বাংলাদেশে গত ৫১ বছরে আমরা বহুরকম সরকার দেখেছি, কখনও সামরিক বাহিনীর শাসন, কখনও বেসামরিক স্বৈরতন্ত্র; কখনও প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতির সরকার দেখেছি, কখনও দেখেছি সংসদীয় ব্যবস্থা। কিন্তু এ সবগুলোর মধ্যে একটি অভিন্ন বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- কোন সরকার বা কোন দলীয় সরকার এটা প্রমাণ করতে পারেনি বা প্রমাণ করতে চায়নি যে, এদেশে একটি দলীয় সরকারের অধীনে কোনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে। এটা তাদের বৈশিষ্ট্যের মধ্যেই নাই। ১৯৭৩, ১৯৭৮, ১৯৮৬, ১৯৮৮ সকল পর্যায়েই এটা আমরা দেখেছি।
১৯৮৮ সালে বাংলাদেশে ভোটার বিহীন নির্বাচন হয়েছে। ভোটারবিহীন নির্বাচন হয়েছে ১৯৯৬ সালেও। ২০১৪ সালে অর্ধেকের বেশি আসনে কোনো নির্বাচনই হয়নি। আর ২০১৮ সালের নির্বাচনকে কোনো নির্বাচনই বলা যায় না।
বাংলাদেশে যেসব দল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজ করতে দেওয়া এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিকশিত করা। কিন্তু তারা সেটা করতে দেয়নি কিংবা শ্রেণীগতভাবে তাদের মধ্যে সেই তাগিদই নেই।
৮০ এর দশকে বাংলাদেশে একটি দীর্ঘ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন হয়েছিল। সেই আন্দোলনের সময় দুটি শ্লোগান হয়ে দাঁড়িয়েছিল ছিল কেন্দ্রীয় শ্লোগান। একটি হলো- ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’। সে সময়ের অপর কেন্দ্রীয় স্লোগানটি হল- ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। ৮০-এর দশকে এই দুটি কেন্দ্রীয় শ্লোগানের ভিত্তিতেই স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন হয়েছিল। কিন্তু এরপর প্রায় ৪০ বছরেও এই দুটি শ্লোগানের দাবি পূরণ হয়নি। অথচ সেই আন্দোলনে যে দলগুলো নেতৃত্ব দিয়েছিল তারাই পরবর্তীকালে ক্ষমতায়ে এসেছে, থেকেছে।
এই দাবিগুলো পূরণ হয়নি বলেই এতো বছর পরে এসেও মানুষকে ৮০-এর দশকের সেই "আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দিব" দাবির জন্য লড়তে হচ্ছে। আজকেও মানুষকে "স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক" দাবিতে আন্দোলন করতে হচ্ছে।
‘নির্বাচিত সরকার একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারে না’ এরকম পরিস্থিতি যেকোনো দেশের মানুষের জন্যই দুর্ভাগ্যজনক। বাংলাদেশে কোনো দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য কোনো নির্বাচনের দৃষ্টান্ত না থাকার কারণেই ৮০ দশকের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিটি উঠেছিল। এরশাদ পতনের পর ৯১ সালে বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে প্রথম একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে।
৯৬ সালে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নিজের মতো করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে গেছে ১৫ ফেব্রুয়ারি। ভোটার যায়নি এবং সেটা আসলে কোনো নির্বাচন হয়নি। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে যে সংসদ গঠন করা হয়েছিল সেই সংসদ বাতিল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আবার নির্বাচনের জন্য তখন জোরদার আন্দোলন হয়েছিল। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল আওয়ামী লীগ, সাথে ছিল জাতীয় পার্টি এবং জামায়াতে ইসলামী। তাদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতেই ৯৬ সালে সেই সংসদেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইনটি পাস হয়। এবং সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচন হয়।
