মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১
মো. মাহামুদুর রহমান পাপন
প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক উন্নয়নে দরকার নির্মাণ শিল্পের বাজার

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

নির্মাণ শিল্পে উন্নয়ন কর্মসংস্থান সৃষ্টির অন্যতম প্রধান মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়। বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প যেমন- সড়ক, সেতু এবং গৃহনির্মাণে বিপুল সংখ্যক কর্মীর প্রয়োজন হয়, যা বিভিন্ন স্তরে কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে। এই শিল্পে স্থানীয় সম্পদ ও উপকরণ ব্যবহার করে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা আরও বাড়ানো যায়। পাশাপাশি, দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করে আধুনিক নির্মাণ প্রযুক্তি ও পদ্ধতি সম্পর্কে কর্মীদের জ্ঞান বাড়ানো সম্ভব, যা তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগকে আরও সম্প্রসারিত করে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলো, বিশেষ করে নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ এবং পরিসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

এছাড়াও, প্রযুক্তির ব্যবহার ও ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে নির্মাণ প্রকল্পগুলোর গতি ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়, যা নতুন প্রযুক্তিগত কর্মসংস্থানের দ্বার উন্মোচন করে। টেকসই নির্মাণ পদ্ধতির প্রয়োগ এবং নগর উন্নয়ন প্রকল্পের প্রসারও কর্মসংস্থান বাড়াতে সহায়ক। সর্বোপরি, সরকারের নীতি সহায়তা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করলে নির্মাণ শিল্পে কর্মসংস্থানের সুযোগ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

নির্মাণ শিল্পে উন্নয়ন মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার জন্য বিভিন্ন উপায় রয়েছে। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায় উল্লেখ করা হলো:

বৃহৎ নির্মাণ প্রকল্প: বৃহৎ প্রকল্পগুলো সাধারণত অবকাঠামো উন্নয়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং জনসংখ্যার চাহিদা মেটানোর জন্য নির্মিত হয়। এসব প্রকল্প রাস্তা, সেতু, বিদ্যুৎকেন্দ্র, জলাধার ইত্যাদি নির্মাণের মাধ্যমে পরিবহন, শক্তি, জল ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি পরিষেবাগুলো উন্নত করে। এছাড়াও, বৃহৎ প্রকল্পগুলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং একটি অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এসব প্রকল্প জাতীয় বা আন্তর্জাতিক গুরুত্বের বিবেচনায়ও নির্মিত হয়।

শিল্প দক্ষতা বৃদ্ধি: নির্মাণ কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা যেতে পারে। এতে তারা উন্নত প্রযুক্তি এবং আধুনিক নির্মাণ পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করবে, যা কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। এ ক্ষেত্রে পেশাজীবী সংগঠনগুলো সরকারকে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসতে পারে।

স্থানীয় সম্পদ ব্যবহার: স্থানীয় সামগ্রী এবং উপকরণ ব্যবহার করে নির্মাণ কাজ পরিচালনা করলে স্থানীয় উৎপাদনকারীদের জন্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।একই সাথে পরিবহন খরচ কমে যায় যা একটি প্রকল্পের মোট খরচকে কমিয়ে ফেলে বহুগুণ।

নতুন প্রযুক্তির প্রবর্তন: নির্মাণ শিল্পে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে এবং অটোমেশনের মাধ্যমে কাজের গতি ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা যায়। এতে কিছু ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত কর্মীদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (SME) সৃষ্টি: নির্মাণ শিল্পে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ তৈরি করতে পারলে অনেক লোকের কর্মসংস্থান করা সম্ভব। ছোট আকারের নির্মাণ কোম্পানি, পেশাভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান, সরবরাহকারী এবং উপাদান প্রস্তুতকারীরা এখানে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা: নির্মাণ শিল্পের জন্য গবেষণা ও উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা যায়। উদ্ভাবনী সমাধান এবং নতুন উপকরণ বা পদ্ধতি উদ্ভাবনে সহায়ক হতে পারে। পেশাজীবী সংগঠনগুলো বিভিন্ন গবেষণামূলক প্রতিযোগিতার উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে নতুন নতুন উদ্ভাবনী ধারণার অনুসন্ধান করতে পারে।

টেকসই নির্মাণ: পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই নির্মাণ পদ্ধতির দিকে ঝোঁক বাড়ালে, এর সঙ্গে সম্পর্কিত ক্ষেত্র যেমন: পুনর্ব্যবহার, পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপাদান উৎপাদন, এবং পরিবেশ পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।এর জন্য সরকারকে স্থপতি ও প্রকৌশলীদের সাথে নিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ: বিদেশি কোম্পানিগুলিকে দেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করলে নতুন নির্মাণ প্রকল্পের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে।

