অ্যান্ড্রু মিত্রোভিকা
প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২৩, ০৮:৪৫ পিএম
আপডেট : ০৭ জুলাই ২০২৩, ০১:০৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
আলজাজিরা থেকে

শিশু হত্যা : পুতিনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, ইসরায়েলের ব্যাপারে নীরব কেন?

ফিলিস্তিনি শিশুদের প্রতি পাঁচজনের চারজন ক্রনিক ডিপ্রেশন, বিষন্নতা ও ভয়াবহ ভীতিতে আক্রান্ত। ছবি : রয়টার্স
ফিলিস্তিনি শিশুদের প্রতি পাঁচজনের চারজন ক্রনিক ডিপ্রেশন, বিষন্নতা ও ভয়াবহ ভীতিতে আক্রান্ত। ছবি : রয়টার্স

ছোট্ট মোহাম্মদ আল-তামিমিকে সেদিন খুব হাসিখুশি আর উত্তেজিত দেখাচ্ছিল।

২ জুনের সন্ধ্যা, সময়টা যখন ধীরে ধীরে রাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল তখন আড়াই বছর বয়সী ঝাকড়া চুলের ছোট্ট শিশু মোহাম্মদ আল-তামিমি তার বাবার সাথে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের রামাল্লার নবি সালেহ গ্রামে বাসার সামনে পার্ক করা গাড়িতে উঠছিল।

হাইথাম আল-তামিমি তার ছেলে মোহাম্মদ আল-তামিমিকে নিয়ে ভাতিজির জন্মদিনের পার্টিতে যাচ্ছিলেন। সেখানে তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল মিষ্টি সব মজার খাবার, পরিবারের সাথে মিলিত হওয়া আর জম্পেশ আড্ডার সুযোগ। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই একটি ইসরায়েলি চেকপয়েন্টে তাদের গাড়িটিকে থামানো হয়। অতর্কিত গুলিবর্ষণে ঝাঝরা করে দেওয়া হয় গাড়িটিকে।

ছোট্ট তামিমির মা মারওয়া গুলির শব্দে বাসা থেকে বের হয়ে আসেন। তিনি দেখতে পান, যেদিক থেকে গুলি আসছিল তার স্বামী গাড়িটিকে বিপরীত দিকে নিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছিলেন। এ সময় তার স্বামী চিৎকার করে সন্তানকে ডাকছিলেন, ‘হামৌদি হামৌদি!’

হামলার পর দেখা যায়, মোহাম্মদের মাথায় গুলি লেগেছে। মারওয়া স্মৃতিচারণায় বলেন, ‘আমি জানতাম, তাকে বাঁচানো যাবে না। কারণ ওর মাথা থেকে রক্ত ঝরছিল।’ মোহাম্মদকে বিমানে তেল আবিবের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে বহু চেষ্টার পরও কোনো লাভ হয়নি, বাঁচানো যায়নি ছোট্ট তামিমিকে। ভাগ্যক্রমে তার বাবা ভয়াবহ এই হামলা থেকে বেঁচে যান। ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে ইসরায়েলি বাহিনী প্রথমে এটা ‘ফিলিস্তিনিদের ক্রসফায়ার’ বলে দাবি করে।

কিন্তু পরবর্তীতে বিষয়টি ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। ইসরায়েলিদের নতুন ব্যাখ্যা অনুযায়ী ‘এটা অস্পষ্ট’ যে, কে গুলির জন্য দায়ী। দাবি করা হয়, এ নিয়ে ‘তদন্ত’ চলছে। তবে চূড়ান্তভাবে জানা যায়, একজন ইসরায়েলি সৈন্য বাবা ও সন্তানকে লক্ষ্য করে গুলি করেছে।

এরপর আবারও পাল্টে যায় ইসরায়েলিদের ব্যাখ্যা। জানা গেল, মোহাম্মদ আল-তামিমি’র হত্যাকাণ্ড একটি ‘ভুল’ ছিল। এটি তেমনই আরেকটি ‘ভুল’ যা ইসরায়েলি সৈন্যরা বারংবার করে চলেছে এবং শিশুসহ ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে।

