নুরুল আমিন
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:০৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

নির্বাচনের রোড ম্যাপের জন্য চাপ দেওয়া যাবে না

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

ছাত্র-জনতার অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে আজ যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে তার ভিত অনেক শক্ত এবং গভীরে গ্রোথিত বলে মনে করি। এ সরকারের মেয়াদ সবে মাস পূর্ণ হলেও রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের রোড ম্যাপের জন্য সরকারের ভেতরে-বাইরে চাপ প্রয়োগ করছে, যা সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলছে। ভাবনায় তাড়িত হচ্ছি যে, আবারও কি ছাত্র-জনতার রক্ত বৃথা যাবে? দলগুলো হয়তো ভাবছে না জনগণের মনের কথা এবং সবকিছুতেই অতীতের মতো ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজে বেড়াচ্ছে।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, দলগুলো নির্বাচনের নামে দ্রুত প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন আমি-ডামি মার্কা নির্বাচন চাচ্ছে যেন খালি মাঠে গোল দেওয়া যায়। অথচ রাজনীতিকরা বতর্মান সরকারকে যৌক্তিক সময় দিয়ে অতীতের জঞ্জাল পরিষ্কারের কাজগুলো করিয়ে নিলে নিজেরা ভবিষ্যতে সমালোচনার ঊর্ধ্বে থাকতে পারবেন এবং ভঙ্গুর অর্থনীতিকেও লাইনে আনতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যবহার করতে পারেন।

এক সাগর রক্তের বিনিময়ে একাত্তরে স্বাধীনতা পেলেও গণতন্ত্র অধরাই থেকে যায়, সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা থাকলেও ধর্মীয় আবরণে যা ঢাকা, গরিব জনগণের আরাধ্য সমাজতন্ত্র উবে গেছে। মানবাধিকারের কথা থাকলেও বাস্তবে গুম-খুন নিত্য প্রত্যক্ষ করেছি এবং করব বলে শঙ্কায় আছি। ৭৫-এ আসে কয়েকটি সেনাবিপ্লব কিন্তু জনগণের আরাধ্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলো না। নব্বইয়ের রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্রদের উপর ভর করে এরশাদের পতন ঘটালেও গণতন্ত্রের অবস্থা তথৈবচ। তখনকার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র হিসেবে মিছিলে সেলিম-দেলওয়ারের অসহায় মৃত্যু ও ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’ লেখা সংবলিত শহীদ নূর হোসেনের উদোম ছবি এখনো স্মৃতিতে জাজ্বল্যমান।

কিন্তু এরপর তিন জোটের রূপরেখা অগ্রাহ্য করে অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এলো রাজনৈতিক দল এবং তাদের শাসনে জনগণের আকাঙ্ক্ষা ধূলিসাৎ হলো। এরপর জনগণ ছটফটিয়ে এ দল ওই দল করতে করতে এলো এক/এগারো সরকার। তাদের নানা সংস্কার ব্যর্থ করে দিয়ে এলো মহাস্বৈরাচার। তাই এবারও ভয় হচ্ছে, কী না কী হয়।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের স্পষ্ট নিবেদন, আপনারা যে প্রয়োজনীয় সংস্কারের কথা রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকে বলছেন সেটাতে দৃঢ় থাকুন, মনে রাখুন কোনো দল বা কারও দয়ায় ক্ষমতায় আসেননি এবং আপনাদের উপর গুরুদায়িত্ব ছাত্র-জনতা ছাপিয়ে দিয়েছে, যা আপনারা খুশিমনে গ্রহণ করেছেন। আশা করি রাজনৈতিক দলগুলোর শত সমালোচনাও প্রয়োজনীয় সংস্কার ও শাসনব্যবস্থার যৌক্তিক পরিবর্তনে পিছপা হবেন না। সংস্কারের পর প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি নির্বাচন দেখতে চাই। প্রয়োজনে গণভোটের আয়োজন করুন। তিনটি মেয়াদ কাল নিয়ে হতে পারে গণভোট দুবছর, তিন বছর ও চার বছর। জনগণ যে মেয়াদ কালকে গ্রহণ করবে ততদিন ক্ষমতায় থাকবে এ সরকার।

তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এ এক মাসের শাসনে জনগণ মোটেই খুশি নয়। নিত্যপণ্যের দাম না কমে আরও বাড়ছে, গণহারে সবাইকে হত্যা মামলার আসামি করা, আন্দোলনে আহত ও নিহতদের জন্য এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট আর্থিক অনুদানের পরিকল্পনা ঘোষণা করতে না পারা, আইনশৃঙ্খলার প্রত্যাশিত উন্নতি না হওয়ায় জনগণের মনে নানা প্রশ্ন জাগ্রত হচ্ছে। সবচেয়ে অবাক হওয়ার বিষয়, দলীয় ও নকল ডিগ্রিধারী (খবরে প্রকাশ কুয়েটের উপাচার্য নিয়োগ) শিক্ষকরা ভিসি হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন, যা বিগত সরকারের মতো দুর্নীতি ও দলীয় শিক্ষক নিয়োগকে ত্বরান্বিত করবে।

মনে হচ্ছে, কোনো দল সরকারকে একটি ভিসি নিয়োগের তালিকা ধরিয়ে দিয়েছে এবং ওই তালিকা থেকে ভিসি নিয়োগ পাচ্ছে। ঢাবির নিয়োগও দলীয় বলে অভিযোগ উঠেছে। ভিসি নিয়োগে একটা নিরপেক্ষ সার্স কমিটি থাকবে এবং ওই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ভিসিরা নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন। মনে হচ্ছে, পূর্বের তদবির প্রথা এখনো বহাল তবিয়তে আছে এবং উপদেষ্টারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না।

নুরুল আমিন: শিল্প উদ্যোক্তা

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঢাবিতে হত্যার ঘটনায় সমন্বয়ক বাকেরের স্ট্যাটাস

হাসানের বীরত্বে প্রথম সেশন বাংলাদেশের

নোবিপ্রবির কোটি টাকার প্রকল্পে স্থবিরতা

হবিগঞ্জে মানহানির মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান

ভারসাম্যহীন যুবককে পিটিয়ে হত্যা, ছাত্রদের বিরুদ্ধে মামলা করবে ঢাবি

মানসিক ভারসাম্য হারানোর আগে ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন তোফাজ্জল

ভোলায় সাবেক এমপি মুকুলের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা-চাঁদাবাজির মামলা

ফেনীতে নেতাকর্মীদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বিএনপি

বুধবার রাতে ঢাবিতে কী ঘটেছিল জানালেন শিক্ষার্থীরা

হাসান মাহমুদে বিধ্বস্ত ভারতের টপ অর্ডার

১০

প্রেম করে মানসিক ভারসাম্য হারান ঢাবিতে নিহত তোফাজ্জল

১১

ঢাবিতে নিহত তোফাজ্জলের পরিচয় কী

১২

চেন্নাইয়ে ৪২ বছর আগের স্মৃতি ফেরালেন শান্ত

১৩

হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন / নিউইয়র্কে ড. ইউনূস-মোদির বৈঠক হচ্ছে না

১৪

হত্যার আগে ভাত খেতে দেওয়া হয় তোফাজ্জলকে

১৫

ফের ৫ দিনের রিমান্ডে আনিসুল হক ও সালমান

১৬

কর্মস্থলে যোগদান করলেন জবির নবনিযুক্ত উপাচার্য রেজাউল করিম

১৭

ঢাবিতে চোর সন্দেহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

১৮

জাতিসংঘের ই-গভর্নমেন্ট সূচকে ১১ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ

১৯

চেন্নাই টেস্টে টস জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ

২০
X