কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৩ আগস্ট ২০২৩, ০৫:৪৪ পিএম
আপডেট : ২৩ আগস্ট ২০২৩, ১০:১৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
রঙ্গবেলা

ডিমের দাম নিয়ে মুরগির কাছে ব্যাচেলরদের খোলা চিঠি

মুরগির ডিমের মূল্য বৃদ্ধিতে বিপাকে ব্যাচেলররা... ছবি: সংগৃহীত
মুরগির ডিমের মূল্য বৃদ্ধিতে বিপাকে ব্যাচেলররা... ছবি: সংগৃহীত

মাননীয় মুরগিদল,

আমরা দেশের ব্যাচেলররা বর্তমানে খুবই বিপদে রয়েছি। ডিম নিয়ে দেশে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে তার সমাধান পেতে তাই আজকে আপনাদের লিখতে বসা ছাড়া আর কোনো উপায়ন্তর নেই। প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি- এ চিঠি পড়তে আপনাদের ডিমে তা দেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট করবার জন্য। (সারা দেশে ডিম নিয়ে আলোচনা আর এক হালি ডিমের দাম শুনলেই বোঝা যায়, আপনাদের অক্ষরজ্ঞান নেই- এমন গুজবের দিন শেষ।)

আপনাদের আজ আমাদের বিশেষ কিছু বলার রয়েছে। ডিমের দামের এ লাগামহীনতায় আপনাদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি এখন সময়ের দাবি। আমরা যারা শহরে লেখাপড়া ও চাকরির উদ্দেশ্যে এসে মেসে থাকি তাদের বেশিরভাগেরই প্রতিদিনকার খাওয়া দাওয়ার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। এমতাবস্থায় এক স্বস্তি হলো- আপনাদের ডিম। বলতে গেলে মাসের অর্ধেকটাই কাটে আপনাদের ডিম খেয়ে। ডিম পাড়ার ক্ষমতা আছে শুধু আপনাদেরই। হাঁসরাও ডিম পাড়ে তবে দুর্ভাগ্য সেটা আমরা কেনার দুঃসাহস পর্যন্ত দেখাই নাই। উলটো ভাবি, যে দাম! তাতে হয়তো খাসি কেনা যাবে।

আমাদের ভালো করেই জানা আছে, পশ্চিমাদের মতো মুরগিসমাজও দূর রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর বেশ ক্ষেপে আছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আপনাদের খাবারের দাম বেড়েছিল। তবে বিশ্বাস করুন, আপনাদের খাবারের মধ্যে ভুট্টা আর সয়াবিনের দাম পুনরায় কমে স্বাভাবিক হয়ে গেছে। দয়া করে, পুতিনকে আর ভুল বুঝবেন না। আপনারা আর উপোস করে থাকবেন না- বেশি করে খান, সানন্দে ডিম পাড়ুন, কোনো সমস্যা নেই।

শহরের তাবৎ আলোকিত খাবার দোকানে প্রতিদিন লাখ টাকার খাবার বেচাকেনা হচ্ছে। আমরা কালেভদ্রেও এসব জায়গায় গিয়ে খাওয়াদাওয়া করতে পারি না। গেলেও খাবার খাওয়ার চেয়ে পকেটের কথা ভাবতে ভাবতেই ক্ষুধা নষ্ট হয়ে যায়।

দিনশেষে, আমাদের ভরসা একটাই—বুয়ার রান্না করে দেওয়া ডিম আলুর অতলান্তিক ঝোল অথবা একটু লবণ আর মরিচের গুঁড়া দিয়ে ডিম ভাজা।

ভাবলে খারাপ লাগে কিছুদিন আগেও আমরা ডিমভাজির সঙ্গে কাঁচামরিচের আভিজাত্যটা দেখাতে পারতাম। তবে মরিচ নিয়ে লঙ্কাকাণ্ডের পর সেটাও বাদ দেওয়া হয়েছে।

