‘মাথায় কত প্রশ্ন আসে দিচ্ছে না কেউ জবাব তার’- এই কথা সুকুমার রায়ের। বিষম চিন্তার এরূপ অনেক প্রশ্ন তখন মাথায় ঘুরলেও উত্তর হয়ত জানা ছিল না। তখন জানার এতসব মাধ্যমও ছিল না। কালে কালে বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতি হয়েছে। প্রযুক্তি এখন ডানা মেলে উড়ছে। নিত্য নতুন জ্ঞানের উন্মেষ ঘটছে। নানা প্রশ্নের উদ্ভব হচ্ছে। অনেক রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে। আবার অনেক কিছু নেট দুনিয়ার কল্যাণে উত্তর আকারে বেরিয়েও আসছে। আজকাল অনেক প্রশ্নের উত্তর জানতে বিশেষ কোনো কোশেশও করতে হয় না। চোখ কান খোলা রাখলেই সব পরিষ্কার ফকফকা হয়ে যায়।
যা কিছু রহস্যে ঘেরা, কুটচালে ভরা ও অতি গোপনীয়তার চাদরে মোড়া তার বিষয়ে যেমন পাবলিকের দৃঢ় অনুমান আছে, তেমনি মানুষের নির্লিপ্ত ভাব আছে, হাসাহাসি আছে, ফিসফিসানিও আছে। তবে জানার তীব্র বাসনা নেই। কেননা ওইসব বেহুদা প্রশ্নের উত্তর পাবলিকের অনেকটাই জানা, বাকিটাও সহজে অনুমেয়। বিনোদন প্রিয় মানুষ এখন বিনোদনে বেজায় ঝুঁকেছে। তাদের সামনে এখন ‘সৃজনশীল’ বলে কোনো কিছু নেই। ভালো আর মন্দের কোনো অপশন নেই। যা আছে তা সস্তা বিনোদন আর হাস্যরসের নোংরামী।
বই-পুস্তকে অবশ্য বলা হয়ে থাকে মানুষের জীবন পশু-পাখির চেয়ে উন্নত। কেননা তার বুদ্ধি-বিবেক আছে। ভালোমন্দ জ্ঞান আছে, বাছবিচার করার ক্ষমতা আছে। তাই সে আশরাফুল মাখলুকাত। কিতাবে আরও আছে শিক্ষা মানুষকে ‘মানুষ’ হতে সাহায্য করে। সাহিত্য, সংস্কৃতি তাকে সুশীল করে, মানবিক করে, পরোপকারী করে গড়ে তোলে। সুশাসন তাকে সামাজিক নিরাপত্তা দেয়। ভারসাম্যমূলক অর্থনীতি তাকে অর্থনৈতিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়। কিন্তু আজকাল এর ছায়াও চাক্ষুষ হয় না। আগে মধ্যবিত্তের একটা ভারসাম্যমূলক সামাজিক আভিজাত্য বোধ ও অবস্থান ছিল। এখন মধ্যবিত্ত প্রায় অপসৃয়মাণ। নিভন্ত প্রদীপের সলতের মতো টিম টিম করে যতটুকু টিকে আছে তাও বহুধা মিশ্রণে কর্কটাক্রান্ত। এহেন অবস্থায় মাথায় নানা প্রশ্ন এলেও উত্তরের জন্য কারও কোনো পেরেশানি নেই। হয়ত খানিকটা হতাশা বোধ আছে আর আছে বিরক্তিকর অভিব্যক্তি।
শ্রেণি বিভক্ত সমাজে শ্রেণি বৈষম্য সকল কালেই ছিল। তবে তার মধ্যেও দাতব্য কর্ম ছিল, বণ্টন প্রক্রিয়া কিছুটা হলেও মানবিক ছিল। প্রশাসন যন্ত্র, রাষ্ট্রীয় বিধি-ব্যবস্থা নিম্ন আয়ের লোকদের পক্ষে সহানুভূতিশীল ছিল। আইন-আদালত উপশমকারী শেষ ভরসা স্থল হিসেবে পাশে থাকত। এখন এরূপ চিত্র কদাচিৎ পরীলক্ষিত হচ্ছে। বরং উল্টো চিত্রই দৃশ্যমান হচ্ছে। নিত্য নতুন বিস্ময়কর কাহিনি বেরিয়ে আসছে। এখন কোনো মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নেই, কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। হিজ হুজ স্টাইলে যা হচ্ছে, যেভাবে চলছে সেটাই যেন মানদণ্ড হয়ে গেছে।
