মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১
ড. মইনুল ইসলাম
প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ১২:৫৬ পিএম
আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:৫১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুৎকে প্রাধান্য দিতে বাধা কোথায়? 

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে বর্তমানে চারটি আমদানিকৃত কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট নির্মাণ বাস্তবায়িত হয়েছে কিংবা বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এগুলো হলো পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর প্রত্যেকটিই মেগাপ্রকল্প, যেগুলো থেকে প্রায় ৫২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেশের জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু এই প্ল্যান্টগুলো স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাঝখানে বাংলাদেশ ও বিশ্বের জ্বালানি খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে গেছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কয়লার আন্তর্জাতিক বাজারে দাম অনেকখানি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে মারাত্মক ধস নামায় এখন এই বর্ধিত দামে এসব বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা আমদানির ব্যাপারে বাংলাদেশের সক্ষমতা অনেকখানি সংকুচিত হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ ২০২২ সালের আগস্ট মাস থেকে অত্যন্ত কঠোরভাবে আমদানি নিয়ন্ত্রণ নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছে নিজেদের বাণিজ্য ঘাটতি ও ব্যালেন্স অব পেমেন্টসের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ঘাটতিকে মোকাবিলা করার উদ্দেশ্যে। এর ফলে, নির্মাণ সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও কয়লার অভাবে পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রায়ই বন্ধ রাখতে হচ্ছে গত এক বছর ধরে। অদূর ভবিষ্যতেও কয়লা আমদানির এমন অপারগতা বজায় থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে মনে করা হচ্ছে যে আমদানিকৃত কয়লানির্ভর বিদ্যুতের মেগাপ্রকল্প স্থাপনের পুরো ব্যাপারটিই বাংলাদেশের জন্য অসহনীয় বোঝা হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। আমদানিকৃত এলএনজির ওপর নির্ভরশীলতা এমনিতেই দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনকে ইতোমধ্যেই বড়সড় বিপদে ফেলে দিয়েছে।

ডিজেল আমদানি-ব্যয় সাশ্রয়ের জন্য দেশের ডিজেলচালিত বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলো ২০২২ সালের জুলাই মাস থেকে বন্ধ রাখা হচ্ছে। এলএনজিচালিত অনেক বিদ্যুৎ প্ল্যান্টও বন্ধ থাকছে ডলার সংকটের কারণে এলএনজি আমদানি কমিয়ে দেওয়ায়। প্রায় সাতাশ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্যাপাসিটি অর্জন সত্ত্বেও দৈনিক উৎপাদনকে এখন ১৩-১৪ হাজার মেগাওয়াটে সীমিত রাখতে হচ্ছে। এই সংকটের জন্য প্রধানত দায়ী আমদানিকৃত এলএনজিনির্ভর জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন নীতি, যার পাশাপাশি এখন কয়লানির্ভর মেগাপ্রকল্পগুলোও বড়সড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে।

ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, কয়েকজন প্রভাবশালী এলএনজি আমদানিকারককে অন্যায্য সুবিধা দেওয়ার জন্য এই আমদানিকৃত এলএনজি-নির্ভরতার নীতি গৃহীত হয়েছিল। এই নীতির কারণে দৃশ্যত একদিকে ইচ্ছাকৃত অবহেলার শিকার হয়েছে গ্যাস অনুসন্ধান, আর অন্যদিকে যথাযথ অগ্রাধিকার পায়নি সৌরবিদ্যুৎ ও বায়ুবিদ্যুতের মতো নবায়নযোগ্য সোর্স থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন।

২০২০ সাল পর্যন্ত এলএনজির আন্তর্জাতিক দাম সস্তা থাকায় হয়তো তখন এই ভুল নীতির অভিঘাত ঠিকমতো উপলব্ধি করা যায়নি, কিন্তু এলএনজি ও কয়লার ওপর এই অতি নির্ভরতা এখন চরম বিপদে ফেলেছে আমাদের। ২০২০ সাল থেকে এলএনজির আন্তর্জাতিক দাম কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় সারা বিশ্বে প্রচণ্ড আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, ২০২২ সালের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এলএনজি ঘাটতিও চরমাকার ধারণ করেছিল। অবশ্য এলএনজির দাম এখন কমে প্রতি এমএমবিটিইউ ১৩/১৪ ডলারে স্থিতিশীল হয়ে এসেছে। তেলের দামও ক্রমান্বয়ে বেড়ে ২০২২ সালের মে মাসে ব্যারেলপ্রতি ১৪০ ডলারে পৌঁছে গিয়েছিল, এখন আবার কমেছে। ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৭৭-৮০ ডলারের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে। এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ যে দেশের স্থলভাগে গত চৌদ্দ বছরে কয়েকটি ছোট ছোট গ্যাসকূপ ব্যতীত উল্লেখযোগ্য তেল-গ্যাস ক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

