সাইদুল ইসলাম
প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৫৬ এএম
অনলাইন সংস্করণ

ফেনী জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা : প্রেক্ষাপট ও প্রয়োজনীয়তা

সাইদুল ইসলাম। ছবি : সংগৃহীত
সাইদুল ইসলাম। ছবি : সংগৃহীত

ফেনী বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক ও সমৃদ্ধ জনপদ। রাজধানী ঢাকা ও বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের মাঝখানে ভৌগোলিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ফেনী জেলা অবস্থিত। যুগে যুগে ফেনী জেলা রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, মুক্তিযোদ্ধা, ভাষা শহীদ, শহীদ বুদ্ধিজীবী, নাট্যকার, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীসহ অসংখ্য গুণীজনদের জন্মস্থান।

শীর্ষস্থানীয় রেমিট্যান্স উপার্জনকারী জেলা হিসেবে জাতীয় অর্থনীতিতে ফেনী জেলার অর্থনৈতিক গুরুত্ব সর্বজনবিদিত। অপার সম্ভাবনাময় এ ঐতিহাসিক জনপদের অদূরেই গড়ে উঠেছে দেশের বৃহত্তম শিল্প পার্ক বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর। উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ভৌগোলিক গুরুত্ব, স্থানীয় পৃষ্ঠপোষক ও অর্থনৈতিক মজবুতি, উত্তরোত্তর ব্যবসায়িক সমৃদ্ধি, জনসংখ্যার ঘনত্ব, চট্টগ্রাম কিংবা কুমিল্লার বিভাগীয় পট পরিবর্তনসহ বিভিন্ন মানদণ্ডে ফেনী জেলায় উচ্চ শিক্ষার বিস্তারে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এখন এই জনপদের মানুষের প্রাণের দাবি হয়ে উঠেছে।

জাতীয় উন্নয়নের অন্যতম একটি স্বীকৃত স্তম্ভ হলো শিক্ষা খাত। নিশ্চল ও অবিচল রূপে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ সভ্যতার আদি আর অন্তঃকে একই রূপে ধারণ করে আছে। যতদিন সভ্যতা ও পৃথিবী থাকবে ততদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও অভিন্ন রূপে বিদ্যমান থাকবে। ইউরোপ তথা শিল্পোন্নত জাতিসমূহের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যাত্রা শুরু হয় মধ্যযুগে। পৃথিবীর অন্যতম সুপরিচিত ও সুপ্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির কার্যক্রম শুরু হয়েছিল দ্বাদশ শতকে। বহু প্রজন্মের ধারক কালোত্তীর্ণ এসব প্রতিষ্ঠান আজ অবধি উচ্চ শিক্ষার সূতিকাগার হিসেবে খ্যাতিমান।

আমাদের ফেনী জেলায় ১৯২২ সালে অর্থাৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার একবছর পরে স্থাপিত ফেনী সরকারি কলেজ জেলার শিক্ষাঙ্গনে অন্যতম প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আজও স্বগর্বে দণ্ডায়মান। ফেনী জেলার শিক্ষাঙ্গনে কালজয়ী এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমাদের অন্যতম প্রাপ্তির স্বীকারোক্তি হলেও দীর্ঘ ১০০ বছরের ব্যবধানে এ জেলায় এখন পর্যন্ত উচ্চ শিক্ষার বিস্তারে সরকারি কোনো উদ্যোগ গৃহীত হয়নি, স্থাপিত হয়নি কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।

শমসের গাজী, হাবীবুল্লাহ বাহার, শামসুন্নাহার মাহমুদ, ভাষা শহীদ সালাম, জহির রায়হান, শহীদুল্লাহ কায়সার, সাংবাদিক গিয়াস কামাল চৌধুরী জীবিত না থাকলেও, আমাদের আছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, জাফর ইমাম বীর বিক্রম, ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী, প্রফেসর ড. আবু আহমেদ, আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ আরও অসংখ্য স্বনামধন্য ব্যক্তি, যাদের প্রচেষ্টা ও আগ্রহ এবং সরকারের সদিচ্ছা ফেনীতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে।