কোথাও কোনো হুইসেল ব্লেয়ার নেই। প্রতিষ্ঠান আছে, উপযুক্ত আইনকানুনও আছে। কিন্তু তার প্রয়োগ নেই বা প্রয়োগে বাছবিচার রয়েছে। সক্ষমতা থাকলেও অক্ষমতার হাজারো বাহানা আছে। দুর্নীতি সর্বকালীন ব্যাধি ছিল, এখন সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে। তা এখন আকারে-প্রকারে এত সুদৃঢ় মূলে প্রোথিত হয়েছে যে একে উপড়ানো তো দূরের কথা, ছাঁটার ক্ষমতা বা উদ্যোগও পরীলক্ষিত হয় না। আগে ‘যোগ্যতা’ বলে একটা অদৃশ্য অথচ খুব শক্তিশালী মাপকাঠি ছিল। এর কমবেশি প্রয়োগের তৎপরতা ছিল। এখন যোগ্যতার চেয়ে পদাসীন ব্যক্তিদের আনুগত্য ও এক্সট্রা কারিকুলার কর্ম প্রতিষ্ঠিত বাস্তবতা হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। পাবলিকের এই নিয়ে কোনো পেরেশানি নেই। কোনো কৌতূহল নেই। তাই প্রত্যাশার মাত্রাও অনেক কম।
আগে হাতে গোনা কিছু লোকের হাতে বিশাল পুঁজি জমা ছিল। এখন তা অনেক লোকের ভল্টে। আগে চুরিচামারি যাই হতো, দেশের সম্পদ দেশেই থাকত। এখন তা সাত সমুদ্র-তেরো নদীর তল দিয়ে প্রতিনিয়ত বিদেশি ভল্টে ডাইরেক্ট ট্রান্সফার হয়ে যাচ্ছে। পাবলিক তা জানে। এ নিয়ে তাদের যথেষ্ট উদ্বিগ্নতা আছে, যারপরনাই চাপা ক্ষোভ আছে। তাই নিজেদের গচ্ছিত অর্থ-সম্পদ যখন সিন্ডিকেট প্রক্রিয়ায় দৃষ্টি সীমানার বাইরে হাওয়া হয়ে যায় তখনই তাদের মাথায় বাজ পড়ে, চৈতন্য-পীড়া হয় আর হৃদয় ক্ষরিত হয়। এ নিয়ে ব্যাংকের ক্ষুদ্র গ্রাহকদের চিন্তার শেষ নেই। মিডিয়া বলছে ব্যাংকে তারল্য ঘাটতি এতটাই যে অচিরেই কোনো কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে কর্তৃপক্ষ বলছে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। পাবলিক সরকারি হ্যান্ড আউটের ভাষা বুঝে, তাই আস্থায় নেয় না।
শিক্ষা নিয়ে তেলেসমাতি কারবার চলছে। সর্বত্র জিপিএ ফাইভ এর ছড়াছড়ি। অথচ মানে বড় দুর্বল। এ নিয়ে শিক্ষকরা পুলকিত, অভিভাবকরা উচ্ছ্বসিত আর শিক্ষার্থীরা সাময়িক আনন্দিত। জিপিএ-র সেই সোপান এখন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন বিদ্যালয়গুলোতে কোনো পরীক্ষা নেই। আছে খেলার ছলে বৃত্তিমূলক শিক্ষা। শিক্ষার্থীরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচার আনন্দে উৎফুল্ল। শিক্ষকরা দায়মুক্ত, বিকল্প ফায়দা তালাশে তৎপর। আর অভিভাবকরা শঙ্কিত। সরকার ও তার পক্ষীয় বুদ্ধিজীবীরা নতুন পদ্ধতি ও সিলেবাসের গুণ কীর্তনে ব্যস্ত। পাবলিকের এক অংশ খুঁটিনাটি তুলে ধরে এর বিপক্ষ অবস্থানে সোচ্চার। মাঝখানে পড়ে অভিভাবকদের দিশাহারা অবস্থা।
