চামড়াশিল্প আমাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত। শিল্প আয়ে এ খাতের অবদান ২ শতাংশ আর রপ্তানিতে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। দেশের জিডিপিতে অবদান শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশ। মূল্য সংযোজন প্রায় ৮০ শতাংশ। এত বড় একটা সম্পদ আমরা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারছি না। দীর্ঘদিন থেকে বিষয়টি নিয়ে প্রচুর কাজ হয়েছে, প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান এ খাতকে সহায়তার জন্য এগিয়ে এসেছে। কিন্তু অগ্রগতি সামান্য। একাধিক টাস্কফোর্স হয়েছে, টাস্কফোর্সের আওতায় আবার সাব-কমিটি হয়েছে, তারা আলোচনা করছেন কিন্তু প্রকারান্তরে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসেনি। সবাই একবাক্যে স্বীকার করেন, চামড়াশিল্পের সম্ভাবনা অপরিসীম, কর্মসংস্থান প্রায় ৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন, রপ্তানি আয় তৈরি পোশাকের কাছে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।
সম্প্রতি একটি সেমিনারে সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি চামড়ার ভাল্যুচেইন নিয়ে আলোচনাকালে জানালেন, একটি গরুর আনুমানিক মূল্য যদি এক লাখ টাকা হয়, বিভিন্ন স্তরে মূল্য সংযোজনের পর অর্থাৎ প্রাপ্ত মাংস, কাঁচা চামড়া, পাকা চামড়া ইত্যাদির পর বিদেশে রপ্তানিযোগ্য প্রায় দশ জোড়া জুতা বানানো সম্ভব, তার বিক্রয়মূল্য বাজার ভেদে নানা রকম; প্রায় ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা হতে পারে। এ সম্পদের পুরোটা আমরা কোনোভাবেই ব্যবহার করতে পারছি না বরং সামান্য প্রসেস করে কম মূল্যে তা বিক্রি করে দিচ্ছি। আর তার সুফল নিচ্ছে অন্য দেশ। আমরা অধিক মূল্য সংযোজনকারী পণ্য তৈরিতে উৎসাহিত হলে রপ্তানি আয় বাড়ানো সম্ভব। এর জন্য আমাদের ফিনিশড চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য উন্নয়নে বেশি মনোযোগী হতে হবে।
বিভিন্ন তথ্যে দেখা যায়, চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্যের বাজারের প্রায় ৩ শতাংশ বাংলাদেশের দখলে। চীন দখলে রেখেছে প্রায় ৩০ শতাংশ চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্যের বাজার। তারা প্রায় চার বিলিয়ন স্কয়ার ফুট চামড়া তৈরি করে যা ব্রাজিলের প্রায় দিগুণ। এর পরে রয়েছে ইতালি, ভারত, কোরিয়া, রাশিয়া। ফুল-গ্রেইন চামড়া হলো সবচেয়ে ভালো চামড়া যা তৈরি করছে কেবল ইতালি এবং তাদের রয়েছে দক্ষ ক্রাফটস ম্যান। চামড়ার তিনটি খাত রয়েছে, সেগুলো হলো—ট্যান্ড চামড়া বা ওয়েট ব্লু, ফিনিসড চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য ও ফুটওয়্যার। অর্থাৎ বিভিন্ন পর্যায়ে মূল্য সংযোজনের পরিমাণ বাড়তে থাকে। বিগত ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারত চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করেছে ৪ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার যা বিগত বছরের তুলনায় ৩২ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশের ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-মে অর্থাৎ গত ১১ মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার, তার মধ্যে রপ্তানি হয়েছে ১ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার ১৪ শতাংশ কম রপ্তানি হয়েছে। বিগত বছরের তুলনায় রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে শূন্য দশমিক ৪২ শতাংশ। যেখানে চামড়া (র-হাইড বা ওয়েট ব্লু) রপ্তানি কমেছে ১৮ দশমিক ১১ শতাংশ, চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ। অন্যদিকে ফুটওয়্যার কমেছে ৪ দশমিক ২৮ শতাংশ। দেখা যায়, বিগত বছরে ফুটওয়্যার (এইচএস কোড ৬৪০৩) রপ্তানি বেশ ভালো ছিল (৭৫৬ দশমিক ১৮ মিলিয়ন ডলার), এ বছর তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬৪৪ দশমিক ১৮ মিলিয়ন ডলার। তবে এটি ১১ মাসের তথ্য, অবশিষ্ট এক মাসে অবশ্য এ রপ্তানি আরও কিছুটা বাড়বে বলে আশা করা যায়।
