মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া
প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২৩, ১১:৪৬ এএম
আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০২৩, ০৭:৪০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া

তিনি অবিনাশী, তিনি চিরঞ্জীব

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছবি : সৌজন্য
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছবি : সৌজন্য

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি বাঙালি জাতির ঋণ অপরিসীম। বঙ্গবন্ধুর জীবনদর্শন, আন্দোলন-সংগ্রাম, সরকার পরিচালনা ও দেশ শাসনসহ সার্বিক জীবনাচার পর্যালোচনা করলে নিচের বিষয়গুলো আমাদের সামনে প্রতিভাত হয়, যেগুলো বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সৃষ্টির প্রকৃত ইতিহাসের অংশ:

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছাত্রাবস্থায় রাজনীতি শুরু করে বাংলার মানুষকে ভালোবেসে তাদের দুঃখকষ্টে এগিয়ে এসেছেন। তাই দেখা যায়, ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে এবং ১৯৪৬ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় জীবনবাজি রেখে মানুষের সেবা করেছেন। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর পূর্ব বাংলায় এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ ক্লাসে ভর্তি হওয়ার পর ১৯৪৮ সাল থেকেই ঢাকায় পশ্চিম পাকিস্তানের তাঁবেদার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ গঠন, ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনে সমর্থন দান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার অতঃপর পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগদানের মাধ্যমে বৃহত্তর রাজনৈতিক পরিসরে প্রবেশ করেন।

অল্প সময়ের মধ্যেই মওলানা ভাসানী, শামসুল হক প্রমুখ নেতা এবং সর্বোপরি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সংস্পর্শে এসে পূর্ববাংলার রাজনীতিতে পরিপক্বতা লাভ করেন তিনি। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রী হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানের শাসন বিভাগে অংশগ্রহণ করলেও বাঙালির স্বাধিকার ও আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের জন্য সংগ্রাম অব্যাহত রাখেন। যুক্তফ্রন্ট সরকারের পতনের পর বুঝতে পারেন, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার বাঙালিদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অংশগ্রহণ করতে দেবে না। বাঙালিদের শাসন-শোষণ করে পশ্চিম পাকিস্তানকে সমৃদ্ধ করা হচ্ছিল। শাসনব্যবস্থা, সরকারি চাকরি, প্রতিরক্ষা বাহিনীতে নিয়োগ, উন্নয়ন ব্যয়ের অংশীদারত্ব সকল ক্ষেত্রেই পূর্ববাংলা তথা পূর্ব পাকিস্তান বৈষম্যের শিকার হয়। আওয়ামী লীগের ছায়াতলের শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানের অন্যান্য প্রগতিশীল নেতাসহ পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন, স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং বৈষম্যের অবসানের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যান। প্রতিক্রিয়াশীল পাকিস্তান সরকার এবং ১৯৫৮ সালের পর সামরিক সরকার, ১৯৬০ সালের পর বেসামরিক শাসনের ছত্রছায়ায় প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের সেনাসমর্থিত সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আন্দোলন দমনের জন্য তাকে বারবার গ্রেপ্তার করে কারাগারে প্রেরণ করে, প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে শাস্তি প্রদানের চেষ্টা করে।

১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেখ মুজিবের ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণার পর প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খুবই বিরক্ত হন। ২০ মার্চ ১৯৬৬ প্রেসিডেন্ট ঢাকায় এসে বলেন, 'দেশের অখণ্ডতাবিরোধী কোনো প্রচেষ্টা সমর্থন করা হবে না, প্রয়োজন বোধে অস্ত্রের ভাষায় এর জবাব দেওয়া হবে।' সেদিনই বিকেলে পল্টন ময়দানে লক্ষাধিক লোকের সমাবেশে শেখ মুজিব বলেন, "ছয় দফা দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলনসহ মেনে নিতে হবে। আমরা অনেক রক্তচক্ষু দেখেছি, আর নয়। ... দেশের উভয় অংশকে সমান শক্তিশালী করতে হবে।"

ছয় দফার প্রচার আন্দোলনকালে শেখ মুজিবসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের ঘন ঘন জেলে যেতে হয়েছিল। সরকার আন্দোলনকারীদের দমনের জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করে। বিশেষ করে শেখ মুজিবকে বড় রকমের কোনো অপরাধে অভিযুক্ত করার জন্য সরকার ফাঁদ পাতে।

