মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) থেকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই পদক্ষেপ গোটা বিশ্ব, বিশেষ করে স্বাস্থ্যখাতে গভীর প্রভাব ফেলবে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত বহন করে। ভবিষ্যতে আমাদের কী করণীয়, তা এখনই বিশ্লেষণ করা জরুরি।
গ্লোবাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সংকট: যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়া WHO-এর কার্যক্রমে আর্থিক সংকট সৃষ্টি করবে। এর প্রভাব সরাসরি বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর উপর পড়বে, যারা ভ্যাকসিন কর্মসূচি এবং রোগ প্রতিরোধে WHO-এর সহায়তা পেয়ে থাকে।
ভবিষ্যৎ মহামারির প্রস্তুতি দুর্বল হওয়া: WHO-এর তহবিল সংকট মানে বৈশ্বিক রোগপ্রতিরোধ উদ্যোগ দুর্বল হওয়া। বাংলাদেশের মতো দেশ, যেখানে জনসংখ্যা ঘনত্ব ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মহামারির ঝুঁকি বেশি, তাদের প্রস্তুতি ব্যাহত হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সহযোগিতা হ্রাস: মহামারির মতো সমস্যায় আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বই সমাধান। যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়া এই সহযোগিতার ভিত্তিকেই দুর্বল করবে, যার প্রভাব বাংলাদেশসহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের উপর পড়বে।
বাংলাদেশের নাগরিকদের ভূমিকা এবং করণীয়:
WHO-এর বিভিন্ন প্রকল্পে কর্মরত শত শত বাংলাদেশি চিকিৎসক, গবেষক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আছেন। তাদের অর্জিত দক্ষতা জাতীয় পর্যায়ে কাজে লাগানো অত্যন্ত জরুরি।
কেন্দ্রীয় প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা: সরকার এবং স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই বিশেষজ্ঞদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে হবে। তারা রোগপ্রতিরোধ, মহামারি নিয়ন্ত্রণ, এবং নতুন ভ্যাকসিন তৈরিতে নেতৃত্ব দিতে পারেন।
দায়িত্বের সুনির্দিষ্টতা: এই বিশেষজ্ঞদের জন্য স্পষ্ট দায়িত্ব নির্ধারণ এবং তাদের অভিজ্ঞতাকে স্থানীয় চাহিদার সাথে মিলিয়ে কাজে লাগাতে হবে।
প্রশ্ন রয়ে যায়, তারা এতদিন দেশের জন্য কী করেছেন? ভবিষ্যতে তাদের কর্মদক্ষতা কীভাবে জনস্বার্থে আরও কার্যকর হতে পারে? এর উত্তর সরকার ও জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নিহিত।
কীভাবে আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে:
স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি ও স্থায়ী তহবিল তৈরি করতে হবে। একইসঙ্গে গবেষণায় উন্নয়ন করতে হবে এবং নিজস্ব সক্ষমতায় ভ্যাকসিন তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। WHO ছাড়াও GAVI এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে সহযোগিতা জোরদার করতে হবে। জাতীয় পর্যায়ে শক্তিশালী রোগপ্রতিরোধ পরিকল্পনা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
কোন পৃথিবীতে আমরা বাস করছি এবং কীভাবে বাস করতে চাই?
আমরা এমন এক পৃথিবীতে বাস করছি, যেখানে বৈশ্বিক সহমর্মিতা অনেক সময় রাজনৈতিক স্বার্থের কাছে হার মানে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও দুর্নীতি, প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা, এবং কর্মীদের মধ্যে ডেডিকেশনের অভাব উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। কিন্তু আমরা কীভাবে এই চিত্র বদলাতে চাই?
প্রথমত দুর্নীতি মুক্ত প্রশাসন তৈরি করতে হবে এবং শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি কার্যকর করে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। কর্মীদের জন্য আধুনিক প্রশিক্ষণ, তদারকি, এবং পারফরম্যান্স মূল্যায়ন চালু করতে হবে।
সার্বিক উন্নয়নে সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। সরকার, জনগণ এবং বেসরকারি খাতের সমন্বয়ে একটি কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে এবং এগুলোতে অগ্রাধিকার দিয়ে কর্মসংস্থান ও দক্ষ কর্মী তৈরি করতে হবে।
আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই যেখানে বৈষম্য নেই, দুর্নীতি মুক্ত প্রশাসন আছে, এবং প্রতিটি নাগরিকের উন্নয়নের সুযোগ নিশ্চিত করা হয়। এটি সম্ভব শুধুমাত্র সম্মিলিত প্রচেষ্টা, দায়িত্ববোধ, এবং সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে।
রহমান মৃধা: গবেষক ও লেখক; সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
মন্তব্য করুন