ইয়াহিয়া জিসান
প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৯ পিএম
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

আমার জাহাঙ্গীরনগর সংস্কার ভাবনা

ইয়াহিয়া জিসান। ছবি : সৌজন্য
ইয়াহিয়া জিসান। ছবি : সৌজন্য

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি নতুন এক বাংলাদেশ। নতুন বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিতে শিক্ষাব্যবস্থার পুনর্গঠন ও সার্বিক মানোন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার পুনর্গঠন ও মানোন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সংস্কার আশু জরুরি বলে মনে করি। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিদায় নিশ্চিত হয়েছে ফ্যাসিস্ট রেজিম এবং তাঁদের অনেক সহযোগীর। ফ্যাসিস্ট রেজিম আমলে নিযুক্ত জাহাঙ্গীরনগরের অধ্যাপক নুরুল আলম প্রশাসনেরও বিদায় নিশ্চিত হয়েছে। গত ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিযুক্ত হয়েছেন নতুন উপাচার্য। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান এবং নব-নিযুক্ত প্রশাসনকে অভিনন্দন জানাই।

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান ও শহিদদের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বের দরবারে আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলবার সুযোগ এখনই। এজন্য সামনে এসেছে জাহাঙ্গীরনগর সংস্কার ও পুনর্গঠন প্রশ্ন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ তথা জাকসু নেই ত্রিশ বছরের অধিক সময়কাল ধরে। ফলে শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া ও অধিকার বিষয়ে প্রশাসনকে বলবার জন্য কার্যকর কোনো প্রতিনিধিত্বশীল ব্যবস্থা নেই। সঠিক নেতৃত্ব তৈরিতে বন্ধ্যাবস্থা বিরাজ করছে এজন্য। প্রশাসনের উচিত অবিলম্বে জাকসু কার্যকর করা। একইসঙ্গে, হল সংসদ এবং বিভাগীয় সংসদ কার্যকর করা দরকার। ছাত্ররাজনীতি প্রশ্নে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পক্ষে-বিপক্ষে মতামত রয়েছে সত্য। এর মূল কারণ হলো- নব্বই দশক পরবর্তী সময়ে আমাদের ছাত্ররাজনীতি ছাত্রদের প্রকৃত কল্যাণের জন্য হয়নি। এজন্য প্রয়োজন ছাত্ররাজনীতির ব্যাপক ইতিবাচক সংস্কার।

আমরা যারা জাহাঙ্গীরনগরে একটিভিজম করেছি দীর্ঘদিন, অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে ভোকাল ছিলাম, পতিত ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ এবং যারা আমাদের অপছন্দ করতো তারা আমাদের অনেককেই ইচ্ছেমতো ট্যাগ দিতো। ছাত্ররাজনীতিতে এই ট্যাগিং ট্যাগিং খেলা বন্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে জাতীয়ভাবে নিষিদ্ধ নয় এমন সকল ছাত্রসংগঠনকে উন্মুক্ত রাজনীতির সুযোগ দিতে হবে। হয়তো এতে এই 'ট্যাগিং পলিটিক্স' কমবে। মনে রাখতে হবে এই ট্যাগিং পলিটিক্সের শিকার শহীদ আবরার ফাহাদ। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা যে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত নিয়ে ভাবছে, যেখানে কোনো ফ্যাসিবাদী মনন থাকবে না। সুতরাং, জাতীয়ভাবে নিষিদ্ধ নয় এমন কোনো ছাত্রসংগঠনকে রাজনীতি করতে না দিতে চাওয়া মানে ফ্যাসিবাদের চর্চা করা। এমন জাহাঙ্গীরনগর চাই— যেখানে কোনো দমন-পীড়ন প্রশ্রয় পাবেনা। আদর্শকে আদর্শ দিয়ে মোকাবিলাকে প্রায়োরিটি দেওয়া হবে। ভবিষ্যতের ছাত্ররাজনীতিতে মত-দ্বিমত হবে, যুক্তির পাথরে সবাই বিক্ষিপ্ত হবে কিন্তু কোন হকিস্টিক কিংবা স্ট্যাম্প থাকবে না। কোনো গেস্টরুম, গণরুম থাকবে না। থাকবেনা লেজুড়বৃত্তি। চব্বিশের আকাঙ্ক্ষাকে বুকে নিয়ে এগিয়ে যাবে এই ছাত্ররাজনীতি। তবে, গত ১৪ ও ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের বর্বরোচিত হামলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে এবং স্বৈরাচার শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের বিভিন্নজনের নামে নামকরণ করা বিভিন্ন স্থাপনার নাম পরিবর্তন করে জুলাই বিপ্লবে শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের নামে নামকরণ করার যে দাবি উঠেছে তা বিবেচনা করতে হবে।