১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে শেখ মুজিবকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত করে পুনরায় গ্রেপ্তার করে ঢাকা সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে থেকেই শেখ মুজিব প্রায় ২১ মাস ধরে জেলে আটক ছিলেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিঃস্বার্থ রাজনীতি, মানুষের জন্য ভালোবাসা, জেল-জুলুম সত্ত্বেও অসীম সাহসিকতা ও পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বার্থরক্ষায় ঐকান্তিক প্রচেষ্টা সর্বোপরি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত হয়ে বিচারের মুখোমুখি হওয়ায় পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের সহানুভূতি ও মমত্ববোধ তার ওপর বর্ষিত হয়। জনগণ বুঝতে পারেন পাকিস্তান সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় প্রহসনের বিচার করে শেখ মুজিবের রাজনৈতিক জীবন শেষ করে দিতে চেয়েছিল। ১৯৬৯ সালের শুরুতেই ছাত্রজনতা রক্তক্ষয়ী গণআন্দোলনের মাধ্যমে শেখ মুজিবকে মুক্তি দিতে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের সরকারকে বাধ্য করে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা কেন্দ্রীয় সরকার প্রত্যাহার করে নিলে শেখ মুজিব ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সেনানিবাস থেকে মুক্ত হন। ২৩ ফেব্রুয়ারি ছাত্রজনতা রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবকে গণসংবর্ধনা প্রদান করে। সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের পক্ষ হতে পরিষদ সভাপতি তোফায়েল আহমদ শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন।

প্রেসিডেন্ট আইয়ুব রাজনৈতিক সংকট নিরসনকল্পে পাকিস্তানের সকল রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য ১৯৬৯ সালের মার্চে গোলটেবিল বৈঠক ডাকেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ওই বৈঠকে ছয় দফা ও ১১ দফার ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণের বিষয় বিস্তারিত তুলে ধরেন। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ও তার সরকারের পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্র এবং রাজনৈতিক নেতারা পাকিস্তান রাষ্ট্রকাঠামোর বৈপ্লবিক পরিবর্তন মেনে নিতে পারেনি, বরং তারা শেখ মুজিবের ভূমিকা ও প্রস্তাবকে 'পাকিস্তান ভাঙার ষড়যন্ত্র' হিসেবে দেখেন। বৈঠকে কোনোরূপ ঐকমত্য না হওয়ায় আইয়ুব খান এই বলে গোলটেবিল বৈঠক সমাপ্ত করেন যে, নির্বাচনের পর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সরকার ব্যবস্থা ও অন্যান্য মৌলিক নীতিগত বিষয় ঠিক করবে।

মূলত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা কর্মসূচি প্রদান করেন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন, স্বাধিকার ও স্বাধীনতার জন্য। তিনি বলেন, "সাঁকো দিলাম, স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতায় উন্নীত হওয়ার জন্য।" ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন, আটষট্টির আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ঊনসত্তরের গণআন্দোলন এবং মার্চে আইয়ুব খান সরকারের পতন প্রভৃতির প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পাকিস্তানের অবিসংবাদিত নেতা এবং পূর্ব পাকিস্তানের সর্বাধিক জনপ্রিয় রাজনীতিক হিসেবে আবির্ভূত হন। তার অসাধারণ নেতৃত্ব, সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা, গুরুগম্ভীর বাগ্মিতা, ব্যক্তিত্ব প্রভৃতির কারণে বাঙালির একমাত্র ভরসাস্থল হিসেবে পরিগণিত হন, যার ফলে তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের দুটি ব্যতীত সবকটি আসনে জয়লাভ করে পাকিস্তানের জাতীয় সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে।

পাকিস্তানের পরবর্তী ইতিহাস আরও কলঙ্কজনক। আইয়ুব খানের পরবর্তী সামরিক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করে। ১৯৭১ সালের মার্চে পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র শ্রমিক জনতা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে। পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর গুলিতে বহু মানুষ প্রাণ হারান। রেসকোর্স ময়দানে ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা সংগ্রামের রূপরেখা তুলে ধরেন। ইয়াহিয়া-ভুট্টোর অনড় অবস্থানের কারণে আলোচনা ব্যর্থ হলে ২৫ মার্চ মধ্যরাতে ইয়াহিয়া খান 'অপারেশন সার্চলাইট' এর মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি নিধনযজ্ঞ শুরু করে। বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তাকে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী বন্দি করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়।

