১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পাকিস্তানের দুই অংশে, যথা—পূর্ব বাংলা (তথা পূর্ব পাকিস্তান) এবং পশ্চিমাংশের চারটি প্রদেশ নিয়ে গঠিত পশ্চিম পাকিস্তানের ভাগে খুব একটা শিল্পকারখানা পড়েনি। বৃহৎ শিল্প গড়ার জন্য ১৯৫২ সালে পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (পিআইডিসি) সৃষ্টি হয়। এর অধীনে দুই অংশে যথাক্রমে ইপিআইডিসি ও ডব্লিউপিআইডিসি গঠন করা হয়। মূলত এ করপোরেশন নিজ উদ্যোগে কিংবা কতিপয় শিল্পোদ্যোক্তাকে সহায়তার মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানে পাট, কাপড় ও চিনি খাতে বেশকিছু বৃহৎ শিল্পকারখানা গড়ে তোলে। পর্যায়ক্রমে সার, কেমিক্যাল ও স্টিল মিলও প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানে শিল্পোন্নয়নের গোড়াপত্তন করে। ইপিআইডিসি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত কতিপয় শিল্পকারখানা বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কাছে পরে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া গত শতাব্দীর পঞ্চাশ দশকের মাঝামাঝি সময়ে ক্ষুদ্র শিল্পের বিকাশ ও সহায়তার জন্য পূর্ব পাকিস্তান ক্ষুদ্র শিল্প করপোরেশন (ইপসিক) প্রতিষ্ঠা করা হয়।
স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের স্থলে স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টির পর প্রথমে বৃহৎ শিল্পসমূহ জাতীয়করণ করা হয়। বিশ্বব্যাপী পাটের গুরুত্ব কমে যাওয়ায় এবং প্রশাসনিক অবস্থা ও শ্রমিক বিশৃঙ্খলার কারণে পাটকলসমূহ লোকসানে পতিত হয়। পরে বেসরকারীকরণ নীতি গ্রহণের মাধ্যমে বেশ কিছু পাটকল ও কাপড়ের মিল ব্যক্তিমালিকানায় হস্তান্তর করা হয়।
বাংলাদেশে লাভজনক শিল্প উন্নয়নের সূচনা হয় বেসরকারি উদ্যোগে ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্প বিকাশের মাধ্যমে। এসব শিল্পে কর্মসংস্থান এবং দেশে বিভিন্ন সেবা খাতের সম্প্রসারণের ফলে ভোক্তা শ্রেণির সৃষ্টি হয়। ক্রমান্বয়ে ভোগ্যপণ্য, নির্মাণসামগ্রী, হালকা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পকারখানা গড়ে উঠতে থাকে।
১৯৭৯ সালে রিয়াজ গার্মেন্টস কর্তৃক তৈরি পোশাকের সীমিত রপ্তানির মাধ্যমে এ খাতের রপ্তানির সূচনা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে আরও উদ্যোক্তা রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা স্থাপন করে রপ্তানি শুরু করে। আশির দশকের প্রথম দিকে এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের যৌথ কার্যক্রমের মাধ্যমে তৈরি পোশাকশিল্পে নীতি-সহায়তা চালুর ফলে এ শিল্প বিকাশ লাভ করে। পোশাক খাত থেকে বর্তমানে রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮২ শতাংশ আসে। মধ্যবিত্ত ও গরিবদের, বিশেষ করে নারীদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও এ খাত শীর্ষস্থানে রয়েছে। যে দুটি সরকারি নীতি-সহায়তার কারণে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প দ্রুত বিকাশ লাভ করেছে সেগুলো হচ্ছে শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানি করে বন্ডেড ওয়্যারহাউসে রাখার সুবিধা এবং বিলম্বে দায় পরিশোধসহ ব্যাক টু ব্যাক এলসি সুবিধা। এ দুটি সুবিধাপ্রাপ্তির ফলে বড় অঙ্কের পুঁজি ছাড়াই গার্মেন্টস কারখানা প্রতিষ্ঠা করে উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সরকার করহার কমানো, নগদ সহায়তা প্রদান, ব্যাংক ঋণপ্রাপ্তি সহজ ও বন্দর ব্যবহারে অগ্রাধিকার প্রদান করে এ খাত প্রসারের পথ সুগম করেছে।
