ভাইরাসঘটিত রোগের প্রাদুর্ভাব প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। ডেঙ্গি, চিকনগুনিয়া, করোনা কিংবা মাঙ্কিপক্স ইত্যাদি বিভিন্ন নামের রোগগুলো জনজীবনে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে প্রতিনিয়ত। এই রোগ কখনো কখনো কোন কোন এলাকা বা সারা পৃথিবীতে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পরছে যা পৃথিবীকে কখনো স্থবির, কখনো হতবিহ্বল কিংবা দুঃখের সমুদ্রে ভাসিয়ে চলছে। এমনি এক সময়ে আমাদের সমাজে প্রচলিত দুটি প্রবাদ এবং এর কার্যকারিতা দিয়ে এই লেখা শুরু করব। প্রথমত, যখন খাদ্যাভ্যাস ত্রুটিযুক্ত তখন ঔষধের কোনো ভূমিকা থাকে না, অপরদিকে যখন খাদ্যাভ্যাস সঠিক থাকে তখন ঔষধের কোনো দরকারই পড়বে না এবং দ্বিতীয়ত, প্রতিরোধ প্রতিকারের চেয়ে উত্তম। এই দুটি প্রবাদই আমাদের একটিই বার্তা দেয়, সঠিক এবং নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস আমাদের সুস্থ থাকার অন্যতম এক মাধ্যম।
সর্দি-জ্বর থেকে শুরু করে মহামারির থেকে নিরাপত্তার জন্য অন্যতম হাতিয়ার আমাদের লাইফস্টাইলের এবং খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন। কারণ ভাইরাসঘটিত রোগ প্রতিরোধে অন্যতম, কার্যকর এবং বলিষ্ঠ ভূমিকা কেবলমাত্র আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই পালন করতে পারে। আর সেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সর্বাপেক্ষা কার্যকর উপায় হল আমাদের পরিকল্পিত খাদ্যাভ্যাস। যা এখনো ভাইরাসঘটিত যে কোন রোগ প্রতিরোধ বা প্রতিকার হিসেবে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।
খাদ্যাভ্যাসের সাথে যে বিষয়গুলো আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করে তা হল- পর্যাপ্ত ঘুম, অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় সম্পূর্ণ পরিহার করা, নিয়মিত ব্যায়াম করা, ধূমপান বর্জন করা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং মানসিক চাপমুক্ত জীবনযাপন করা। এই বিষয়গুলো একজন ব্যক্তি চাইলেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তবে সেই চাওয়া হতে হবে অত্যন্ত সুদৃঢ়। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে অনেক ক্ষেত্রেই মানসিক চাপ অমূলকভাবেই আসে। হতে পারে তা অনুপযুক্ত প্রশাসক কিংবা অহেতুক কন্ট্রিবিউশন দেখানোর অযৌক্তিক প্রবণতা থেকে। যদি সম্ভব হয় কর্মক্ষেত্রে এমন মানসিকতার মানুষদেরকে এড়িয়ে চলুন, আর আপনি যদি কোন কর্মক্ষেত্রের কর্ণধার হোন তবে নিজের প্রতিষ্ঠানে এমন অহেতুক মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী বিষয়কে না বলুন এবং এহেন অপরিণামদর্শী ও অপ্রয়োজনীয় পরিস্থিতি থেকে নিজের অধিনস্তদের নিরাপদ রাখুন। উপরোক্ত বিষয়গুলো নিশ্চিত করার সাথে সঠিক খাদ্যাভ্যাস একজন মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
