মো. আবু নোমান
প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৪৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও বর্তমান সমাজ বাস্তবতা

মো. আবু নোমান। ছবি : সংগৃহীত
মো. আবু নোমান। ছবি : সংগৃহীত

‘শিক্ষকতা একটি মহান পেশা’ এই রূপকথার বাণী বইয়ের পাতায় যত সুন্দর বাস্তবে ঠিক তারই উল্টো। বাস্তবতায় শিক্ষকতা হলো ছয় পয়সার ছাপোষা মাস্টেরের মতো। বর্তমান এ বাজারে যার না আছে পরিবার নিয়ে তিনবেলা দুমুঠো অন্ন জোগান দেওয়ার সক্ষমতা।

শিক্ষাজীবনে এই মহান পেশার সবক মুখস্থ করে দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে এই পেশায় সংযুক্ত হয়ে যখন প্রায় আধপেটা থাকতে হয় তখন ‘শিক্ষক তুমি মহান’ এই বাক্য জপে জপে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে শান্তির নিদ্রা যাওয়া ছাড়া কিছুই করার থাকে না।

জাতি গড়ার মূল কারিগর যখন একটি রাষ্ট্রের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর মর্যাদায় থাকে তখন সেখান থেকে কখনো কি প্রথম শ্রেণির যোগ্য নাগরিক উৎপাদন সম্ভব?

বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে শিক্ষাখাতের সংস্কারকে অগ্রাধিকারের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষাখাতের সকল অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত না করতে পারলে বিশ্বায়নের এ যুগে আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে টিকে থাকা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে দক্ষ ও মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ, প্রচলিত নিয়োগ প্রক্রিয়ার পরিবর্তন এবং শিক্ষকদের সম্মানজনক আর্থিক নিশ্চয়তা প্রয়োজন।

শিক্ষাখাতের সংস্কারে প্রথম গুরুত্ব দেয়া উচিত প্রাথমিক শিক্ষায়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষককে অবশ্যই প্রথম শ্রেণির বেতন দেওয়া সময়ের দাবি। না হয় উচ্চশিক্ষিত জাতি গড়ার কারিগরদের এ পেশায় আটকে রাখা কষ্টসাধ্য হবে। পেট খালি থাকলে নৈতিকতাও কাজ করেনা।

স্নাতক পাসে সিভিল সার্ভিস, সরকারি অন্যান্য দপ্তর এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা পেলেও স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকগণ কোনো যুক্তিতে তৃতীয় শ্রেণির মর্যাদা পান তা বোধগম্য নয়। মজার বিষয় কি জানেন? প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক তার চাকরি শুরু করেন ১১০০০ টাকা মূল বেতন স্কেলে যাতে তার দৈনিক মজুরি ৩৬৭ টাকা প্রায়। একই স্কেলের মোট বেতন ১৭৫৩০ টাকা, যা দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে ৫৮৫ টাকা প্রায়, কত সুন্দর না?

আর হাস্যকর বিষয় কি জানেন? একজন শিক্ষক একমাসে টিফিন খরচ বাবদ কত টাকা পান সেটা শুনলে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যাওয়ার উপক্রম। একজন শিক্ষক এক মাসে টিফিন খরচ পান ২০০ টাকা। আচ্ছা এটা কি তামাশা নয়? এই টিফিন খরচ কিন্তু ওই ১৭৫৩০ টাকার ভেতরেই।

কোমলমতি শিশুদের নিয়ে কাজ করা দেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী এই মানুষ চূড়ান্ত আন্তরিক। আন্তরিকতা ছাড়া প্রাথমিকে কাজ করা সম্ভব নয়। এত বছরে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী থেকে প্রধান শিক্ষকদের মুক্তি মিললেও সেই কর্মচারীই থেকে গেল সহকারী শিক্ষকরা। একটি বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকদের পাঠদান ছাড়াও বহু দায়িত্ব পালন করতে হয়, কখনো কখনো প্রধান শিক্ষকদের চেয়ে বেশি দায়িত্ব পালন করেন তারা, অথচ এখনো তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীই রয়ে গেলেন।

