বদিরুজ্জামান
প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:৩৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ট্রাম্পের দ্বিতীয় আগমন ও ট্রান্স-অ্যাটলান্টিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ

ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি : সংগৃহীত
ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি : সংগৃহীত

আমেরিকার রাজনৈতিক ইতিহাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্রমেই এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হয়ে উঠছেন। ট্রাম্পকে নিয়ে এত আলোচনা-সমালোচনার অন্যতম কারণ চিরাচরিত রাজনৈতিক কর্মযজ্ঞ ও বৈদেশিক সম্পর্ক নিরূপণে ট্রাম্পের স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গি। ট্রাম্পের এরূপ দৃষ্টিভঙ্গির মনস্তাত্ত্বিক কারণও ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তবে, সফল ব্যবসায়ী হিসেবে ট্রাম্পের দীর্ঘ ক্যারিয়ার, কট্টর ডানপন্থি চিন্তাধারা এবং আমেরিকার জাতীয় স্বার্থের ব্যাপারে সোচ্চার প্রভৃতি বৈশিষ্ট্য তার মানসিক ও দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করেছে। আমেরিকার রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনী প্রচারণার প্রধান স্লোগান ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ থেকে ট্রাম্পের সে মানসিক ও দার্শনিক আলামতের পূর্ণ পরিচয় মেলে। উপরন্তু, দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনে জয় লাভ করায় ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ স্লোগান এক ধরনের দার্শনিক রূপ লাভ করেছে যাকে কেউ কেউ ‘ট্রাম্পিজম বা ট্রাম্পবাদ’ হিসেবেও উল্লেখ করছেন।

বস্তুত, আমেরিকার অভ্যন্তরীণ প্রেক্ষাপটে বিদ্যমান বিভিন্ন আকাঙ্ক্ষা ও দাবি, যেমন : সস্তা পণ্যের বিপরীতে স্থানীয় শিল্পকারখানার বেহাল দশা, বেকারত্ব ও অবৈধ অভিবাসন বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক মন্দাভাব প্রভৃতির প্রেক্ষাপটে ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির মূলভিত্তি গড়ে উঠেছে। তবে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক সিস্টেমকে পুনঃগঠনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে আমেরিকা যেভাবে তার বৈশ্বিক ভূমিকা পালন করেছে, সে ভূমিকা নিয়েও ডোনাল্ড ট্রাম্পের নানা প্রশ্ন রয়েছে। ট্রাম্প আমেরিকার স্বার্থকে মাপকাঠি হিসেবে ধরে আমেরিকার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সম্পর্ক পরিচালনার ইতিহাসকে ব্যাখ্যা করেন এবং স্বার্থের বিপরীত প্রতিটি পদক্ষেপের সমালোচনা করেন। এ ছাড়াও, প্রথম ও দ্বিতীয়বারের নির্বাচনী ইশতেহারে আমেরিকার স্বার্থবিরোধী সংযুক্তি থেকে আমেরিকাকে সরিয়ে আনার ঘোষণা দেন।

অ্যাটলান্টিকের পূর্ব ও পশ্চিমের, অর্থাৎ উত্তর আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সাথে পশ্চিম ইউরোপ এবং পরবর্তীতে পূর্ব ইউরোপের মধ্যে চলমান গভীর বাণিজ্য, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে ট্রান্স-অ্যাটলান্টিক পার্টনারশিপ বলা হয়। প্রথম দফায় রাষ্ট্রপতি হওয়ার প্রেক্ষাপটে আমেরিকার সাথে ইউরোপের অংশীদারিত্বের ধরন কেমন হবে তা নিয়ে ট্রাম্পের সাথে ইউরোপের নেতাদের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। ট্রাম্পের দ্বিতীয় আগমনেও একই দুশ্চিন্তা দুপক্ষের মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে, নানাবিধ কারণে প্রথমবারের তুলনায় ট্রাম্পের দ্বিতীয় আগমনের প্রেক্ষাপট অনেক জটিল হয়ে উঠেছে এবং এহেন জটিলতা ট্রান্স-অ্যাটলান্টিক অংশীদারিত্বকেও প্রভাবিত করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। অত্র নিবন্ধে আমরা তেমন কয়েকটি কারণ নিয়ে আলোচনা করবো যা আগত সময়ে ট্রাম্পের সাথে ইউরোপের বোঝাপড়াকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