আওয়ামী লীগে তার সহযোগী তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রমুখের নেতৃত্বাধীন হাইকমান্ড ভারতে গিয়ে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সহায়তায় মুক্তিযুদ্ধ শুরু করে। বাংলাদেশের ছাত্র-শ্রমিক, যুবকসহ অধিকাংশ মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন কিংবা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে অবস্থান নেন। প্রাথমিক পর্যায়ে ২৬ মার্চের পর পর বাঙালি পুলিশ, ইপিআর, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর অফিসার ও জাওয়ানরা বিদ্রোহ করে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করলেও ক্রমান্বয়ে মুক্তিবাহিনীতে আপামর জনতা যোগ দেওয়ার ফলে পাকিস্তান প্রতিরক্ষা বাহিনীর বিরুদ্ধে এটি একটি জনযুদ্ধে পরিণত হয়। অবশেষে নয় মাসের যুদ্ধে এবং ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধা এবং সাধারণ বাঙালিসহ ৩০ লাখ শহীদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর পাক সেনাদের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বিজয় অর্জন হয়।

পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ দেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং ১২ জানুয়ারি সরকারপ্রধান (প্রধানমন্ত্রী) হিসেবে দেশের শাসনভার গ্রহণ করেন। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ যার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে কোনো টাকা ছিল না, বৈদেশিক মুদ্রা ছিল না, সে দেশের পুনর্গঠন, স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সংবিধান প্রণয়ন, সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান, ভারত প্রত্যাগত প্রায় এক কোটি শরণার্থীর পুনর্বাসন, মুক্তিযোদ্ধা ও নির্যাতিতা নারীদের পুনর্বাসন, পাকিস্তান থেকে পাঁচ লক্ষাধিক বাঙালিকে ফিরিয়ে আনা, ১২১টি দেশের স্বীকৃতি অর্জন, জাতিসংঘ, কমনওয়েল, ওআইসি, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ প্রভৃতি জোট ও সংস্থার সদস্যপদ লাভ, বিশ্বের ছোট বড় দেশসমূহের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন, দেশের অভ্যন্তরে অব্যাহত সন্ত্রাস, চুরি ডাকাতি, দুর্নীতি, কালোবাজারি, মুনাফাখোরি, চোরাচালান এবং সমস্ত নাশকতা মূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবস্থা গ্রহণ, বন্যা-দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি মোকাবিলা করে দেশের শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে যখন অগ্রগতির পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন, ঠিক সেই মুহূর্তে বাংলাদেশে নেমে এসেছে এক অকল্পনীয় অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্যোগ। একটি ক্ষমতালোভী, বিশ্বাসঘাতক ও বিপথগামী চক্র ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে।

গোটা জাতি, গোটা বিশ্ব এ হত্যাকাণ্ডের খবর শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেল। যে মানুষটি তার সারাজীবন বাংলার মানুষকে ভালোবেসে তাদের অধিকার আদায়, তাদের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছে, জেল জুলুম সহ্য করেছে, জীবনের প্রায় ১৩ টি বছর পাকিস্তানের কারাগারে নিঃসঙ্গ, অনিশ্চিত জীবন কাটিয়েছে, জাতিকে স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছে, যাকে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা হত্যা করতে সাহস করেনি, তাকে কিনা হত্যা করেছে একদল বিপথগামী অকৃতজ্ঞ বাঙালি! এ কেমন জাতি! দেশবাসী কিভাবে এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড মেনে নিল!