দেহে শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গঠনের ক্ষেত্রে খাদ্যে যথোপযুক্ত মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট থাকা অন্যতম অপরিহার্য একটি বিষয়। ভিটামিন এ, বি, সি, ডি, ই, এবং খনিজ পদার্থ, বিশেষ করে জিংক, সেলেনিয়াম ও আয়রন, হল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির অন্যতম উপকরণ। এই সকল উপাদান কেবলমাত্র দামি ফল বা ফুড সাপ্লিমেন্টেই কেবল পাওয়া যাবে বলেই আমাদের সমাজের অধিকাংশ সভ্যের ধারণা। অথচ গবেষণায় দেখা গেছে সুষম খাবার ও প্রচলিত ফলমূল এবং শাকসবজি থেকে আমরা চাইলেই এই সকল উপাদানের সঠিক সরবরাহ পেতে পারি। আবার অনেকের ধারণা, সরাসরি ফলমূল বা শাকসবজি খাওয়ার চেয়ে ঔষধ হিসেবে সাপ্লিমেন্ট খাওয়াই উত্তম এবং বেশি কার্যকর! অথচ, বাস্তবতা সম্পূর্ণ উল্টো, সরাসরি খাদ্যের সাথে খেলে এই সকল ভিটামিন এবং মিনারেলগুলো আমাদের দেহে অধিক শোষিত হয় এবং সর্বাপেক্ষা বেশি কার্যকারিতা দেখাতে পারে৷ কারণ প্রতিটি জৈব অনুকেই প্রথম দেহের অভ্যন্তরে শোষণ কিংবা বিক্রিয়াতে অংশগ্রহণের উপযোগী হতে হয়, যা প্রাকৃতিক উৎস থেকেই সহজলভ্য। এই ভিটামিন ও মিনারেল গুলোর সবচেয়ে সহজলভ্য উৎস আমাদের হাতের কাছেই আছে এবং সহজেই আমরা এই মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট-এর প্রয়োজনীয় পরিমাণ আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকাতে অন্তর্ভুক্ত করে নিতে পারি।
ভিটামিন এঃ ভিটামিন এ দুইটি ভিন্ন রূপে পাওয়া যায় প্রথমোক্ত টি হল প্রিফরমড ভিটামিন এ (রেটিনল জাতীয়) যা সাধারণত প্রাণিজ উৎস (দুধ, মাছ, মাংস) হতে পাওয়া যায়। অপরটি প্রোভিটামিন এ বা ক্যারিটোনয়েডস যা সাধারণত রঙিন শাঁকসবজি বা ফলমূল হতে পাওয়া যায়। খাদ্য তালিকাতে পেয়ারা, ফুটি, গাজর, মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়া, পালংশাক, লেটুস সহ সকল সবুজ পাতা জাতীয় সবজি থাকলেই আমরা খুব সহজে এই ভিটামিনের চাহিদা পূরণের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ সক্ষমতা বা ইম্যুনো সিস্টেমের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারব। পূর্ণবয়স্ক একজন মানুষের দৈনিক ভিটামিন এ এর চাহিদা হচ্ছে ৭০০ মাইক্রোগ্রাম (মহিলা) (গর্ভবতী মায়েদের জন্য ৭৭০ এবং ল্যাক্টেটিং মায়েদের জন্য ১৩০০ মাইক্রোগ্রাম) থেকে ৯০০ মাইক্রোগ্রাম (পুরুষ), অন্যদিকে অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দৈনিক ৬০০ মাইক্রোগ্রামই যথেষ্ট। অর্থাৎ ২০০ গ্রাম গাজর বা ২৫০ গ্রাম পেয়ারা অথবা ১০০ গ্রাম মিষ্টি কুমড়ো কিংবা ১০০ গ্রাম লেটুস গ্রহণ করলেই মানবদেহের প্রয়োজনীয় ভিটামিন এ এর যোগান দিতে সক্ষম।
ভিটামিন বিঃ আট ধরনের ভিটামিন বি এর মধ্যে ভিটামিন বি৬ (পাইরিডক্সিন) এবং বি৯ (ফলেট বা ফলিক এসিড) আমাদের ইম্যুনো সিস্টেমের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে সর্বাধিক কার্যকর ভূমিকা পালন করে। খাদ্যতালিকাতে ডাল, বীজ (কুমড়া বীজ), মুরগির মাংস, ডিম, কমলা, বাতাবি লেবু, কলিজা, বাদাম এবং সবুজ পাতা বিশিষ্ট শাক সবজিকে ভিটামিন বি৬ এবং বি৯ এর আদর্শ উৎস বলা যেতে পারে। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক ১.৩ মিলিগ্রাম বি৬ (গর্ভবতী মায়েদের জন্য ১.৯ এবং ল্যাক্টেটিং মায়েদের জন্য ২.০ মিলিগ্রাম) এবং ৪০০ মাইক্রোগ্রাম বি৯ (গর্ভবতী মায়েদের জন্য ৬০০ এবং ল্যাক্টেটিং মায়েদের জন্য ৫০০ মাইক্রোগ্রাম) প্রয়োজন। অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দৈনিক বয়সভেদে ১৫০-৩০০ মাইক্রোগ্রাম বি৯ এবং ০.৫-১.০ মিলিগ্রাম বি৬ দরকার হয়। অর্থাৎ ২০০ গ্রাম ডাল বা একটি ডিম বা ২০০ গ্রাম ওজনের একটি কলা কিংবা ১০০ গ্রাম বাদাম গ্রহণই আপনার দেহের প্রয়োজনীয় ভিটামিন বি সরবরাহে সক্ষম৷