আমেরিকা ও ইউরোপের সামরিক জোট হিসেবে ১৯৪৯ সালে নর্থ অ্যাটলান্টিক ট্রিইটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো) যাত্রা করে। স্নায়ুযুদ্ধকালে ট্রান্স-অ্যাটলান্টিক অঞ্চলে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে শক্তিভারসাম্য রক্ষায় ন্যাটো প্রধান সামরিক জোটের ভূমিকা পালন করে। শক্তি ভারসাম্যের ছায়ায় ও মার্শাল প্ল্যান অনুসারে যুদ্ধ বিধ্বস্ত পশ্চিমা ইউরোপের প্রাথমিক উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। ন্যাটোর কল্যাণে ইউরোপ তার প্রথাগত যুদ্ধ কেন্দ্রিক সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বেশি প্রাধান্য দিতে শুরু করে। তবে, স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে যখন ন্যাটোর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়, তখন থেকে প্রতিরক্ষা প্রেক্ষাপটে ট্রান্স-অ্যাটলান্টিক পার্টনারশিপে সংকট শুরু হয়, এবং ট্রাম্পের আগমনে ইউরোপকে সে সংকটের জটিল অবস্থার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

ন্যাটো নিয়ে প্রথম থেকেই ডোনাল্ড প্রশ্ন তুলেছেন, বিশেষত, পূর্ব ইউরোপে রাশিয়ায় সীমান্তবর্তী এলাকায় ন্যাটোর সম্প্রসারণের বিরোধী ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাশিয়ায় সীমান্তবর্তী ক্ষুদ্র দেশ, যেমন : মালদোভা, বাল্টিক রাষ্ট্র, এমনকি ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থ কতটুকু রক্ষিত হবে? এছাড়াও, যেহেতু রাশিয়া প্রথম থেকেই তার সীমান্তে ন্যাটোর উপস্থিতিকে অনিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি হিসেবে দেখেছে সে বিবেচনায় রাশিয়ার সীমান্তবর্তী দেশকে ন্যাটোভুক্ত করার প্রতিক্রিয়া সমগ্র ইউরোপের জন্য কতটুকু যৌক্তিক ও নিরাপদ হবে? আমেরিকা যেহেতু ন্যাটোর সিংহভাগ বাজেট ও অন্যান্য লজিস্টিকের যোগান দেয়- সে কেন ন্যাটোর এরূপ সম্প্রসারণ নীতিকে সমর্থন করবে?, ইত্যাদি প্রথমবার ক্ষমতায় আসার আগে থেকে ট্রাম্প এই প্রশ্ন করে আসছেন। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রকে ন্যাটো থেকে সরিয়ে নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতিও তিনি দিয়েছিলেন।

ট্রাম্প শাসনামলে ন্যাটোর সম্প্রসারণ সেভাবে না হলেও, বাইডেন সরকার ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করার নৈতিক সমর্থন প্রদান করে, এবং তার পরের কথা আমরা জানি যে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের সূচনা ঘটে- এখন সে যুদ্ধের প্রায় তিনবছর হতে চলল। বস্তুত, ইউক্রেন যুদ্ধ ন্যাটো নিয়ে ট্রাম্পের অভিমতকে আরও শক্ত ভিত্তি প্রদান করেছে এবং দ্বিতীয়বার নির্বাচনী ইশতেহারে তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের ইঙ্গিত দেন এবং ন্যাটোর বিস্তার নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করার কথা বলেন। এতদসত্ত্বেও ইউক্রেনকে রাশিয়ায় ভূখণ্ডে আঘাত হানার মত মিসাইল দিয়েছে বাইডেন সরকার এবং ইউক্রেনও রাশিয়ার বিরুদ্ধে তা ব্যবহার করেছে, যা অত্র অঞ্চলে রাশিয়াকে আরও পশ্চিমা বিরোধী করে তুলতে পারে যার আভাষ পুতিনের সাম্প্রতিক বক্তব্য ফুটে উঠেছে। যেহেতু নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে রাশিয়ার মত বৃহৎ শক্তির বিপরীতে ইউরোপ ন্যাটোর উপর নির্ভরশীল, তাই ট্রাম্পের দ্বিতীয় আগমনে ন্যাটো ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নিয়ে ইউরোপীয়রদের মাঝে উৎকণ্ঠা লক্ষ করা যাচ্ছে।

