সাইদুল ইসলাম
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

স্থানীয় সরকার কমিশন গঠনের অপরিহার্যতা

সিজিডির নির্বাহী পরিচালক সাইদুল ইসলাম। ছবি : সংগৃহীত
সিজিডির নির্বাহী পরিচালক সাইদুল ইসলাম। ছবি : সংগৃহীত

গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পরদিন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার সাংবিধানিক ক্ষমতাবলে সংসদ ভেঙে দেন। ক্রমান্বয়ে অল্প কিছু দিনের ব্যবধানে জাতীয় সংসদ ও সরকারের পর স্থানীয় সরকারেও আওয়ামী লীগ কর্তৃত্ব হারিয়েছে।

দীর্ঘ সময় ধরে জেলা ও উপজেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার সব শীর্ষ পদই ছিল আওয়ামী লীগ নেতাদের দখলে। ৫ আগস্টের পর তাদের বেশিরভাগই পলাতক। এ অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ এসব পদ থেকে তাদের অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ করার পদক্ষেপ নেয়। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকার এসিল্যান্ড, ইউএনও ও ডিসিদের স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশনগুলোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কমিশনারকে। এসিল্যান্ড, ইউএনও ও ডিসিদের এমনিতেই অনেক দায়িত্ব রয়েছে। ডিসি কিংবা ইউএনওদের পক্ষে এতগুলো ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা পরিষদ ও পৌরসভা সামলানো কঠিন কাজ। এত বড় একটি কর্মযজ্ঞ তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে না, বরং বলা যেতে পারে, এভাবে স্থানীয় সরকার কাঠামো পুরোপুরি অবহেলিত হয়ে পড়বে।

এভাবে জনগণ এসব কাঠামো থেকে কোনো সেবা পাবে না। স্থানীয় সরকার কাঠামোর নির্বাচিত প্রতিনিধির পরিপূরক একমাত্র নির্বাচিত প্রতিনিধিই হতে পারেন। অন্তর্বর্তী সরকার যদি স্থানীয় সরকার কাঠামো সত্যিই শক্তিশালী করার সদিচ্ছা রাখে তাহলে এখনই স্থানীয় সরকার কমিশন গঠন জরুরী।

শাসন, সেবা প্রদান ও একটি জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থায় জনপ্রতিনিধিত্ব উন্নয়নের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে দেশে একটি সাধারণ ঐকমত্য রয়েছে।

১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর স্থানীয় সরকার কাঠামো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা ও কাঠামোগত সমন্বয়ের জন্য ১৮ সদস্যের একটি কমিশন গঠন করা হয়েছিল। আবার ১৯৯৬ সালে নির্বাচনের পর সরকার স্থানীয় সরকার কমিশন গঠন করে। উভয় কমিশন পদ্ধতিগত সংস্কারের পরামর্শ দিলেও, সেগুলো সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্ভবত স্থানীয় সরকারের গুরুত্ব অনুধাবন করে একটি কমিশন গঠন করে। পরে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এ কমিশন তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে।

তাই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ, একাডেমিশিয়ান, মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা রাখেন এমন ব্যাক্তির সমন্বয়ে স্থানীয় সরকার কমিশন গঠন করা অপরিহার্য। এই স্থানীয় সরকার কমিশন সম্পুর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পেতে হবে।

এখনো স্থানীয় সরকার মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের বর্ধিতাংশ হিসেবে কাজ করে। স্থানীয় সরকারকে এ শৃঙ্খল থেকে বের করে আনতে হবে। বরং স্থানীয় সরকারকে স্থানীয় শাসনের ক্ষমতা দিতে হবে। এ কমিশন মূলত তারই রূপরেখা প্রণয়ন করবে। পুরোনো কাঠামোর অসঙ্গতি দূর করে সংস্কারের দিকে নিয়ে যাবে।

স্থানীয় সরকারের অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি মানুষই চায় তাদের দাবিদাওয়া স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি পূরণ করুক। কিন্তু যেহেতু স্থানীয় সরকার বিভিন্ন বিদেশি সংস্থা কিংবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে তাই তাদের কার্যপরিধি বিস্তৃত হলেও ফলপ্রসূ কার্যক্রম নেওয়া সম্ভব হয়ে উঠেনা।

স্থানীয় পর্যায়ে নিজ চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানোর জন্যই দায়িত্বপ্রাপ্ত এ সরকার। এ সরকার যেমন জনগণের কাছে দায়বদ্ধ, তেমন সরকারের কাছেও তাদের জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