আরেক দল ট্রল আর কন্টেন্ট ক্রিয়েট করে মজা নিচ্ছে। তাদের কোনো লস নেই। কন্টেন্টের খরা ঘুচে গেছে, পয়সা ভি মিলছে। পাবলিকের কাছে সব কিছু পরিষ্কার। তাই সুকুমার রায়ের মতো মাথা ঘামানোর কোনো বাড়তি চাপ নেই। কেউ বলছে আমাদের আগামীর কাণ্ডারিদের ‘ভবিষ্যৎ’ অন্ধকারময়। এতে করে ভবিষ্যতে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সুশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর পরিবর্তে তৈরি হবে মিস্ত্রী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, প্লাম্বার, ইলেক্ট্রিশিয়ান, মেকানিক, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, সেলিব্রেটি, মডেল, শেফ, বয়, বাবুর্চি, দর্জির মতো জনগোষ্ঠী। যুক্তি হিসেবে তারা টাটকা প্রমাণ হাজির করে বলেন, এখন চলছে ট্রেন্ডিং এর যুগ। এর জন্য খুব বেশি লেখাপড়ার প্রয়োজন পড়ে না। উচ্চশিক্ষা পাশ দিয়ে বেকারত্বই যদি হয় ‘পরিণতি’ তাহলে এত শিক্ষার দরকার নেই। ‘হীরক রাজার দেশে’ সিনেমায় সত্যজিৎ রায় বলেছেন ‘এরা যত বেশি জানে, তত কম মানে’।
উচ্চশিক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীরা হচ্ছে আমলা। বুদ্ধিজীবীরা পরশ্রীকাতর হয়ে বলে কামলা। তাই, আমলা-কামলার দরকার নেই। রাজনীতি হচ্ছে সব কিছুর নিয়ন্ত্রক। তার জন্য উচ্চশিক্ষার আবশ্যকতা নেই। তাই বেশি শিক্ষা ফলবতী নয়। এখন চলছে ট্রেন্ডিং আর ব্র্যান্ডিংয়ের সময়। সম্প্রতি একজন মহিলা ফুড ভ্লগার লাইভে এসে সদম্ভে ঘোষণা দিয়েছেন তার মাসিক ইনকাম ১০ লাখের মতো। একজন হিরোর সম্পদ জ্যামিতিক হারে বেড়ে ২ কোটি বলে সরকারি কাগজে প্রদর্শিত হয়েছে। একজন লাল-নীল-সবুজ-হলুদ চুলের ভ্লগার কাম কন্টেন্ট ক্রিয়েটর দুবাই, মালয়েশিয়ায় স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করে বেড়াচ্ছেন। অনেক কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ভালো বাংলা বলতে না পারলেও কন্টেন্ট বানানোর নাম করে মিডল ইস্ট, কানাডা, সিংগাপুর, কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ করে বেড়াচ্ছেন অবলীলাক্রমে। এদের এই স্বাচ্ছন্দ্যময় পরিভ্রমণে অর্থের জোগান কোত্থেকে আসে কে জানে?