ট্রাম্পের দ্বিতীয় আগমনে ইউরোপ তথা গোটা বিশ্বের জন্য অন্যতম দুশ্চিন্তার কারণ হতে চলেছে জলবায়ু, যার সূচনা হয়েছিল ২০১৭ সালে যখন ট্রাম্প আমেরিকার স্বাক্ষরিত প্যারিস জলবায়ু এগ্রিমেন্ট থেকে সরে আসেন। প্যারিস এগ্রিমেন্ট থেকে ট্রাম্পের সরে যাওয়া বৈশ্বিক পরিবেশগত মুভমেন্টকে দুর্বল করে দেয় যে মুভমেন্টের অন্যতম প্রধান অংশীদার ইউরোপীয় ইউনিয়ন। জো বাইডেন ক্ষমতায় এসে কালক্ষেপণ না করেই পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারিস এগ্রিমেন্টের অংশী করে। জলবায়ু পরিবর্তনের নিদারুণ আঘাত ও প্রভাবে উন্নত-অনুন্নত প্রায় সকল দেশই চিন্তিত। ট্রান্স-অ্যাটলান্টিক অংশীদারিত্বকে ত্বরান্বিত করতে বাইডেন সরকার ইউরোপের পরিবেশগত বিভিন্ন পদক্ষেপকে, বিশেষ করে গ্লোবাল মিথেন প্লেজ এবং ইউরোপে এলএনজি গ্যাসের রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে জ্বালানি ও জলবায়ু বিষয়ে আমেরিকা ও ইউরোপের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার বিষয়ে একযোগে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এছাড়াও, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যখন ইউরোপ ক্লিন এনার্জিতে নিজের জ্বালানি ব্যবস্থাকে রূপান্তর করতে চাচ্ছে যাতে রাশিয়ার সস্তা তেল ও গ্যাসের উপর ইউরোপকে অধিক নির্ভরশীল না হতে হয়। এধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ট্রান্স-আটল্যান্টিক পার্টনারশিপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে, ট্রাম্প যেহেতু আমেরিকার স্বল্পমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে যে কোনো কিছুর উপরে প্রাধান্য দেন, সেহেতু ইউরোপীয় মিত্রদের পক্ষে আমেরিকার জ্বালানি ও জলবায়ুসংক্রান্ত ভূমিকা ট্রাম্পের দ্বিতীয় আমলে সীমিত হতে পারে।