এমন ‘ভুলে’ আসক্ত ইসরায়েলি সৈন্যদের সাথে যেটা হয় এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। যে সেনাসদস্য মোহাম্মদ আল-তামিমি’র খুলিতে গুলি ভরে দিল, তাকে এর জন্য কোনো শাস্তি দেওয়া হবে না।

চলতি বছর গাজা ও পশ্চিম তীরে এভাবেই ২৭ ফিলিস্তিনি শিশুকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। যাদের মধ্যে মোহাম্মদ আল-তামিমির বয়স সবচেয়ে কম। এর ঠিক আগের বছর ২০২২ সালে ৪২ জন শিশুকে হত্যা করে ইসরায়েলি সৈন্যরা। বছরটিতে হতাহত বা আহত শিশুর সংখ্যা ৯৩৩। ২০২১ সালে ইসরায়েলি বাহিনী ৭৮ শিশুকে হত্যা করে এবং গুরুতর আহত করে আরও ৯৮২ জনকে।

১৬ বছরজুড়ে ইসরায়েলি অবরোধের আওতায় থাকা অঞ্চলটিতে জীবিত ফিলিস্তিনি শিশুদের প্রতি ৫ জনের ৪ জন ক্রনিক ডিপ্রেশন, বিষণ্নতা ও ভয়াবহ ভীতিতে আক্রান্ত।

এটি যে কোনো মানবিক হিসেবে উপরের উপাত্ত এটাই প্রমাণ করে যে, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ইসরায়েলি আগ্রাসন ও লজ্জাজনক হত্যাকাণ্ডের দলিল- শিশুদের শারীরিক, মানসিক ও আত্মিকভাবে বিকলাঙ্গ করে তুলেছে।

গত সপ্তাহের ঘটনায় এ কপটচারিতা পরিষ্কার হয়ে যায়। কিছু মানবাধিকার সংস্থার পক্ষ থেকে গুতেরেসকে ‘লজ্জার তালিকা’য় ইসরায়েলকে অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ করা হলেও তিনি তা করেননি। শিশুদের বিরুদ্ধে যেসব দেশ সশস্ত্র দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে গুরুতর অপরাধ করে সেসব দেশকে ওই তালিকায় স্থান দেওয়া হয়।

চলতি বছর ওই খাতায় নাম উঠিয়েছে রাশিয়া। ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ান বাহিনী ও মার্সেনারিদের নৃশংসতা দেখে গুতেরেস ‘হতবাক’ ও ‘আতঙ্কিত’ হয়ে রাশিয়াকে এই তালিকাভুক্ত করেছেন। এবারই প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের স্থায়ী পরিষদের পাঁচটি দেশের কোনো একটি দেশ এই তালিকাভুক্ত হলো।

ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়ার এটাই প্রাপ্য। রাশিয়ার মিসাইল হামলায় পূর্ব ইউক্রেনের পিজারিয়া অঞ্চলে তিন কিশোরসহ ১১ জন নিহত হয়েছে। এই একটি ঘটনাই রাশিয়াকে জাতিসংঘের লজ্জার তালিকায় স্থান দিয়েছে।

মোহাম্মদ আল-তামিমিসহ অন্যান্য ফিলিস্তিনি শিশুদের ভাগ্যে যা ঘটেছিল তার জন্য ‘লজ্জাজনক’ শব্দটি যথার্থ হলেও জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ইসরায়েলি সৈন্যদের জন্য এটি ব্যবহার করতে পারেননি।

সত্য স্বীকার করে নেওয়ার বদলে জাতিসংঘপ্রধান কূটনৈতিক কৌশলের সহায়তা নিয়েছেন এবং অত্যন্ত যন্ত্রণাময় পরিস্থিতিতে দুর্বল চেতনানাশকের দ্বারস্থ হয়েছেন।

