ঢাকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৭তম রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। বাংলাদেশের রাজনীতির উত্তাল সময়ে গুরুত্বপূর্ণ এ পদে থাকার কারণে তিনি রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে আলোচিত। ২০২৪ সালের আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তার গতিবিধি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বর্তমানে বেশ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তিনি। শুধু তাই নয়, প্রায় নিয়মিত বিরতিতে বাংলাদেশি গণমাধ্যমে খবরের শিরোনামও হচ্ছেন তিনি।
ভূরাজনৈতিক স্বার্থ আর কৌশলগত কারণে বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের আগ্রহ বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে বিরাজমান বিভিন্ন ইস্যু সমাধান করে নিতে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান, ইউএসএইডের বিভিন্ন উদ্যোগ, উন্নয়ন প্রকল্প বহাল রাখা, আরএমজি খাতে সহযোগিতাসহ নানা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চলমান প্রজেক্ট বহাল রাখতে কাজ করছেন তিনি।
দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি হাস শ্রমিকদের অধিকার, ক্রমবর্ধমান দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা, আইনের ক্ষমতাকে ব্যবহার করে বাণিজ্যকে শক্তিশালী করা, বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির অধিকার, মুক্ত বাজার তৈরি করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবেন বলে জানান।
নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশিদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতি দেয়। তবে এ বিষয়ে তিনি বলেছেন, নতুন ভিসা নীতি নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে উৎসাহিত করতে এ নীতি করা হয়েছে।
সম্প্রতি ইউক্রেন যুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন পিটার হাস। জাপান সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউক্রেনে রাশিয়ার চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধকে অবৈধ বলেন এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিয়ম ভাঙার অভিযোগও তোলেন। এ ছাড়াও তিনি ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতাকেও সম্মান জানানোর দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, ইউক্রেনে রাশিয়ার অবৈধ অভিযান নিয়ে প্রতিবাদ জানানোর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
ওই একই সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, আমরা কখনো তেল, গ্যাস, সার এবং কৃষিতে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেইনি। দিবও না। এমন কোনো নিষেধাজ্ঞার অস্তিত্বই নেই।
বাংলাদেশের বাণিজ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে যুক্তরাষ্ট্র। একটি ইংরেজি দৈনিকে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। এখানে অবিশ্বাস্য সম্ভাবনা রয়েছে। অনেক মার্কিন বিনিয়োগকারীই অপার সম্ভাবনার জন্য বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তারা এটা দেখেছেন কীভাবে প্রায় এক কোটি মানুষ দারিদ্র্য থেকে উত্তোরণ ঘটিয়ে মধ্যবিত্ত হয়েছে। তবে মানুষ ঘুম থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবে- এটা ভাবে না। বরং তারা তুলনা করে দেখে কোনখানে বিনিয়োগ করলে তার বাণিজ্য ভালো চলবে। বাংলাদেশকে বিনিয়োগ করার আগে তারা ভিয়েতনাম ও ভারতের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তুলনা করে।
গত বছরের মার্চে বাংলাদেশে মিশন শুরুর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যবিষয়ক ব্যুরোর সহকারী সচিব ছিলেন। এর আগে ভারতের মুম্বাইয়ে কনসাল জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। লন্ডন, বার্লিন, জাকার্তা, ওয়াশিংটনেও ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ পদে।
২০২১ সালের ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পান তিনি। তিনি সিনিয়র ফরেইন সার্ভিসের ক্যারিয়ার মেম্বার ছিলেন। তিনি এর আগে একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ও বাণিজ্যবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত সহকারী সচিব ও প্রধান উপসহকারী সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি বাণিজ্য পরিকল্পনা ও সমঝোতাবিষয়ক উপসহকারী সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
পিটার ডি হাস চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (রাষ্ট্রদূত বা মন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে যিনি দায়িত্ব পালন করেন) এবং উপস্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সাহায্য ও উন্নয়নবিষয়ক মিশনে (ওইসিডি) কর্মরত ছিলেন। এ ছাড়া তিনি অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে জাকার্তা, ইন্দোনেশিয়াতে এবং অন্যান্য কূটনৈতিক পদে লন্ডন, রাবাত, ওয়াশিংটন, পোর্ট-আউ-প্রিন্স এবং বার্লিনে কর্মরত ছিলেন।
পিটার হাস ইলিনয় ওয়েসলেয়ান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং জার্মান বিষয়ে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের একজন মার্শাল স্কলার। সেখান থেকেই এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। এসময় তার বিষয় ছিল রাজনীতি, বিশ্ব অর্থনীতি ও তুলনামূলক সরকার। তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে উৎকর্ষের জন্য জেমস ক্লিমেন্ট ডুন পুরস্কার পান। এ ছাড়াও জ্যোষ্ঠ কর্মকর্তাদের ভেতর সেরা অবদানের জন্য তিনি কর্ডেল হাল পুরস্কারও পান। তিনি জার্মান ও ফরাসি ভাষায় পারদর্শী।
মন্তব্য করুন