সমাজবিজ্ঞানীদের এ নিয়ে কোনো গবেষণা নেই, কারো কোনো প্রশ্ন নেই। আজকাল কাপল ভ্লগ খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বেডরুম থেকে বাথরুম, কিচেন থেকে ড্রয়িং রুমের প্রাত্যহিক খুঁটিনাটি রঙ্গ-ব্যাঙ্গ, মারামারি, হাসাহাসি, কাদা ছোড়াছুড়ি আর লাইভে এসে একান্ত বিষয় নিয়ে তাদের করা কান্নাকাটির ভিডিওগুলো ব্যাপক সাড়া পাচ্ছে বলে তারা আরও জোরেশোরে তা নির্মাণ করে চলেছেন। তারাও সপরিবারে দেশ-বিদেশ করে বেড়াচ্ছেন।
এখন চলছে টিকটক আর রিলের আধিপত্য। শিক্ষিত-অশিক্ষিত, উঁচু-নিচু, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই মুঠোফোনে অ্যাপ ডাউনলোড করে নিজেদের অভিব্যক্তি ও প্রতিভার প্রমাণ দিতে তৎপর। এটা যে নিছক নেশা তাও না। এর নেপথ্যে অনুল্লিখিত রয়েছে সামাজিক অবস্থান তৈরি ও আয়ের উৎস সৃষ্টি করা। বলাবাহুল্য এইসব সৃষ্টিতে শিক্ষার খুব বেশি প্রয়োজন পড়ে না। তাই রুচিরও তোয়াক্কা নেই। লাইক, কমেন্ট আর ভিউ বাড়াতে যাচ্ছেতাই নির্মাণে সবাই এখন উঠে পড়ে লেগে গেছে। দেশের সিংহভাগ লোকজন এখন এই সব হাল্কা চালের বিনোদনে বুঁদ হয়ে আছে।
দেশে বছরান্তে মডেলের সংখ্যা শনৈঃশনৈঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতকাল শুনে এসেছি আকাশের যত তারা পুলিশের তত ধারা। কিন্তু এখন দেখছি আমাদের দেশেও মডেলের ছড়াছড়ি। অনুমান করলে খুব অসঙ্গত হবে না, ছোটবেলা থেকেই এদের মস্তিষ্কে মডেল হওয়ার বাসনা প্রোথিত হয়ে যাচ্ছে। দেশ-বিদেশে ‘মডেল’ আজ বাস্তব স্বীকৃত প্রচারণা মাধ্যম। কিন্তু এত এত মডেলের কর্মের জোগান দেওয়ার মতো বাণিজ্যিক স্ফীতি এ দেশে কোথায়? এরাও হরহামেশাই বিদেশ করে বেড়াচ্ছে। এরা কখন কোথায় অবস্থান করে তা জানা যায় এদের ফেবু আইডি আর কন্টেন্ট দেখে। নিন্দুকরা বলে থাকে, আজকাল ‘এসকর্ট’-দের চাহিদা ব্যাপক। সুগার ড্যাডিদের জোগানও সমানুপাতিক। নায়ক-নায়িকারাও পিছিয়ে নেই।
দেশে সিনেমার সংখ্যা ক্রমান্বয়ে উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাচ্ছে। পর্যাপ্ত হল নেই, উপযুক্ত পরিবেশ নেই। মানসম্মত সিনেমা হচ্ছে না। যাও হচ্ছে তাও দর্শকপ্রিয়তা পাচ্ছে না। তাই, এর শিল্পীরাও যে যার মতো ভ্লগ, লাইভ, রিল, টিকটক, ইউটিউব চ্যানেল খুলে দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন, দোকান উদ্বোধনে ফিতা কাটছেন, নিম্নমানের স্টেজ মাতাচ্ছেন। দিন শেষে কেউ কেউ লাইভে এসে কান্নাকাটি করে নিজের আর্থিক সংকটের কথা বলছেন, সরকার ও বণিক গোষ্ঠীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টাও করছেন। এদের মধ্যে কয়েকজন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়ে করে খাচ্ছেন।
