ড্যানি রড্রিক
প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নয়া দর্শন

বিশ্ব অর্থনীতি  ।  ছবি : সংগৃহীত
বিশ্ব অর্থনীতি । ছবি : সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক অর্থনৈতিক নীতির ধরন কেমন হবে, সেটি নিয়ে বর্তমানে দুটি এজেন্ডা একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। এদের একটি দেশীয় বিষয়াবলি—যেমন অন্তর্ভুক্তিমূলক, সহনশীল, সমৃদ্ধ ও টেকসই মার্কিন অর্থনীতি বিনির্মাণকে গুরুত্বারোপ করছে। অন্যটি ভূ-রাজনীতি এবং চীনের ওপর মার্কিন আধিপত্য বজায় রাখার গুরুত্বারোপ করছে। আর বিশ্ব অর্থনীতির ভবিষ্যৎও নির্ভর করছে এ দ্বন্দ্বের ফলাফল এবং বিরোধী অগ্রাধিকারগুলো সহাবস্থান করতে পারে কিনা—তার ওপর।

দেশীয় উৎপাদন পুনরুজ্জীবিতকরণ এবং সবুজ রূপান্তর সহজ করতে উচ্চাভিলাষী শিল্পনীতি গ্রহণের মাধ্যমে পূর্ববর্তী ডেমোক্রেটিক প্রশাসন থেকে যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন আমূল সরে এসেছে, সেটি নির্দেশ করে। এমনকি চীন বিষয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ অন্য যে কোনো প্রশাসনের তুলনায় কঠোর অবস্থান নিয়েছে বর্তমান বাইডেন প্রশাসন। চীন সরকারকে প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচনা এবং সূক্ষ্ম প্রযুক্তি রপ্তানি ও বিনিয়োগে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে। যদিও কিছুদিন আগ পর্যন্ত বাইডেন প্রশাসন এ ধরনের সুসংগত কোনো রূপরেখা সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করেনি, যা বিভিন্ন উপাদানকে একত্র করার পাশাপাশি চীন ও অন্যান্য দেশকে আশ্বস্ত করে—মার্কিন এ অর্থনৈতিক কৌশল-সংঘাত, একতরফাবাদ ও সংরক্ষণবাদকেন্দ্রিক নয়। কিন্তু বর্তমানে এই সমস্যা মোকাবিলায় বাইডেন প্রশাসন পদক্ষেপ নিচ্ছে—মার্কিন অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সাম্প্রতিক বক্তব্য থেকে এমন ইঙ্গিতই মিলছে। আর সেটি সম্ভাব্য নতুন ওয়াশিংটন ধারণার উত্থানকেও নির্দেশ করছে।

বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি বড় ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনকে প্রতিফলিত করে। জ্যেষ্ঠ মার্কিন নীতিনির্ধারকরা এখন মনে করছেন, ১৯৯০-পরবর্তী বিশ্বায়নের মডেল, যা জাতীয় নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন ও মধ্যবিত্তের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার চেয়ে মুক্তবাণিজ্য ও মুক্তবাজারকে অগ্রাধিকার দেয়, সুস্থ গণতন্ত্রের আর্থসামাজিক ভিত্তিকে ক্ষুণ্ন করেছে। নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুলিভান তার বক্তব্যে প্রশাসনের আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক এজেন্ডার পাঁচটি স্তম্ভের কথা বলেছেন। তিনি এই পাঁচ স্তম্ভকে ‘মধ্যবিত্তের বৈদেশিক নীতি’ বলে অভিহিত করেছেন।

