ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ
প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৩, ০৮:৩১ পিএম
আপডেট : ১৪ জুন ২০২৩, ০৫:১৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ

তিন সিটির নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হলেও অংশগ্রহণমূলক হয়নি

বরিশাল সিটি নির্বাচনে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ছবি: সংগৃহীত
বরিশাল সিটি নির্বাচনে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ছবি: সংগৃহীত

আমরা গাজীপুর, খুলনা এবং বরিশালে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছি। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা রাতে হলো এবং পরের দিন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। এই নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিছু ঘটনা ঘটলেও নির্বাচন ছিল সুশৃঙ্খল। এর মধ্য শুধু গাজীপুর নয়, বরিশাল এবং খুলনায়ও ভোটারদের উপস্থিতি বেড়েছে। ভোটাররা নির্বাচনের বিষয়ে যে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন, কেন্দ্রে আসতে চাইতেন না, সেই পরিস্থিতির অবসান ঘটেছে বলেই মনে হচ্ছে।

গাজীপুরের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লাহ পরাজিত হয়েছেন। জয়ী হয়েছেন আগের মেয়াদে মেয়রের দায়িত্ব পালনকারী জাহাঙ্গীরের মাতা। জাহাঙ্গীর এবার নির্বাচন করতে পারেননি, তার প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায় খেলাপি ঋণ থাকায়। উত্তেজনাপূর্ণ হলেও শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ হয়েছে নির্বাচন। বরিশালে কিছুটা বিশৃঙ্খলা হলেও খুলনায় সামগ্রিকভাবে নির্বাচন গাজীপুরের মতোই শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গাজীপুরে জাহাঙ্গীরের মাতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেছেন। আর বরিশাল এবং খুলনায় শাসক দলের প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন।

জাতীয় পার্টি এবং ইসলামিক আন্দোলনের প্রার্থীরা ফল প্রত্যাখ্যান করেছেন। একই সাথে আগামী ২১ তারিখ অনুষ্ঠিতব্য সিলেট এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে নিজেদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন তারা। বরিশালে যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটা অবশ্যই ন্যক্কারজনক। তাতে কোনো সন্দেহ নেই। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকেও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে যে, যারা দোষী সাব্যস্ত হবে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।

এই নির্বাচনগুলো ইভিএমে পরিচালিত হচ্ছে। এতে ইভিএমের সমস্যাগুলো উঠে আসছে। ইভিএমে সিনিয়র সিটিজেন এবং নারী ভোটাররা যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হচ্ছেন তাও জানা যাচ্ছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হচ্ছে না, সনাতন কাগজের ব্যালটেই ভোট হবে।

এরই মধ্যে আমরা দেখেছি যে, স্থানীয়তার উপাদান গাজীপুর নির্বাচনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। বরিশাল এবং খুলনা তার ব্যতিক্রম নয়। তালুকদার আব্দুল খালেক সাহেবের বিরুদ্ধে কোনো শক্ত প্রতিপক্ষ খুলনায় ছিলেন না। আর বরিশালে যিনি ছিলেন, ‘হাতপাখা’ মার্কা নিয়ে নির্বাচন করেছেন। তার ওপর হামলা হয়েছে এবং এতে তার কর্মী সমর্থকরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এ কারণে নির্বাচনে ভোটগ্রহণের যে মনোযোগটা তাদের দেওয়ার সেটা আর দিতে পারেননি।

গাজীপুর, বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বার্তা হলো, ভোটার অনুপস্থিতির সংকট কিছুটা হলেও কেটে গেছে। ভোটাররা সাহস করে কেন্দ্রে আসছেন ভোট দেওয়ার জন্য। এটা একটা পজিটিভ দিক। আর নেগেটিভ বিষয় হলো- যারা প্রার্থী হবেন, তার নিরাপত্তার ব্যাপারটা আগে থেকেই নির্বাচন কমিশনের খেয়াল রাখতে হবে। কারণ, কোনো একটা ঘটনা- যেমনটি বরিশালে ঘটল সেটি পুরো নির্বাচনের মেজাজ ম্লান করে দিতে পারে। সামনে রাজশাহী এবং সিলেটে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনকে এটা ভাবতে হবে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক যেটি আলোচনার বাইরে থেকে যাচ্ছে সেটি হলো যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থান। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়েছে ২৫ মে। ঠিক আগের দিন রাতে যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। নির্বাচনে তার প্রভাব ছিল। একইভাবে ১২ জুন বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। ঠিক সেই দিন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেলকে একটি চিঠি লিখেছেন। গত সোমবার তারা ওই চিঠি পাঠিয়েছেন। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন।

