মাহমুদ রেজা চৌধুরী
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৮ এএম
অনলাইন সংস্করণ

সমাজ ও রাষ্ট্রের শত্রুরা ওত পেতে আছে

মাহমুদ রেজা চৌধুরী। ছবি : সৌজন্য
মাহমুদ রেজা চৌধুরী। ছবি : সৌজন্য

বিগত ৫ দশকে দেশে নানা কিছুর নানান পরিবর্তন হয়েছে ভালো-মন্দ সব দিকেই। উন্নতি, উন্নতি, আর উন্নতি! একেবারে কম ত হয় নাই। বাহ্যিক ইতিবাচক উন্নতির সাথে গত ১৫ বছর দেশে অনেক নিম্ন রুচিবোধ ও তার সাথে ‘বান্ধব’ উন্নতিও কি কম! উন্নতি 'খেকোও’ আছে। যেমন, জল ও জলাশয় খেকো, ভূমি খেকো, বালু খেকো, মাটি খেকো, ইট আড়ত খেকো। দুর্নীতিবান্ধব এরা সবাই। এইরকম অনেক বান্ধব এবং খেকোদের সংখ্যা কম হলেও আকার কিন্তু বিশাল, দেশের ভেতরে এবং দেশের বাইরেও। এইগুলিকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ভাবে দেখা যায় কি! বলতে পারি না যে, উন্নতি হলে এইসব পাশাপাশি থাকবেই। কেউ, কেউ এইগুলি স্বাভাবিক বলে মনে করলেও ব্যক্তিগতভাবে বিষয়গুলি মাঝে মাঝে খুব বেশি হতাশ করে নিজেকে।

বাংলাদেশ ভালো নাই। ভালো থাকার একটা ইতিবাচক স্বপ্নের পথে যাত্রা শুরু করেছি মাত্র দেড় মাস হয়। এই পথে কতটা জোরকদমে হাঁটতে পারবো জানি না। আমাদের মধ্যে নানারকম অনৈক্য এবং অসহিষ্ণুতা এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত স্বপ্ন কাজ করে। অনেক ক্ষেত্রে আমরা কিছু যোগ্য মানুষ পেলেও বহু ক্ষেত্রে এখনো অযোগ্য, অথর্ব কিছু লুম্পেন দ্বারাও বেষ্টিত আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র।

আমাদের মধ্যে বুদ্ধিবৃত্তিক অসততা, দুর্নীতি, লোভ, প্রতিহিংসা এইগুলি এখনো বাজারের তাজা ফল ও সবজির মতোই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পারবো কিনা এই তিমির রাত্রি পার করে দেশকে সত্যিকার ভাবে শোষণ মুক্ত এবং বড় দাগে বৈষম্যমুক্ত করতে! এই মুহূর্তে বলতে পারি না। কারণ, আমাদের যারা ম্যাটার করেন, যারা দেশ ও সমাজকে পরিচালনা করেন, নেতৃত্ব দেন, এই আমাদের মধ্যে সততার চাইতেও অসততার পাহাড়ের উচ্চতা অনেক উঁচুতে। সেই উচ্চতায় অনেকেই চলে গেছি একটু একটু করে গত পঞ্চাশ বছরে। ঐ পাহাড়ের একটা পর্যায়ে গিয়ে তার উচ্চতায় পৌঁছে গেছি দ্রুত ‘এলিভেটারে’ চড়ে।

সেখান থেকে কি করে নামবো আবার দ্রুত! যে এলিভেটারে দ্রুত উঠেছি বিভিন্ন নেতিবাচক বান্ধবদের সাথে নিয়ে, ঐ এলিভেটারও বিকল এখন। নামবো কীভাবে! নামতে গেলেই হাত পা ভেঙে যেতেও পারে, মৃত্যুও হতে পারে। আমরা কি সেই ভাঙাচোরা বা জীবন হারাবার ঝুঁকি নিতে পারব! জানি না। বাংলাদেশ তাই ভালো নাই।