এবার কিছু সংস্কার প্রস্তাবনা নিয়ে কথা বলি। ক্যাম্পাসে গণরুম সংস্কৃতি, র‍্যাগিং মুক্ত ক্যাম্পাস এবং রাজনৈতিক ব্লক তৈরি করার ক্ষেত্রে 'জিরো টলারেন্স' নীতি গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে হলসমূহে সার্বক্ষণিক একজন টিউটর থাকলে র‍্যাগ এবং মাদকের উপদ্রব অনেক কমে আসবে বলে বিশ্বাস করি। এসব বিষয়ে হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আরও বেশি আন্তরিক হওয়া উচিত। অনেক দিন ধরে শুনে আসছি, কলা ও মানবিকী অনুষদে মাদ্রাসা এবং মানবিক বিভাগ হতে আসা ছাত্রদের ভর্তিতে সমস্ত বৈষম্য করা হয়। এটা দূর করতে হবে। একইসঙ্গে শিফটভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে অভিন্ন প্রশ্নে ভর্তি পরীক্ষা নিশ্চিত এবং অভিন্ন মেধাতালিকা প্রণয়ন করতে হবে। সকল পোষ্য কোটা বাতিল অথবা এর পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো, জ্ঞান উৎপাদন ও পরিবেশনা। এর স্বার্থে প্রয়োজন শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই ক্লাস শুরু এবং যথাসময়ে শেষ করা। পূর্ণাঙ্গ একাডেমিক ক্যালেন্ডার দিতে হবে এবং তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে মনিটরিং করতে হবে। একজন শিক্ষক ফুলকোর্স ও হাফকোর্সে কতটি ক্লাস নিবেন তা পূর্ব নির্ধারিত হলে ভালো। পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখসমূহ সে ক্যালেন্ডারে উল্লেখ থাকতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক ই-মেইল ব্যবহার সাপেক্ষে ক্যাম্পাসে ফ্রি ইন্টারনেট চালু করা যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় বরাদ্দ কম দেওয়া হয় বলে অভিযোগ আছে। জনকল্যাণমুখী গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। শিক্ষকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরও গবেষণা-বরাদ্দের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার। একইসঙ্গে, শিক্ষক নিয়োগে গবেষণা ও অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং পিএইচডিধারীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগেও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করতে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করা যেতে পারে এবং এই কমিশন পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতি রুখতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। বিগত স্বৈরাচারী আমলে যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে রাজনৈতিকভাবে শিক্ষক ও কর্মকর্তা নিয়োগের স্বচ্ছতা যাচাইয়ের জন্য একটি কমিশন গঠন করবার দাবি উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু উন্নয়ন প্রকল্প চলমান আছে। এই প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ আছে ফারজানা প্রশাসনের বিরুদ্ধে। সে অভিযোগে ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর পদও চলে যায়। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো মামলা বা তদন্ত হয়নি। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির তদন্তে একটা 'ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি' গঠন করতে হবে।

কোন শিক্ষক বা শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করলে অভিযোগ জানানোর জন্য একটি 'একাডেমিক অবজারভেশন সেল' গঠন করা যেতে পারে এবং এ সেলে অবশ্যই ছাত্রপ্রতিনিধি রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। 'একাডেমিক অবজারভেশন সেল' স্বাধীনভাবে কাজ করে অপরাধ বিবেচনা করে প্রচলিত আইনে শাস্তির সুপারিশের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী শাস্তি দিতে পারবে। জাহাঙ্গীরনগরে স্বৈরাচারী আমলে গঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট এখনো পুনর্গঠন হয়নি। এটি পুনর্গঠন সময়ের দাবি। এবং একইসঙ্গে নিয়মিত সিনেট নির্বাচন দিতে হবে। রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট এর নিবন্ধন ফি কমানোর দাবি বিবেচনা করা যেতে পারে। একইরকম ভাবে, বিভাগ উন্নয়ন ফিসহ সকল প্রকার অবৈধ ফি বাতিল করলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।