গাজীপুর নির্বাচনের আগের দিন রাতে মার্কিন ভিসানীতির আনফোল্ড করা আর বরিশাল খুলনার নির্বাচন যেদিন সেদিন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ছয় সদস্যের চিঠি উন্মোচন করা একটা বড় খেলা বলে আমার মনে হচ্ছে। এই জাতীয় আরও কিছু ঘটনা আমাদের সামনে আসতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার সিনেটে যে আলোচনা চলছে সেটার ফল- আমার ধারণা ১৭ তারিখ পেয়ে যাব। সেটি সিলেট এবং রাজশাহীর নির্বাচনের আগেই। এ সপ্তাহের শেষ নাগাদ হয়তো আইসিসি থেকে একটি ডেভেলপমেন্টের কথা জানতে পারব। এ ধরনের নানা গুঞ্জন বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

স্থানীয় যে বিষয়টার কথা বলছিলাম, বরিশালের মূল সমস্যা ছিল সাদিক আব্দুল্লাহ এবং তার সমর্থকরা। আমি যেটা শুনেছি, সাদিক আব্দুল্লাহ ভোট দিতে যাননি। তিনি ঢাকায় এসে বসেছিলেন। তার সমর্থকরাও কোনো ধরনের সংঘর্ষে লিপ্ত হয়নি। আর খুলনায় কোনো প্রতিযোগিতা করার মতো প্রার্থী ছিলেন না। প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। এমনকি যারা এটা অমান্য করেছে তাদের দল থেকে বহিষ্কারের ব্যবস্থা করেছে। যে কথাটি বলা হয়, গাজীপুরে বিএনপি স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ভোট দিয়েছে এবং তার পক্ষে কাজ করেছে। বিষয়টি বরিশাল এবং খুলনার ক্ষেত্রে ঘটেনি।

বরিশাল এবং খুলনায় আমরা দেখেছি, যারা বিএনপি ঘরানোর মানুষ তারা নির্বাচন বর্জন করেছে। তারা যদি নির্বাচন করতেন তাহলে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি আরও বাড়ত এবং নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হতো। সেদিক থেকে চিন্তা করলে নির্বাচন সেই অর্থে অংশগ্রহণমূলক বলা যাবে না। তবে শান্তিপূর্ণ হয়েছে।

ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ: শিক্ষাবিদ ও সভাপতি, জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ)

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঢাকার যেসব এলাকায় আজ মার্কেট বন্ধ

আজকের নামাজের সময়সূচি

প্রথম দিনে উইন্ডিজ তুলল ২৫০ রান

গাঁজা-জাল নোটসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের শীতবস্ত্র বিতরণ

উইন্ডিজের প্রতিরোধ ভেঙে বাংলাদেশের স্বস্তি

টাইম ম্যাগাজিনকে ড. ইউনূস / ট্রাম্প ব্যবসায়ী, আমরাও একজন ব্যবসায়িক অংশীদার চাই

২০২৪ সালের হাইয়েস্ট কালেকশন দরদের : শাকিব 

নায়িকা পরীমনির প্রথম স্বামী নিহত

রাজনীতিতে আ.লীগের পুনর্বাসন ঠেকাতে হবে: নুর

১০

নির্বাচন যত দ্রুত হবে, সমস্যা তত কমে আসবে : মির্জা ফখরুল

১১

খাসজমির দখল নিয়ে সংঘর্ষে দুজন নিহত

১২

মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে ক্রীড়াঙ্গন অন্যতম একটি মাধ্যম : আমিনুল হক 

১৩

তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল

১৪

আহত রানার পাশে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’

১৫

ফেসবুকে দাবি ‘মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ একই ব্যক্তি’, যা বলছে ফ্যাক্ট চেক

১৬

একদিকে প্রশান্তি, অশান্তিও বিরাজ করছে: শামা ওবায়েদ

১৭

চোর সন্দেহে খুঁটিতে বেঁধে যুবককে নির্যাতন

১৮

র‍্যানকন মটরসের সঙ্গে ক্র্যাক প্লাটুন চার্জিং সলুশনের চুক্তি

১৯

জনকল্যাণে কাজ করাই বিএনপির মূল লক্ষ্য : নয়ন

২০
X