রিফাত আহমেদ
প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:২৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ধৈর্য ও আস্থার অতিস্বল্পতা ষড়যন্ত্রকারীদের জন্য সুযোগ তৈরি করবে

রিফাত আহমেদ। ছবি : সৌজন্য
রিফাত আহমেদ। ছবি : সৌজন্য

চলুন নিজেদের অতীতকে আজ একটু বর্তমান ভেবে নিই। ধরে নিলাম, আওয়ামী লীগ সরকার আজও বহাল। সে ক্ষেত্রে প্রতিটি ঘটনাপ্রবাহকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ভেবে আমরা বারবার হতচকিত হতেই থাকতাম। বুঝে উঠতে পারতাম না কি হচ্ছে, কেন হচ্ছে। হয়তো হঠাৎ করেই আমরা দেখতাম, অমুক ব্যাংক আর টাকা দিতে পারছে না, কিংবা অমুক অমুক ব্যাংকগুলো হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে আমার-আপনার সারাজীবনের সঞ্চয়কে মুহূর্তে ধূলিসাৎ করে দিচ্ছে। অথবা হয়তো অর্থস্বল্পতার অজুহাত দেখিয়ে ১০০ টাকার খাদ্যপণ্য আমাদের ৩০০ টাকায় কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে।

হয়তো আজও সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু লিখতে গেলে মস্তিষ্ক আমাদের বারবার তা মুছে ফেলার আগাম বার্তা দিতে থাকত। কিংবা অর্থাভাবে-অনাহারে-অন্যায় সহ্য করে থাকতে না পেরে প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত আমাদের সত্তা যদি হঠাৎ বিদ্রোহ করে বসত, মুখ ফসকে যদি ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটে যেত, হাতের কলমটি যদি অন্তরের আফসোসগুলো উগলে দিত; তাহলে তো সেই ১০ ফুট বাই ১২ ফুট অন্ধকার গুপ্ত কুঠুরিগুলোতেও আমার বা আমাদের জায়গা হতে পারত।

এসব বিবেচনায় আপনাদের কি মনে হয় না, অন্তর্বর্তীকালীন এ সরকার আমাদের জন্য মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মতো কোনো ব্যাপার?

কি চাই আমরা? কেন আমরা এত বড় বড় কথা বলি? আমরা কি পারব তাদের মতো বড় বড় দায়িত্বগুলো ব্যক্তিকেন্দ্রিকভাবে নিজেদের কাঁধে তুলে নিতে? আমরা কেন ৭ দিনে দেশকে পরিবর্তন করার গোঁ ধরে বসেছি? আমি-আপনি বিগত ১০-১৫ বছর ধরে স্বৈরাচারীর সাক্ষী হয়েও কেন এতো অধৈর্য হইনি, যতটা আজ হচ্ছি? আমরা ধৈর্যধারণ করতে পারছি না বলে আমাদের সন্তানদের মনোবল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ দায় তো আমাদের। সন্তানরাই তো আমাদের জীবনে আজকের এই স্বর্গসুখ এনে দিয়েছে। অভিভাবক হিসেবে সন্তানদের কাছে আর কত চাইবো আমরা? দায়িত্ব কি আমাদের কিছু কম আছে?

আমাদের নিজেদের দায়িত্বে অবহেলার জন্য, ধৈর্য ধারণে অক্ষমতার জন্যই তো আজ আমরা এত বাজেভাবে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের আগ্রাসনের শিকার হয়েছি। প্রতিবেশী রাষ্ট্র যে সুযোগ-সুবিধাগুলো আগে পেত, তা আবারও ফিরে পাওয়ার জন্য, স্বৈরাচারকে আবারও প্রতিষ্ঠিত করর জন্য যে আরও কয়েকগুণ বীভৎসরূপে আমাদের ওপর হামলে পড়বে না, তা কিন্তু আমরা হলফ করে বলতে পারি না।

বন্ধুর বেশে ষড়যন্ত্রকারী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের আগ্রাসন সফল হলে যে আমরা আবারও সেই নরকে পড়ে যেতে পারি– এই ছোট্ট বিষয়টি আমরা কেন বুঝতে পারছি না?