ট্রাম্পের আগমনে প্রযুক্তি ও প্রযুক্তিসংক্রান্ত বাণিজ্য ট্রান্স-অ্যাটলান্টিক অংশীদারিত্বের সংকটকে আরও ত্বরান্বিত করতে পারে। বাইডেনের সময়ে ইউরোপ ও আমেরিকার মাঝে প্রযুক্তি ও বাণিজ্য সম্পর্ককে জোরালো করার অভিপ্রায়ে যে বাণিজ্য ও প্রযুক্তি কাউন্সিল গঠিত হয়েছে ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফায় এই কাউন্সিলের ভবিষ্যৎ অনেকটা অনিশ্চিত। বিশেষত, তথ্য-প্রযুক্তির নতুন আবিষ্কার আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই-এর কথা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। এআই- প্রযুক্তির জনক আমেরিকা এবং বর্তমান বিশ্বের এআই- এর গুণগত মান বিকাশে আমেরিকার প্রধান ভূমিকা পালন করতে বাইডেন সরকার নেটওয়ার্ক অব সেফটি ইনস্টিটিউট শুরু করেছে। তবে, এআই- প্রযুক্তি নিয়ে ট্রাম্পের নানা সমালোচনা এআই প্রযুক্তি বিকাশে এবং সাম্প্রতিক এআই নির্ভর ইউরোপীয় জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারে। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান টেসলার মালিক এবং ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে অন্যতম সমর্থক এলন মাস্ক বরাবরই এআই-এর বিরোধিতা করে আসছেন। মাস্ক ছাড়াও এআই-নিয়ে একই ধরনের মানসিকতার অনেকেই ট্রাম্পের আসন্ন প্রশাসনের অংশ হতে পারেন যা বৈশ্বিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সুশাসন বিনির্মাণে আমেরিকার অগ্রণী ভূমিকায় লাগাম টানতে পারে।

ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফায় ট্রান্স-অ্যাটলান্টিক সম্পর্ককে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চীনের দ্বন্দ্ব এবং ইউরোপের সাথে চীনের ক্রমাগত অর্থনৈতিক ও কৌশলগত অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি। অর্থাৎ, ট্রাম্পের আগমনে চীন প্রশ্ন নিয়ে ইউরোপ আমেরিকার অংশীদারিত্বে টানাপোড়ন তৈরি হতে পারে। প্রথমবারের মত দ্বিতীয় দফায়ও চীনকে ট্রাম্প আমেরিকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বার্থের প্রতি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করছেন, এবং আবারও হয়ত পৃথিবী আমেরিকা-চীন বাণিজ্য যুদ্ধের দ্বিতীয় সংস্করণ দেখতে যাচ্ছে বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন। চীনের ওপর বড় আকারের শুল্ক আরোপের কথা ট্রাম্প ইতোমধ্যেই প্রকাশ করেছেন এবং চীনের সাথে অন্যান্য আমেরিকান মিত্রের, বিশেষত ইউরোপের অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের নিয়েও ট্রাম্প সমালোচনা করেন।

চীনকে রুখতে আমেরিকার বিভিন্ন পরিকল্পনায় আমেরিকার সবচেয়ে বড় মিত্র হিসেবে ইউরোপকে কাছে চান ট্রাম্প। কিন্তু, গভীর অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের বাহিরেও চীনকে ইউরোপ নিজের নিরাপত্তা ও কৌশলগত বিবেচনাতেও দেখে থাকে। যেমন : চীনের প্রতি আমেরিকার অতি মনোযোগ এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল ঘিরে আমেরিকার আসন্ন বৈদেশিক নীতির বিন্যাস ইউরোপে রাশিয়াকে আরও আগ্রাসী করে তুলতে সাহায্য করবে, এবং এক্ষেত্রে রাশিয়ার বৃহৎ মিত্র হিসেবে চীন রাশিয়ার এহেন কৌশলকে পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করতে পারে। চীন যেহেতু একইভাবে প্রযুক্তি ও বাণিজ্য নির্ভর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার পক্ষে সেহেতু ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্বাভাবিকভাবে চীনকে তার বৃহৎ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে। কিন্তু, চীনের প্রশ্নে নতুন সমীকরণ এমন হতে পারে : যদি ২০১৮ সালের ন্যায় ট্রাম্প দ্বিতীয় দফাতেও চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক হার বৃদ্ধি অব্যাহত রাখে, এবং একই বাণিজ্য নীতি অনুসরণে ইউরোপকে চাপ দিতে থাকেন যাতে ইউরোপের বাজারে চীনা পণ্যের আমদানি কমে আসে এবং চীন-ইউরোপ বাণিজ্য ঘাটতিতে ইউরোপই অধিক সুবিধা লাভ করে, সেক্ষেত্রে ট্রাম্পও হয়ত ন্যাটো প্রশ্নে কিছুটা নমনীয় হতে পারেন।