৫ জুন গুতেরেস লিখেন,‘ইসরায়েলি সৈন্যদের আগ্রাসী মনোভাবের কারণে যে সংখ্যায় প্রতিনিয়ত শিশুরা হতাহত হয়েছে তা নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’ জাতিসংঘ মহাসচিব দুটি অনুচ্ছেদে ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’ এবং ‘শিশুদের বিরুদ্ধে মাত্রারিক্ত সৈন্য ব্যবহার’ কথাটি তিনবার করেছেন। এই শব্দগুলোর ভেতরেই তার বক্তব্য ঘুরপাক খেয়েছে যা কিছুটা দৃষ্টিকটুও বটে।

এর মাধ্যমে তার দ্বিচারিতা প্রকাশ পায় যখন তিনি ২০২২ সালের তুলনায় কম শিশু হত্যার জন্য ইসরায়েলি সৈন্যদের বিবেচনার (প্রশংসামূলক) আওতায় আনতে চান।

গুতেরেস এবং তার উপদেষ্টাদের ইসরায়েলকে আঘাত না করে এই রিপোর্ট তৈরি করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। চলুন তাদের ভেতরকার কথোপকথন কল্পনা করে নেই, গুতেরেস : রুশ সৈন্য ও তাদের দোসররা ইউক্রেনে শিশুদের সাথে যা করছে তা কি ভয়াবহ ও লজ্জাজনক নয়, আপনারা একমত?

উপদেষ্টা ১: একমত।

উপদেষ্টা ২: জনাব মহাসচিব এখানে ডেভিল’স অ্যাডভোকেটের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। কিন্তু ফিলিস্তিনে শিশুদের সাথে ইসরায়েলি এবং সহযোগীরা যা করেছে এবং এখনো করে চলেছে সে বিষয়ে কী বলবেন?

গুতেরেস: হ্যাঁ, সেটি সত্য কিন্তু এটা একটা কৌশলী প্রশ্ন নয় কি?

উপদেষ্টা ১ ও ২ : হ্যাঁ, একদম ঠিক, এটা কৌশলী প্রশ্ন।

গুতেরেস: যাই হোক, ‘আতঙ্কজনক’ ও ‘লজ্জাজনক’ দুটি শব্দই বাদ। অন্যথা হোয়াইট হাউস, ইউরোপিয়ান কমিশন প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন দার লেয়ান আমার জীবন অতীষ্ঠ করে তুলবে।

উপদেষ্টা ১: ভালো পয়েন্ট।

গুতেরেস: তাহলে ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’ কথাটিই ঠিক আছে। অর্থহীন হলেও আমরা সর্বোচ্চ এটাই করতে পারি। যাই হোক এইটাই প্রথম কোনো অর্থহীন কাজ নয় যেটা আমরা করছি, তাই না?

উপদেষ্টা ১ ও ২: লিপিবদ্ধ করে রাখলাম।

রাশিয়া- খারাপ, খুব খারাপ। ইসরায়েল- ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’। একদম ঠিক শোনাচ্ছে।

তবু আমার অবাক লাগে কী ঘটলে জাতিসংঘের হিসাবে শিশুদের হত্যা ও হতাহত করার জন্য ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’ শব্দবন্ধনীটির বদলে ‘আতঙ্কজনক’ ও ‘লজ্জাজনক’ শব্দগুলো ব্যবহার করা হবে? সেই রহস্যজনক সীমানারেখা কোথায় টানা হয়েছে?

এটা কি কোনো সুনির্দিষ্ট সংখ্যা? নাকি এর পেছনে রয়েছে অন্য কোনো উদ্দেশ্য? ফিলিস্তিনি শিশুদের আর কীভাবে হত্যা এবং হতাহত করলে জাতিসংঘ মহাসচিব ইসরায়েলের ভয়ংকর আগ্রাসী এই মনোভাবকে ‘আতঙ্ক সৃষ্টিকারী’ ও ‘লজ্জাজনক’ হিসেবে অভিধা দেবে?