প্রথম স্তম্ভ হলো—একটি ‘আধুনিক আমেরিকান শিল্প কৌশল’, যেটির লক্ষ্য হবে মার্কিন সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে বেসরকারি বিনিয়োগের অনুঘটক হিসেবে কাজ করা। দ্বিতীয়টি হলো অন্যান্য উন্নত গণতন্ত্র এবং উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে কাজ করা। যার লক্ষ্য হবে মার্কিন মিত্ররাও যেন ‘সক্ষমতা, সহনশীলতা ও অন্তর্ভুক্তি’ উন্নত করার ক্ষেত্রে একই ধরনের নীতি গ্রহণ করে তা নিশ্চিত করা। তৃতীয়ত, বাজারে প্রবেশাধিকারে গুরুত্বারোপ করে এমন প্রথাগত বাণিজ্য চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে আসবে। একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন, ডিজিটাল নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও করপোরেট কর প্রতিযোগিতার মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ‘নতুন আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব’-এর দিকে ঝুঁকবে দেশটি। পাশাপাশি উদীয়মান অর্থনীতিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে কোটি কোটি ডলার নিয়ে আসা এবং ঋণ নিয়ে সংকটে থাকা দেশগুলোকে সহায়তা দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। যদিও এসবের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যার কয়েকটি নিয়ে বিশেষভাবে বিতর্কও রয়ে গেছে। কারণ অন্যান্য দেশ কিছু নীতিকে, যেমন প্রশাসনের ‘আমেরিকান দাবি-দাওয়া কেনা’, সংরক্ষণবাদী হিসেবে দেখে থাকে। কিন্তু সুলিভানের পঞ্চম স্তম্ভ, যা ‘যুক্তরাষ্ট্রের মৌলিক প্রযুক্তি’ রক্ষায় গুরুত্ব দেয়, তা বিশ্ব অর্থনীতি ভবিষ্যতের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলতে পারে। উন্নত সেমিকন্ডাক্টর (অর্ধপরিবাহী) মার্কেটে চীনের প্রবেশাধিকারে বাধা দিতে বাইডেন প্রশাসনের সুদূরপ্রসারী রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ পঞ্চম স্তম্ভের সবচেয়ে স্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ। চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে মার্কিন বিনিয়োগের ওপর আরও বিধিনিষেধের পরিকল্পনার কথাও শোনা যাচ্ছে। বিশেষত মাইক্রোচিপের মতো কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ খাতে। চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ‘প্রযুক্তিগত অবরোধ’ আরোপ করেছে বলে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংসহ চীনা কর্মকর্তারা অভিযোগ করে আসছেন। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের কলামিস্ট অ্যাডওয়ার্ড লুসের মতে, চীনের প্রযুক্তি খাতকে বিচ্ছিন্ন করে যুক্তরাষ্ট্র ‘পূর্ণমাত্রার অর্থনৈতিক যুদ্ধে’ লিপ্ত হচ্ছে। তবে এটিকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করছেন সুলিভান। মার্কিন এই নীতিকে একটি ছোট উঠান ও উঁচু বেড়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি। প্রশাসনের পদক্ষেপগুলোকে তিনি ‘সতর্কতার সঙ্গে মানানসই বিধিনিষেধ’ বলেছেন, যা জাতীয় নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কারণে গৃহীত এবং উন্নত প্রযুক্তির ‘ক্ষুদ্র একটা অংশ’কে লক্ষ্য করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। গত এপ্রিলের শেষ দিকে জনস হপকিন্স স্কুল অব অ্যাডভান্সড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজে অর্থমন্ত্রী ইয়েলেনের বক্তব্য দেওয়ার এক সপ্তাহ পরে সুলিভানের বার্তা প্রত্যাশিতই ছিল। তিনি বলছেন, ‘জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ মোকাবিলা করতেই এ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ। আর এটি ক্ষুদ্র পরিসরে কয়েকটি জিনিসেই থাকবে। তিনি জোর দিয়েই বলেছেন, চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে না যুক্তরাষ্ট্র।’

জাতীয় নিরাপত্তার নামে বড় ধরনের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিধিনিষেধ আরোপের যে ঝুঁকি রয়েছে, তা বাইডেন প্রশাসন বোঝে—সেটি সুলিভান ও ইয়েলেনের বক্তব্যই নির্দেশ করে। এ ধরনের পদক্ষেপ বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে এবং সম্ভবত উসকানির ফলে চীন পাল্টা ব্যবস্থা নিলে বিপরীত ফলও বয়ে নিয়ে আসতে পারে। স্থিতিশীল বিশ্বব্যবস্থা নির্ভর করে প্রতিটি দেশের জাতীয় স্বার্থরক্ষার অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার নিয়ম ও অনুশীলনের ওপর। এসব স্বার্থরক্ষা সুচিন্তিত এবং অন্য দেশের ক্ষতি যেন না করে, তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনও রয়েছে। এটি অর্জন করা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, তবে অসম্ভব নয়। যখন কোনো সরকার অন্যান্য দেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এমন একতরফা নীতির মাধ্যমে জাতীয় নিরাপত্তা লক্ষ্য বাস্তবায়নের চেষ্টা করে তখন নীতিনির্ধারকদের উচিত তাদের লক্ষ্য স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা, যোগাযোগের উন্মুক্ত লাইন বজায় রাখা এবং সেই নীতির বিরূপ প্রভাব প্রশমিত করতে প্রতিকারের প্রস্তাব করা।

