নূরে আলম সিদ্দিকী
প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৪, ০৫:২৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

চৌদ্দ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীর বঞ্চনার ১৩ বছর!

কমিউনিটি ক্লিনিকে রোগীদের ভিড়। ছবি : সংগৃহীত
কমিউনিটি ক্লিনিকে রোগীদের ভিড়। ছবি : সংগৃহীত

জনগণের দোরগোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে হাসিনার সরকার কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রায় ১৪ হাজার স্বাস্থ্য কর্মী (সিএইচসিপি) নিয়োগ দেয় ২০১১ সালে। যার ফলে গ্রামীণ জনপদের মানুষ হাতের নাগালে পাচ্ছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা। সেবা পেয়ে সন্তুষ্ট কোটি কোটি মানুষ।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে এই কমিউনিটি ক্লিনিক। তবে ভালো নেই এতে কর্মরত সিএইচসিপিরা। সরকারের খামখেয়ালিপনা, একগুঁয়েমি ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন তারা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে পরিবার নিয়ে শঙ্কায় দিন পার করছেন তারা।

জানা গেছে, ক্লিনিকে সেবা প্রদানের জন্য তিনজন কর্মীর মধ্যে রাজস্ব খাতে নিয়োগপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার কল্যাণ সহকারী সপ্তাহে ২ দিন ক্লিনিকে সেবা দেন। আর যিনি ক্লিনিকের ইনচার্জ বা নিয়মিত ৬ দিন ক্লিনিকের যাবতীয় কর্মকাণ্ড ও ক্লিনিক প্রধান হিসেবে কর্মরত তিনি প্রকল্প না ট্রাস্ট, তা গেল ১৩ বছরেও নির্ধারণ হয়নি।

সিএইচসিপিরা করোনা যুদ্ধে নিজেকে সঁপে দিয়ে দেশে চলমান সাধারণ ছুটিতে অথবা লকডাউনে কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে থেমে ছিল না তাদের সেবা। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সেবা প্রদানে নিজেকে ফ্রন্ট লাইনে রেখে জীবনবাজি রেখে কাজ করেছেন।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে রোগীদের ভিড় কমলেও বেড়ে ছিল গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে। গ্রামীণ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে প্রাথমিক চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত সিএইচসিপিরা কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই সাধারণ মাস্ক পরে রোগী দেখে দিয়েছেন পরামর্শ ও প্রাথমিক ওষুধ।

তবে আশ্চর্যের বিষয়- তাদের চাকরি প্রকল্প না ট্রাস্ট, সরকারি না বেসরকারি সেটাও আজ অজানা! দীর্ঘ ১৩ বছর চাকরি করছেন এক বেতনে। করোনা যুদ্ধে অনেকে মরে বা আক্রান্ত হয়ে সাদা কাগজের শোক ছাড়া কিছুই পাননি।

নাগরিক অধিকার স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে গেল সরকার প্রতিটি ওয়ার্ডে ন্যূনতম একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করে। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছেন সেই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা (সিএইচসিপি)। প্রতিটি ক্লিনিকেই সেবাপ্রত্যাশীদের ভিড় লক্ষণীয়। দৈনিক গড়ে ৪০/৫০ জন রোগী আসে কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নিতে।

দেশের তৃণমূল জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবার লক্ষ্যে নিভৃত গ্রামাঞ্চলে গড়ে তোলা প্রায় চৌদ্দ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যসেবার প্রতীক হয়ে উঠেছে। সেখানে প্রসূতি মায়ের নিরাপদ প্রসবসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেবা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ ২০২০-২১ বর্ষব্যাপী অনেক কর্মসূচি ঘোষণা করে। কিন্তু গ্রামীণ জনপদের প্রতিষ্ঠান কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপিদের চাকরি দীর্ঘ ১৩ বছর অতিবাহিত হতে চললেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেনি।

