মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১
আনোয়ার ফারুক তালুকদার
প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:১৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ফিলিস্তিনের জন্য বিশ্বকে এক হতে হবে

ছবি : সৌজন্য
ছবি : সৌজন্য

ছোটবেলা থেকেই জেনেশুনে আসছি নির্যাতিত ফিলিস্তিনের মানুষের কথা। আজও সেই একইভাবে চলছে নির্যাতন, গণহত্যা এবং বাস্তুচ্যুতি। রেহাই পাচ্ছে না নারী-শিশুসহ বেসামরিক মানুষ। গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে হাসপাতাল। ঘোষণা দিয়ে নরহত্যা! কী বর্বর এবং পৈশাচিক! মানুষের ওপর মানুষের এমন নির্যাতন যুগ যুগ ধরে চলছে বিশ্ববাসীর চোখের সামনে।

কেউ কেউ আবার প্রত্যক্ষভাবে সমর্থন করছে এই আগ্রাসন। নির্যাতনকারীর নির্লজ্জ পক্ষাবলম্বন করতেও সামান্য দ্বিধাবোধ করছে না। অথচ তাদেরই আবার আরেক দেশের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধংদেহী মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখা যায়। তারাই একজোট হয়ে ইউক্রেনে রাশিয়ার নির্দয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন। অথচ তারাই আবার গাজা ও গাজার বাইরে ইসরায়েলের বর্বর হামলার পক্ষে দাঁড়ালেন। এ যেন একই অংগে নানারূপ।

অসহায় ফিলিস্তিনিরা কেন যুগের পর যুগ নির্যাতিত হয়ে আসছে তার কিছুটা ইতিহাস তুলে ধরতে চাই। কেন হামাস ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা করে হাজারো মানুষ হত্যা করল তাও জানা দরকার। আমরা কোনো অবস্থায়ই বিনা বিচারে মানুষ হত্যা করাকে সমর্থন করি না। জানা যায়, ১০০ বছরেরও বেশি সময় আগে ১৯১৭ সালের ২ নভেম্বর ব্রিটেনের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব আর্থার বেলফোর ব্রিটিশ ইহুদি সম্প্রদায়ের একজন সদস্য লিওনেল ওয়াল্টার রথচাইল্ডকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। এই চিঠিতে ব্রিটিশ সরকারকে ‘ইহুদি জনগণের জন্য ফিলিস্তিনে একটি জাতীয় বাসস্থান প্রতিষ্ঠা’ করার কথা উল্লেখ ছিল। আর এই চিঠিটিই বেলফোর ঘোষণা নামে পরিচিত।

সে সময় ফিলিস্তিনে আরব স্থানীয় জনসংখ্যা ছিল ৯০ শতাংশেরও বেশি। তারও আগে ১৯০৫ সালে সপ্তম জিয়নবাদী কংগ্রেসে ইহুদিদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য একাধিক স্থান প্রস্তাব করা হয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল আর্জেন্টিনা, উগান্ডা ও ফিলিস্তিন। শেষ পর্যন্ত ফিলিস্তিনে একটি ইহুদি রাষ্ট্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং রাষ্ট্রের নাম প্রস্তাব করা হয় ইসরায়েল।

ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে একটি ব্রিটিশ আদেশপত্র ১৯২৩ সালে তৈরি করা হয়েছিল। এ সময় ইহুদি অভিবাসনকে ব্যাপকভাবে সহায়তা করেছিল ব্রিটিশরা। ইউরোপে নাৎসিবাদের অত্যাচার থেকে পালাতেও অনেক ইহুদি ফিলিস্তিনে আশ্রয় নিয়েছিল। ব্রিটিশ বাহিনী কর্তৃক ফিলিস্তিনে আগ্রাসনের প্রতিবাদে ১৯৩৬ থেকে ১৯৩৯ সালের মধ্যে দুটি বিদ্রোহ সংগঠিত হয়। এই বিদ্রোহ দমন করতে ব্রিটিশরা প্রায় ৩০ হাজার সৈন্য সমাবেশ করে। বিদ্রোহের সেই তিন বছরের মধ্যে ৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছিল। আহতের সংখ্যা ছিল ১৫ থেকে ২০ হাজার।

এরপর আরও যে কত ফিলিস্তিনি ইসরায়েলিদের হাতে নিহত হয়েছে তা শুধু কিছু সংখ্যা হয়ে আছে। গাজায় ২০০৮, ২০১২, ২০১৪ ও ২০২১ সালে চারটি দীর্ঘস্থায়ী সামরিক হামলা করেছে ইসরায়েল। হামলায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত ও কয়েক হাজার বাড়ি, স্কুল, হাসপাতাল ও অফিস ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সর্বশেষ এ বছরের ৭ অক্টোবরের পর থেকেই ইসরায়েলি বাহিনী প্রায় ১৫ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, এর মধ্যে ৭০ ভাগই শিশু এবং নারী। জখম হয়েছেন ৩০ হাজারের বেশি মানুষ। নিখোঁজ প্রায় ৬ হাজার।

গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দাদের মধ্যে ১৯ লাখই বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ৭ দিনের সাময়িক যুদ্ধ বিরতি শেষে আবারও হামলা শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। হামাস এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চাইলেও ইসরায়েলিরা তাতে এখনো সম্মতি দেয়নি। জানা যায়, ১৯৪৭ সালের মধ্যে ফিলিস্তিনে ইহুদি জনসংখ্যা ৩৩ শতাংশে পৌঁছায়। সে সময় তারা মাত্র ৬ শতাংশ জমির মালিক ছিল।

তৎকালীন সময়ে ফিলিস্তিনকে আরব ও ইহুদি রাষ্ট্রে বিভক্ত করতে জাতিসংঘে ১৮১ প্রস্তাব গৃহীত হয়। ফিলিস্তিনিরা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল সে সময়। কারণ প্রস্তাবটিতে ফিলিস্তিনের প্রায় ৫৬ শতাংশ ইহুদিদের জন্য বরাদ্দ ছিল। যার মধ্যে বেশির ভাগ উর্বর উপকূলীয় অঞ্চলও অন্তর্ভুক্ত ছিল। সে সময় দেশটির ৯৪ শতাংশের মালিক ছিল ফিলিস্তিনিরা। আর জনসংখ্যা ছিল ৬৭ শতাংশ। আর বর্তমানে ফিলিস্তিনের বেশির ভাগ ভূমি ইসরায়েলের দখলে এবং তারা ফিলিস্তিনকে জনশূন্য করে পুরোটাই দখলে নেওয়ার জন্য যুগ যুগ ধরে বিবেকহীন এই আগ্রাসন চালাচ্ছে।

মানুষের দেয়ালে যখন পিঠ ঠেকে যায় আর কোনো উপায় থাকে না তখন জীবন বাজি রেখে খড়কুটো যা পায় তাই দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চায়। কেন হামাস তার পরিণতি জেনেই শক্তিশালী ইসরায়েলের ওপর আক্রমণ চালিয়েছিল তা হলো নিজেদের বেঁচে থাকায় উপায় বের করার জন্য। ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলি এবং তাদের দোসররা এমন নির্যাতন করছে যা কোনো ধর্মীয় চাঁচে ফেলা যাবে না। এটা কোনো ধর্মীয় বিষয় নয়, এটা একটি জাতিগোষ্ঠীকে সমূলে উৎখাত করার চক্রান্ত।

এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সব দেশের মানুষ উচ্চকণ্ঠে প্রতিবাদের সুর তুলছে। কিন্তু যাদের দেখার কথা তারা আজ অন্ধ হয়ে নির্যাতনকারী দখলদারদের নির্লজ্জ পক্ষাবলম্বন করে বসে আছে। এই অবিচারের শেষ কোথায়? বিশ্বকে আজ মানবতার জন্য এক হতে হবে । শুধু ফিলিস্তিনের জন্য নয়, যেখানেই মানবতা ভূলণ্ঠিত হবে সেখানেই বিশ্বকে এক হয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। নয়তো এই পৃথিবী নামের গ্রহ খুব বেশিদিন তার অস্তিত্ব ধরে রাখতে পারবে না।

একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রই হতে পারে ফিলিস্তিন ইসরায়েল সমস্যার স্থায়ী সমাধান। আলোচনার মাধ্যমেই এটি শিগগিরই করতে হবে।

আনোয়ার ফারুক তালুকদার : অর্থনীতি বিশ্লেষক

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কালবেলায় সংবাদ প্রকাশের পর প্রতিবন্ধী রনি পেল হুইলচেয়ার

শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ডের বিচার হতে হবে : আবু হানিফ

ক্রীড়াবিদ শওকত আলীর স্মরণে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল

শাহরিয়ার কবির আটক

সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

রাসূল (স.) আদর্শ ধারণ করে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে

ঝিনাইদহে নাশকতা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী সুজনের গ্রেপ্তারের খবরে বিএনপির আনন্দ মিছিল

মানিকগঞ্জে ধলেশ্বরী নদী থেকে অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার

ভূমি উপদেষ্টার পরিদর্শন, হয়রানি ছাড়া নামজারি খতিয়ান পেয়ে উৎফুল্ল নাজিম  

১০

চট্টগ্রামে জশনে জুলুশে মানুষের ঢল  

১১

বন্যা পরবর্তী প্রাণী চিকিৎসায় বাকৃবি শিক্ষার্থীরা

১২

‘দুনিয়া ও আখিরাতে মুক্তির জন্য রাসুল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করতে হবে’

১৩

নার্সের ভুলে ৩ দিনের শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ

১৪

‘স্মরণকালের সবচেয়ে বড় গণসমাবেশ’ করার প্রস্তুতি বিএনপির

১৫

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালিত

১৬

রাত ১টার মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস

১৭

সিরাজগঞ্জে কবরস্থানে মিলল অস্ত্র ও গুলি

১৮

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে জামায়াতের নায়েবে আমিরের মতবিনিময়

১৯

২৮ থেকে ৪২তম বিসিএসের বঞ্চিত সেই ক্যাডাররা ফের বঞ্চনার শিকার

২০
X