আরেক মজার বিষয় হলো ট্রেন্ডিং। কখন কার কোন জিনিস ‘জামাল কুদু’র মতো ট্রেন্ডিং হয়ে কপাল খুলে দেবে কে জানে? সবাই তলে তলে সেই তালে সচেষ্ট। আরেক দল আছে অতিশয় ধড়িবাজ। ইউটিউব চ্যানেল খুলে সত্য-মিথ্যার মিশাল দিয়ে বেশ করে খাচ্ছে। এখন বান্ধবী ললিতার কোন কোন জায়গায় ব্যথা আর টিপ্পা দে টিপ্পা দে জাতীয় আধা লোক আধা কামোত্তজক গানের বেশুমার কাটতি। পাবলিক এসব দেখে ও শুনে। কারণ তাদের সুদূর ‘ভবিষ্যৎ’ অন্ধকারময় আর চলমান ‘সম্প্রতি’ যাতনাময়। তাই এই সব বিনোদন সুড়সুড়ির ঝিলিক তাদের সাময়িক রতি সুখের কাজ করছে। মিডিয়াও এদের ফলাও করে প্রচার করছে নেগেটিভ-পজিটিভ বাছবিচার না করে। তাদেরও ভিউ বাড়ানো দরকার, কাটতি বাড়ানো প্রয়োজন। এতসব ডামাডোলে সুস্থ শিল্পকলার কোনো চর্চা নেই, কোনো আয়োজন নেই, সৃজনশীল কোনো সাহিত্যকর্ম নেই।
আগামীর প্রজন্মের মননে এই সব সস্তা ও শর্টকাট ব্যবস্থা গ্রহণযোগ্য ও বাস্তবানুগ হিসেবে সহজেই ধরা দিচ্ছে। কোথাও কোনো মেধা ও সৃজনশীলতার চর্চা হচ্ছে না। যেন নগদেই মুক্তি, বাকিতে ফাঁকি। কিছু ভালোর সাথে প্রচুর মন্দের ব্লেন্ডিং করে যা উপস্থাপিত হচ্ছে তা মানসিক স্বাস্থ্য ও নীতি-নৈতিকতার পক্ষে মোটেই সুস্বাস্থ্যকর না। শঙ্কার বিষয় হলো এই, প্রতিবছর দেশ থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মেধা ও দক্ষ জনবল বিদেশে স্থায়ী নিবাস স্থাপনের অভিপ্রায়ে চলে যাচ্ছে। এরা কিন্তু আর ফিরে আসবে না। তাহলে ভবিষ্যতে এদেশের হাল যারা ধরবে তাদের চেহারাটা কেমন হবে? কী তাদের যোগ্যতা হবে? তাদের দক্ষতা কি ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনার মতো যথোপযুক্ত হবে?
নিন্দুকদের যুক্তি, গার্মেন্টস শিল্প যেভাবে বিদেশি উচ্চ মানবসম্পদ আর সুদক্ষ টেকনিক্যাল লোকজন চুক্তিতে ভাড়া করে নিয়ে এসে দেশের নাম রোশনাই করছে, অর্থনীতির পালে হাওয়া দিচ্ছে তেমনি প্রশাসন চালানোর মতো উপযুক্ত লোকও নিয়ে আসা যাবে। এগুলো হতাশার কথা।
বছর আসে বছর যায়। প্রত্যাশা নিয়ে যাত্রারম্ভ হয়। অপূর্ণতা দিয়ে শেষ হয়। নতুন আশায় নতুন বছর বরণে আবার প্রত্যাশাকে সাফসুতরো করে মাইলপোস্ট বানিয়ে সামনে রাখি। এভাবেই বছরের আসা-যাওয়া সহনীয় হয়ে গেছে। নতুন সুর বাধতে চাই, নতুন ক্যানভাস আঁকতে চাই। নতুন প্রত্যাশায় জাগরিত হতে চাই। আশা না থাকলে মানুষ দিকভ্রান্ত হয়ে পড়ে। তখন মানুষে আর পশুতে খুব বেশি বিভেদ থাকে না। ট্রেন্ডিং, ব্র্যাান্ডিং আর ব্লেন্ডিংয়ের চাকচিক্য, হৈ চৈ থাকবে। তবে উদ্দীষ্ট অর্জনের জন্য উদ্যোগ, উদ্যম ও সুষ্ঠু পরিকল্পনাও জরুরি। গুণীদের শক্ত হাতে হাল ধরার এখনই চূড়ান্ত সময়। না কি চলতি হাওয়ার ট্রেন্ডিং, ব্র্যান্ডিং আর ব্লেন্ডিং দিয়েই ফি বছরের ইয়ার এন্ডিং হবে?
আনোয়ার হাকিম : অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা
মন্তব্য করুন