‘ভাতের বদলে আলু’ খাওয়ার পরামর্শ মেনে এতকাল পর্যন্ত শরীরকে চালিয়ে নিতে পারলেও চলমান অবস্থায় ডিমের বদলে আমরা কী খাব সে প্রেসক্রিপশন এখনো কারও কাছ থেকে পাইনি। নতুন পরামর্শ পেলে হয়তো আপনাদের কাছে এই চিঠিও লিখতে হতো না।

আমাদের কষ্টটা সরকারের উপর মহল হয়তো এখনো কড়ায় গণ্ডায় অনুধাবন করতে পারেনি। তবে এ কষ্ট প্রকৃতি ঠিকই বুঝেছে। ডিমের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিগত কয়েকদিনের লাগাতার বৃষ্টি যেন সেটারই ইশারা দিচ্ছে।

একটা সময় ছিল যখন বাড়িওয়ালাদের বাসা থেকে ব্যাচেলরদের বাসায় হঠাৎ-বিঠাৎ এক আধ বাটি তরকারি আসত। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির রোষানলে পুড়ে তারা সেটা বাদ দিয়েছে। সেই দিন আজ অতীত যখন কেউ বাড়িওয়ালার বাসা থেকে এসে ভরদুপুরে এক বাটি তরকারি দিয়ে কলিং বেল টিপত। বর্তমানে মাস শেষ হতে না হতেই তরকারি তো দূরে থাক বাড়িওয়ালা উলটো ভাড়ার তাগাদা দেয়।

ডিমের সাথে ব্যাচেলরদের যে সম্পর্ক তা রোমিও জুলিয়েট, নাট-বল্টু বা দুর্নীতিবাজ সরকারি আমলা আর পাহাড়ের জমির সম্পর্কের মতো না হলেও কিছুক্ষেত্রে তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। এমনো অনেক দিন আছে যখন প্রায় দুপুরবেলা ঘুম থেকে উঠে সকালের নাস্তা করার প্রশ্নটাকে মাটিচাপা দিয়ে দুপুরে একটা ডিম ভেজে ভাত খেয়ে বিকালের কর্মকাণ্ড শুরু করি। সারা বিকাল-সন্ধ্যা এখানে সেখানে নানা রাজা উজির মেরে দিনশেষে যখন আবার রাতের খাবারের সময় আসে তখনো দেখি একটি বাটিতে কয়েক টুকরা আলু আর একটা ডিম মিলে অধীর আগ্রহে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। দাম বাড়ার পর প্রত্যেকটা ডিমকে এত পরিচিত আর আপন মনে হয়…

হে মুরগিসমাজ, আপনাদের বুঝতে হবে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ষোলোটি বছর লেখাপড়ার দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে এবং রাস্তাঘাটে হরহামেশা ঘটতে থাকা সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু থেকে বেঁচে- আমরা মাত্র ১২-১৫ হাজার টাকা নিয়ে চাকরি শুরু করি। বর্তমানে এক হাজার টাকার বাজারে দুই দিনের বেশি চলা দুষ্কর। গরুর মাংসের কথা আমরা প্রায় ভুলতে বসেছি। এক কেজি গরুর মাংস সুদূর ভবিষ্যতের কোনো স্বপ্ন মনে হয়। খাসির কথা বাদই থাক আজ, ক’দিন পর বানানটাই লিখতে দিলে পারব কিনা সন্দেহ জাগে। গরু আর খাসি খেতে হলে ব্যাচেলরদের হাতে এখন বোধহয় একটাই উপায় আছে। সেটা হলো- অপরিচিত মানুষের বিয়ে খাওয়ার যে অপবাদ ব্যাচেলরদের নামে ছিল- তাকে আবার সচল করা।