প্রত্যেক বিভাগে মান-উন্নয়ন পরীক্ষা চালু এবং ফাইনাল পরীক্ষার খাতা চ্যালেঞ্জের সুযোগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন৷ একইসঙ্গে, শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষকদের ব্যবহার, গবেষণা, নিরপেক্ষতা ও পাঠদানের দক্ষতা ইত্যাদি মূল্যায়নের কার্যকর উদ্যোগ নিলে সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কল্যাণকরই হবে। উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এরকম নিয়ম চালু আছে। দক্ষ ও শিক্ষিত জনবল তৈরির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ও 'উচ্চশিক্ষা কাউন্সিল' গঠন করা যেতে পারে৷ এ কাউন্সিল দেশে-বিদেশে গবেষণা ও উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে বাংলাদেশের কল্যাণের জন্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন জনবল প্রস্তুতির প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে ফেরত দেওয়ার শর্তে আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করবে। বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ বৃদ্ধি করা দরকার। এছাড়া, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম বৃদ্ধি করা জরুরি৷

আন্তর্জাতিক জার্নালে মানসম্মত গবেষণা পাবলিকেশনের জন্য শিক্ষার্থীদেরও আর্থিক সহযোগিতার বন্দোবস্ত করতে হবে এবং এর সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ ও বণ্টন করতে হবে।

রেজিস্ট্রার ভবন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তর ইত্যাদিতে সেবার ক্ষেত্রে সকল অনিয়ম, সময়ক্ষেপণ ও হয়রানি বন্ধ করার এখনই সময়। প্রয়োজনে এসব ক্ষেত্রে অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রম চালু করতে হবে। এছাড়া, ডাইনিংয়ে পর্যাপ্ত ভর্তুকির ব্যবস্থা করতে হবে এবং ডাইনিং কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। আইন অনুষদসহ বেশ কিছু বিভাগের ক্লাসরুম সংকট রয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ক্লাসরুম সংকট নিরসন করা জরুরি। উইকেন্ড এবং ইভেনিং কোর্সের নামে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মতত্ত্ব ও ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ চালু করার পাশাপাশি প্রতিটি বিভাগে নীতি-নৈতিকতা বিষয়ে কোর্স চালু করা যেতে পারে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারকে শিক্ষার্থীরা মজা করে বলে 'নাপা সেন্টার'। মেডিকেল সেন্টারকে এই ইমেজ থেকে বের হয়ে আসতে হবে। পর্যাপ্ত ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ান নিয়োগ দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর চিকিৎসা কেন্দ্রকে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে রূপান্তরিত করতে হবে এবং পর্যাপ্ত ওষুধ ও সরঞ্জামাদি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। অবিলম্বে ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্বাস্থ্যবিমা চালু করা বিশেষ প্রয়োজন। ক্যাম্পাসে নতুন লাইব্রেরি নির্মাণ হচ্ছে। আশা করি, লাইব্রেরির সিট সংকট কাটবে। অবশ্যই লাইব্রেরিকে আধুনিকীকরণ, ই-লাইব্রেরির ব্যবস্থা, প্রতিটি হলে পাঠকক্ষের ব্যবস্থা করতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবে হবে। সাংস্কৃতিক-সামাজিক পরিমণ্ডলের জন্য বাজেট বৃদ্ধি করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি বছরের বাজেট প্রশাসন ও প্রতিটি বিভাগ কীভাবে খরচ করেছে তা সকল ছাত্র-শিক্ষকের সামনে প্রকাশ করা দরকার।

মুসলিম নারী শিক্ষার্থীদের পর্দা পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত, প্রতিটি মসজিদে স্থায়ী ইমাম-মুয়াজ্জিন নিয়োগ এবং তাদের সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা দরকার। কেন্দ্রীয় মসজিদের সার্বিক সংস্কার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নারীদের জন্য এখানে নামাজের সুব্যবস্থা নেই। মেয়েদের হল থেকে আযান শোনানোর ব্যবস্থা করার দাবি দীর্ঘদিনের। প্রশাসনের উচিত এসব বিষয়ে খেয়াল রাখা। একইসঙ্গে, সনাতন ধর্মের শিক্ষার্থীদের জন্য কেন্দ্রীয় মন্দিরের জায়গা স্থায়ীকরণ করে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত পূর্ণাঙ্গ মন্দির নির্মাণ, স্থায়ীভাবে পুরোহিত নিয়োগ, সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ মন্দিরের জন্য বাৎসরিক বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদেরও সমমানের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