অন্যপক্ষকে শাস্তি দেওয়া বা দীর্ঘমেয়াদে দুর্বল করার স্পষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে নীতি গ্রহণ করা উচিত নয় এবং কোনো ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে এর সঙ্গে সম্পর্কহীন ক্ষেত্রে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে একে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করাও ঠিক নয়। যেমনটা স্টিফেন ওয়াল্ট ও আমি বলেছি, গ্রহণযোগ্য নীতিমালার ওপর এ ধরনের স্ব-আরোপিত সীমারেখা (তিক্ততা) বৃদ্ধি রোধে সহায়তা করতে পারে। এমনকি অন্যপক্ষের অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনুমোদন পেতে সহায়তা করতে পারে। ইয়েলেন ও সুলিভানের সাম্প্রতিক বক্তব্য বলছে, বাইডেন প্রশাসনের বৈদেশিক অর্থনৈতিক নীতিমালা এসব নীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হবে। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর এখনো মেলেনি। যেমন : উন্নত চিপের ওপর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ কি যথাযথভাবে চিন্তা-ভাবনা করে নেওয়া, নাকি মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তাকে পর্যাপ্ত সুবিধা না দিয়েই চীনের প্রযুক্তিগত ক্ষমতা ধ্বংসে তারা অনেক দূর এগিয়ে গেছে? যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও পারমাণবিক ফিউশনের মতো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে এসব বিধিনিষেধ সম্প্রসারিত করা হয়, তখনো কি আমরা কেবলমাত্র প্রযুক্তির ‘ক্ষুদ্র অংশকে’ লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে বলতে পারব? এ ছাড়া সুলিভান ও ইয়েলেনের ‘সোজা-সাপ্টা’ জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগ প্রকৃত নাকি একতরফা পদক্ষেপের অজুহাত মাত্র—সেটি এখনো স্পষ্ট না। যুক্তরাষ্ট্র কি মাল্টিপুলার বিশ্বব্যবস্থা মেনে নিতে প্রস্তুত—যেখানে চীনের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শাসন কাঠামো গঠনের ক্ষমতা থাকবে? নাকি প্রশাসন এখনো যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যেমনটা বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল দেখে মনে হয়? কথার চেয়ে কর্মকাণ্ডের আওয়াজ বেশি। এসব প্রশ্নের উত্তরও পাওয়া যাবে। কিন্তু যারা বিশ্বাস করেন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতি না করেও তার বৈধ জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগের সমাধান করতে পারে—ইয়েলেন ও সুলিভানের বক্তব্য তাদের কিছুটা হলেও আশ্বস্ত করে।

লেখক : ড্যানি রড্রিক ড্যানি হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অর্থনীতির অধ্যাপক এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সমিতির সভাপতি।

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইসরায়েলকে প্রতিশোধের রাস্তা দেখিয়ে দিলেন ট্রাম্প

মসজিদ টার্গেট করে চালানো হচ্ছে বিমান হামলা

আর এক জয় দূরে মেসির মায়ামি!

নির্যাতনের তথ্য চেয়ে আ.লীগের বিশেষ বার্তা

পূজায় বুড়িমারীতে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকবে ৬ দিন

প্রতি সপ্তাহে সহায়তা দেবে জুলাই ফাউন্ডেশন : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব

আন্দোলনে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি, সেই যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করছে যমুনা গ্রুপ

জনবল নেবে স্যামসাং বয়সসীমা  ২১ থেকে ২৮ বছর 

বায়ুদূষণে শীর্ষে হ্যানয়, ঢাকার খবর কী

১০

সুস্থ থাকতে ভাত নাকি রুটি, কী বলছেন চিকিৎসক

১১

লিটনের শরীরে ৫ শতাধিক বুলেট

১২

সপ্তম রাউন্ডে জমে উঠেছে প্রিমিয়ার লিগের লড়াই

১৩

পাচারের টাকায় আমিরাতে মিনি সিটি নিয়ে আসিফের স্ট্যাটাস

১৪

শেরপুরে ভয়াবহ বন্যায় ৭ জনের মৃত্যু

১৫

তিন বিভাগে ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস গবেষকের

১৬

সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার আক্ষেপ জ্যোতির

১৭

১৩ জেলায় দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা

১৮

ভারতীয় দলে আচমকা পরিবর্তন

১৯

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ২৮ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

২০
X