১৯৯৬ সালে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো চালু করার পর মাঝ পথে গিয়ে এগুলো বন্ধ হয়ে যায়। পরে আবার ২০০৯ সাল থেকে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো চালু করে রিভাইটালাইজেসন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার ইনশিয়েটিভস ইন বাংলাদেশ প্রকল্প নামে। এই প্রকল্প জুন ২০১৪ সালে শেষ হয়ে পুনঃ মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৬ পর্যন্ত চলে এবং পরে অপারেশন প্ল্যান কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার নামে (২০১৭-২০২২) চলমান আছে কিন্তু এরই মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট বিল-২০১৮ পাস করে অপারেশন প্ল্যান থেকে কমিউনিটি ক্লিনিককে ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়ে প্রক্রিয়াধীন আছে।

২০১১ সাল থেকে আগস্ট ২০১৭ পর্যন্ত নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয় ৩ হাজার ১৩৮টি। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৮৬১টি। ২০২২ সালের মধ্যে নতুন আরও ১০২৯টিসহ সারা দেশে ১৭ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ বাস্তবায়নে কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিবিএইচসি। এরই ধারাবাহিকতায় পর্যায়ক্রমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কমিউনিটি ক্লিনিকের পথচলা শুরু হয়।

আর ২০১১ সালে কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়োগ দেওয়া হয় একজন করে সিএইচসিপি। স্বাস্থ্য খাতে জাতিসংঘ প্রণীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে এগিয়ে। দেশে-বিদেশে আজ রোল মডেল কমিউনিটি ক্লিনিক। দেশের রোগীরা সেবা পেয়ে সন্তুষ্ট।

সরকার নানা পুরস্কার পেয়ে ক্রেডিট বাড়িয়েছে নিজেদের। কিন্তু সিএইচসিপিদের জীবন যেখানে ছিল সেখানেই রয়ে গেছে। সরকারের নজর ছিল শুধু নাম প্রচার করে সুনামে। সিএইচসিপিদের যে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকিতে হয় সেদিকে ছিল না কারো কোনো নজর। তবে হ্যাঁ, তারা পেয়েছে অনেক আশ্বাস। যার একটিও পূরণ করেনি গত সরকার।

নিয়মিত বেতন-ভাতা পান না কর্মীরা। অজানা ভূত এসে ভর করে তাদের বেতন-ভাতায়। বন্ধ থাকে মাসের পর মাস। একই বেতনে চাকরি করছেন দীর্ঘ ১৩ বছর, নেই কোনো ইনক্রিমেন্ট। পাচ্ছেন না ওপির সুবিধাও।

চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচির (এইচপিএনএসডিপি) (২০১৭-২০২২) অধীন অপারেশনাল প্ল্যানে (ওপিতে) সিএইচসিপিদের ইনক্রিমেন্ট ও ধাপে ধাপে রাজস্ব খাতে চাকরি স্থানান্তরের নির্দেশনাও রয়েছে। কিন্তু অদ্যাবধি কোনো কিছুর বাস্তবায়ন হয়নি। বারবার আশ্বাসেই থেমে আছে সিএইচসিপিদের জীবন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩ সালে সিএইচসিপিদের চাকরি স্থায়ীকরণের নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা চিঠির মাধ্যমে সিভিল সার্জনদের জানান তৎকালীন পরিচালক প্রশাসন ডা. মো. শাহনেওয়াজ। আবার ২২ এপ্রিল ২০১৪ সালে তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব ডা. মাখদুমা র্নাগিস চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের নিমিত্তে সিএইচসিপিদের সার্ভিস বুক খোলা ও বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন পাঠানোর কথা বলে চিঠি পাঠান সিভিল র্সাজনদের কাছে। ফলে সিএইচসিপিরা চাকরি রাজস্বের স্বপ্ন দেখেছিলেন।