অনেকের মতেই আমাদের সামনের দিনগুলি প্রতিদিনই একটু, একটু করে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যত দ্রুত বিষয়গুলির প্রতি তাদের দৃষ্টি দিবেন, ততই আমাদের জন্য তা মঙ্গলজনক হবে। দিকগুলির কয়েকটা এই লেখায় উল্লেখ করি।

১) শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে 'গ্রেপ্তার ওয়ারেন্ট’ জারি করা। যত দ্রুত সম্ভব। তাকে বিচারের কাঠগড়ায় নিয়ে আসা। এই নারী যতদিন বাইরে থাকবেন, ঝুঁকি বাড়তেই থাকবে। এই নারীর মধ্যে বিন্দুমাত্র কোন অনুশোচনা বা অপরাধ বোধ কাজ করে না। কখনোই করত না। বিনয়, আত্ম সমালোচনা তো স্বপ্নের বিষয়।

২) বিগত ১৫ বছরের দুর্নীতিবাজ এবং বিভিন্ন খুনের হুকুমদাতা থেকে শুরু করে সরাসরি খুনিদের দ্রুত আদালতে বিচারের মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেয়া। যতগুলা সম্ভব বিচার বহির্ভূত হত্যার দ্রুত বিচার ব্যবস্থা করা।

৩) দেশের পুলিশ বাহিনীর যারা এখনো তাদের কাজে যোগদান করেন নাই। তাদের কাজে যোগ দেবার নির্দিষ্ট দিন ঘোষণা দিয়ে, কাজে অনুপস্থিত হলে তাদের চাকুরি চ্যুত করা। দ্রুত সেখানে নতুন পুলিশের নিয়োগ করা। দেশে সবরকম আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সুনিশ্চয়তায় এবং তা রক্ষার প্রাথমিক ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পুলিশ বাহিনী ছাড়া করা কঠিন হবে।

৪) যে কোন প্রকারের ‘মবজাস্টিস’ এবং কোন আইন ব্যক্তি বা কোন রাজনৈতিক দলের ঊর্ধ্বে রাখা ভীষণ দরকার।

৫) দেশের বর্তমান অবস্থাতে নানা রকম সামাজিক মাধ্যম ও আলাপ-আলোচনা। এই ব্যাপারেও কিছু, কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত গুরুত্ব রাখে। বাক স্বাধীনতা বলতে অন্যের বাক স্বাধীনতাকেও মনে রাখা এবং স্বীকৃতি দিতে হবে আমাদের সবার। মুক্ত বুদ্ধির চর্চা বলতে, জিহ্বা নিয়ন্ত্রণ করাও দরকার। এই ক্ষেত্র যত বেশি তথাকথিত ‘অবাধ ও মুক্ত’ ব্যবস্থাপনা থাকবে, দেশে নানা গুজব, অন্যায় আচার আচরণের প্রবণতাও দ্রুত সমাজ এবং রাষ্ট্রকে এখন বিভ্রান্ত করছে এবং করতে পারে। সমাজ ও রাষ্ট্রের শত্রুরা ওত পেতেই আছে। নানা রকম অনলাইন টিভি এবং ব্যক্তিগত সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই এখন যা খুশি বলে বেড়ান। অধিকাংশ এইসব এক রকম আত্মপ্রচার ও মিডিয়া বাণিজ্য! অপপ্রচার, নেতিবাচক ও নিম্ন রুচির। লুম্পেন টাইপ।

৬) রাষ্ট্রকে সম্পূর্ণ নতুনভাবে জনস্বার্থে অগ্রাধিকারে নেতৃত্ব দেওয়া বেশি প্রয়োজন এখন।