জাহাঙ্গীরনগর একটি অসাধারণ ক্যাম্পাস। এখানে অসংখ্য লেক, জলাশয় ও প্রাকৃতিক জঙ্গল আছে। এসব প্রাণ-প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে এবং প্রাণ-প্রকৃতি ও জীব-বৈচিত্রের জন্য হুমকি এমন প্রজেক্ট হাতে নেওয়া যাবে না। বিশেষ করে, ক্যাম্পাসের লেক ও পুকুর সংস্কার এবং অতিথি পাখির অভয়ারণ্য ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। একইসঙ্গে, অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাট সংস্কার করতে হবে। চলাচলের জন্য রাস্তায় পর্যাপ্ত পরিমাণে আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। প্রধান সড়কগুলোতে দুই লেন এবং ফুটপাথের ব্যবস্থা করা জরুরি। যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা দরকার। জলনিষ্কাশন ও কেন্দ্রীয় ড্রেনেজ ব্যবস্থা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিতে হবে। ক্যাম্পাসে অবস্থিত ক্যান্টিন, ডাইনিং এবং খাবার দোকানের খাবারে মান উন্নত করতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। ক্যাফেটেরিয়ার সার্বিক সংস্কার করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত দোকানসমূহের পুরোনো লিজ বাতিল করে এ ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস করতে হবে। ক্যাম্পাসে ছিনতাই, চুরি ও মাদক প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। পুরো ক্যাম্পাস সিসিটিভির আওতায় আনতে হবে এবং সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন সময়ে সংগঠিন হত্যাকাণ্ড, হামলা, যৌন হয়রানি, র্যাগিংসহ অন্যান্য অপরাধ কার্যক্রমের সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এছাড়া, নিয়মিত সমাবর্তনের আয়োজন, পরীক্ষার সময় ১০.০০-২.০০টা করা, দারিদ্র্য অস্বচ্ছতাতার ভিত্তিতে বৃত্তির ব্যবস্থা, প্রতিবন্ধকতা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার নিশ্চিত করবার দাবি রয়েছে শিক্ষার্থীদের পক্ষে।

আমি আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিবেন। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান ও শহীদদের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে জনবান্ধব উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ প্রশ্নে জাহাঙ্গীরনগর হোক একটি আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয়।

ইয়াহিয়া জিসান: শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; আহ্বায়ক, জাহাঙ্গীরনগর সংস্কার আন্দোলন

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মার্সেল ফ্রিজ কিনে গাড়ি পেলেন ঢাকার আনিসুর রহমান

বিএনপির দুগ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতার মৃত্যু

রাশিয়ার আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নিয়ে ধূম্রজাল

যৌক্তিক সংস্কারের পর আমরা নির্বাচন চাই : ফয়জুল করীম

‘শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করাই হবে ছাত্রদলের মূল লক্ষ্য’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় / পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে ৯৯ শিক্ষার্থীর শাস্তি

বেতনবৈষম্য নিরসনে তালা ঝুলছে ডাক অধিদপ্তরে

‘প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশকে সমৃদ্ধ করছে’

নরসিংদীতে আলোচিত যুবলীগ নেতা বুলবুল গ্রেপ্তার

রোনালদো-মেসির মধ্যে কাকে বেছে নিলেন রদ্রি?

১০

মাদ্রাসা অঙ্গনের ২০৬ পিএইচডি-এমফিল ডিগ্রিধারীকে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সংবর্ধনা

১১

নতুন নির্বাচন কমিশনকে ইসলামী আন্দোলনের শুভেচ্ছা

১২

নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিল পাবিপ্রবি ছাত্রশিবির

১৩

আলুবীজের দাবিতে কৃষকদের মহাসড়ক অবরোধ

১৪

প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ

১৫

বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে ঢাবি প্রশাসনের সংলাপ অনুষ্ঠিত

১৬

ঢাবি ক্যাম্পাসে চালু হচ্ছে শাটল বাস সার্ভিস

১৭

১৬ হাজার টাকার জন্য খুন হন মুদি দোকানি রইস

১৮

সেনাকুঞ্জে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান

১৯

যুবদলে কোনো অনুপ্রবেশকারীর স্থান হবে না : শরীফ উদ্দিন

২০
X