ভালো খবর হলো চামড়াজাত পণ্য (এইচএস কোড ৪২-৪৩) রপ্তানি কিছুটা বেড়েছে, বিগত বছরে যা ছিল ৩৩৭ দশমিক ৬২ মিলিয়ন ডলার, তা এবার হয়েছে ৩৬১ দশমিক ৪৭ মিলিয়ন ডলার। চামড়াজাত পণ্যের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ট্রাঙ্কস, স্যুটকেস, হান্ডব্যাগস, বেল্ট, কিছু অ্যাপারেল আরটিকেলসের রপ্তানি বেড়েছে। এ দিকটায় একটু নজর দিলে আগামীতে রপ্তানি বাড়তে পারে। উল্লেখ্য, চামড়া খাতে রপ্তানি বৃদ্ধিতে আগামী ২০৩০ সালে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার। এটি কাজে লাগাতে পণ্যভিত্তিক আলোচনা করে সিধান্ত নেয়া দরকার। বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩০ শতাংশের মতো ফিনিসড এবং ক্রাফটেড চামড়া চীনে রপ্তানি হয় অনেক অল্প দামে, যার দাম ইউরোপ এবং আমেরিকায় রপ্তানিকৃত পণ্যের চেয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ কম। এক্ষেত্রে অধিক মূল্য সংযোজিত পণ্য উন্নত দেশে রপ্তানি করা গেলে তা রপ্তানি বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।
এ খাতের অ্যাসোসিয়েশনগুলোর বেশ পরিষ্কার ধারণা রয়েছে এ ব্যাপারে। যেমন ভৌগোলিক অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের পশু সম্পদের উৎপাদন এবং কাঁচা চামড়ার গুণগতমান বিবেচনায় সমগ্র দেশকে তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে—যেমন অঞ্চল ‘এ’ যা গুণগতমানের দিক থেকে উত্তম, অঞ্চল ‘বি’ যা মধ্যমমানের, অন্যদিকে অঞ্চল ‘সি’ যা গুণগতমানের দিক থেকে নিম্ন। অঞ্চল ভিত্তিতে সিরাজগঞ্জ, টাংগাইলের চামড়া উন্নতমানের, অন্যদিকে যশোর, খুলনা এ সমস্ত জায়গার চামড়া ভালো কিন্তু ‘এ’ ক্লাস নয়, ঠিক তেমনি সিলেট, চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলের চামড়া একটু কম উন্নতমানের। নীতিমালার মাধ্যমে এক্ষেত্রে নজর দিয়ে ‘এ’ ক্লাস চামড়ার রক্ষণাবেক্ষণ ভালোভাবে হলে রপ্তানি আয় বাড়ানো সম্ভব।
সামনে কোরবানি এ সময় মোট চামড়ার প্রায় ৪০-৫০ শতাংশ সংগ্রহ হয়ে থাকে। এর মধ্যে বেশ কয়েকবার শিল্পমন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে টাস্কফোর্সের সভা হয়েছে, যেখানে বেশ কিছু নীতিমালার কথা বলা হয়েছে যাতে সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বয়ের মাধ্যমে এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন যাতে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা সঠিক মূল্য পায় এবং এ মূল্যবান সম্পদ নষ্ট না হয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি খাতের বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশনগুলোরও সমন্বিতভাবে কাজ করা দরকার। লবণের মূল্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চামড়ার মূল্য নির্ধারণ এবং এ খাতের উদ্যোক্তাদের সঠিক সময়ে অর্থের সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারি কর্মকর্তারা সজাগ রয়েছে।
এ শিল্পের চ্যালেঞ্জগুলো বহু ফোরামে বারবার আলোচিত হয়েছে, সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। প্রধান চ্যালেঞ্জের মধ্য লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের সনদ না পাওয়া, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকমানের কমপ্লায়েন্সগুলো সঠিকভাবে না মেনে চলা, ট্যানারি এস্টেটে যে সিইটিপি রয়েছে তা সঠিকভাবে কাজ না করা ইত্যাদি। বিসিক এটির তত্ত্বাবধানে ররেছে যা নিয়ে সবারই যথেষ্ট দ্বিমত রয়েছে। অর্থাৎ সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য যথেষ্ট টেকনিক্যাল এবং প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা এরকম একটি প্রতিষ্ঠানের রয়েছে তা প্রতীয়মান হয়নি বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