৭) আপাতত শিক্ষাঙ্গনের রাজনীতি বন্ধ রাখতে পারলে ভালো।

৮) শিক্ষকদের প্রতি ছাত্রদের এবং ছাত্রদের প্রতি শিক্ষক সম্পর্কের গুণগত মান এবং নিশ্চয়তা সুনিশ্চিত করা এখন কোথাও কোথাও কঠিন কাজ হলেও দ্রুত এর প্রক্রিয়া চালু দরকার অর্থাৎ সুনিদির্ষ্ট পদক্ষেপ দরকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের। কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনো পুরোনো অপশক্তির চলাফেরা, নিয়োগ এবং তাদের কারোর নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করার দৃষ্টান্ত আছে। এই ব্যাপারে শিক্ষা উপদেষ্টা সতর্ক হবেন বলে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা।

৯) জাতীয় রপ্তানি মূলক (export oriented) প্রতিটা শিল্পকেই যে কোন প্রকার হুমকি এবং সেখানের উৎপাদনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ব্যাপারে সরকারের কঠোর ভূমিকা রাখা। মালিকদের প্রতি শ্রমিকের এবং শ্রমিকদের প্রতি মালিকদের সব রকমের বৈষম্যমূলক দুরাচার বন্ধ রাখতে হবে।

১০) পাড়া, মহল্লা, জেলা ও সব ইউনিয়নেও সব রকম রাজনৈতিক ও সামাজিক মাস্তানিকে নিষিদ্ধ করে সেখানে নাগরিক সুনিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত রাখতে হবে যত দ্রুত সম্ভব। শোনা যাচ্ছে কোথাও কোথাও এইসব পুরোনো স্টাইলে বাড়ছে নাকি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সজাগ থাকবেন।

১১) যেকোনো রাজনৈতিক দলকে সময়ের কোন সুযোগে কোন অন্যায় বা সন্ত্রাস থেকে দূরে রাখতে সরকার দৃষ্টান্তমূলক নিশ্চয়তা দিবেন। সব রাজনৈতিক দল তাদের নিজ নিজ দলকে এবং দলের নেতাকর্মীকে এই ব্যাপারে সুনির্দেশ দিবেন এবং সেটা পালন করা হচ্ছে কিনা লক্ষ্য রাখবেন। এক স্বৈরাচারকে বের করে যেন আরেক স্বৈরাচার সৃষ্টি না করি।

১২) গণমাধ্যম বিশেষ করে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াও একটু দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিবেন। কথায়, কথায় বিতর্ক বা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিবেন না। বর্তমান সরকারকে সহযোগিতায় আমরা কেউ যেন সংকীর্ণ মন ও চিন্তার পরিচয় না দিই।

আরো কিছু কিছু ব্যাপারেও বিজ্ঞ সরকারের বিজ্ঞ উপদেষ্টারা, অবশ্যই অবহিত আছেন। তাঁরা বিষয়গুলি জানেন না, তা না। কিন্তু সমস্যার সমাধানে তাঁদের গতি অনেকেই "মন্থর" বলেও মনে করছেন। তাই এই সতর্কতা প্রকাশ করা। এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ একটু নড়ে চড়ে বসলে, দেশের সাধারণ মানুষ তাঁদের মনের আকাশে একটু নীল আকাশ দেখতে পারেন। আমরা যেন মনে রাখি, দেশটা আমাদের ভালো নাই বহুদিন থেকেই। বহু, বহু বছর থেকে। একে ভালো করতে বা এর কোন সংস্কার আনতে সবার আগে প্রয়োজন ব্যক্তির ভালো হওয়া, ব্যক্তির সংস্কার সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

আত্ম সমালোচনাও দরকার। ব্যক্তি ও বস্তুগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে থাকা দরকার। এইসব ছেড়ে নতুন করে যা-ই লিখিনা কেন, কাজে আসবে কি! আইন করে বা পায়ের শেকল বেঁধে কোন পরিবর্তন, শান্তি বা উন্নতি অর্জন হয় না। এই ইতিহাস আমাদের রক্তে লেখা। দেশে সাম্প্রতিক ছাত্র ও গণ আন্দোলনের প্রতিবাদেও তা লেখা আছে। ত্যাগেও লেখা আছে। আমরা কি একটু ভেবে দেখব না!