১৩ বছরে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প অফিস স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সিএইচসিপিদের চাকরি রাজস্বকরণের বিষয়ের আলোকে কয়েক দফা চিঠি চালাচালি করে।এরই অংশ হিসেবে গত ১৬ জুন ২০১৩ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রকল্প বাস্তবায়ন ৩ অধিশাখা, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা স্মারক নং- ৪৫.১৭৪.০১৫.০১০০.০০১.২০১১-২১৬ এ রিভাইটালাইজেসন অব কমিউনিটি হেলথ কেয়ার ইনশিয়েটিভস ইন বাংলাদেশ (আরসিএইচসিআইবি) শীর্ষক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি) রাজস্ব খাতে স্থানান্তর সম্পর্কিত প্রস্তাব প্রেরণ করে।

গত ২০১৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাখালী ঢাকা, স্মারক নং স্বা:অধি:/প্রশা-৩/বিবিধ-৩/২০০৮/৪৬৬৮ এ উল্লেখ করা হয় যে, সিএইচসিপিদের চাকরি স্থায়ীকরণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তা প্রক্রিয়াধীন আছে। এর পর গত ১৭/০৪/২০১৪ ইং তারিখে স্মারক নং- আরসিএইচসিআইবি/প্রশা-১৩২/২০১২/৬৫৪ এ সিএইচসিপিদের চাকরি বই খুলতে বলা হয় এবং গত ২২/০৪/২০১৪ ইং তারিখে স্মারক নং- আরসিএইচসিআইবি/সিসি/সার্কুলার-১২৪/৬৭১ এ সিএইচসিপিদের হাল নাগাদ বার্ষিক/বিশেষ গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) চাওয়া হয়।

এর ধারাবাহিকতায় গত ১৯/০৬/২০১৪ স্মারক নং- আরসিএইচসিআইবি/কন:/শৃঙ্খলা-৯৭/২০১২/৯২৭ এ উল্লেখ করা হয়, কোনো সিএইচসিপি অপরাধের দায়ে বা কোনো মোকাদ্দমায় চার্জশিটভুক্ত হলে তা সার্ভিস বইতে লিপিবদ্ধকরণ এবং তার চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর না হওয়া প্রসঙ্গে নোটিশ প্রদান করা হয়।

বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার মূলধারার সঙ্গে সম্পৃক্তকরণের লক্ষ্যে জুলাই ২০১১ থেকে আরসিএইচসিআইবি প্রকল্পের পাশাপাশি ৩য় স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর উন্নয়ন কর্মসূচি (এইচপিএনএসডিপি)-এর কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) অপারেশনাল প্ল্যানের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়েছে যা ডিসেম্বর ২০১৬ তে সমাপ্ত হয়েছে।

বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে ৪র্থ সেক্টর কর্মসূচিতে কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) অপারেশনাল প্ল্যান জানুয়ারি ২০১৭ থেকে জুন ২০২২ মেয়াদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জুন ২০১৭ সাল থেকে অপারেশন প্ল্যানভুক্ত করে কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার প্রকল্পের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম চালু রাখা হয়। কিন্তু নতুন প্রকল্প চালুর আগেই অদ্যাবধি চাকরি রাজস্ব না হওয়ায় হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন সিএইচসিপিদের অনেকে।

ইতোপূর্বে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সাড়ে ১৩ হাজার সিএইচসিপিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘চতুর্থ স্বাস্থ্য জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি (এইচপিএনএসপি)’ প্রকল্পে স্থানান্তর করা হয়। তাদের ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এ প্রকল্পে স্থানান্তর করে গত ১৫ মে ২০১৭ সালে চিঠি দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু তাদের নতুন প্রকল্পে স্থানান্তরের আগেই রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়।

আবেদনের প্রেক্ষিতে কমিউনিটি ক্লিনিকে কমিউনিটি হেল্থ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তদের চাকরি প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের অনুলিপি ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। যা বাস্তবায়ন করার জন্য গত ১৮/০১/২০১৮ তারিখে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএইচসিপিএ), দাবি আদায় বাস্তবায়ন কমিটি ২০/০১/২০১৮ থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করে। ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে রিক্তহস্তে কমিউনিটি বেইজ হেলথ কেয়ার সিবিএইচসি স্মারক নং- স্বা:অধি/সিবিএইচসি/প্রশাসন-২২/২০১৮/৩১৭ তারিখ ২৭/০২/২০১৮ ইং মোতাবেক ০৩/০৩/২০১৮ খ্রি. সিএইচসিপিরা কর্মে ফিরে আসতে বাধ্য হন।