ভোলা গ্যাসের ওপর ভাসছে বলা হলেও ভোলার গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে দেশের মূল ভূখণ্ডে আনার কাজটি এখনো শুরু হয়নি! ২০১২ ও ২০১৪ সালে মিয়ানমার ও ভারতের বিরুদ্ধে মামলায় জিতে বাংলাদেশ এক লাখ আঠার হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্রসীমার নিয়ন্ত্রণ পাওয়া সত্ত্বেও মামলায় জেতার পর ৯/১১ বছরে সমুদ্রে গ্যাস-অনুসন্ধান চালানো হয়নি। সম্প্রতি মার্কিন তেল কোম্পানি এক্সন-মবিল দেশের ১৫টি গভীর সমুদ্রবন্দরকে অনুসন্ধানের ইজারা নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে খবর বেরিয়েছে। বিষয়টি সাবধানে বিবেচনার দাবি রাখে, কারণ মিয়ানমার ২০০৯ সালে তাদের নৌবাহিনী পাঠিয়ে কোরিয়ান কোম্পানি দাইউকে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় গ্যাস অনুসন্ধানে বাধা দিয়ে ফেরত পাঠিয়েছিল।

তাদের দাবি ছিল ওই এলাকা মিয়ানমারের। মার্কিন কোম্পানির বিরুদ্ধে তারা ওই ধরনের জবরদস্তি করার সাহস পাবে না। (আর, ইটলসের ২০১২ সালের রায়ে এখন ওই এলাকা বাংলাদেশ পেয়ে গেছে)। অন্যদিকে, এক্সন-মবিলের মতো শক্তিধর একটি মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানিকে বাংলাদেশে গেড়ে বসতে দিলে দেশে মার্কিন হস্তক্ষেপ ডেকে আনা হবে কি না তা-ও বিবেচনার দাবি রাখে। এটাও বিবেচ্য যে বাংলাদেশের সেন্টমার্টিনের অদূরে মিয়ানমার তাদের সমুদ্রসীমা থেকে পাঁচ টিসিএফের বেশি গ্যাস আহরণ করে চলেছে। একই ভূতাত্ত্বিক কাঠামো যেহেতু বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায়ও রয়েছে তাই বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন এলাকার সমুদ্রেও গ্যাস পাওয়া যাবে বলে বিশেষজ্ঞদের দৃঢ় অভিমত।

এই পরিপ্রেক্ষিতে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের প্রতি অবহেলা আমার কাছে মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশে বায়ুবিদ্যুৎ ও সৌরবিদ্যুৎকে বিদ্যুতের প্রধান সূত্রে পরিণত করা কি সময়ের দাবি নয়? ইংরেজি জাতীয় দৈনিক দি ডেইলি স্টারের ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ সংখ্যায় প্রকাশিত ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকনমিকস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের ‘এনার্জি ফিন্যান্স এনালিস্ট’ সাইমন নিকোলাসের উপসম্পাদকীয় একটি বিস্ময়কর তথ্যকে গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করেছিলেন সাইমন, ২০২০ সালেই ভিয়েতনাম বাড়ির ছাদের সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৯০০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করেছিল। গত তিন বছরে তাদের সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন আরও কয়েক হাজার মেগাওয়াট বেড়েছে নিশ্চয়ই। অথচ, ২০২০ সালে বাংলাদেশের সোলার পাওয়ার উৎপাদন ছিল ৩০০ মেগাওয়াটেরও কম, আর ২০২৩ সালের নভেম্বরেও বাংলাদেশে মাত্র ১১৯৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে নবায়নযোগ্য উৎসগুলো থেকে।

আরো দুঃখজনক হলো, বেশ কয়েকটি ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল-চালিত রেন্টাল ও কুইক-রেন্টাল বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের সাথে সরকারের চুক্তির মেয়াদ বহুদিন আগেই উত্তীর্ণ হয়ে গেলেও এসব প্ল্যান্টের মালিকরা ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে তাদের চুক্তির মেয়াদ বারবার বাড়িয়ে নিচ্ছে। (এসব প্ল্যান্টের মালিক সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের আত্মীয়স্বজন কিংবা তার পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী)! এসব প্ল্যান্ট থেকে সরকার বিদ্যুৎ না কিনলেও ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ দিতে হয়, যা ইতোমধ্যেই পিডিবির জন্য অসহনীয় বোঝায় পরিণত হয়েছে। গত ১২ বছরে পিডিবি মোট ১,০৪,০০০ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করেছে বলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণায় জানানো হয়েছে।