ফলে, ট্রাম্পের দ্বিতীয় আগমনে ইউরোপকে চীন সংক্রান্ত একটা স্বচ্ছ নীতি অনুসরণ করতে হবে যাতে একই সাথে ট্রান্স-অ্যাটলান্টিক অংশীদারিত্ব আরও মজবুত হয় এবং পাশাপাশি বৃহৎ অর্থনৈতিক অংশীদার হিসেবে চীনের সাথে তার বাণিজ্যিক ও কৌশলগত সম্পর্ক বজায় থাকে। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, ইউরোপকে একটি স্বাধীন বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করতে হবে যেখানে আমেরিকার ক্ষমতার পরিবর্তন ট্রান্স-অ্যাটলান্টিক পার্টনারশিপকে সেভাবে প্রভাবিত করতে না পারে। তবে, চীন ও আমেরিকা উভয়ের উপরে ইউরোপের নির্ভরশীলতা ইউরোপের জন্য চীন ও আমেরিকা সাপেক্ষে ভারসাম্যপূর্ণ বৈদেশিক নীতি প্রণয়নে ও বাস্তবায়নের পথে চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। ফলে, প্রথমবারের তুলনায় পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে ট্রাম্পের দ্বিতীয় আগমনে ট্রান্স-আটল্যান্টিক অংশীদারিত্বের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কার অবকাশ রয়েছে। হয়ত ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের অল্প সময়বাদেই তা আন্তর্জাতিক পরিক্রমায় পরিষ্কার হয়ে উঠবে।

বদিরুজ্জামান : গবেষণা কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব মেরিটাইম রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট (বিমরাড)

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চট্টগ্রামে পুলিশের ওপর হামলা, অস্ত্র ছিনতাইয়ের চেষ্টা

২০২৫ সালে ভিসা ছাড়াই যেসব দেশে যেতে পারবেন বাংলাদেশিরা

কোনো স্বৈরাচার আর যেন মাথা চাড়া না দেয় : টুকু

মধ্যরাতে পানি ছিটিয়ে সরানো হলো অব্যাহতি পাওয়া শিক্ষানবিশ এসআইদের

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে সরকার

টিউলিপের পদত্যাগপত্রের জবাবে কী লিখলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

লুৎফুজ্জামান বাবর মুক্তি পাচ্ছেন বৃহস্পতিবার

পদত্যাগপত্রে যা লিখেছেন টিউলিপ সিদ্দিক 

আন্দোলনে হামলার ঘটনায় যুবদল নেতা গ্রেপ্তার

স্কোপাস ইনডেক্স জার্নালের ভিত্তিতে বাকৃবির সেরা দশ গবেষক

১০

নোয়াখালীতে অস্ত্রসহ যুবলীগ নেতা রাহুল গ্রেপ্তার

১১

নাকুগাঁও স্থলবন্দরে এইচএমপিভি প্রতিরোধে নেই সতর্কতা

১২

বগুড়ায় নাশকতার মামলায় যুবদল নেতা গ্রেপ্তার

১৩

মৌলভীবাজারে বেলি রাস উৎসব

১৪

পায়ে হেঁটে দেড়শো কিলোমিটার পরিভ্রমণ করবে জবি রোভার স্কাউট 

১৫

দেড় দশক পর আখাউড়া বিএনপির কমিটি ঘোষণা

১৬

আটকের পর সাবেক ছাত্রদল নেতার মৃত্যু, নির্যাতনের অভিযোগ পরিবারের

১৭

‘গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেই ছাত্র-জনতার বিপ্লব সফল হবে’

১৮

পদত্যাগ করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক

১৯

৯০ কেজি গাঁজা জব্দ, গ্রেপ্তার ২

২০
X