ভিটামিন ডি: ভিটামিন ডি বা ক্যালসিফেরল এর সবচেয়ে ভালো উৎস হল দেহকে রোদ উপভোগ করানো! কারণ রোদের অতিবেগুনী রশ্মি আমাদের চামড়ার কোষকে এই ভিটামিন উৎপাদনে উৎসাহিত করে। ভিটামিন ডি আমাদের দেহে ক্যালসিয়ামের শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও কাজ করে৷ খাদ্যতালিকাতে দুধ, স্যামন, কড মাছের যকৃতের তেল (কড লিভার ওয়েল), সামুদ্রিক মাছ, মাশরুম, ডিম, মাংস, কলা, আপেল, বাদামি চাল, ডাল, আটা ইত্যাদি থাকলে আমরা এই ভিটামিনের চাহিদা পুরন করতে পারি। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক ১৫ মাইক্রোগ্রাম (গর্ভবতী মায়েদের জন্য ১৫ এবং ল্যাক্টেটিং মায়েদের জন্য ১৯ মাইক্রোগ্রাম) এবং বয়স্কদের (<৭০ বছর) ২০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডি প্রয়োজন। অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দৈনিক বয়সভেদে ১০-১৫ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডি খাওয়া প্রয়োজন৷ অর্থাৎ উপরোক্ত খাদ্যগুলো খাবারের প্লেটে থাকলেই একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট।
ভিটামিন ই: ভিটামিন ই একটি শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং আমাদের রক্তে আলফা-টেকোফেরল হিসেবে পাওয়া যায়। খাদ্যতালিকাতে সূর্যমুখীর তেল, আমলকী, এলমন্ড, কাঠবাদাম, চিনাবাদাম, হ্যাজেলনাট, লেটুস, পালংশাক, ব্রকলি, আম, পাকা টমেটো ইত্যাদি যেকোনোটি থাকলে আমরা ভিটামিন ই প্রাপ্তি সম্পর্কে নিশ্চিত থাকতে পারি। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক ১৫ মিলিগ্রাম (গর্ভবতী মায়েদের জন্য ১৫ এবং ল্যাক্টেটিং মায়েদের জন্য ১৯ মিলিগ্রাম) ভিটামিন ই প্রয়োজন। অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দৈনিক বয়সভেদে ৬-১১ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই খাওয়া প্রয়োজন। অতএব, ৫০ গ্রাম বাদাম, একটি আমলকী বা ১৫০ গ্রাম পালংশাক আপনার প্রয়োজনীয় ভিটামিন ই সরবরাহে সক্ষম।
ভিটামিন সি: ভিটামিন সি বা এ্যাসকরবিক এসিড খুবই সহজলভ্য একটি ভিটামিন, অন্তত আমাদের দেশের জন্য। খাদ্যতালিকাতে কমলা, আমলকী, পেয়ারা, আঙুর, ব্রকলি, ফুলকপি, মটরশুঁটি, পালংশাক, আলু, টমেটো ইত্যাদি রাখলেই আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া সম্ভব। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক ৭৫- ৯০ মিলিগ্রাম (গর্ভবতী মায়েদের জন্য ৮০ এবং ল্যাক্টেটিং মায়েদের জন্য ১১৫ মিলিগ্রাম) ভিটামিন সি প্রয়োজন। অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দৈনিক বয়সভেদে ৪০-৭৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি খাওয়া প্রয়োজন। অর্থাৎ অর্ধেক কমলা বা একটি আমলকী বা অর্ধেক পেয়ারা কিংবা ১০০ গ্রাম টমেটো প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি সরবরাহের জন্য যথেষ্ট। আয়রনঃ আয়রন আমাদের দেহের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মিনারেল। লোহিত রক্ত কনিকার অন্যতম উপাদান হল আয়রন। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। খাদ্যতালিকাতে কচুরশাঁক, কচুর লতি, কচু, মাংস, ব্রকলি, আলু, ডাল, পাতাকপি, আপেল ইত্যাদি থাকলেই আমরা খুব সহজেই এই মিনারেলের অভাব পূরণ করতে পারব। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক ৮-১৮ মিলিগ্রাম (গর্ভবতী মায়েদের জন্য ২৭ এবং ল্যাক্টেটিং মায়েদের জন্য ১০ মিলিগ্রাম) আয়রন গ্রহণ করা প্রয়োজন। অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দৈনিক বয়সভেদে ৭-১১ মিলিগ্রাম আয়রন খাওয়া প্রয়োজন।
জিংক: নতুন ইম্যুনো কোষ তৈরিতে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে, সুতরাং এই সময়ে এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মিনারেল। অপরদিকে আমাদের পরিপাকতন্ত্রের কাজে নিযুক্ত বেশিরভাগ এনজাইমের কাজও এই জিঙ্কের উপর নির্ভরশীল। মুরগির মাংস, দই, ওয়েস্টার, কাঁকড়া, ক্রাব, শিমের বিচি, ডাল ভাজি, মাশরুম, পাতাকপি ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে জিংক রয়েছে। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক ৮-১২ মিলিগ্রাম (গর্ভবতী মায়েদের জন্য ১৩ এবং ল্যাক্টেটিং মায়েদের জন্য ১২ মিলিগ্রাম) জিংক গ্রহণ করা উচিত। অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দৈনিক বয়সভেদে ৮-১১ মিলিগ্রাম জিংক খাওয়া প্রয়োজন।
সেলেনিয়াম: যেকোনো ধরনের ইনফেকশন প্রতিরোধে সেলেনিয়াম কার্যকর ভূমিকা পালন করে৷ সেলেনিয়ামের উৎস হিসেবে সামুদ্রিক মাছ, মাংস, কলিজা, পনীর, ডিম, ডাল, লেটুস, পালংশাক, স্পাগেটি, গাজরের নাম উল্লেখযোগ্য। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক ৫৫ মিলিগ্রাম (গর্ভবতী মায়েদের জন্য ৬০ এবং ল্যাক্টেটিং মায়েদের জন্য ৭০ মিলিগ্রাম) সেলেনিয়াম গ্রহণ করা উচিত। অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দৈনিক বয়সভেদে ১৫-৪০ মিলিগ্রাম সেলেনিয়াম খাওয়া প্রয়োজন।
উপরের তথ্যানুসারে আমাদের দেশের সকল এলাকাতেই এই শাকসবজি বা ফলমূলের সিংহভাগ সারা বছরেই আমাদের এই দেশে পাওয়া যায়। অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তার এক অশেষ রহমতের দেশ আমাদের দেশ। শীত প্রধান দেশে শীতকালে সবজি উৎপাদন গ্রিন হাউজ ব্যতীত প্রায় অসম্ভব অথচ এই শীতের সময়ে আমাদের দেশে সকল শাকসবজি সর্বাধিক সহজলভ্য হয়! শীতকালে তাপমাত্রা কম থাকাতে ভাইরাসঘটিত রোগের প্রকোপ বাড়ার সম্ভাবনা থাকলেও এ সহজলভ্য শাকসবজি গুলো প্রয়োজন অনুসারে গ্রহণ করতে পারলেই আমরা আমাদের ইম্যুনো সিস্টেমকে শক্তিশালী করার মত খাবার খুব অল্প দামেই ব্যবস্থা করতে পারি। যদিও বাজারে সবজির মূল্য প্রতিবছরের তুলনাতে এ বছর দেড়গুনের মত বেশী যা হয়ত নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কষ্টদায়ক একটি বিষয়, এরপরেও সঠিক পরিকল্পনা করে দৈনিক বাজার করলেই অনেকেই এই সকল ভিটামিন মিনারেলে সমৃদ্ধ একটি আহারের ব্যবস্থা করতে পারবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। প্রতিদিনের মেন্যুতে ডিম, দুধ, পালং শাক, কচুর শাক, কচু, লাউশাঁক, সজনে পাতা, লাউ/কুমড়া/অন্য যেকোনো সবজি, কমলা, আমলকী, মাছ/মাংস (সম্ভব হলে),"