সরকারি প্রকল্পের বিস্তৃতি: সরকার নির্মাণ খাতে বড় মাপের প্রকল্প (যেমন: শহুরে উন্নয়ন, জলবায়ু স্থিতিস্থাপক অবকাঠামো) বাড়ালে প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। সেই সাথে সরকারি ও বেসরকারি দুই প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করবে।

উন্নততর ডিজাইন: উচ্চ মানের স্থাপত্য ডিজাইনের মাধ্যমে বৃহৎ প্রকল্পগুলোতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা সম্ভব।নতুন উদ্ভাবনী নকশা দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত উন্নয়নের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ল্যান্ডস্ক্যাপে আর্কিটেকচার তৈরির মাধ্যমে বিদ্যমান পরিবেশের উন্নয়ন করা সম্ভব এবং নতুন কর্মসংস্থানেরও সুযোগ তৈরি করা সম্ভব।

আবাসন খাতে বিনিয়োগ: সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে পরিবেশ বান্ধব বিশেষ আবাসন প্রকল্প চালু করে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যেতে পারে।সেই সাথে পেশাজীবীদের সাথে নিয়ে নিম্ন আয়ের লোকেরা যেন আরামদায়ক ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করতে পারে তার জন্য লো-কস্ট হাউজিং নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

নির্মাণ সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি উৎপাদন: নির্মাণে ব্যবহৃত সরঞ্জাম এবং যন্ত্রপাতি দেশে উৎপাদন করলে শিল্পখাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।একই সাথে উৎপাদন ও মেরামত খরচ অনেকাংশে কমে যাবে। বাজারজাতকরণে স্বদেশী বেকারদের কর্মসংস্থান তৈরি হবে এবং ভালোমানের পণ্য বিদেশে রপ্তানির বাজারও সৃষ্টি হবে।

উন্নত সড়ক ও রেল যোগাযোগ: উন্নত সড়ক ও রেল যোগাযোগ সাধারণত দ্রুত, নিরাপদ, এবং কার্যকর পরিবহণ নিশ্চিত করতে নির্মিত হয়। এগুলো শহর ও গ্রামের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধি করে, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে সহায়তা করে, এবং মানুষ ও পণ্য পরিবহণ সহজ করে তোলে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে, সময় ও খরচ সাশ্রয় করে এবং দুর্ঘটনা কমিয়ে এনে জীবনযাত্রার মান উন্নত করে। এছাড়া, পর্যটন ও বিনিয়োগ আকর্ষণেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন: নির্মাণ শিল্পের সাথে সম্পর্কিত শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে দক্ষ কর্মী তৈরি করা এবং তাদের কর্মসংস্থান করা সম্ভব। চাকরির বাজার তৈরিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব প্রতিষ্ঠান দক্ষ ও যোগ্য কর্মী তৈরি করতে সহায়ক হয়, যা শ্রমবাজারের চাহিদা পূরণ করে। মানসম্পন্ন শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে, যা তাদের চাকরির প্রতিযোগিতায় সাফল্য অর্জনে সহায়তা করে। এছাড়া, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো আধুনিক প্রযুক্তি ও শিল্পের চাহিদা অনুযায়ী কর্মীদের প্রস্তুত করে, যা উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক হয়। সামগ্রিকভাবে, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে একটি শক্তিশালী ও দক্ষ কর্মী বাহিনী গড়ে ওঠে, যা চাকরির বাজারকে স্থিতিশীল করে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখে।

ব্যাংকিং ও অর্থায়ন সহজতর করা: নির্মাণ খাতে বিনিয়োগ সহজ করতে ব্যাংকিং এবং অর্থায়ন সহজতর করলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলি কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে পারে।এখানে বিভিন্ন প্রকল্প ভিত্তিক এবং খাত ভিত্তিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ঋণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে যা শুধু প্রকল্পে নয়, সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীরাও যেন গ্রহণের সুযোগ পায়। একই সাথে পরিবেশ বান্ধব প্রকল্পগুলোতে প্রণোদনা ঋণের ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং সহজে যেন সেই ঋণ গ্রহণ করা যায় তার জন্য বিভিন্ন পেশাজীবীদের নিয়ে বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।ঋণ গ্রহণের জন্য পেশাজীবী দ্বারা প্রাথমিক নিরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে, এতেকরে ঋণের ঝুঁকি কমবে এবং নিরীক্ষক হিসেবে পেশাজীবীদের নতুন কর্মসংস্থানেরও সুযোগ তৈরি হবে।