২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হয়েছে। আমাদের দেশে নির্বাচনে সাধারণভাবে চোরাই টাকার মালিক, সাম্প্রদায়িকতা, আঞ্চলিকতাসহ নানা দুষ্ট তৎপরতা থাকে, তা সত্ত্বেও ২০০৮ সালের নির্বাচন বর্তমান মান অনুযায়ী সবাই গ্রহণ করেছিল। যদিও আমরা আরো ভালো গণতান্ত্রিক নির্বাচন চাই, কিন্তু সকলের অংশগ্রহণ, ভোটারদের ভোটাধিকারের প্রাথমিক অধিকার রক্ষাই এখন বড় চাওয়া, তাও এখন পাওযা যাচ্ছে না। ২০০৮ সালে বিপুল ভোটাধিক্যে নির্বাচিত হয়েই আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু মানুষের সেই ভোটের প্রতি আওয়ামীলীগ সরকার কোনো মর্যাদা দেয় নাই। সেই মর্যাদা দিলে আওয়ামীলীগ সরকার দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করত। মানুষের ভোটের প্রতি সেই মর্যাদা দিলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার করত। মানুষের ভোটকে মর্যাদা দিলে তারা বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিত। বাংলাদেশে এই কমিশনগুলোর একটিও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। সবগুলো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সরকারের দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার ফলে বাংলাদেশে ২০১৪ সালে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে কোনো ভোটই হয়নি; আর ২০১৮ সালে তো কোনো নির্বাচনই হয়নি। সুতরাং ২০০৮ সালে যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে ২০২৩ সালে তার কোনো বৈধতা থাকতে পারে না। সেই কারণেই এই সরকার মেয়াদ উত্তীর্ণ সরকার। তাদের ৫ বছরের মেয়াদ অনেক আগেই পার হয়ে গেছে। সেই কারণেই এই মেয়াদ উত্তীর্ণ সরকারের পদত্যাগ করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী কাঠামো তৈরি করা একটি ন্যূনতম দাবি। এটা গণতন্ত্রের জন্য যথেষ্ট দাবী না কিন্তু গণতন্ত্রের জন্য এটা হচ্ছে প্রাথমিক দাবি।
স্বৈরতন্ত্রী ব্যবস্থার কারণেই কিছু গোষ্ঠী যা খুশি তাই করতে পারছে। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো অবাধে লুট হয়ে যাচ্ছে, হাজার লক্ষ কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। ঢাকা-মাওয়া সড়ক থেকে শুরু করে বাংলাদেশে যত অবকাঠামো নির্মাণ হচ্ছে তা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল। অর্থাৎ প্রত্যেকটি অবকাঠামো নির্মাণে ব্যাপক দুর্নীতি হচ্ছে এবং সেই টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেকটি নির্মাণ কাজ কয়েক ধাপের সাব কন্ট্রাক্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একটি প্রকল্পের কাজ প্রথমে চীন, কোরিয়া, জাপান কিংবা অন্য কোনো দেশের কোম্পানি নিচ্ছে তারপর সেটি সাব কনট্রাক্ট, সরকারি দলের ঘনিষ্ঠ কেউ না কেউ। আর এর পরিণতি যে কি সেটা আমরা কয়দিন আগে চট্টগ্রাম টু কক্সবাজার রেললাইন থেকে দেখতে পেলাম। নানাজায়গায় ভবন, সেতু, রেললাইন, সড়ক, ফুটপাত সব ভেঙ্গে যাচ্ছে। উদ্বোধনের সময় আমরা খুব জাকজমক দেখি, কিন্তু পরবর্তীকালে তার আর কোনো খবর পাওয়া যায় না।
দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার কি অবস্থা সেটা আমরা ভালোভাবেই দেখতে পাচ্ছি। ডেঙ্গুর এই ভয়াবহতা এই পরিস্থিতিরই ফল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ প্রায় মন্ত্রণালয়ই ভয়ংকর রকম কমিশনবাজ, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী এবং দুর্নীতিবাজদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে বলেন, তিনি বাংলাদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য কাজ করছেন। তিনি বাংলাদেশের মানুষের দারিদ্র্য ঘোছানোর জন্য কাজ করছেন। বাংলাদেশ পরিবেশ বিধ্বংসী কোনো কাজ তিনি গ্রহণ করবেন না। তিনি কোনো দুর্নীতি পছন্দ করেন না। কথা এবং কাজের মধ্যে সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র যদি থাকে এগুলো তার উদাহরণ।
