীর শিক্ষার্থীদের হামলা-ভাঙচুর  

১৬

রাবির কলা অনুষদ ডিনস অ্যাওয়ার্ড পেলেন ১৩ শিক্ষার্থী

১৭

শেখ হাসিনার ভাতিজা মঈন রিমান্ডে

১৮

রাজধানীতে মোটরসাইকেল চলাচলে ডিএমপির কঠোর নির্দেশনা

১৯

নির্যাতিত আ.লীগ কর্মী উজ্জ্বলের বাড়িতে গেলেন রিজভী

২০
X