দেশের বিদ্যুৎ খাতের জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভরতা থেকে নিষ্কৃতি পেতে হলে চীন, ভারত ও ভিয়েতনামের সোলার পাওয়ারের সাফল্য কীভাবে অর্জিত হয়েছে তা জেনে এ দেশের সোলার-পাওয়ার নীতিকে অবিলম্বে ঢেলে সাজাতে হবে। বাংলাদেশের ‘সাসটেইনেবল অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ তাদের ঘোষিত ন্যাশনাল সোলার এনার্জি রোডম্যাপে ৩০,০০০ মেগাওয়াটের সোলার এনার্জির টার্গেট অর্জনের সুপারিশ করেছে, যার মধ্যে ১২,০০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ ছাদভিত্তিক সোলার প্যানেল থেকে আহরণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। কিন্তু, এই রোডম্যাপ ঘোষণার পর কয়েক বছর অতিবাহিত হলেও এই টার্গেট পূরণের উপযুক্ত কর্মসূচি আজও গৃহীত হলো না কেন?

সাইমন বলছেন, ১২,০০০ মেগাওয়াটের মধ্যে ৫,০০০ মেগাওয়াট শুধু পোশাক ও বস্ত্র কারখানাগুলোর ছাদ ব্যবহার থেকে পাওয়া যেতে পারে, আর সরকারি বিভিন্ন ভবনের ছাদ ব্যবহারের মাধ্যমে আরও ২,০০০ মেগাওয়াট পাওয়া যাবে। দেশের বড় বড় নগর ও মফস্বল শহরগুলোর প্রাইভেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়িগুলোর ছাদ ব্যবহারের মাধ্যমে বাকি ৫,০০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন মোটেও অসম্ভব মনে হচ্ছে না, প্রয়োজন হবে সোলার প্যানেল ও ব্যাটারির ভর্তুকি-দাম কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সৌরবিদ্যুতের যন্ত্রপাতির ওপর আরোপিত শুল্ক হ্রাস এবং যুগোপযোগী ‘নেট মিটারিং’ পদ্ধতি চালু করা।

গণচীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ভারত, ফিলিপাইন এবং জার্মানি ছাদভিত্তিক সোলার পাওয়ার উৎপাদনে চমকপ্রদ সাফল্য অর্জন করেছে। সোলার প্যানেল ও ‘ব্যাটারি’র দামে সুনির্দিষ্ট ভর্তুকি প্রদান এবং ভর্তুকি-দামে ‘নেট মিটারিং’ স্থাপনে প্রণোদনা প্রদান এসব দেশের সাফল্য অর্জনের প্রধান উপাদান হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এই ‘নেট-মিটারিং’ প্রযুক্তি গণচীন থেকে এখন সুলভে আমদানি করা যাচ্ছে। অথচ, এ ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি একেবারেই নগণ্য রয়ে গেল কেন? রূপপুর পরমাণু শক্তি কেন্দ্র স্থাপন করার জন্য আমরা এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করছি, যেখান থেকে ২০২৪ সাল নাগাদ আমরা নাকি ২,৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাব। কিন্তু এই মহাবিপজ্জনক আণবিক প্রযুক্তি বাংলাদেশের মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশের মাঝখানে স্থাপনকে আমি সমর্থন করিনি।

ছাদভিত্তিক সোলার-পাওয়ার প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দিলে ২,৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ব্যয় রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের মোট ব্যয়ের অর্ধেকও হতো না। অথচ, সৌরবিদ্যুৎ সবচেয়ে পরিবেশ-বান্ধব এবং ঝুঁকিমুক্ত প্রযুক্তি। সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণিত, এক ইউনিট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ইতোমধ্যেই গণচীন, ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ডে বাংলাদেশি দশ টাকার নিচে নেমে এসেছে। ১৭ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে দি ডেইলি স্টার পত্রিকায় প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, ব্লুমবার্গের এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে ২০২৫ সালের পর সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন খরচ অন্য সব বিকল্পের তুলনায় বাংলাদেশেও কমে আসবে। ২০৩০ সালে এক মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন খরচ হবে মাত্র ৪২ ডলার, যেখানে এলএনজিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে তা পড়বে ৯৪ ডলার এবং কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১১৮ ডলার।

সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে অনেক খালি জায়গা লাগে বিধায় বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে তা উৎপাদন সম্ভব নয় বলে যে ধারণা রয়েছে তা-ও ঠিক নয়। বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা চরাঞ্চলসমূহ, দেশের সমুদ্র-উপকূল এবং নদ-নদী ও খালগুলোর দু’পারে সোলার প্যানেল স্থাপনের সম্ভাবনাটি খতিয়ে দেখা হোক্। বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সীমানায় যে কয়েকশ চরাঞ্চল গড়ে উঠছে সেগুলোতে জনবসতি গড়ে ওঠার আগেই ওগুলোতে যদি বড় বড় সৌরবিদ্যুৎ-কাম-বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা অগ্রাধিকার সহকারে বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে অত্যন্ত সাশ্রয়ী পন্থায় কয়েক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন আগামী চার-পাঁচ বছরের মধ্যেই সম্ভব হবে।