সরকার এ পর্যন্ত ৮টি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং প্রতিবছর বার্ষিক বাজেটে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের নানা সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে শিল্পায়নে সহায়তা করে আসছে। দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ-সুবিধা প্রভৃতির ফলে শিল্পায়নের পাশাপাশি ভোক্তা বাজার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান প্রায় ৩৩ শতাংশে পৌঁছেছে।
শুরু থেকেই বাংলাদেশে আমদানি বিকল্প এবং রপ্তানিনির্ভর উভয় প্রকার দ্রব্যসামগ্রী প্রস্তুতের জন্য শিল্পায়ন হচ্ছে। গ্লোবালাইজেশনের প্রসারের ফলে আমাদের আমদানি-রপ্তানি উভয়ই বেড়েছে। তবে উৎপাদনের কাঁচামাল, কেমিক্যাল সামগ্রী, উচ্চ প্রযুক্তির দ্রব্যাদি, যেমন—মোটরগাড়ি, কলকারখানার যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ, সার, জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেল, চিনি ইত্যাদি অধিক পরিমাণ ক্রয়ের কারণে রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি হচ্ছে। দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর চাহিদা বৃদ্ধির কারণে বেশ কিছু ভোগ্যপণ্য উৎপাদন শিল্প, ওষুধ ও কেমিক্যাল প্রস্তুত শিল্প, চামড়া ও প্লাস্টিক শিল্প, সুতা ও কাপড় প্রস্তুত কারখানা এবং স্টিল, ইলেকট্রনিকস, সিমেন্ট প্রভৃতি বৃহৎ শিল্প গড়ে উঠেছে।
যতই দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, ততই বৈদেশিক বাণিজ্যের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। রপ্তানির মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের অন্যতম উৎস। আবার রিজার্ভের বৈদেশিক মুদ্রার সিংহভাগ আমদানি দায় পরিশোধে খরচ হয়। পৃথিবীর ১০টি বৃহৎ ভোক্তা বাজারের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। সে কারণে আমাদের আমদানি শুধু শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং প্রতিনিয়ত বিপুল পরিমাণ ভোগ্যপণ্য সামগ্রীও আমদানি করা হয়। আমদানির তুলনায় রপ্তানি কম হলে বাণিজ্য ঘাটতি হয়, অর্থাৎ লেনদেনের ভারসাম্য ঋণাত্মক হয়, যার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি দেখা দেয়। সে জন্য দেশের সার্বিক উন্নয়নে রপ্তানি বৃদ্ধি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তদানীন্তন পাকিস্তান আমলে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে পাকিস্তানের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৫৬ শতাংশ এবং পূর্ব পাকিস্তানের রপ্তানির ৭৫ শতাংশের অধিক আসত পাট ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি থেকে। অন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি দ্রব্য ছিল চা ও চামড়া।
স্বাধীনতার পরের বছর বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল মাত্র ৩৪ কোটি ৮৪ লাখ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই ছিল পাট ও পাটজাত পণ্য। পাটের পর প্রধান দুটি রপ্তানি পণ্য ছিল চা ও হিমায়িত খাদ্য।
কৃত্রিম তন্তুর আবিষ্কার ও ব্যবহার বৃদ্ধির পর পাটের গুরুত্ব কমতে থাকে। সে জন্য পাটের বিকল্প রপ্তানি দ্রব্য অন্বেষণে গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
১৯৮৩-৮৪ সালে মোট রপ্তানিতে তৈরি পোশাকের হিস্যা ছিল মাত্র ৩.৮৯ শতাংশ। ১৭/১৮ বছরের ব্যবধানে ২০১০-১১ সালে রপ্তানি আয়ের ৭৮ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক থেকে। পরবর্তী ১০ বছরে তৈরি পোশাকের অবদান বেড়ে ৮২-৮৪ শতাংশে দাঁড়ায়, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। মূলত তৈরি পোশাকের ওপর ভর করে ২০২১-২২ সালে রপ্তানি আয় ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করে। বর্তমানে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। তবে একক পণ্যের ওপর এত অধিক হারে রপ্তানি নির্ভরতা টেকসই বাণিজ্যের জন্য অনুকূল নয়। সে জন্য গত দু’দশক যাবতই রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তৈরি