সুন্দরবনবিনাশী রামপাল প্রকল্পসহ পরিবেশ বিধ্বংসী সকল প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার মহা উদ্যোগী। দুর্নীতিতে আগের সকল সরকারের রেকর্ড অতিক্রম করেছে। প্রধানমন্ত্রী বারবার বলেন তিনি বিদেশীদের কথায় চলবেন না। কিন্তু বাংলাদেশে যত মেগা প্রকল্প পাশ হচ্ছে, যত নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে, তার সব ই হচ্ছে অন্য কোনো দেশের কোনো বড় কোম্পানিকে মুনাফা দেওয়ার জন্য, তাদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য এবং বিদেশিদের সহযোগী দেশী কিছু ব্যবসায়ীদের মুনাফা দেওয়ার জন্য।
বড় বড় কোম্পানিগুলো একেকটা পাকিস্তানের ২২ পরিবারের মতো গোষ্ঠী। বলা হয়- বাংলাদেশকে পাকিস্তান থেকে মুক্ত করে, পাকিস্তানের মডেলে যাতে যেতে না পারে সেজন্য সরকার কাজ করছে। আওয়ামী লীগ বলে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষার জন্য কাজ করছে। কিন্তু বাংলাদেশ পাকিস্তান মডেল থেকে বেরই হতে পারে নাই। পাকিস্তান মডেল মানে কী? এটা হল- ২২ পরিবারের মত কিছু গোষ্ঠীকে বিপুল সম্পদশালী করে দেশটিকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া। বাংলাদেশের সেটাই হয়েছে। পাকিস্তানের সময় যে ২২ পরিবার ছিল, এখনকার ২২ পরিবার তার চেয়ে অনেক বেশি সম্পদশালী। বাংলাদেশে সামরিক বেসামরিক আমলাদের ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ব সেটিও পাকিস্তান মডেল। ধর্মকে জুলুম, লুট, সম্পদ ও ক্ষমতার কেন্দ্রীভবনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারও পাকিস্তান মডেল।
বাংলাদেশ ব্যাংক ছিদ্র করে হাজার হাজার কোটি টাকা চলে গেল, সেটা নিয়ে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আজ অবধি বাংলাদেশের মানুষ দেখেনি। শেয়ার বাজারে ধ্বস হয়েছে, কারা করেছে সবাই জানে কিন্তু সেটার তদন্ত কমিটির রিপোর্ট বাংলাদেশের মানুষ দেখেনি। বাংলাদেশে কোন তদন্ত কমিটির রিপোর্ট-ই প্রকাশিত হয় না। বরং যারা দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয় আমরা দেখি সরকার তাদের পক্ষেই দাঁড়ায়। খোদ প্রধানমন্ত্রীকেই দেখা যায় এই দুর্নীতিবাজদের পক্ষে নানা রকমের যুক্তি হাজির করতে।
যখন একটি দেশের সরকার জনগণের উপর ভরসা করতে পারে না, জনগণের সমর্থনের উপরে যখন নির্ভর করে না তখন তাকে অন্য সমর্থন জোগাড় করতে হয়। আর সেই অন্য সমর্থন হল- দেশের মধ্যে বৃহৎ ডাকাত গোষ্ঠী তৈরি করা, সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র, ব্যবসায়ী এবং বিদেশের সমর্থন। এদের স্বার্থ রক্ষার জন্য বিভিন্ন ধরনের নীতিমালা প্রণয়ন করে সরকার। জনগণের কাছে যখন সরকারের গ্রহণযোগ্যতা থাকে না তখন তারা দেশি এবং বিদেশী এইসব কমিশন খোর, মুনাফা খোর গোষ্ঠীর সাথে আপোষ করে। শুধু তাই নয়, তারা বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীকেও তাদের সমর্থন বলয়ের মধ্যে নিয়ে আসতে চেষ্টা করে। এবং সেটার প্রতিফলন ইতিমধ্যেই আমরা পাঠ্যপুস্তকসহ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্যে দেখতে পাই।