গাজর, বাদাম এবং ডাল রাখতে পারলেই আমরা একটি সমৃদ্ধ ডায়েট পাব। যা আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, ডি, সি, ই এবং আয়রন, জিংক ও সেলেনিয়ামের ব্যবস্থা করে আমাদের ইম্যুনো সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তুলবে। আর এই শক্তিশালী ইম্যুনো সিস্টেমই আমাদের জনগণকে করোনা প্রতিরোধে সহযোগিতা করবে। উপরন্তু বিভিন্ন এসেনশিয়াল ওয়েল সম্পন্ন যে চা (বিভিন্ন মসল্লা ব্যবহার করে তৈরি করা চা) পান করা যেতে পারে।
খাদ্যের মাধ্যমে আমরা ভাইরাসঘটিত রোগ প্রতিরোধের সাথে সাথে অনেক ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনকেও মোকাবেলা করা সম্ভব। তবে এই আশ্বাসে অতিউৎসাহী হয়ে কেউ যেন অসুস্থতাকে দাওয়াত দিয়ে না নিয়ে আসি। দাওয়াত কথাটা ব্যবহারের উদ্দেশ্য হল, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থেকে, মাস্ক পরিধান করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের নিজেদের স্বার্থেই নিজেরা চলার কথা থাকলেও আমাদের দেশে জোর করে এমনকি জরিমানা জেলের ভয় দেখিয়েও ১০০% স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিধি নিষেধ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না! অথচ নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থেই আমাদের এই বিধিনিষেধ মেনে চলা উচিত। সামান্য সচেতনতা থাকলেই আমরা অল্প খরচের মধ্যেই হাত ধোয়া, নিরাপদ পানি পান করা, স্বাস্থ্য সম্মত টয়লেটের ব্যবহার সহ নানাবিধ WASH সংক্রান্ত বিষয় নিশ্চিত করতে পারি। এনজিও এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োলজিক্যাল ও পাবলিক হেলথ বিষয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক প্রচারণা এবং ক্যাচমেন্ট এরিয়ার অনুযায়ী এলাকা ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সচেতন করা সম্ভব। এই সাধারণ শিক্ষার্থীরাই নিজেদের পরিবারকে রোগ প্রতিরোধ সংক্রান্ত সকল বিষয়ে সচেতন করে তুলবে।
পরিশেষে বলব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে আমরা ভাইরাসঘটিত অসুস্থতা সহ অন্যান্য বহু প্রকারের অসুস্থতার করালগ্রাস থেকে সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাতে নিজেদের মুক্ত রাখতে পারব। সুতরাং আপনার পরিকল্পিত বাঁজার এবং গিন্নীদের সচেতন রেসিপিই হয়ত আমাদের ভাইরাসঘটিত রোগের প্রকোপ থেকে বেঁচে থাকার অন্যতম উছিলা হয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। সবাই ভালো থাকি এবং দেশটাকে ভালো রাখি।
ড. এসকে এম উদ্দিন: প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান, খাদ্য এবং পুষ্টি প্রকউসল বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
মন্তব্য করুন