দেখুন, বাঁধ খুলে দেওয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে যতোই জাস্টিফাই করুক, যত ধরনের কন্সপিরেসি থিওরি দাঁড় করানোর চেষ্টা করুক না কেন, এ কথা কিন্তু কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না যে আগাম সতর্কবার্তা না দিয়েই বাঁধ খুলে দেওয়া হয়েছে। আগে থেকে বিষয়টি জানতে পারলে হয়তো বন্যায় আমাদের কিছুটা কম ক্ষয়ক্ষতি হতো, তবে সাধ্যমতো ন্যূনতম সাবধানতা কি আমরা অবলম্বন করতে পারতাম না? ৫০ ভাগ না হলেও অন্তত ৩০ ভাগ ক্ষয়ক্ষতির হার তো আমরা নিশ্চিতভাবেই কমাতে পারতাম।

সুতরাং বুঝতে হবে, পুরো বিষয়টি উদ্দেশ্যমূলক এবং বর্তমান সরকারকে বিপদে ফেলার এক জঘন্য পাঁয়তারা। ভারতের ম্যাপের দিকে তাকালেই দেখা যায়, ভারতের চারপাশে পাকিস্তান, চীন, নেপাল ও বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ছাড়া বাকি রাষ্ট্রগুলোকে তো আগে থেকেই ভারত শত্রুজ্ঞান করে আসছিল। একমাত্র বাংলাদেশই ছিল ভারতের হাতের পুতুল। চারদিকে শত্রু রাষ্ট্র দিয়ে পরিবেষ্টিত একটি দেশ যখন দাবার শেষ গুটিটিও হারিয়ে ফেলে, তখন সে যে কোনো উপায়ে স্বার্থ পুনঃরুদ্ধারের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে।

সর্বোপরি, দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা একবার ভাবুন। কতো বড় বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে দেশটা আবারও জেগে উঠেছে! এ যেন সদ্য জন্ম নেওয়া নতুন এক শিশু! তাকে মাথা তুলে দাঁড়াবার সুযোগটি তো অন্তত আমাদের করে দিতে হবে। তার উপর বিগত সরকারের অগণিত কেলেঙ্কারি-চুরি-দুর্নীতির প্রভাবে আহত-জর্জরিত এই বাংলাদেশ। দেশের এত বড় দুরবস্থায় দেশের দায়িত্ব যারা কাঁধে তুলে নিয়েছেন, তাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। ড. ইউনূসের প্রতিটি বক্তব্য শুনুন। তার প্রতিটি কথা আপনার হৃদয়কে ছুঁতে বাধ্য।

আমরা তাদের একটু সময় দেই না! তাদের ছোট ছোট ভুলগুলো শেখার মাধ্যম বিবেচনা করে একটু ছাড় দেই না! ভুল করতে করতেই তাদের এগোনোর পথটা একটু মসৃণ করে দেই না!

একমাত্র আমার-আপনার সহযোগিতাই পারে বর্তমান সরকারকে দেশ পুনর্গঠনে সাহায্য করতে। এই সময় অধৈর্য হওয়ার, ক্ষিপ্ত হওয়ার, দোষারোপ করার, কিংবা আন্দোলন করার নয়। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত জায়গা থেকে প্রত্যেককে দেশ পুনর্গঠনে অংশ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিদেশি শক্তির আগ্রাসন মোকাবিলায় একতাবদ্ধতাই আমাদের মূল শক্তি।

রিফাত আহমেদ: চেয়ারপারসন, সিদ্দিকি’স ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এবং কোষাধ্যক্ষ, বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল’স অ্যাসিস্ট্যান্স ফাউন্ডেশন

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডেঙ্গু মোকাবিলায় ১০ টিম গঠন

প্রভাবশালীদের দখলে চরঠিকা খাল

গাজীপুরে বাসচাপায় পথচারী নিহত, বাসে আগুন

মায়ামি ছাড়বেন মেসি!

ভারতে মাঙ্কিপক্সের ভয়ানক ভ্যারিয়েন্ট ‘ক্লেড ১বি’ শনাক্ত

ছেলের ফলাফল জালিয়াতি, মাউশির পরিচালক নারায়নকে ওএসডি

ঢাবির শামসুন নাহার হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের কমিটি গঠন

সাভারে দুর্গোৎসব নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময়

সিলেটে বাড়ছেই ডেঙ্গুর প্রকোপ

সীমানা প্রাচীর ভাঙতেই বের হলো ৪৫টি বিষধর সাপ 

১০

চট্টগ্রামে বিএনপির সমাবেশে শেখ হাসিনার নামে গান

১১

শিগগিরই গণমাধ্যম কমিশন গঠিত হচ্ছে : তথ্য উপদেষ্টা

১২

শিল্প প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সরবরাহের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ

১৩

পরিচয় মিলেছে মেহেদি রাঙা হাত বাঁধা সেই তরুণীর

১৪

‘জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ অন্তর্বর্তী সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ’

১৫

গণমাধ্যম কর্মীরা গণঅভ্যুত্থানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে : ফরহাদ মজহার

১৬

স্ত্রীকে গলা টিপে হত্যা, স্বামী পলাতক

১৭

নাশকতার মামলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কারাগারে

১৮

টেকসই বেড়িবাঁধের দাবিতে কলাপাড়ায় মানববন্ধন

১৯

রাবি শিবির সভাপতির ওপর ছাত্রলীগের লোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা

২০
X