সিইটিপির রেক্টিফিকেশন ও আপগ্রেডেশন দরকার এ বিষয়টি বারবার সামনে এসেছে। কঠিন ও তরল বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, সুষ্ঠু কেমিক্যাল ব্যবস্থাপনা, ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল গ্রহণে সক্ষমতা অর্জন, শক্তিশালী অগ্র-পশ্চাৎ সংযোগ তৈরি, আমদানি নির্ভরতা হ্রাস, সমন্বিত একটি স্পেশালাইজড কমন ফেসিলিটিস সেন্টার স্থাপন, দক্ষ শ্রমিক তৈরি ইত্তাদি প্রস্তাব রয়েছে। ট্রেনিং, টেকনোলোজি ও টেস্টিং সুবিধা পাওয়ার জন্য Accredited ও Calibrated ল্যাবরেটরি, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনোত্তর চ্যালেঞ্জ (ডব্লিউটিওর সুযোগ-সুবিধা থাকবে না, জিএসপি সুবিধা থাকবে না, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এবং আঞ্চলিক বাণিজ্য উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ) ইত্যাদি। এগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত হয়েছে এখন দরকার কে কোনটা কতদিনে করবে তার তদারকি এবং বাস্তবায়ন।
লেদার ওয়রকিং গ্রুপের সনদ প্রাপ্তির একটি পূর্ব শর্ত সিইটিপি সঠিকভাবে পরিচালন। জানা যায় কখনো কখনো বিশেষ করে ঈদ-পরবর্তী সময়ে পানির ব্যবহার পরিমাণ এতটাই বেড়ে যায় তা সিইটিপি-এর ধারণ ক্ষমতার বাইরে। ইতোমধ্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা, ১৯৯৭ রহিত করে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা, ২০২৩ জারি করা হয়েছে যা গত ৫ মার্চ ২০২৩ তারিখে বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা, ২০২৩ এর তপশিল-৫ এর ৬ নম্বর ক্রমিকে ট্যানারিশিল্পে পানি ব্যবহারের প্রবিধানগুলো সুনির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া সিইটিপিকে সঠিকভাবে পরিচালনার নিমিত্ত আন্তর্জাতিকমান অনুযায়ী পানি ব্যবহারের জন্য ট্যানারিগুলোর সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত ট্যানারি মালিক বা উদ্যোক্তাগণকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয় প্রশিক্ষণ, কনসালটেশন আয়োজন করা হচ্ছে।
চামড়া শিল্পনগরী প্রকল্পটি জানুয়ারি, ২০০৩-এ শুরু হয়ে ৩০ জুন, ২০২১ সালে সমাপ্ত হয়। ১৯৯.৪০ একর জমিতে বিসিক চামড়া শিল্পনগরীতে ২০৬টি প্লট ইতোমধ্যে ১৬২টি ট্যানারির অনুকূলে বরাদ্দ দেয়া হয়। বর্তমানে ১৪০টি ট্যানারি চালু রয়েছে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য উন্নয়ন নীতিমালা ২০১৯ প্রণয়ন করা হয়েছে এবং মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগ রয়েছে যে পরিপূর্ণ প্রস্ততি না নিয়ে চামড়াশিল্প নগরী সাভারে এ শিল্পগুলোকে স্থানান্তরিতকরণ এ সমস্যার মূল কারণ। অন্য দিকে ট্যানারিশিল্পগুলো তাদের নিজেদের সঠিক স্থাপনা, ড্রেন, প্রি-ট্রিটমেন্ট ব্যবস্থা, পরিবেশসংক্রান্ত নিয়ম মেনে শিল্প চালু না রাখার ফলে সিইটিপি-এর ওপর অধিক চাপ পড়ছে এবং সঠিকভাবে চালানো যাচ্ছেনা সেটাও একটি কারণ।
এ সবের ক্ষেত্রেই সরকার এবং বেসরকারি খাতের যৌথ প্রয়াস দরকার। জানা যায় সিইটিপি ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান Dhaka Tannery Industrial Estate Wastage Treatment Plant Company Ltd. (DTIEWTPCL) চামড়াশিল্পের কঠিন বর্জ্য থেকে বাই-প্রোডাক্টস (উপজাত) তৈরির জন্য মজুতকৃত সলিড ওয়েস্টের পরিমাণ ও সম্ভাব্য উপজাতের ধরন উল্লেখপূর্বক উপযুক্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে আবেদন আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। DTIEWTPCL-র পরিচালনা পর্ষদের সভার গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে আবেদনকৃত প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব যাচাইবাছাইপূর্বক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন এবং সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের সার্বিক বিষয় সমাধানের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়। বর্তমানে, কমিটির কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং উপযুক্ত অবেদনকারীর প্রস্তাবনা যাচাইবাছাই ও নেগোসিয়েশন করা হচ্ছে। কিছু প্রতিষ্ঠানকে ইতোমধ্যে ক্রোমমুক্ত কাঁচা চামড়ার কাটিং রপ্তানির অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। ক্রোমিয়াম বর্জ্য পুনঃব্যবহারের জন্য তিনটি Common Chrome Recovery Unit (CCRU) স্থাপন করা হয়েছে। এগুলো সবই গুরুত্তপূর্ণ এবং ভালো পদক্ষেপ।