বঙ্গবন্ধুর আত্মবিশ্বাস ছিল যে তিনি বাংলার মানুষকে ভালোবাসেন, মানুষও তাকে ভালোবাসে। বঙ্গবন্ধু নিজ বাড়িতে স্ত্রী-পুত্র-কন্যাসহ সাধারণ নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্যে থাকতেন। তিনি বলতেন, ‘বাঙালি আমাকে মারবে না।’ তার এই বিশ্বাসের ভিত্তি ছিল দেশপ্রেম ও মানবপ্রেম এবং বাংলার মানুষের প্রতি সীমাহীন বিশ্বাস ও আস্থা। তার জীবিতাবস্থায় ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট কোন এক সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আপনার সবচেয়ে বড় শক্তি কী? বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আই লাভ মাই পিপল।’ পরের প্রশ্ন, ‘আপনার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা কি?’ বঙ্গবন্ধু জবাবে বলেছিলেন, ‘আই লাভ মাই পিপল টু মাচ। আমি মরি তা ও ভালো। তবু আমার দেশবাসীর যেন মর্যাদার হানি না ঘটে।’

বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে তার অবদান মুছে ফেলার অপচেষ্টা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ছবি, তার ‘বঙ্গবন্ধু’ ও ‘জাতির পিতা’ উপাধি, স্বাধীনতা সংগ্রামে তার অবদান, বাংলার মানুষের প্রতি তার ভালোবাসা ও আত্মত্যাগ প্রভৃতির রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যবহার ও স্মরণ নিষিদ্ধ ছিল। দীর্ঘ ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশের প্রধানমন্ত্রী হলে তার জীবন ও কর্মের ওপর নানা গবেষণা হয়, বাংলাদেশের জন্য তার পর্বতপ্রতিম অবদান দেশবাসী ও নতুন প্রজন্ম জানতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর শাসনামলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও আদর্শ বাস্তবায়নে তার কন্যা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যার সংবাদ বেতারের শোনার পর সাহিত্যিক সাংবাদিক আবু জাফর শামসুদ্দীন তার ডায়েরিতে লিখেছিলেন, ‘মৃত মুজিব জীবিত মুজিবের চেয়ে শক্তিশালীরূপে আবির্ভূত হবেন।’ মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ‘টুঙ্গিপাড়ার শেখ মুজিবের কবর একদিন সমাধিস্থলে রূপান্তরিত হবে এবং বাঙালির তীর্থস্থান হিসেবে রূপ লাভ করবে।’ তাদের ভবিষ্যদ্বাণী এখন বাস্তবতা। শেখ মুজিব একটি অবিনাশী নাম, একজন কিংবদন্তি। আজ তার ৪৮তম প্রয়াণ দিবসে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও অশেষ দোয়া জানাই।

মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া - সাবেক সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান, বর্তমানে জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় শোক দিবস ২০২৩
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তিনবারের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আজাদ গ্রেপ্তার

শিল্পকলায় প্রদর্শিত হলো সার্কাস

৮ দফা অবিলম্বে বাস্তবায়ন দাবি ঐক্য পরিষদের

পুলিশ পরিচয়ে দখলবাণিজ্য এসপি শামীমা ইয়াসমিনের

ওয়ানডে সিরিজেও মুশফিককে নিয়ে শঙ্কা

বিধানসভা উপনির্বাচন / পশ্চিমবঙ্গে ৬ আসনেই তৃণমূলের জয়

জোর করে পদত্যাগ করানো সেই উপাধ্যক্ষের হৃদরোগে মৃত্যু!

বিচ্ছেদের যন্ত্রণা নিয়ে পরীমণির স্ট্যাটাস

টেস্টে হাসানের দারুণ রেকর্ড

নির্দোষ ব্যক্তিদের নামে হওয়া মামলা আইন মেনে প্রত্যাহারের নির্দেশ

১০

ব্র্যাকের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা হটলাইন ‘মনের যত্ন’ চালু

১১

৮ মাসে হাফেজ হলেন ৮ বছরের ওমর

১২

নৌবাহিনীকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন সেনাবাহিনী

১৩

বিধানসভা নির্বাচন / ঝাড়খণ্ড জনমুক্তি-কংগ্রেসের, মহারাষ্ট্রে বিজেপি জোটের জয়

১৪

বেসিস ডিজিটাল মার্কেটিং স্ট্যান্ডিং কমিটির দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত

১৫

নেতাদের বাঁচার উপায় বাতলে দিলেন তারেক রহমান

১৬

গল্পে গল্পে পাপনকে খোঁচা ফারুকের

১৭

পাকিস্তানে কাল আরেক অভ্যুত্থান হবে?

১৮

ছাত্র আন্দোলনে ‘২৮ রাউন্ড গুলি’ করা সেই তৌহিদ গ্রেপ্তার  

১৯

‘অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার ১৪৩১’ পেলেন নূরে জান্নাত ও নুসরাত নুসিন

২০
X