আপনি নিয়মিত অফিসে সময়মতো উপস্থিত হন, কাজ করেন, লক্ষ্যপূরণে আন্তরিক এবং নিজের সাধ্যমতো প্রতিটি কাজে সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবুও দেখা যাচ্ছে, প্রমোশন বা ইনক্রিমেন্ট যখন আসে, আপনি উপেক্ষিত থেকে যান। কেন এমনটা হচ্ছে?
এই প্রশ্ন অনেকের মনেই ঘোরাফেরা করে। কারণ আপনি জানেন, আপনার কাজের মান খারাপ নয়। বরং অনেক কম পারফর্ম করা সহকর্মীও আপনার আগে সুযোগ পেয়ে যান। এর পেছনে কিছু সূক্ষ্ম বাস্তবতা আছে, যা অনেক সময় আমরা বুঝে উঠতে পারি না। চলুন এক নজরে জেনে নেই সেই বাস্তবতাগুলো।
শুধু কাজ করলেই হয় না, কাজটি ম্যানেজ করাও জানতে হয় : আজকের করপোরেট দুনিয়ায় শুধু নিজের দায়িত্ব পালন করলেই যথেষ্ট নয়। প্রতিষ্ঠান চায় এমন কর্মী, যিনি নেতৃত্ব দিতে পারেন, সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এবং টিমকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে পারেন। কাজ করার পাশাপাশি কাজ ম্যানেজ করার দক্ষতা এখন একটি বড় যোগ্যতা।
পরচর্চা ও নেতিবাচকতা কর্মপরিবেশ নষ্ট করে : অনেকে নিজের কাজ ভালো করলেও সহকর্মীদের নিয়ে গুঞ্জন করা, পরনিন্দা বা গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে লিপ্ত থাকেন। এর ফলে একটি টিমের ভেতর বিশ্বাসের সংকট তৈরি হয় এবং কর্মপরিবেশে বিষাক্ততা ছড়ায়। নেতিবাচক মানসিকতা সম্পন্ন কর্মীকে কর্তৃপক্ষ সাধারণত উচ্চপদে দেখতে চায় না।
সিনিয়রদের সঙ্গে অসহযোগিতা ও দুর্ব্যবহার : প্রতিষ্ঠানে সিনিয়রদের প্রতি সম্মান এবং সহযোগিতার মনোভাব রাখা একটি মৌলিক আচরণগত যোগ্যতা। যারা অহংকার প্রদর্শন করেন, অহেতুক তর্কে যান বা নিজের মতটাই জোর করে চাপিয়ে দেন, তারা নেতৃত্বের উপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হন না।
গ্রুপিং, দলাদলি ও কাজে বাধা সৃষ্টি : অনেক প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভিত্তিতে ছোট ছোট গ্রুপ গড়ে ওঠে, যা কর্মক্ষমতা এবং নিরপেক্ষ মূল্যায়নকে প্রভাবিত করে। কেউ যদি নিজে গ্রুপিং করেন বা অন্যদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করেন, তাহলে তার প্রতি এক ধরনের অনাস্থা তৈরি হয়।
দূরদর্শিতা ও প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক চিন্তার অভাব : শুধু আজকের কাজ নয়, আপনি ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানের জন্য কতটা উপযোগী- এই দৃষ্টিকোণ থেকেও মূল্যায়ন হয়। যারা বড় লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেন, দলের জন্য ভাবেন এবং নতুন কিছু শিখতে চান, তারা সহজেই সামনে এগিয়ে যান।
নিজের কাজ নিজেই তুলে ধরতে জানতে হয় : মাঝেমধ্যে দেখা যায়, কোনো কর্মী অসাধারণ কাজ করছেন, কিন্তু তা সঠিকভাবে কেউ জানে না। প্রফেশনালিজমের অংশ হিসেবেই নিজের পারফরম্যান্স যথাযথভাবে রিপোর্ট, উপস্থাপনা বা আলোচনায় তুলে ধরাটা প্রয়োজন। নীরবে দায়িত্ব পালন করলেই যে প্রাপ্য স্বীকৃতি মিলবে- তা সবসময় ঘটে না।
অফিসের রিসোর্স এবং কম জনশক্তির সঠিক ব্যবহার : কখনো কখনো সীমিত জনবল নিয়ে সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জন করতে হয়। প্রযুক্তি, তথ্য এবং কর্মীদের দক্ষতাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো জরুরি। অপ্রয়োজনীয় কাজ বা অপচয়ের পরিবর্তে পরিকল্পিতভাবে দায়িত্ব বণ্টন, অগ্রাধিকার নির্ধারণ এবং টিমওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করলে প্রতিষ্ঠান লাভবান হয় এবং কর্মপরিবেশও উন্নত হয়। যা টিম লিডারের নজর কাড়তে সক্ষম।
শেষ কথা : প্রতিষ্ঠানে মূল্যায়ন হয় শুধু কাজের ভিত্তিতে নয়- ব্যক্তিত্ব, আচরণ, নেতৃত্বের দক্ষতা, যোগাযোগের ক্ষমতা এবং সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক- এসব মিলিয়ে। আপনি যদি এগুলোর সমন্বয় করতে পারেন, তবেই নিজের অবস্থান দৃঢ় করতে পারবেন। দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও পিছিয়ে পড়ার দিন হয়তো একদিন ফুরাবে- শুধু আত্মসমালোচনার সাহসটুকু থাকতে হবে। সুতরাং আত্মসমালোচনা করুন।
লেখক : হেড অব প্রোগ্রাম, কালবেলা অনলাইন
মন্তব্য করুন