মোবাশ্বের হাসান
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৩, ০২:২৪ পিএম
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:১৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
দ্য ডিপ্লোম্যাটের নিবন্ধ

বিএনপি এখন কী করবে?

ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ। ছবি : সৌজন্য
ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ। ছবি : সৌজন্য

২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছিল বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রাজধানীতে জড়ো হয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ। সেই সমাবেশকে ঘিরে বিক্ষিপ্ত সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এবং নির্বাচনের আগে তা উত্তেজনার পারদ ছড়িয়েছে।

বিএনপি সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকাসহ সারা দেশে বেশ কয়েকটি বড় বড় সমাবেশ করেছে এবং সে সব সমাবেশ অধিকাংশ ক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে। তবে ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে এগোতে পারেনি। একদিকে বিএনপি নেতাকর্মীরা অন্যদিকে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সদস্যদের মধ্যে সহিংসতার কারণে সমাবেশ সম্পন্ন না করেই মঞ্চ ত্যাগ করেন নেতারা।

প্রায় দিনব্যাপী সংঘর্ষে একজন পুলিশ সদস্য ও একজন বিএনপি কর্মীসহ অন্তত তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানা গেছে। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার হয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ একাধিক শীর্ষ নেতা। অনেক নেতার বাড়িতে এখনও অভিযান চালানো হচ্ছে।

পুলিশ অভিযোগ করেছে, বিএনপি কর্মীরা গাড়িতে আগুন দিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃতি দিয়ে ডেইলি স্টারের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘পুলিশের পোশাক পরা একাধিক যুবক একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়।’ ঘটনাটি ধোঁয়াশার তৈরি করেছে এবং সহিংসতার বর্ণনাকে জটিল করে তুলেছে।

চলতি বছরের জুলাই মাসে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেছিলেন, ‘সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা এবং ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা গণপরিবহনে আগুন দিয়ে বিএনপিকে দায়ী করার চেষ্টা করছে।’ তবে ক্ষমতাসীন দল ও পুলিশ এই অভিযোগকে অস্বীকার করে বলছে, ‘গণপরিবহনে অগ্নিসংযোগের জন্য বিএনপি কর্মীরাই দায়ী।’

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, গত কয়েক বছরে প্রায় ২৫ লাখ বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলার স্বপক্ষে খুব অল্পই প্রমাণ রয়েছে এবং মামলাগুলোতে করা অভিযোগ সাধারণত অস্পষ্ট এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করা হয়। মামলায় অনেকেই কারাগারে বন্দি, অন্যরা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে এবং মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডায় নির্বাসিত জীবনযাপন করছে।

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় সাজা ভোগ করছেন। তার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপি রাজপথে টিকে আছে।

বাংলাদেশের একটি শীর্ষ দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএনপির বিরুদ্ধে সরকারের দমনপীড়ন নীতির একটি মূল কারণ বিএনপিতে তারেক রহমানের প্রভাবকে দুর্বল করা। আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নীতিনির্ধারকরা এমনটাই চান। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার বিএনপি নেতাদের বোঝাতে চায় যে- তারেককে অনুসরণ করলে তাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই।

প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিরুদ্ধে। তাই বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যেই বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। কারণ, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে পরপর দুইটি বিতর্কিত নির্বাচনের পর আগামী নির্বাচন একতরফা বলে মনে হলে যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার আশঙ্কা রয়েছে।

বিএনপির একাধিক দলীয় সূত্র দাবি করেছে, তারেক রহমান রাস্তার বিক্ষোভ-সহিংসতা এড়িয়ে বিএনপির প্রচারকে গণতন্ত্রের জন্য গণআন্দোলনে পরিণত করার দিকে মনোনিবেশ করেছেন।

আওয়ামী লীগের একটি শীর্ষ সূত্র ডিপ্লোম্যাটকে জানিয়েছে, যতদিন তারেক রহমান বিএনপির নেতৃত্বে অবস্থান করবেন ততদিন বহিঃশক্তি বিএনপিকে গ্রহণ করবে না। ২০০৮ সালে বাংলাদেশে নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস টি মরিয়াটির একটি ফাঁস হওয়া ফোনকল প্রকাশ করে যে তিনি তারেক রহমানের কঠোর সমালোচক ছিলেন। যদিও এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে মার্কিন অবস্থানের স্পষ্ট পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েকদিন আগে দ্য ডিপ্লোম্যাটকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, বিএনপি ভারত বিরোধী নয়। বিএনপি প্রত্যাশা করে, ভারত কোনো রাজনৈতিক দলকে নয় বরং বাংলাদেশের জনগণকে সমর্থন করবে।

দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ২৮ অক্টোবরের সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে ঘোষণা করেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার ভিসা নিষেধাজ্ঞার জন্য সমস্ত সহিংস ঘটনা পর্যালোচনা করবে। এক্স বার্তায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, অংশগ্রহণমূলক এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ রাস্তা খুঁজে পাওয়া অত্যাবশ্যক। আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর এ ধরনের অবস্থান ইঙ্গিত করে, বাংলাদেশে বিতর্কিত নির্বাচন মেনে নিতে তারা প্রস্তুত নন।

২৮ অক্টোবরের পর এখন সরকার বিএনপির বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযান শুরু করেছে। বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা গ্রেপ্তার করা তারই অংশ। এখন দেখতে হবে, বিএনপি এই চাপ কীভাবে মোকাবিলা করে? সামনের দিনগুলোতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউর প্রতিক্রিয়া কী হয়? (সংক্ষেপিত)

মোবাশ্বের হাসান : সিডনিভিত্তিক স্কলার এবং দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভূ-রাজনীতির বিশ্লেষক

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ চায় না জাতীয় পার্টি

বায়ুদূষণে শীর্ষে লাহোর, ঢাকার অবস্থান কত

শীতে ব্যস্ততা বেড়েছে লেপ তোশক কারিগরদের

ধানবীজ কিনে প্রতারিত কৃষক

কুরিয়ার সার্ভিসে চুরি, ১৯ লক্ষাধিক টাকাসহ কর্মচারী গ্রেপ্তার

বিএনপির অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় সাবেক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা

গুগল ড্রাইভ থেকে ডিলিট ফাইল খুঁজে পাবেন যেভাবে

পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িতে গুলি, নিহত ৪২

আজ ঢাকায় আসছেন বাইডেনের বিশেষ প্রতিনিধি

ঝোপের ভেতরে গলাকাটা লাশ

১০

বাকৃবি রোভাররা সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্ব গঠনে কাজ করবে : বাকৃবি উপাচার্য

১১

আলু বীজের সংকটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি

১২

গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪৪ হাজার ছাড়াল

১৩

এইচএসসি পাসে চাকরি দিচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংক

১৪

শীত নিয়ে যে বার্তা দিল আবহাওয়া অফিস

১৫

আ.লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা তুলে নিলেন ছাত্রদল নেতা

১৬

কুষ্টিয়ায় ভুয়া ডাক্তারকে জেল ও জরিমানা

১৭

আজ টিভিতে যেসব খেলা দেখা যাবে

১৮

প্রবেশপত্র বিতরণে টাকা আদায়ের অভিযোগ

১৯

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিতে ঢাকা কলেজের দুই শিক্ষার্থী

২০
X