পোশাক ব্যতীত বাংলাদেশের অন্য কটি উল্লেখযোগ্য রপ্তানি পণ্য হচ্ছে পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কৃষিজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য, হোম টেক্সটাইল, ওষুধ, প্লাস্টিক পণ্য, হালকা প্রকৌশল পণ্য, হস্তশিল্পজাত পণ্য, বাইসাইকেল ইত্যাদি। পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি মূল্যের দিক থেকে কয়েক বছর দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও গত বছর হোম টেক্সটাইল দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে (প্রায় ৩ শতাংশ)। হিমায়িত চিংড়িসহ অন্যান্য মাছ, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, কৃষিজ দ্রব্যাদি প্রভৃতির বিশ্ববাজারে চাহিদার তুলনায় আমাদের সরবরাহ অপ্রতুল। তা ছাড়া প্যাকেজিং ও মান নির্ণয়ে আমাদের সমস্যা আছে। পরিবেশবান্ধব ট্যানারি শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠা করতে না পারার কারণে বিদেশে আমাদের চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্যের চাহিদা কমে গিয়েছে। সীমিত পরিসরে রপ্তানি চালিয়ে গেলেও এলডব্লিউজি সনদের অভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ডে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে নানা বিধিনিষেধের আওতায় পড়তে হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য সরকার ও বেসরকারি উদ্যোক্তারা জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
গত মার্চে (২০২৩) প্রকাশিত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর রপ্তানির হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, তৈরি পোশাক ও চামড়া ছাড়া অন্য সব খাতেই রপ্তানি কমেছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় সার্বিক রপ্তানি ৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১৪ শতাংশ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ৬ শতাংশ, কিন্তু পাট ও পাটজাত পণ্য, হিমায়িত মাছ, হোম টেক্সটাইল, কৃষিপণ্য, ওষুধ, বাইসাইকেলসহ অন্য খাতে রপ্তানি বেশ কমেছে। ওই সময় মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ দশমিক ৫৮ শতাংশই এসেছে পোশাক খাত থেকে। বিগত কয়েক বছরের রপ্তানি আয়ের পরিসংখ্যান লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, পোশাক খাতের রপ্তানি ৩০-৩৫ বিলিয়ন ডলার হলেও অন্য কোনো খাতে রপ্তানি দুই বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করতে পারেনি। ২০২১-২২ অর্থবছরে হোম টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এবং পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি ১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের দেশসমূহ, জাপান, চীন, ভারতসহ এশিয়ার দেশসমূহ এবং বিশ্বের বহু দেশে বিস্তৃত। সে তুলনায় অন্যান্য খাতের বাজার সীমিত। তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারীগণ বিভিন্নভাবে সরকারের নীতি-সহায়তা, শুল্ক-কর সুবিধা, ব্যাংক ঋণ ও বন্দর ব্যবহারে যে অগ্রাধিকার পান, অন্যান্য রপ্তানিকারক উপরিউক্ত সকল সুবিধা পান না। তৈরি পোশাক খাতের সংগঠন বিজেএমইএ, বিকেএমইএ এমনকি কাপড়ের মিলগুলোর সংগঠন বিটিএমএ যেভাবে সরকার ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ ও প্রভাব খাটাতে পারে, অন্যান্য খাতের সংগঠনগুলো তেমন শক্তিশালী ও সক্রিয় নয়। এসব পণ্যের রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে না বাড়ার কারণ হলো উৎপাদকগণের ব্যবসায়িক যোগাযোগ কম, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কমে যাওয়া, গ্যাস-বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি। অন্যান্য রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিনির্ভর বড় শিল্পকারখানাও গড়ে ওঠেনি। বাজার সীমিত থাকার কারণে এসব খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগও তেমন আসছে না।
