সাদি মোহাম্মদ
প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:০২ এএম
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:০৮ এএম
অনলাইন সংস্করণ

মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা সংকট

অস্ত্র হাতে বিদ্রোহীরা। ছবি : সংগৃহীত
অস্ত্র হাতে বিদ্রোহীরা। ছবি : সংগৃহীত

মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ পৃথিবীর ইতিহাসে দীর্ঘতম চলমান গৃহযুদ্ধ। এ গৃহযুদ্ধের মূলে রয়েছে ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে দেশটির স্বাধীনতা। স্বাধীনতা লাভের পরেই বিভিন্ন জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠী এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষ শুরু হয়। যা পরবর্তী দশকগুলিতে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে বিশ শতকের শেষের দিকে এবং একুশ শতকের প্রথম দিকে গৃহযুদ্ধ আরো বেশি গতি লাভ করে।

জাতিগত নানা সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিভিন্ন প্রদেশের স্বায়ত্তশাসন বা স্বাধীনতা চাওয়া মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের প্রধান কারণ । ২০২১ সালের অং সান সু চি’র এনএলডি সরকারকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুতির প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ আরও তীব্র হয়ে ওঠে। ঐতিহাসিক, জাতিগত এবং রাজনৈতিক পটভূমি বিশ্লেষণ করলেই মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের কেন সৃষ্টি হয়েছে তা আমাদের নিকট স্পষ্ট হয়ে ওঠে। উইলসন সেন্টার তাদের একটি প্রতিবেদনে মিয়ানমারের এই দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের মূল কারণ হিসেবে বেশ কয়েকটি বিষয়কে উল্লেখ করেছে: ক. সামরিক অভ্যুত্থান, খ. হাইব্রিড রেজিম, গ. বেসামরিক সরকারের ব্যর্থতা, ঘ. অতীত ইতিহাস। তবে এই লেখায় আমরা মিয়ানমারের বর্তমান গৃহযুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করবো।

১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী তাতমাদাও একটি সামরিক ক্যু-এর মাধ্যমে ২০২০ সালে নির্বাচিত অং সান সু চি’র এনএলডি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে একটি সামরিক জান্তা সরকার গঠন করে। নির্বাচিত সরকারের রাষ্ট্রপতি উই মিন্ট আর প্রধানমন্ত্রী অং সান সু চি’কে আটক করেন। তাতমাদাও বাহিনীর প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন। অভ্যুত্থানের প্রতিক্রিয়ায়, ১৬ এপ্রিল ২০২১, গণতন্ত্রপন্থী রাজনীতিবিদ মিন কো নাইং জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীদের নিয়ে একটি জাতীয় ঐক্য সরকার গঠনের ঘোষণা দেন।

জাতীয় ঐক্য সরকার পিপল ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ)-কে তাদের সশস্ত্র শাখা হিসেবে ঘোষণা করে। পিডিএফ-এর সাথে মিয়ানমারের বিভিন্ন রাজ্যের ৩০ এর অধিক সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী একাত্মতা প্রকাশ করে। সেপ্টেম্বর ২০২১ এ জাতীয় ঐক্য সরকার সারা দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। তারা এই অবস্থাকে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে "জনগণের প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধ" বলে দাবি করে। যুদ্ধ ঘোষণার পরে সারা দেশে পিডিএফ মিলিশিয়া, বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং সামরিক জান্তার মধ্যে সংঘর্ষ হতে শুরু হয়। এইভাবে সাময়িক গণতন্ত্রের পরে দেশটি আবারো গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পরে।

২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে, যখন তিনটি জাতিগত সংখ্যালঘুদের সশস্ত্র সংগঠন মিলে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স গঠন করে তখন গৃহযুদ্ধ নতুন মোড় নেয়। আরাকান আর্মি, তা’য়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি এবং মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি মিলে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স গঠিত হয়। বর্তমানে, থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স জাতীয় ঐক্য সরকারের ছত্রছায়ায় নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পাশাপাশি তারা জাতীয় ঐক্য সরকারকে সহায়তাও দিচ্ছে। ২০২৩ এর ২৭ অক্টোবর অ্যালায়েন্সটি তাতমাদাও-এর উপর আক্রমণ শুরু করে। এরই মাধ্যমে শুরু হয় অপারেশন ১০২৭। এ অপারেশনের মূল লক্ষ্য ছিল সামরিক শাসকদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত।

মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের প্রভাবে আঞ্চলিক নিরাপত্তা সংকট তৈরি হচ্ছে। শরণার্থী সংকট, মাদক ও মানব পাচার, অস্ত্র চোরাচালান প্রভৃতি মিয়ানমারের প্রতিবেশীর জন্য খুবই অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। চীনের ক্ষেত্রে চীন সীমান্তে মিয়ানমারের কিছু স্ক্যাম সেন্টার যেগুলো চীনের জাতীয় ও সামাজিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ক্রাইসিস গ্রুপের ২০২৪ সালের রিপোর্ট অনুসারে এই স্ক্যাম সেন্টারগুলোতে অপহরণ করে বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষিত তরুণ তরুণীদের নিয়ে আসা হয় এবং অস্ত্রের মুখে বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের সাথে প্রতারণা করতে বাধ্য করা হয়। এসবের মধ্যে রয়েছে বিটকয়েন প্রতারণা, বন্যপ্রাণী বিক্রয়, মাদক ইত্যাদি। তবে সবচেয়ে বেশি প্রতারণা করা হয় অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে। এই স্ক্যাম সেন্টারগুলোতে অপহৃত ব্যক্তিদের উপর অকথ্য নির্যাতন চালান হয় যা আধুনিক দাস প্রথার মত। এই সেন্টারগুলো মূলত চীনা মাফিয়া দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় যা ফরাসি পত্রিকা এসোসিয়েট প্রেসের ২০২৩-এর প্রতিবেদনে উঠে আসে। পত্রিকাটির দাবি, মিয়ানমারের সামরিক সরকার যেহেতু এসব প্রতারণাকেন্দ্রের আয় থেকে হিস্যা পায় তাই তারা এসব অবৈধ কার্যক্রমের দমনে কোন শক্ত পদক্ষেপ নেয় না। চীনা সরকার দীর্ঘদিন যাবৎ মিয়ানমার জান্তা বাহিনীকে এই বিষয় নিয়ে পদক্ষেপ নিতে কূটনৈতিক চাপ দিচ্ছে। কিন্তু সামরিক বাহিনী তেমন কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয় নি।

২০২৩ এর অক্টোবর থেকে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলি যখন জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে তখন পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়। এই গোষ্ঠীগুলো উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যের শহর এবং সামরিক পোস্টগুলি দখল করার সাথে সাথে চীনা সীমান্তের কাছে অসংখ্য স্ক্যাম সেন্টার ধ্বংস করে এবং অপহৃত নাগরিকদের মুক্ত করে। একদিকে সামরিক সরকারের সাথে প্রতারকদের বন্ধুত্ব নস্যাৎ করা এবং অন্যদিকে চীনের সমর্থন পাওয়ার আশা বিদ্রোহীরা এ হামলা চালায়। এমনকি, চীনের অধিকতর সমর্থন পেতে বিদ্রোহীরা গ্রেপ্তারকৃত প্রতারকদের চীনের জিম্মায় ছেড়ে দেয়। বর্তমানে তারা চীনের বিভিন্ন কারাগারে বন্দী আছে।

পাশাপাশি মিয়ানমারে চীনের বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অধীনে বেশ কিছু প্রজেক্ট চলমান রয়েছে যেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে চীন-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর যেটি চীনের কুনমিং থেকে মিয়ানমারের মান্দালয় পর্যন্ত বিস্তৃত। করিডোরটি মধ্য মিয়ানমার, পূর্ব ইয়াঙ্গুন এবং পশ্চিমে কিয়াউকফিউ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে যা তৈরিতে চীন সাহায্য করেছে। বঙ্গোপসাগর এর তলদেশ থেকে গ্যাস উত্তোলন করে মিয়ানমার সরকার তা কিউকফিউ এ স্থাপিত গভীর সমুদ্র বন্দর থেকে ১০৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি গ্যাস এবং তেল পাইপলাইন সাহায্যে চীনের কুনমিং পর্যন্ত পৌঁছে দেয়।

তবে, এই অর্থনৈতিক করিডোরকে হাইওয়ে ও রেললাইন দিয়ে চীনের সাথে সংযুক্ত করার কথা থাকলেও তা এখনও হয় নি। কিউকফিউ গভীর সমুদ্র বন্দরটি তৈরিতে চীন মিয়ানমারের সাথে প্রায় ৭.৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের চুক্তি করে । চুক্তি অনুসারে চীন আগামী ৫০ বছরের জন্য বন্দরটি পরিচালনা করবে আর পরবর্তীতে সেটি আরও ২৫ বছর বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, যদি চীন রাস্তা ও রেললাইনের প্রকল্প শেষ করতে পারে তাহলে কিউকফিউ বন্দর চীনকে বঙ্গোপসাগরের মাধ্যমে ভারত মহাসাগরে প্রবেশের সুযোগ করে দিবে। এসব প্রকল্প বিবেচনায় এ অঞ্চলে সংঘাত কমিয়ে আনার জন্য চীন মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে দীর্ঘদিন যাবত চাপ দিয়ে আসছে, যা দুই দেশের সম্পর্কে কিছু টানাপড়েন এর সৃষ্টি করেছে।