কেন ফেনীতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় জরুরি : ১. ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ফেনী বাংলাদেশের নাভিমূলে অবস্থিত। ঢাকা, চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ফেনী থেকে খুব সহজে যোগাযোগ করা যায়। এমন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলে দেশের সব অঞ্চল থেকে শিক্ষার্থীরা পড়তে আগ্রহী হবে। ফেনী ও চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা নিয়ে গঠন হচ্ছে এশিয়ার বৃহত্তম শিল্প অঞ্চল। এ শিল্প অঞ্চল পুরোপুরি স্থাপিত হলে প্রয়োজন হবে অনেক দক্ষ জনশক্তির। ফেনী জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলে এ প্রয়োজন মিটানো সম্ভব হবে।

২. অর্থনৈতিকভাবে উন্নত ও রেমিট্যান্সসমৃদ্ধ এই জেলায় উচ্চ শিক্ষার বিকাশ হলে অর্থনৈতিকভাবে দেশ আরও বেশি উপকৃত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে নানা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। এতে পুরো জনপদে অর্থনৈতিক ও সামাজিক গতিশীলতা বাড়বে।

৩. এই জেলায় আকারে ছোট হলেও চট্টগ্রামের মিরসরাই, নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ ও সেনবাগ এবং কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বেশিরভাগ মানুষ ফেনী মুখী। তাই এ জেলাতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হলে শুধু ফেনী নয়, পাশাপাশি চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও কুমিল্লার এই অঞ্চলগুলোও উপকৃত হবে।

৪. বর্তমানে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ঢাকা ও চট্টগ্রামকেন্দ্রিক। ঢাকা ও চট্টগ্রামের মাঝামাঝি এই জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হলে শিক্ষার বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হবে।

৫. ফেনী বাংলাদেশের অগ্রসর একটি জেলা হলেও অদ্যাবধি কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় না থাকায় ফেনীতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনার্স পর্যায়ের কয়েকটি কলেজে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে হচ্ছে। ফলে গবেষণা বা সৃষ্টিশীলতাভিত্তিক জ্ঞানে পিছিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। মেয়ে শিক্ষার্থীরা ছেলেদের চেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার। কারণ, মেয়েদের উচ্চশিক্ষার জন্য জেলার বাইরে পাঠাতে চান না অভিভাবকরা। অথচ নিজ জেলায় একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলে এই ভোগান্তি কমে যাবে।

তাই আমাদের সম্মিলিত ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় খুব দ্রুত অর্থ মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনসহ সবধরনের প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় নিশ্চিত করে ফেনীতে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কার্যকরী উদ্যোগ সফলতার মুখ দেখবে বলে আমরা আশাবাদী।

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিজিডি)

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

২২ নভেম্বর : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে 

আজকের নামাজের সময়সূচি

শুক্রবার রাজধানীর যেসব এলাকায় যাবেন না

ফাঁপোড় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ যেসব আমল

ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণ জানালেন বাণিজ্য উপদেষ্টা

দু’দিনের ব্যবধানেই বাড়ল সোনার দাম

শাবিতে ‘গণহত্যায় অর্জিত স্বাধীনতা’ শীর্ষক দু’দিনব্যাপী চিত্রপ্রদর্শনী শুরু

অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে চিন্তাধারায় বৈচিত্র্য আনতে হবে

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা

১০

থানা হবে নগরবাসীর সার্ভিস সেন্টার : নবনিযুক্ত ডিএমপি কমিশনার

১১

‘খালেদা জিয়াকে ১২ বছর সেনাবাহিনী থেকে দূরে রাখা হয়েছিল’

১২

কুয়াকাটায় ৩২৩ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ শিক্ষার্থীদের

১৩

বাংলাদেশ-ভারত বৈঠক ডিসেম্বরে, হতে পারে হাসিনার প্রত্যর্পণের আলোচনা

১৪

এবার পাবিপ্রবিতে চোর সন্দেহে আটক যুবক

১৫

পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-বেনাপোল ট্রেন চলাচল শুরু ২ ডিসেম্বর

১৬

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা প্রয়োজন, তা করা হবে : সিইসি

১৭

পুতিনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কড়া বার্তা

১৮

ব্রেক ফেল হওয়ায় প্ল্যাটফর্মের ২ কিমি দূরে থামলো ট্রেন

১৯

যথাযোগ্য মর্যাদায় সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত

২০
X