শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:৫২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
আফসান চৌধুরীর নিবন্ধ

সোশ্যাল মিডিয়ার চেয়ে সুশীলদের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা কম

ছবি : সৌজন্য
ছবি : সৌজন্য

বাংলাদেশের মিডিয়া ম্যাপে বেশিরভাগ জায়গা দখল করে আছে সোশ্যাল মিডিয়া। এসব জায়গায় কে সত্য বলছে, আর কে মিথ্যা বলছে তা নিশ্চিত করার উপায় নেই। যে জরিপগুলো এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে সেখানে দেখা যাচ্ছে, মানুষ ব্যাপকহারে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছে। আর স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহারের সময় মানুষ এর সব কনটেন্ট পুরোপুরি বিশ্বাস না করলেও তারা সবচেয়ে বেশি আস্তা রাখছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।

বিশেষত, সোশ্যাল মিডিয়ায় কম শিক্ষিত মানুষের আস্থা বেশি এবং বেশি শিক্ষিতদের আস্থা তুলনামূলকভাবে কম। কিন্তু একই সাথে সাধারণ মানুষ মূলধারার গণমাধ্যম যেমন, বিটিভিসহ অন্যান্য টিভি চ্যানেল ও পত্রিকার ওপরেও আস্থা রাখে। শতকরা ৫০ ভাগ মানুষ মনে করে পত্রিকা স্বাধীন। তবে সমাজের সব মানুষের মনোভাব একই ধরনের তা ভাবাটা ঠিক হবে না।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ অর্থাৎ গ্রামের মানুষ বা কম বিত্তের মানুষ যারা ‘সুশীল’ না, যারা ঢাকা শহরের মধ্যবিত্ত না- তারা সোশ্যাল মিডিয়া দখল করে নিয়েছে। তারা নিজেদের কনটেন্ট নিয়ে খুশি। তারা সুশীল কনটেন্ট দেখতেও আসে না। দেশের সব স্তরের মানুষ একই ভাবনা-চিন্তা করছে এরকম বাংলাদেশ আর নেই।

মূল মিডিয়া থেকে মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ার দিকে চলে গেছে। আর এটা বুঝেই পত্রিকা বা মূলধারার মিডিয়াগুলোও সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের উপস্থিতিকে সবল করার চেষ্টা করছে।

সাধারণ মানুষকে রাজনীতির ব্যাপারে যতটা আগ্রহী বলে আমরা মনে করি আদতে তারা ততটা আগ্রহী নয়। একইসাথে স্বল্প শিক্ষিত মানুষের চেয়ে শিক্ষিত মানুষের রাজনীতির ব্যাপারে আগ্রহ বেশি। যেমন সাধারণ মানুষ টকশো দেখেননা এবং পছন্দও করেননা। তারা জ্বীনপরি, ফিরেশতা ও ধর্মীয় কনটেন্ট বিশ্বাস করেন এবং পছন্দ করেন, যেগুলো আবার সুশীল সমাজের মানুষ সঠিক কনটেন্ট বলে মনে করেন না।

অর্থাৎ সমাজের বিদ্যমান যে ব্যবধান তার ভিত্তিতেই মানুষ তার কনটেন্ট ভোগ করে। বিশেষ করে অমাদের সুশীলদের ওপর সাধারণ মানুষের আস্তা কম এবং সুশীলদের জন্য কী কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে সেটা নিয়ে তাদের ততটা মাথাব্যথাও নেই।

চলমান পরিস্থিতিতে প্রফেশনাল মিডিয়া আরও দুর্বল হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। একইসাথে সোশ্যাল মিডিয়া অনেকটাই মূল মিডিয়া হয়ে গেছে আর মূল মিডিয়া সোশ্যাল মিডিয়া হওয়ার চেষ্টা করছে। মানুষ এখন পত্রিকা পড়ে কম। গ্রামের দিকে হয়ত এখনো কিছু মানুষ পত্রিকা পড়ে, তবে শহরের মানুষ স্যোশাল মিডিয়াই বেশি দেখছে।

আমি পশ্চিমা দেশগুলোতে দেখেছি, মানুষ সকালে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় পত্রিকা পড়ে। পত্রিকাগুলো ছাপানোও হয় সেভাবে যেন বাসে/ ট্রেনে বসেও তা হাতে ধরে পড়া যায়। তবে সেখানেও মানুষের পত্রিকা পড়ার প্রবণতা কমে যাচ্ছে। পরিবর্তে তারা হাতে ডিভাইস ধরে ডিভাইসের মাধ্যেই সংবাদ পড়ে বা দেখে।

