রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার
প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:০০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ২৮-এর প্রথম সপ্তাহের লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডের অর্জন

জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের এক্সপো সিটিতে অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। ছবি : সৌজন্য
জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের এক্সপো সিটিতে অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। ছবি : সৌজন্য

জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন-কপ২৮ এর প্রথম সপ্তাহের সবচেয়ে বড় অর্জন হলো এই পর্যন্ত জলবায়ু ফান্ডের ৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি অর্থায়ন পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে, যা জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এমনি ঘোষণা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পরিবেশমন্ত্রী এবং জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন-কপ২৮ এর প্রেসিডেন্ট ড. সুলতান আল জাবের। এই ঘোষণা প্রথমবারের মতো খাদ্য ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার রূপান্তর, নবায়নযোগ্য শক্তি ও শক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ভারী শিল্প হতে কার্বনমুক্তকরণের জন্য ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়।

দক্ষিণের দেশগুলোতে জলবায়ু সহায়তা বৃদ্ধির জন্য এবং ব্যক্তিগত অর্থায়নের গতি বৃদ্ধির জন্য আলটেরা নামক ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঘোষণা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটি IMF এর SDRs তহবিলে ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত পানির সমস্যা দূরীকরণের জন্য আরও ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঘোষণা দিয়েছে। পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক জলবায়ুসংশ্লিষ্ট প্রকল্পের জন্য বাৎসরিক ৯ বিলিয়ন মার্কিং ডলার সহায়তা বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে। এ ছাড়া গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড (GCF) সমৃদ্ধ করতে আরও ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণ অর্থ যুক্ত করার ঘোষণা করা হয়েছে; স্বাস্থ্য খাতে যুক্ত হয়েছে ২.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার; খাদ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর জন্য ২.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার; প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য ২.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার; আরবান ক্লাইমেট একশনের জন্য ৪৬৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ত্রাণ-পুনর্বাসন জন্য ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আশ্বাস পাওয়া গেছে। পাশাপাশি নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসারের গতি বাড়ানোর জন্য ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার; মিথেন নির্গমন হ্রাসের জন্য ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের জন্য ৫৬৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছে। জলবায়ু জরুরি অবস্থার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী ধনী দেশগুলো এখন পর্যন্ত লস এবং ড্যামেজ তহবিলে মোট ৭২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে প্রতিবছর উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশে যে পরিমান অপূরণীয় অর্থনৈতিক এবং অনর্থনৈতিক ক্ষতি হয় তার মাত্র ০.২% বা এরও কম।

জলবায়ু নীতি ও গবেষণা নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংস্থা হলো- দ্যা লস অ্যান্ড ড্যামেজ কোলাবোরেশন। সম্প্রতি তাদের একটি রিপোর্টে দেখা যায় যে, একটি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বাৎসরিক গড়ে ৪০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণ বা আরও বেশি লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিলের দরকার। যেখানে জলবায়ু জনিত ক্ষতির পরিমাণ বছরে ১০০ থেকে ৫৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রাথমিকভাবে কপ২৮ এর প্রথমদিকে কয়েকটি দেশ প্রায় ৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডের প্রতিশ্রুতি করলেও পরবর্তী সময়ে আরও কয়েকটি দেশ এতে যুক্ত হচ্ছে। ইতোমধ্যে কপ২৮ আয়োজনকারী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত এককভাবে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার; ইতালি এবং ফ্রান্স পৃথকভাবে ১০৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার; যুক্তরাজ্য ৫০.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার; সবচেয়ে দূষণকারী দেশ যুক্তরাষ্ট ১৭.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার; জাপান ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার; জার্মানি এককভাবে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং জার্মানিসহ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ২৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার; ডেনমার্ক ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার; আয়ারল্যান্ড ইউরোপিয়ন ইউনিয়নের সঙ্গে ২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার; নরওয়ে ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার; কানাডা সর্বনিম্ন ১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং স্লোভেনিয়া ১.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

প্রায় ২০০০ জলবায়ু গ্রুপের জোট ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক ইন্টারন্যাশনালের বৈশ্বিক রাজনৈতিক কৌশলের প্রধান হারজিৎ সিং বলেছেন, লস এন্ড ড্যামেজ তহবিল গঠনে ৩০ বছর লেগেছে, প্রাথমিক প্রতিশ্রুতিতে ৭০০ মিলিয়ন ডলার বিশাল প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য, যেখানে বার্ষিক শত শত বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ধনী দেশগুলোর বরাবরই উন্নয়নশীল দেশগুলোর দুর্দশার প্রতি উদাসীন বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যারা ঐতিহাসিকভাবে সবচেয়ে বড় দূষণকারী। জলবায়ু ন্যায়বিচার নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞদের মতে, লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড অবশ্যই অনুদান হতে হবে এটি কোনো ঋণ নয়। কারণ উন্নত দেশগুলোর স্বেচ্ছাচারী দূষণের কারণে অনুন্নত দেশগুলোর ভুক্তভোগী হচ্ছে। তবে লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডের অর্থের প্রকৃতি ও সময় অস্পষ্ট থাকে বলে সঠিক সময়ে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর যাচ্ছে না।

অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার : বিভাগীয় প্রধান, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, ডিন, বিজ্ঞান অনুষদ, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, যুগ্ম-সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং চেয়ারম্যান, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)।

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন বাসে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যাওয়া মাহিন

বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স কাউন্সিলে নীল দলের নিরঙ্কুশ বিজয়

বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ২

বিমানবন্দরে সাংবাদিক নূরুল কবীরকে হয়রানি, তদন্তের নির্দেশ ড. ইউনূসের

মিনা ফারাহকে জামায়াত আমিরের ফোন

২৪ চেতনায় সবাইকে জাগ্রত হতে হবে : শামীম

পাওনা টাকা নিয়ে ঝগড়া, ভাতিজাকে খুন করে গ্রেপ্তার চাচা

আর পি সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা

মাছের প্রজননে সময় না দিয়ে মানুষ দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছে : মৎস্য উপদেষ্টা

আজিজুল হক কলেজে কনসার্ট চলাকালে ছুরিকাঘাতে যুবক খুন

১০

বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তাপসসহ ৩০ জনের নামে মামলা

১১

কিছু মানুষের ব্রেইন সিটিস্ক্যান করে দেখার ইচ্ছা, কীভাবে এত ক্রিমিনাল হতে পারে?

১২

কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে তৃণমূলের আস্থা হুদাতে

১৩

১ হাজারে দৈনিক সুদ ১০০ টাকা!

১৪

বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন ব্রিটেনের রাজা

১৫

‘ড্রেসিংয়ে গেলে বলতেন আন্দোলনে গেছিলা ক্যান’

১৬

৩১ দফা বাস্তবায়নে বিএনপি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ : যুবদল সম্পাদক

১৭

শহীদ শাকিলের কবরে ছাত্র ফেডারেশনের শ্রদ্ধা নিবেদন

১৮

দুই দিনের ব্যবধানে সোনার দাম বৃদ্ধি, ভরি কত?

১৯

সাগরে লুঘচাপের মধ্যেই বৃষ্টি নিয়ে বড় দুঃসংবাদ   

২০
X