দেশে স্থানীয় সরকারের একটি অংশ ইউনিয়নই রয়েছে ৪ হাজার ৫৭৮টি। এর বাইরে পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ ও সিটি করপোরেশন আছে, অর্থাৎ তালিকা অনেক দীর্ঘ। এ দীর্ঘ প্রশাসনিক কাঠামো পরিচালনা করা জটিল। এ জটিল প্রক্রিয়াটি সফল করার জন্যই স্থানীয় স্বশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি। স্বরাষ্ট্র, কর আদায় বা কিছু জরুরি বিষয় কেন্দ্রীয় প্রশাসনের হাতে থাকতেই পারে। কিন্তু জনগণের পরিষেবা থেকে শুরু করে স্থানীয় উন্নয়নের দায়িত্ব স্থানীয় সরকারের ওপর ন্যস্ত করে দিয়ে জবাবদিহির নিশ্চয়তা করতে হবে। যদি তা করা যায় তাহলে স্থানীয় সরকার নিজেদের মতো গড়ে উঠতে থাকবে। স্থানীয় সরকার কমিশন এই প্রক্রিয়াও সুগম করার জন্য কাজ করবে। মোটাদাগে এই কমিশন নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকে প্রায়োরিটি দিয়ে কাজ করতে হবে।

১. স্তর বিন্যাস ২. নির্বাচন ৩. নির্বাচিত প্রতিনিধিদের গুণগত মানের পরিবর্তন ৪. নারী প্রতিনিধিত্ব ৫. সংসদ সদস্যের সম্পৃক্ততা ৬. ওয়ার্ড সভা ৭. নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দায়বদ্ধতা ৮. স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান সমুহের জনবল ৯. স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের আয় বৃদ্ধি ১০. স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের উপর নিয়ন্ত্রণ ও খবরদারিত্ব ১১. জনগণকে সেবা ও তথ্য প্রদান পক্রিয়া

সুতরাং সরকারের নীতি বাস্তবায়নের সাথে সরাসরি সরাসরি সম্পৃক্ত এই অংশটিকে আরো কার্যকর ও সুসংহত ও প্রতিষ্ঠানিক রুপ দেয়ার জন্য এবং সামগ্রিকভাবে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন আনার জন্য স্থানীয় সরকার কমিশন গঠন অপরিহার্য।

লেখক : সাইদুল ইসলাম, নির্বাহী পরিচালক সেন্টার ফর গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিজিডি)

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

খুলনায় জাতীয় পার্টির অফিস ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ

মাদক কারবারিদের হামলায় পোশাক ব্যবসায়ী নিহত

অধিনায়কত্ব নিয়ে নিজের ভাবনা জানালেন তাসকিন

মানুষের সঙ্গে কোনো অন্যায় করা যাবে না : মুন্না

তাওহীদি জনতার বাধায় পণ্ড মেহজাবীনকে দিয়ে শোরুম উদ্বোধন

আন্দোলনে নিহত / সাব্বিরের পরিবারে হাসি ফোটালেন সাবেক এমপি কায়কোবাদ

দুর্নীতি-দখলবাজমুক্ত দেশ গড়তে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ : নয়ন

এপ্রিলে বিয়ে, আগস্টে শহীদ হন ছাত্রদলের রাব্বি  

আওয়ামী অপশক্তির অপতৎপরতা নস্যাতে জাতি প্রস্তুত : এহসানুল হুদা

চকরিয়ায় বনভূমি রক্ষায় জনসচেতনতামূলক মাইকিং

১০

হাতি ও গাধা কীভাবে আমেরিকার নির্বাচনী প্রতীক হলো

১১

নিউক্যাসলের কাছে হারে আর্সেনালের শিরোপা স্বপ্নে ধাক্কা

১২

আ স ম রবকে সহযোগিতার চিঠি, স্থানীয় বিএনপিতে ‘ভয়’

১৩

নতুন আঙ্গিকে বাকশাল করেছিলেন শেখ হাসিনা : রিজভী 

১৪

এবার যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলকে হুমকি দিলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা

১৫

আওয়ামী লীগের মাতৃভূমি হচ্ছে ভারত : আতাউর রহমান ঢালী

১৬

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি / স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি রোধ করে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার : ডা. তাহের

১৭

এবার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে অভিযোগ

১৮

‘শিক্ষকদের জীবনমানের উন্নয়ন না করে জাতির উন্নয়ন সম্ভব নয়’

১৯

ভাইরাসঘটিত রোগ প্রতিরোধে খাবারের ভূমিকা

২০
X