নাকি যে সৈন্যরা হত্যা ও অঙ্গহানির জন্য দায়ী তাদের জাতীয়তার কারণে এমন অনিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে? লিটমাস টেস্ট যেটাই হোক না কেন, গুতেরেসকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, পশ্চিমা গণমাধ্যম ও রাজধানীগুলো ‘লজ্জার তালিকা’ অন্তর্ভুক্তির কথা কয়েক বছর ধরেই বলে আসছেন।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, ‘ইসরায়েল এই তালিকায় রয়েছে’। লজ্জার তালিকায় এই দেশটির নাম বাদ যাওয়া ‘জাতিসংঘের ক্ষমতাবান সরকারের প্রতি দুর্বলতা প্রকাশ করে’ এবং ‘ফিলিস্তিনি শিশুদের জন্য এটি ভয়ংকর দুশ্চিন্তার ব্যাপার।’

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি প্রতিনিধি রিয়াদ মানসুর গুতেরেসের ইসরায়েলকে লজ্জার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার ঘটনাকে ‘বড় ভুল’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

একটি ‘বড় ভুল’ এবং ‘ফিলিস্তিনি শিশুদের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর’ হওয়া সত্ত্বেও জাতিসংঘের উচ্চপদস্থ কূটনীতিকরা তাদের মূল্যবান চাকরি ধরে রাখতে এবং সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের কারণে এ ধরনের কাপুরুষতা দেখাতে পিছপা হচ্ছেন না। শেষমেশ, কূটনীতিকদেরও তাদের নিজস্ব যুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হয়।

কেউ কি এটা বিশ্বাস করবে যে, গুতেরেস বা যে কোনো জাতিসংঘ মহাসচিব মোহাম্মদ আল-তামিমি বা অন্য ফিলিস্তিনি শিশুকে ‘ভুলবশত’ হত্যার ঘটনায় ইসরায়েল দায়ী করে তার প্রতিবাদ করবে? না, আমার তা মনে হয় না।

মূল লেখা : অ্যান্ড্রু মিত্রোভিকা, আলজাজিরার কলামিস্ট।

ভাষান্তর : সরকার জারিফ, সহ-সম্পাদক, কালবেলা অনলাইন।

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

একযোগে ‘নারী ও শিশু নির্যাতনবিরোধী’ শপথপাঠ বৃহস্পতিবার

ফিরছেন সাজেকে আটকা পড়া পর্যটকরা

সেতু তো নয়, যেন মৃত্যু ফাঁদ 

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রবাসীদের নিয়ে মালদ্বীপে দূতাবাসের উদ্যোগে ফুটবল টুর্নামেন্ট

সংলাপে অংশ নিতে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জামায়াতের প্রতিনিধি দল

পিসিবির প্রস্তাবে ভারতের ‘না’   

সংলাপে অংশ নিতে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিএনপির প্রতিনিধি দল

একজন চিকিৎসক দিয়েই চলছে হাসপাতাল

মোস্তাফিজুরের জীবনে নতুন অতিথি, জানালেন সুখবর

১০

বিনা চাষে চলনবিলে ৩৫ লাখ মণ রসুন উৎপাদনের সম্ভাবনা

১১

শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় চিরনিন্দ্রায় শায়িত মো. শাহজালাল

১২

সাজেকে আটকা ৫০০ পর্যটক

১৩

বিএসএমএমইউর নতুন ভিসি অধ্যাপক শাহিনুল আলম

১৪

সাভারে দাফন করা ব্যক্তিই হারিছ চৌধুরী : হাইকোর্টে প্রতিবেদন

১৫

বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে লাশ হলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী

১৬

বেনজীরের ক্যাশিয়ার জসিম গ্রেপ্তার

১৭

ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যবদ্ধ লড়াই করব : রিজভী

১৮

কক্সবাজার সৈকতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ রোবট ‘দানব’

১৯

আমু ও কামরুলকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ

২০
X