শরীরে জ্বর হলেই টের পাই। সমাজ ও রাষ্ট্রের শরীরেও যে জ্বর আছে। আমরা কি সেটা অনুভব করি না! নিজের দিকটাই দেখলেই কি হবে! যে দেশের মাটি ও পানিতে বড় হলাম, সেটা কোন ব্যক্তি বা দলের না। সবার। তাই দেশকে ভালো রাখতে দল এবং নেতা নেত্রীর ঊর্ধ্বে থাকতে হয় দেশ। আমাদের চালচলন এবং দৃষ্টিভঙ্গিতে বিনয়, সহনশীলতা, ধৈর্য এবং দূরদৃষ্টি রাখার বিকল্প কি! এই বিষয়গুলির প্রতি আমাদের যত্ন এবং কমিটমেন্ট কম রেখে বা একে ইগনোর করে, দেশের ভালো হবে কি!

পুনশ্চ: যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাষ্ট্রের বর্তমান সংবিধানকে বাতিল ঘোষণা করতে হবে যেভাবেই হোক। এই সংবিধানকে রেখে রাষ্ট্র বিনির্মাণ অসম্ভব। রাষ্ট্রের দায়িত্বে বর্তমান অন্তর্বর্তী কালীন সরকারকে এই বিষয়টা অনেক বেশি অগ্রাধিকারে গুরুত্ব দিয়ে কার্যকর করা প্রয়োজন। এক কথায়, সংবিধানকে সম্পূর্ণ স্থগিত ঘোষণা করে রাষ্ট্রের অতীতের দুর্নীতি, খুন, হত্যা, অবিচার। এইসবের হোতা ও নেতা-নেত্রী কে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে না পারলে বিপদের ঝুঁকি আরও বাড়বে।

কালনাগিনী ও তার বাচ্চারা কিন্তু সর্বত্র ছড়িয়ে আছে ফণা তুলে। তাদের শক্তি বর্তমান সংবিধান। তাই এটাকে যত দ্রুত সম্ভব অকার্যকর করা দরকার। রহিত করা দরকার। নতুন বাংলাদেশ তৈরি এবং বাংলাদেশকে ভালো রাখা এবং থাকতেও চলতি সংবিধান এই পথে সবচেয়ে বড় বাঁধা এখন। সংশ্লিষ্টরাও ভেবে দেখবেন।

মাহমুদ রেজা চৌধুরী : নিবন্ধকার, প্রাবন্ধিক

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জাবিতে গণপিটুনির ঘটনায় ৮ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার

জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন তারেক রহমান

বিশেষ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচার দাবি লায়ন ফারুকের

জাবিতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যা, এক সমন্বয়ককে অব্যাহতি

ঢাবিতে রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা

ড. ইউনূসকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের

মাদারীপুরে কৃষককে পিটিয়ে হত্যায় মানববন্ধন

জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন গ্রিডের টাওয়ার পদ্মায় বিলীন

দীঘিনালায় দুপক্ষের সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

তিন মাস ধরে ১৪০০ চা শ্রমিকের মজুরি বন্ধ

১০

নীতিমালার খসড়া অনুমোদন / সম্পদের হিসাব দিতে হবে উপদেষ্টাদেরও

১১

জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন গ্রিডের টাওয়ার পদ্মায় বিলীন

১২

বিটকয়েনে বার্গারের দাম পরিশোধ করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

১৩

ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৭

১৪

চর দখলের মতো সাংবাদিক সংগঠনগুলো নিয়ন্ত্রণের অপচেষ্টা চলছে : শওকত মাহমুদ

১৫

নেতাকর্মীদের জরুরি নির্দেশনা দিল আ.লীগ

১৬

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের নির্মাণসামগ্রী ও গবাদিপশু দিল বিএনপি

১৭

ছেলে নিহতের চার ঘণ্টা পর মারা গেলেন বাবা

১৮

আন্দোলনে থাকা নেতাকর্মীদের পেছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক 

১৯

দেড় মাসেও হদিস মেলেনি বগুড়া থানার লুট হওয়া অস্ত্রের

২০
X