মিয়ানমারে ভারতের ভূমিকা চীনের তুলনায় ভিন্ন। মিয়ানমারে ভারতের দুটি প্রজেক্ট রয়েছে। এগুলো হচ্ছে, কালাদান মাল্টি-মোডাল প্রজেক্ট (KMMP) এবং ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিপক্ষীয় প্রকল্প (IMTTP)। প্রকল্পগুলির মাধ্যমে মিয়ানমারের সাথে আঞ্চলিক সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছে ভারত। কেএমএমপির লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার হয়ে ভারতের উত্তরপূর্ব অঞ্চলের সাথে যোগাযোগের উন্নয়ন সাধন। পাশাপাশি ভারতের কলকাতা বন্দরকে মিয়ানমারের সিটওয়ে বন্দরের সাথে সংযুক্ত করা এবং মিয়ানমারের হাইওয়ের মাধ্যমে মিজোরাম পর্যন্ত প্রসারিত করা। আইএমটিটিপি এর লক্ষ হচ্ছে ভারতের সীমান্ত শহর মোরেহকে মিয়ানমার হয়ে থাইল্যান্ডের মায়ে সোটের সাথে সংযুক্ত করবে। এরই মাধ্যমে তিনটি দেশের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন বাণিজ্য, ব্যবসা, শিক্ষা এবং পর্যটনের জন্য একটি স্থল পথ স্থাপন হবে।

২০২৩ এর অক্টোবরে শুরু হওয়া অপারেশন ১০২৭ এর ফলে প্রজেক্টগুলো বেশ বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। এর পাশাপাশি চীন এর মিয়ানমারের সাথে সম্পর্ক ভারতের কাছে মিয়ানমারের কৌশলগত গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। মিয়ানমারের মধ্যে চীনের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব, এবং মিয়ানমারের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চীনের চীন-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর প্রতিষ্ঠা এবং সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে মিয়ানমারের কোকো দ্বীপে নজরদারি সুবিধা স্থাপন ভারতকে বেশ অস্বস্তির মধ্যে ফেলেছে। বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের প্রধান উৎস হিসাবে চীনের উত্থান এবং মিয়ানমারের বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার হিসাবে চীনের অবস্থান ভারতের জন্য বেশ উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

এছাড়াও এই যুদ্ধের ফলে থাইল্যান্ড সীমান্তে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও বিদ্রোহী বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ চলমান রয়েছে। থাই সীমান্তে অবস্থিত কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ মায়াওয়াদ্দিতে দুই দলের মধ্যে হয়েছে তুমুল সংঘর্ষ, যেখানে আপাতত বিদ্রোহী ‘কারেন’ বাহিনী সৈন্য প্রত্যাহার করেছে। যুদ্ধে থাইল্যান্ডের উপর বেশ ভালোভাবেই ‘স্পিলওভার ইফেক্ট’ পরছে। সামরিক বাহিনীর অত্যাচার আর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা থেকে বাঁচার জন্য বৈধ-অবৈধ দুই উপায়েই বিপুল পরিমাণ মানুষ থাইল্যান্ডে পালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে থাইল্যান্ডে মিয়ানমারের ৯১,৩৩৭ শরণার্থী রয়েছে। এর ফলে থাইল্যান্ডের নিজের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় বেশ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। থাইল্যান্ড এইসব কিছু মেনে নিয়েই চেষ্টা করছে কীভাবে সমস্যাটির মোকাবেলা করা যায়। এইজন্য একটি সমাধানের আশায় তারা আসিয়ান সদস্যভুক্ত দেশসমূহের সাথে মিলে চেষ্টা করছে।

মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবেই জটিল বলা যায় বিশেষত রোহিঙ্গা ইস্যুতে। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন যাবত মিয়ানমারের শরণার্থীদের নিজ দেশে আশ্রয় প্রদান করে যাচ্ছে। বর্তমানে ইউএনএইচসিআর এর তথ্যমতে বাংলাদেশে ৯৭২,৯০৪ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছে যা বাংলাদেশের উপর নানাভাবে প্রভাব ফেলছে। পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে যে সশস্ত্র বাহিনী বাংলাদেশের সীমান্তে অনুপ্রবেশ করেছে তা দৃশ্যত বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ বর্তমানে বেশ অনিশ্চিতই বলা যায়। সামরিক বাহিনী বেশ দ্রুততার সহিত নিজেদের অবস্থান হারাচ্ছে। দেশের মাত্র হাতেগোনা কয়েকটি শহর সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এমনটি আগে কখনো দেখা যায় নি। আমরা ধারণা করতে পারি যে, দীর্ঘদিনের দুঃশাসন জনগণকে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। এর পাশাপাশি যে অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠী রয়েছে তারাও প্রথমবারের মত নিজেদের মধ্যে কিছুটা হলেও ঐক্য খুঁজে পেয়েছে। যদিও এই ঐক্য স্থায়িত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা যায়, কারণ মিয়ানমারের দীর্ঘ ইতিহাসে এতসংখ্যক গোষ্ঠীর মধ্যে ঐক্য বেশিদিন টিকে না।