একই শিক্ষাগত যোগ্যতায় অন্য চাকরিতে দশম গ্রেড পেলে প্রাথমিক শিক্ষকদেরও তা পাওয়ার যৌক্তিক এবং নৈতিক অধিকার আছে। ২০২৪ সালের প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহের স্লোগান,‘মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার দীক্ষা’। মানসম্মত শিক্ষার স্লোগানে এগিয়ে যেতে হলে যোগ্যতার মাপকাঠি সব ক্ষেত্রে এক করতে হবে। একজন সহকারী শিক্ষক যে পদে যোগদান করেন অবসরও একই পদে গ্রহণ করেন, কারণ অন্য সরকারি চাকরিতে যথাযথ পদোন্নতির সুযোগ যতটা রয়েছে, এখানে প্রায় নেই বললেই চলে।

একজন শিক্ষক যেভাবে শিক্ষার দায়িত্ব পালন করেন সেভাবে তার পরিবারের দায়িত্বও পালন করেন। যদি আর্থিক নিরাপত্তা আর যথাযথ পদোন্নতি সঠিকভাবে অ্যাপ্লাই করা হয়, তবে শিক্ষকদের চাকরির প্রতি দায়িত্ব বৃদ্ধি পাবে এবং একটি লক্ষ্যে অগ্রসর হবে। শিক্ষকদের চাকরির সন্তুষ্টি অর্জন ও তাদের কষ্টের জায়গাগুলো পর্যায়ক্রমে পূর্ণ করতে হবে। মেধাবী শিক্ষক টানতে শিক্ষকদের গ্রেড অন্য চাকরির সঙ্গে সামঞ্জস্য করা, পদোন্নতি প্রদান ইত্যাদি বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। একজন সহকারী শিক্ষক যেন তার জীবনের একটি পর্যায়ে তার মেধা ও যোগ্যতায় সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর এবং মন্ত্রণালয়ের ভালো পদে যেতে পারে সে পথ সুগম করতে হবে। তবে সবার আগে বেতনবৈষম্য এবং শ্রেণিবৈষম্য দূর করতে না পারলে ভালো ফলাফল আশা করা এবং মেধাবী কর্মঠ এবং পরিশ্রমী শিক্ষকদের এ পেশায় বেঁধে রাখা অসম্ভব।

সহকারী শিক্ষক, ৭৪নং প.জ. আল. মো. হানিফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দৌলতখান, ভোলা

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

টাইগার রবিকে ফেরত পাঠাল ভারত

ছাত্র রাজনীতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত নিচ্ছে ছাত্রদল

গণতন্ত্রের সূচনার জন্য দ্রুত নির্বাচন চান গয়েশ্বর

বজ্রপাতে শিক্ষার্থীসহ প্রাণ গেল ৫ জনের

সোনারগাঁয়ে যৌথ বাহিনীর অভিযানে বিএনপি নেতা আটক

ভারতে মহানবী (সা.) কে কটূক্তির প্রতিবাদে জবিতে বিক্ষোভ

এস আলম গ্রুপের সব স্থাবর সম্পদের তালিকা দাখিলের নির্দেশ

টাঙ্গাইলে সনাতন সম্প্রদায়দের সঙ্গে বিএনপির মতবিনিময়

১২৩ বিজিপি সেনার বিনিময়ে মিয়ানমার থেকে ফিরলেন ৮৫ বাংলাদেশি

‘জনগণের সরকারই পারে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে’

১০

কানপুর টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলা নিয়ে লুকোচুরি

১১

সচিবালয়কে প্লাস্টিকমুক্ত করার ঘোষণা

১২

একের পর এক ঘটনায় বিপর্যস্ত পাকিস্তানে কী ঘটছে?

১৩

কর্মীদের উদ্দেশে শিবির সেক্রেটারির জরুরি বার্তা

১৪

বান্দরবানে পর্যটক ভ্রমণে ২০ শতাংশ ছাড় ঘোষণা

১৫

মেয়ের জন্য খাবার কিনতে গিয়ে আর ফেরেননি শহীদ শাহাবুদ্দিন

১৬

টাইমের কভারেই কী কপাল পুড়ল শেখ হাসিনার?

১৭

কালবেলার সাংবাদিক লিটনকে / জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তলব করায় প্রতিবাদ ও মানববন্ধন 

১৮

যে বোমা দিয়ে আঘাত হানা হয় প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সদরদপ্তরে

১৯

সিলেট স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সম্পাদক গ্রেপ্তার

২০
X