এখন আর কাগজ, টেলিভিশন বা ডিজিটাল ডিভাইস দেখে বিচার করার উপায় নেই যে, কোনটি মূল মিডিয়া। তবে আমার কাছে এখন সোশ্যাল মিডিয়াকেই মূল মিডিয়া বলে মনে হয়। কারণ, বিজ্ঞাপনও যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

বিজ্ঞাপন ক্রমেই চলে যাচ্ছে সার্চ ইঞ্জিন অপারেশনের হাতে। সবচেয়ে বেশি মানুষ যে কনটেন্ট দেখছে সেখানেই বিজ্ঞাপন পাঠিয়ে দিচ্ছে সার্চ ইঞ্জিন অপারেশন। কনটেন্ট ফেইক নাকি রিয়েল সেটা তারা দেখবে না, যদিও এখন এগুলো যাচাইবাছাই করার সংগঠন রয়েছে। সুতরাং স্যোশাল মিডিয়াই মূল মিডিয়া হয়ে গেছে এই বাস্তবতা আমাদের মেনে নিতে হবে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো বিভিন্ন গুজব (যেমন সাঈদীকে চাঁদে দেখা), ভুল তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি আমরা যতটা নিয়ন্ত্রণের কথা ভাবি ততটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। পত্রিকায় যা বলা হয় তা রাজনৈতিক না হলে তেমন একটা প্রভাব পড়ে না। অনেক সাংবাদিকই তো মূলধারার মিডিয়ায় কাজ করেন। কয়জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? এআই দিয়ে এটি কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। সারা দুনিয়াতেই এআই দিয়েই নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

আমরা যারা নিয়মিত কম্পিউটার ব্যবহার করি আমাদের সামনে সারাক্ষণ বিভিন্ন পত্রিকার কনটেন্টগুলো আসতে থাকে। এমনকি এখন আমাদের সামনে সংবাদগুলোকে একত্র করে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে আমরা বিরক্ত না হই এবং পছন্দের সংবাদটা বেছে নিয়ে সেটা পড়তে পারি। অর্থাৎ সকল ক্ষেত্রে প্রযুক্তির এক ধরনের ব্যবহার চলে এসেছে।

পত্রিকার প্রযুক্তির চেয়ে ডিজিটাল ডিভাইসের প্রযুক্তি অনেক উন্নত। কিন্তু আমরা এটাকে আটকে দিচ্ছি। আমরা এটাকে মানতে চাইছি না। আমরা ভাবছি, সবচেয়ে ভালো হচ্ছে গতানুগতিক মিডিয়া। কিন্তু সাধারণ মানুষ সেটা ভাবে না। তাই পত্রিকা থাকুক বা না থাকুক অনলাইনের দুনিয়াতে টিকতে হলে অনলাইন হতে হবে। আমাদের এটা মানতে হবে- কাগুজে মিডিয়ার যুগ শেষ। কিছু ভালো পত্রিকা হয়ত থাকবে। আর পাঠক যেটা চায় সেটাই থাকবে।

আফসান চৌধুরী : গবেষক, সাংবাদিক, বিশ্লেষক

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বার্সেলোনাকে মেসির আবেগ ঘন বার্তা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট হ্যাক

‘খুনি হাসিনা পালিয়ে গেছে’ বলতে কিছু গণমাধ্যম এখনো ভয় পাচ্ছে : নাছির 

ছেলের হাতে মা খুন!

বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর

ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ নয়, সংস্কার চাই: শিবির সভাপতি

চোটে পড়লেন হৃদয়ও

যবিপ্রবির রিজেন্ট বোর্ড সদস্য হলেন যারা

ছুটি না দিয়ে গালাগাল, নারী শ্রমিকের আত্মহত্যা

পেনাল্টি মিসে রিয়ালকে হতাশ করেছেন এমবাপ্পে

১০

কিক-অফের অপেক্ষায় বদলে যাওয়া লিগ

১১

কক্সবাজারে এফবিসিসিআইর দুর্যোগ প্রস্তুতি ও আপদ ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ

১২

ই-সিগারেট নিষিদ্ধসহ তামাক আইন সংশোধনী দ্রুত পাসের দাবি

১৩

৪২ রানে অলআউট শ্রীলঙ্কা

১৪

পর্যটক নেই, সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি জাহাজ

১৫

ডেঙ্গু আক্রান্ত সাংবাদিক আরিফ শাওনের খোঁজ নিলেন তারেক রহমান

১৬

ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে অস্ত্র নিয়ে মহড়া যুবলীগ নেতার

১৭

দেশের বাহির থেকে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে : প্রিন্স

১৮

পতিত আ.লীগ এখন রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করতে চায় : লায়ন ফারুক

১৯

ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ছাত্রশিবিরের মতবিনিময় সভা

২০
X