পরামর্শ সেবা ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনা: নির্মাণ প্রকল্পগুলির জন্য বিশেষায়িত পরামর্শ সেবা প্রদান করে প্রকল্প পরামর্শ ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান তৈরি করা যেতে পারে।এই জন্য প্রথমেই দেশের পেশাজীবীদের সাথে নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের নীতি প্রণয়ন করতে হবে। সেই সাথে বিদেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের উপর আস্থা কমিয়ে স্বদেশী পেশাজীবী প্রতিষ্ঠান বা স্বতন্ত্র পেশাজীবীদের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিলে দেশের প্রকল্প প্রণয়ন, বাস্তবায়ন, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা এবং দেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রেও প্রচুর উন্নয়ন সম্ভব।

টেকসই শক্তি ব্যবহারে উৎসাহ: চাকরির বাজার তৈরিতে টেকসই শক্তি ব্যবহারে উৎসাহ প্রদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব, যেমন সৌর ও বায়ু শক্তি উৎপাদন, শক্তি সঞ্চয় প্রযুক্তি, এবং সবুজ নির্মাণে দক্ষতা অর্জন। এছাড়া, টেকসই শক্তির প্রচলন পরিবেশ সুরক্ষার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে, যা নতুন ব্যবসা ও শিল্প খাতের বিকাশে সহায়তা করে এবং সার্বিকভাবে কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে অবদান রাখে।

বিপণন ও সেবা খাতে বৃদ্ধি: নির্মাণ শিল্পে চাকরির বাজার তৈরিতে বিপণন ও সেবা খাতের বৃদ্ধি বিশেষ ভূমিকা রাখে। উন্নত বিপণন কৌশল নতুন প্রকল্প ও ক্লায়েন্ট আকর্ষণ করে, যা নির্মাণ কার্যক্রম বাড়ায় এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে। সেবা খাত, যেমন প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, ডিজাইন কনসাল্টেন্সি, এবং গ্রাহক সেবা, নির্মাণ প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নে সহায়ক হয়। এছাড়া, নির্মাণ-সম্পর্কিত প্রযুক্তি ও সেবা খাতের উন্নয়ন দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীর চাহিদা বৃদ্ধি করে, যা সামগ্রিকভাবে নির্মাণ শিল্পে কর্মসংস্থানের প্রসারে সহায়তা করে।

অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও ডিজিটালাইজেশন: নির্মাণ শিল্পে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও ডিজিটালাইজেশন উৎসাহ প্রদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো নির্মাণ প্রক্রিয়ার দক্ষতা বৃদ্ধি করে, যেমন প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, ডিজাইন, এবং সরবরাহ চেইন সহজতর করা। অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো নির্মাণ সংক্রান্ত সেবা ও পণ্যের বাজার বিস্তৃত করে, নতুন ক্লায়েন্ট ও প্রকল্পের সুযোগ সৃষ্টি করে। এছাড়া, ডিজিটাল টুলস ও প্রযুক্তির ব্যবহার কর্মীদের দক্ষতা বাড়িয়ে সময় ও খরচ সাশ্রয় করে। এটি নির্মাণ শিল্পে উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে, যা সামগ্রিকভাবে কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক হয়।

মান নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা: নির্মাণ কাজের মান নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব।নির্মাণ কাজের মান নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মান নিয়ন্ত্রণ নির্মাণের স্থায়িত্ব, কার্যকারিতা, এবং স্থাপনার দীর্ঘায়ু নিশ্চিত করে, যা ভবিষ্যৎ ব্যয় ও মেরামতের প্রয়োজনীয়তা কমায়। নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্ঘটনা রোধ করে, শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে, এবং কর্মক্ষেত্রে আস্থা বৃদ্ধি করে। নিরাপত্তা মানদণ্ড অনুসরণ করে কাজের গুণমান বজায় রাখা সম্ভব, যা প্রকল্পের সময়মতো ও সঠিকভাবে সম্পন্ন হওয়া নিশ্চিত করে। সামগ্রিকভাবে, মান নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা একটি সফল এবং টেকসই নির্মাণ প্রকল্পের মূল ভিত্তি। আর মান নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কিছু পেশাজীবীর প্রয়োজন হবে যা এই খাতে চাকুরির বাজার সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।