স্বৈরতন্ত্র এবং নিপীড়ন বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেই বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। অথচ আজ বাংলাদেশে সেই পাকিস্তান স্বৈরতন্ত্রী মডেলেই চলছে। আর বাংলাদেশে এই মডেল তারাই চালাচ্ছে যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার এত বড় দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি আর কোনো সরকার করতে পারেনি, যেটা আওয়ামী লীগ সরকার এখন করছে।
নানাবিধ বেআইনি অপরাধমূলক কাজকে আইনি বৈধতা দেওয়ার জন্য তারা বিভিন্ন রকমের আইন করে। তার মধ্যে একটি হলো ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন এখন সাইবার সিকিউরিটি আইন। এই আইন ব্যবহার করতে গিয়ে বেআইনিভাবে বিভিন্ন জনকে তুলে আনা, কিংবা তাদেরকে জামিন না দেওয়া- এগুলো কোন আইনি প্রক্রিয়া নয়, এগুলো হল জোর জবরদস্তি ও একটি ভয়ংকর ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার প্রকাশ। এই আইন রাখা হচ্ছে এই কারণেই যাতে সরকারের প্রধান ব্যক্তিসহ কোন মন্ত্রী, কোন বড় ব্যবসায়ী, কোন বড় আমলার বিরুদ্ধে কোন লেখালেখি যাতে কোথাও না হয়। ভয় দেখানোর জন্য এই আইন করা।
সুতরাং এই সরকার একদিকে আইন এবং অন্যদিকে বেআইনি জবরদস্তি, এই দুটির সম্মেলনে দেশের মানুষের উপর একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি চাপিয়ে রেখেছে। এই অবস্থার ক্ষতির পরিমাণ আমরা এখনও জানি না। বর্তমান সময়ে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে, আমাদের নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে, দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হয়েছে প্রাণ প্রকৃতি পরিবেশ, শিক্ষা খাতে, চিকিৎসা খাতে ভয়ংকর নৈরাজ্য তৈরি করা হয়েছে, বাণিজ্যিকীকরণ করা হচ্ছে। আর সরকারের সহযোগীরাই হল এসব কিছুর সুবিধাভোগী।
আইনি এবং বেআইনি এসব কর্মকাণ্ডের সম্মিলনে স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা যে ফ্যাসিবাদে রূপ নিচ্ছে তার শিকার হচ্ছে বাংলাদেশের বর্তমান সময়ের মানুষ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। দেশের সম্পদ যখন পাচার হয়ে যায়, নদী এবং খোলা মাঠগুলো যখন শেষ হয়ে যায়, দেশের শিক্ষা ও চিকিৎসা যখন বিপদগ্রস্ত হয় তখন শুধু এই প্রজন্মের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুতরাং এই যে বিশাল সংখ্যক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদেরকেই প্রতিরোধ তৈরি করতে হবে। এমনভাবে প্রতিরোধ করতে হবে যাতে ফ্যাসিবাদের পুনরুৎপাদন না হতে পারে। প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে জনগণের হাতে ক্ষমতা থাকে। যেন কোন শক্তি এসে আবার এই স্বৈরতান্ত্রিক কাঠামো পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে না পারে।
দু:খের বিষয়, বাংলাদেশের সরকারের মধ্যে আপনি মার্কিন দালাল পাবেন, রাশিয়ার দালাল পাবেন, চীনের দালাল পাবেন, ভারতের দালাল পাবেন, শুধুমাত্র বাংলাদেশের প্রতিনিধি পাবেন না। সেটাই আমাদের প্রধান সমস্যা। বাংলাদেশের মানুষের যে কর্তৃত্ব, যে ক্ষমতা, সেটা তৈরি করার জন্য জনপন্থী রাজনীতিসহ শ্রমিক সংগঠনগুলোকে সক্রিয় করা, কৃষকদের মধ্যে সংগঠন শক্তিশালী করা, নারী, শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক সংগঠন সক্রিয় ও শক্তিশালী করা এগুলো ছাড়া আমাদের কোন উপায় নেই। ‘জনগণের হাতে ক্ষমতা’ এটাও হতে হবে এখনকার স্লোগান।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক, জাতীয় তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটির সাবেক সদস্য সচিব
মন্তব্য করুন