প্রিয় মুরগিসমাজ, আপনাদের শারীরতাত্ত্বিক বিবিধ অভ্যাস নিয়ে আমাদের কোনো পরামর্শ দেওয়া সাজে না। আপনারা বিচক্ষণ। ধ্যানে বসে আপনারা দেশ-বিদেশের নানা সমস্যার কথা ভাবেন। তাই এটাও আপনাদের অজানা নয় যে, ব্যাচেলরদের ডিম পাড়ার ক্ষমতা নেই। আমাদের ভেতর যদি কারও এই বিশেষ ক্ষমতা থাকত তাহলে আজকে আপনাদের শরণাপন্ন হতাম না।

সবকিছু মিলিয়ে আপনাদের প্রতি আমাদের আকুল আবেদন, পরিবার পরিকল্পনার সব উদ্যোগ এখন, এই মুহূর্ত থেকে বন্ধ করে দিন। আপনাদের সচলতা আমাদের টিকে থাকার পাথেয়। আমাদের দিকে একটু তাকান। আমরা একটু বাঁচি।

প্রাণপ্রিয় মুরগিসমাজ, আপনাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার কোনো শেষ নেই। তবে শেষবেলায় শেষ একটা দাবি জানাতে চাই। সেটা হলো, সম্ভব হলে আরেকটু বড় আকারের ডিম পাড়ার অনুরোধ রইল। তাহলে এক ডিমেই আমরা দুই বেলা খাওয়ার নতুন অভ্যাস গড়ে তুলতে পারব।

ইতি,

আপনাদের একান্ত বিশ্বস্ত খাদক

বাংলাদেশের ব্যাচেলর সমাজ।

কালবেলার রম্য বিষয়ক আয়োজন রঙ্গবেলায় মুরগিদলের কাছে চিঠিটি লিখেছেন কালবেলার পাঠক ছদরুল আমীন (ছদ্মনাম)। রঙ্গবেলার জন্য আপনিও চাইলে রম্য রচনা পাঠাতে পারেন এই ঠিকানায়- [email protected]

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ময়মনসিংহে মায়ের হাতে মেয়ে খুন

কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না : সুলতান সালাউদ্দিন টুকু

টিসিবির পণ্যসহ আটক বিএনপির সেই সভাপতিকে অব্যাহতি

বাংলা ভাষাকে ‘ধ্রুপদী ভাষা’র মর্যাদা দিল ভারত

রাজশাহী মহানগর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রেপ্তার

শেরপুরে বন্যাকবলিত মানুষের পাশে বিজিবি

চট্টগ্রামে ফের তেলের ট্যাংকারে ভয়াবহ আগুন

আসিয়ানে অন্তর্ভুক্ত হতে মালয়েশিয়ার সমর্থন চায় বাংলাদেশ

খুলনায় সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির ৪ নেতাকে বহিষ্কার

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে ৫ পরিচালকের যোগদান

১০

দুর্গাপূজার প্রতিমা ভাঙচুর, বাকেরগঞ্জ থানার ওসি প্রত্যাহার

১১

আন্দোলনে নিহত ৩ যুবকের মরদেহ উত্তোলনের নির্দেশ

১২

মালয়েশিয়ায় আরও জনশক্তি পাঠাতে সহযোগিতা চাইলেন রাষ্ট্রপতি

১৩

সিলেটে পিকআপ চাপায় প্রাণ গেল পুলিশ কর্মকর্তার

১৪

খুলনায় বিএনপির সমাবেশে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ১৫

১৫

চবির হলে আসন বরাদ্দে বৈষম্য, ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

১৬

মসজিদে তালা দিয়ে দোকানে দুর্বৃত্তের হামলা

১৭

‘নারী অধিকার কমিশন’ গঠনের দাবিতে সংহতি সমাবেশ

১৮

দলীয়করণমুক্ত ক্রীড়াঙ্গন গড়তে চাই : আমিনুল হক

১৯

লেবানন-ফিলিস্তিন নিয়ে অবশেষে হুঁশ ফিরল সৌদির?

২০
X