যে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানিতে প্রতিবছরই প্রবৃদ্ধি আছে। কারণ বাংলাদেশ নিম্ন ও মধ্যম দামের পোশাক রপ্তানি করে, যার চাহিদা বিদেশি ক্রেতাদের কাছে প্রতিকূল পরিবেশেও বলবৎ রয়েছে। তবে তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে যে বৃহৎ বাজার রয়েছে, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ মাত্র বৈশ্বিক চাহিদার ৬ দশমিক ২ শতাংশ রপ্তানি করতে পারছে। তৈরি পোশাক খাতেও পণ্যের বহুমুখীকরণ প্রয়োজন। যেমন— আমাদের উদ্যোক্তাগণ যদি উচ্চমূল্যের পোশাক, মনুষ্য তৈরি তন্তু ব্যবহার (ম্যান মেইড ফাইবার) করে প্রস্তুতকৃত পোশাক, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পোশাক ইত্যাদি প্রস্তুত ও বাজার অন্বেষণ করে, তবে পোশাক রপ্তানি আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশের ক্যাটাগরি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে, যা ২০২৬ সালে কার্যকর হবে। ২০২৯ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে আর শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকবে না। তখন ৮-৯ শতাংশ শুল্কারোপিত হলে তৈরি পোশাকের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে, যার ফলে পোশাক রপ্তানি কমে যেতে পারে। সে জন্য পূর্ব থেকেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ডব্লিউওটিওর সঙ্গে যোগাযোগ করে শুল্ক সুবিধার সময় বাড়িয়ে নেওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের সঙ্গে শুল্কমুক্ত চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষরের মাধ্যমে পারস্পরিক শুল্কমুক্ত সুবিধা কাজে লাগানো যেতে পারে।
তৈরি পোশাকশিল্পে বহুমুখীকরণের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশসমূহ ছাড়াও রাশিয়া, ভারত, জাপান ও চীনের মতো দেশসমূহের বাজারে রপ্তানি আরও বাড়ানো সম্ভব বলে এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান যে, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি টেকসই করার জন্য জাতীয় আয়ে শিল্পের অবদান ক্রমান্বয়ে বাড়াতে হবে। আমদানি বিকল্প ও রপ্তানিমুখী উভয় শিল্প প্রসারে সরকার ও ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের মনোযোগী হতে হবে। রপ্তানি বাড়ানোর লক্ষ্যে রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। নতুন রপ্তানি দ্রব্য ও বাজার অন্বেষণ করতে হবে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ স্বাক্ষরের মাধ্যমে রপ্তানি সক্ষমতা বাড়াতে হবে। সর্বোপরি আমাদের রপ্তানি পণ্য উৎপাদনে পরিবেশের যাতে ক্ষতি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং কলকারখানায়, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ, শ্রমিক অধিকার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় শর্তাদি (কমপ্লায়েন্স) মেনে চলতে হবে। সাভার চামড়া শিল্প নগরীকে পরিবেশবান্ধব শিল্পনগরী হিসেবে গড়ে তুলে চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্য রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং তৈরি পোশাকের পর চামড়াশিল্পকে দ্বিতীয় বিকল্প রপ্তানি পণ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ ছাড়া প্রতিশ্রুতিশীল রপ্তানি পণ্যসমূহকে তৈরি পোশাকের মতো নীতি-সহায়তা ও প্রণোদনা প্রদান করে রপ্তানি সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া: সাবেক সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান এবং বর্তমানে জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্টদূত
মন্তব্য করুন