চামড়ার ট্রেসিবিলিটি নিশ্চিতকরণের জন্য সকল ক্ষেত্রে ভেটেরিনারি ডাক্তার দ্বারা পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার লক্ষ্যে, পশু জবাই ও মাংসের মান নিয়ন্ত্রন আইন ২০১১-এর ধারা ৩(১), ৫(১) এবং ৫(২) মোতাবেক এবং পশু জবাই ও মাংসের মান নিয়ন্ত্রণ বিধি ২০২১-এর বিধি ১০ এবং ১১ মোতাবেক (কপি সংযুক্ত-২) পশু জবাইয়ের পূর্বে এবং পরে রেজিস্টার্ড ভেটেরিনারি কর্মকর্তা দ্বারা পশু এবং কারকাস পরীক্ষার বিধান রয়েছে। এ ছাড়াও প্রতিবছর কোরবানির পশুর হাটগুলোতে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম দ্বারা পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। এগুলো সঠিকভাবে করা হলে চামড়ার গুণগতমান বজায় থাকবে।
রাসায়নিক দ্রব্যগুলোর সুনির্দিষ্ট তালিকা পাওয়া গেলে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করে পর্যালোচনাপূর্বক প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পাড়ে বলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান মনে করে। ইতোমধ্যে TIED-এ নিজস্ব Effluent Treatment Plant (ETP) স্থাপন করতে বড় ট্যানারিগুলোকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে কিন্তু এ পর্যন্ত কেউ এ সুবিধা গ্রহণ করেনি। LWG সনদসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কমপ্লায়েন্সে অর্জনের জন্য ট্যানারি মালিকদের আর্থিক ও নীতিগতভাবে সহায়তা করা প্রয়োজন বলেও সবাই মনে করেন।
চামড়াশিল্প উন্নয়নে সুপারিশ প্রদান ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন টাস্কফোর্স শিল্পমন্ত্রীর নেতৃত্বে এ পর্যন্ত ছয়টি সভা হয়েছে। কার্যপরিধির আলোকে তিনটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছে। চামড়াশিল্পখাতের উন্নয়নে সুপারিশ প্রদান ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নসংক্রান্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে গঠিত কমিটি আলোচনা মতে ট্যানারি কারখানা ও সিইটিপি পূর্ণাঙ্গরূপে কার্যকর করার লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন পৃথক পৃথক প্রস্তাব প্রণয়ন করবে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে সভা আয়োজনপূর্বক পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
বিসিক চামড়াশিল্পনগরীর কঠিন বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে বিসিক/বাংলাদেশ ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশন অবিলম্বে একটি প্রকল্প প্রস্তাব বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট বরাবর দাখিল করবে। Solid Waste Management-এর নিমিত্তে Mechanized Desalting Machine এবং Chrome Recovery Plant স্থাপনে আর্থিক সহায়তা প্রদানের বিষয়টি Business promotion Council পরীক্ষাপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
সিইটিপির Rectification Leather working Group (LWG) & Upgradation-এর মাধ্যমে আগামী ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে ব্রোঞ্জ স্টান্ডার্ড অনুযায়ী ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট করতে সক্ষম হবে মর্মে অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক কোম্পানি প্রস্তাব প্রেরণ করেছে। ওই প্রস্তাবটির সম্ভাব্যতা যাচাই কার্যক্রম চলছে তবে অস্ট্রেলিয়ার Kingsley কোম্পানি থেকে প্রাপ্ত প্রস্তাবটি তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল বলে বেসরকারি খাত থেকে জানানো হয়
এরই মধ্যে কিছু বেসরকারি খাত চামড়াশিল্প নগরী, ঢাকার প্রথম ফেজ এবং দ্বিতীয় ফেজ বিসিকের পরিবর্তে বেজার তত্ত্বাবধায়নে দেয়ার প্রস্তাব করেছে। চামড়ার গুণগতমান রক্ষায় কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন, চামড়ার বাই প্রোডাক্টগুলোর সঠিক ব্যবহার এবং এ খাতে এফডিয়াই আকর্ষণের ও প্রস্তাব করা হয়।
এ সবই চামড়াশিল্পের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে, মনে করা যেতে পারে আমাদের করণীয়গুলো সঠিকভাবে নির্ধারিত হয়েছে এখন পাবলিক প্রাইভেট খাতের যৌথ সহযোগিতায় এ খাতকে একটি উল্লেখযোগ্য মাত্রায় উন্নয়নে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
ফেরদাউস আরা বেগম : সিইও, বিল্ড-এক্টি পাবলিক প্রাইভেট ডায়ালগ প্ল্যাটফর্ম যা বেসরকারি খাতের উন্নয়নে কাজ করে
মন্তব্য করুন