কিন্তু মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের ফলাফল যাই হোক না কেন বাংলাদেশের এক্ষেত্রে নিজেদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জোরদারে সচেষ্ট হতে হবে, বিশেষত কীভাবে শরণার্থী সংকট মোকাবেলা করা যায়। কারণ যুদ্ধ যদি দ্রুত সময়ে শেষ হয়েও যায় এক্ষেত্রে এতসংখ্যক শরণার্থীদের পুনরায় ফেরত পাঠানোও একটি বেশ চ্যালেঞ্জের কাজ। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে একযোগে কাজ করতে হবে। মিয়ানমার বেশকিছু বছর যাবত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। বিশেষত রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যা চালানোর মত মানবতা বিরোধী কাজও তারা করেছে। এর পাশাপাশি তারা প্রায়শই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মর্টার হামলা করেছে যার ফলে অনেক বাংলাদেশি নাগরিক হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।

মিয়ানমারের এই গৃহযুদ্ধ বাংলাদেশের পাশাপাশি মিয়ানমারের অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের উপরও প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশের এক্ষেত্রে উচিত হবে এই দেশগুলোর সাথে সমন্বয় করার মাধ্যমে মিয়ানমারের উপর কূটনৈতিক চাপ প্রদান করা। আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে যে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী আরাকান রাজ্যে আরাকান আর্মি বেশ শক্ত অবস্থানে আছে। কিন্তু, সাম্প্রতিক কিছু আল জাজিরার মতো কিছু সংবাদ সংস্থার মতে আরাকান আর্মি নিজেরাও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না। আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গিয়েছে। যদিও আরাকান আর্মি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এখন যদি গৃহযুদ্ধে আরকান আর্মি আরকানের পূর্ণ দখল নেয় বা যদি সামরিক বাহিনীর পতন ঘটে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের উচিত হবে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন নিয়ে আরাকান আর্মির সাথে সমঝোতায় বসা। পাশাপাশি জাতীয় ঐক্য সরকারের সাথেও আলোচনায় বসতে পারে। তবে, এমনটি করলে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সাথে সম্পর্ক রাখা কঠিন হয়ে পরবে। তাই বাংলাদেশ এর উচিত যুদ্ধের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা এবং আপাত দৃষ্টিতে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা। যুদ্ধে যেই পক্ষই জয়ী হোক না কেন বাংলাদেশের নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে সবদিক নজর রেখেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সাদি মোহাম্মদ: শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১২৫ বস্তা চাল উদ্ধার, আটক ২

সিলেটে হোটেল ব্যবসায় ধস

জৌলুস হারাচ্ছে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত

চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও পরিচালকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

অটোরিকশার ধাক্কায় প্রাণ গেল ইউপি সদস্যের

নোবিপ্রবি ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি মুবদী, সম্পাদক রিন্তি

ড. ইউনূসের সঙ্গে ব্লিঙ্কেনের সাক্ষাৎ / পারস্পরিক সহযোগিতা আরও গভীর করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র

রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গৃহবধূকে ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণ’

সীতাকুণ্ডে সড়ক দুর্ঘটনা নিহত ২

চটপটিতে টক বেশি দেওয়াকে কেন্দ্র করে মারধর, নিহত ১

১০

ডিএনসির অভিযানে ৭১ শীর্ষ মাদককারবারিসহ গ্রেপ্তার ৮৪৬

১১

আ.লীগ কর্মীর হাঁসুয়ার কোপে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা নিহত

১২

২০ বস্তা চাল রেখে পালালেন ভ্যানচালক

১৩

‘মানুষের মুক্তির জন্য কোরআনের আইনের বিকল্প নেই’

১৪

জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রধানকে ইউরোপ প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্মারকলিপি

১৫

পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটি থেকে দুই সদস্য অপসারণ ও ইসলামী স্কলার অন্তর্ভুক্তির দাবি

১৬

মাগুরায় আ.লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে আহত ১৫

১৭

গৌরীপুরে দুর্গাপুজার প্রতিমা ভাঙচুর, আটক ১

১৮

টাকার জন্য সন্তানকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখলেন মা!

১৯

সাকিবের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে না বিসিবি 

২০
X