সম্প্রতি জার্মানি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে বাংলাদেশকে বিপুলভাবে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বলে সোশ্যাল মিডিয়ার একটি নিউজ-ক্লিপ জানিয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে বাংলাদেশে জমির তুলনামূলক স্বল্পতার প্রকৃত সমাধান পাওয়া যাবে যদি দেশের বিশাল সমুদ্র-উপকূলে একইসাথে সৌরবিদ্যুৎ ও বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদন প্ল্যান্ট স্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়।

সমুদ্র-উপকূলের কথা জার্মানি বলেছে, আমি এর চাইতেও সম্ভাবনাময় মনে করি বঙ্গোপসাগরে নতুন জেগে ওঠা চরাঞ্চলগুলোকে। এগুলোতে মানববসতি নেই, তাই ভূমি অধিগ্রহণের কোনো ঝামেলাই হবে না। উপরন্তু, উৎপাদিত বিদ্যুৎ সাবমেরিন-কেবলের মাধ্যমে দেশের মূল ভূখণ্ডের বিদ্যুৎ-গ্রিডে নিয়ে আসাও খুব বেশি ব্যয়সাধ্য হওয়ার কথা নয়। সম্প্রতি ডেনমার্ক বাংলাদেশের সমুদ্র-উপকূলে ১৩০০ মেগাওয়াট বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য একটি বিনিয়োগ-প্রস্তাব সরকারের কাছে পেশ করেছে বলে পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। অবিলম্বে এই প্রস্তাব গ্রহণ করা হোক। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন, নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনকে দেশের বিদ্যুৎ খাতে প্রধান অগ্রাধিকার প্রদান করুন।

গাইবান্ধায় ৬০০ একর জায়গায় স্থাপিত সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। বাংলাদেশের নদ-নদীর দু’পার ও চরসমূহ, বঙ্গোপসাগরের নতুন জেগে ওঠা চর এবং সমুদ্র-উপকূলে এ রকম বড় বড় সৌরবিদ্যুৎ-কাম-বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করলে দেশের বিদ্যুতের চাহিদার অধিকাংশই নবায়নযোগ্য সোর্স থেকে আহরণ করা সম্ভব হবে। তাহলে আমদানিকৃত কয়লা ও এলএনজির ওপর অতি-নির্ভরতা থেকে জাতি মুক্তি পাবে। ২০২১ সালে দেশের শতভাগ জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় নিয়ে আসার ঐতিহাসিক সাফল্যকে টেকসই করার জন্য নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎকে এবং বিশেষত সৌরবিদ্যুৎকে বিদ্যুতের প্রধান উৎসে পরিণত করা সময়ের দাবি। আমদানিকৃত এলএনজি কিংবা কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বর্তমান চিন্তাধারা বাংলাদেশের জন্য মহাবিপদ ডেকে আনছে।

ড. মইনুল ইসলাম: সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কালবেলায় সংবাদ প্রকাশের পর প্রতিবন্ধী রনি পেল হুইলচেয়ার

শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ডের বিচার হতে হবে : আবু হানিফ

ক্রীড়াবিদ শওকত আলীর স্মরণে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল

শাহরিয়ার কবির আটক

সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

রাসূল (স.) আদর্শ ধারণ করে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে

ঝিনাইদহে নাশকতা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী সুজনের গ্রেপ্তারের খবরে বিএনপির আনন্দ মিছিল

মানিকগঞ্জে ধলেশ্বরী নদী থেকে অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার

ভূমি উপদেষ্টার পরিদর্শন, হয়রানি ছাড়া নামজারি খতিয়ান পেয়ে উৎফুল্ল নাজিম  

১০

চট্টগ্রামে জশনে জুলুশে মানুষের ঢল  

১১

বন্যা পরবর্তী প্রাণী চিকিৎসায় বাকৃবি শিক্ষার্থীরা

১২

‘দুনিয়া ও আখিরাতে মুক্তির জন্য রাসুল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করতে হবে’

১৩

নার্সের ভুলে ৩ দিনের শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ

১৪

‘স্মরণকালের সবচেয়ে বড় গণসমাবেশ’ করার প্রস্তুতি বিএনপির

১৫

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালিত

১৬

রাত ১টার মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস

১৭

সিরাজগঞ্জে কবরস্থানে মিলল অস্ত্র ও গুলি

১৮

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে জামায়াতের নায়েবে আমিরের মতবিনিময়

১৯

২৮ থেকে ৪২তম বিসিএসের বঞ্চিত সেই ক্যাডাররা ফের বঞ্চনার শিকার

২০
X