জল ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: নির্মাণ প্রকল্পে জল সংরক্ষণ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থা করে কর্মসংস্থান তৈরি করা যেতে পারে। সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে যেমন নির্মাণ প্রকল্পের পরিবেশ সুরক্ষা ও খরচ কমানো সম্ভব ঠিক তেমনই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য পরিবেশবিদ পেশাজীবীদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে যা দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখবে।

কারিগরি শিক্ষা প্রসার: কারিগরি শিক্ষা এবং ভোকেশনাল ট্রেনিং প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে নির্মাণ শিল্পের দক্ষতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে।একজন দক্ষ শ্রমিক একটি নিরাপদ নির্মাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন পেশাজীবীদের দ্বারা ট্রেনিং সেন্টারের মাধ্যমেও শ্রমিকদের দক্ষতা করা যেতে পারে। এর জন্য সরকারকে পেশাজীবীদের সাথে নিয়ে নীতি প্রণয়ন করতে হবে।

প্রতিষ্ঠানের আধুনিকায়ন: নির্মাণ সংস্থাগুলির আধুনিকায়ন এবং আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব।এছাড়াও, এটি নিশ্চিত করতে হবে যে নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, কলকবজা ও সফটওয়্যারগুলো কম খরচে পেশাদাররা ব্যবহার করতে পারেন।

কনস্ট্রাকশন ফিনিশিং ও ইন্টিরিয়র ডিজাইন: নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর ফিনিশিং, ইন্টিরিয়র ডিজাইন, এবং ল্যান্ডস্কেপিংয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা যেতে পারে।

নির্মাণ শিল্পে উন্নয়ন কর্মসংস্থান সৃষ্টির অন্যতম প্রধান মাধ্যম হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যা দেশের অর্থনীতিকেও চাঙ্গা করবে। বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ পর্যন্ত, প্রতিটি স্তরে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়। দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ, স্থানীয় সম্পদের ব্যবহার, এবং টেকসই নির্মাণ পদ্ধতির মাধ্যমে আরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। এছাড়া, প্রযুক্তির প্রয়োগ ও ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে শিল্পের কার্যকারিতা বাড়িয়ে নতুন কর্মসংস্থানের দ্বার উন্মোচিত হয়।

সার্বিকভাবে, নির্মাণ শিল্পের সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং সঠিক সরকারি নীতি সহায়তা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে। এর জন্য দেশের সরকারের উচিত নির্মাণ শিল্পের সাথে জড়িত সকল পেশাজীবীদের দায়িত্ব বৃদ্ধি করা ও তাদের উপর আস্থা রাখা।

মো. মাহামুদুর রহমান খান পাপন: পলিসি এনালিস্ট, স্থপতি, পরিবেশবিদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপক

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ডের বিচার হতে হবে : আবু হানিফ

ক্রীড়াবিদ শওকত আলীর স্মরণে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল

শাহরিয়ার কবির আটক

সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

রাসূল (স.) আদর্শ ধারণ করে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে

ঝিনাইদহে নাশকতা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী সুজনের গ্রেপ্তারের খবরে বিএনপির আনন্দ মিছিল

মানিকগঞ্জে ধলেশ্বরী নদী থেকে অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার

ভূমি উপদেষ্টার পরিদর্শন, হয়রানি ছাড়া নামজারি খতিয়ান পেয়ে উৎফুল্ল নাজিম  

চট্টগ্রামে জশনে জুলুশে মানুষের ঢল  

১০

বন্যা পরবর্তী প্রাণী চিকিৎসায় বাকৃবি শিক্ষার্থীরা

১১

‘দুনিয়া ও আখিরাতে মুক্তির জন্য রাসুল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করতে হবে’

১২

নার্সের ভুলে ৩ দিনের শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ

১৩

‘স্মরণকালের সবচেয়ে বড় গণসমাবেশ’ করার প্রস্তুতি বিএনপির

১৪

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালিত

১৫

রাত ১টার মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস

১৬

সিরাজগঞ্জে কবরস্থানে মিলল অস্ত্র ও গুলি

১৭

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে জামায়াতের নায়েবে আমিরের মতবিনিময়

১৮

২৮ থেকে ৪২তম বিসিএসের বঞ্চিত সেই ক্যাডাররা ফের বঞ্চনার শিকার

১৯

তিন বিভাগে ভারি বৃষ্টির আভাস

২০
X