আর যৌক্তিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে স্মারক নং স্বা:অধি/সিবিএইচসি/প্রশাসন/সিএইচসিপি/শৃঙ্খলা ১৬/২০১৮/২১৩ তারিখ ০৩/০২/২০১৮ ইং মোতাবেক আট সিএইচসিপিকে প্রাথমিক বহিষ্কার করে, অপরাধ- তাদের ডাকে আন্দোলন জমেছিল- ন্যায্য অধিকার চেয়েছিল। কারণ দর্শানো নোটিশ প্রেরণ করলে লিখিত জবাব দাখিল করেও তার সুরাহা হয় দীর্ঘ সময় পরে।

দেশে ন্যায্য অধিকারের জন্য পেশাজীবীদের আন্দোলন নতুন কিছু নয়। কিন্তু একটি মহল সিএইচসিপিদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম নিরুৎসাহিত করার জন্য সাসপেন্ডকে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেছে। কৌশলে চাকরি রাজস্বের আশ্বাসের বাস্তবায়ন না করে হাইকোর্টের রাজস্বের পক্ষে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) পদের চাকরি জাতীয়করণের (রাজস্ব) বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশ সংশোধন (মডিফাই) করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আদালত সিএইচসিপিদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরে হাইকোর্টের রায় সংশোধন করে তাদের চাকরি ‌‘কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন-২০১৮’ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।

২০২২ সালের ৬ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের আপিল নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। গেল সরকার ট্রাস্ট বাস্তবায়নে এক ধরনের জোর করেই কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীদের স্থায়ী করার দোহাই দিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট-২০১৮ বিল পাস করে। প্রবিধান প্রণয়ন পূর্বক সব সুবিধা প্রদানের কথা প্রকাশিত গেজেটে রয়েছে।

ট্রাস্ট বোর্ড গঠন ও গেজেট প্রকাশের দীর্ঘ ছয় বছর অতিবাহিত হলেও সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখনো প্রবিধান প্রস্তুত করে প্রকাশ করতে পারেনি। চাকরি স্থায়ী করে সুযোগ-সুবিধা দিতে পারেনি। তাই প্রত্যন্ত অঞ্চলে জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের কারিগর খ্যাত কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপিরা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা সত্ত্বেও নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না, নেই ইনক্রিমেন্টও। এক বেতনে আজ ১৩ বছর পার।

স্বাস্থ্যকর্মীদের জোর করে বিষপানের মতো কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন-২০১৮ বাতিল চায়। সিএইচসিপিরা হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী তাদের চাকরি রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্তসহ বকেয়া ইনক্রিমেন্ট, ১১তম গ্রেড, তিন স্তরের পদোন্নতি ও ইন সার্ভিস ডিপ্লোমা প্রশিক্ষণ প্রদানের বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নবগঠিত ছাত্র-জনতার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য সব উপদেষ্টার সুদৃষ্টি কামনা করেন।

দ্রুত ১৩ বছরের বঞ্চনার দাবি পূরণের আহ্বান করেছেন সিএইচসিপি পরিবারের লোকজন। ১৩ বছর ধরে সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) কর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম হতাশা। ফলে কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবার মান কমার আশংকা করছে সচেতন মহল। দেশে প্রত্যেক পেশাজীবীর আলাদা সংগঠন রয়েছে। তারই মতো বাংলাদেশ সিএইচসিপি অ্যাসোসিয়েশন হলো ১৪ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীর প্রাণের সংগঠন, তাদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের নির্বাচন ছিল গত ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সরকারি ছুটির দিন শুক্রবার। কিন্তু ঐদিন সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জন্য সমবেত হওয়ার অভিযোগ এনে নবনির্বাচিত সভাপতিসহ কয়েকজনকে সাসপেন্ড করে সিবিএইচসি, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল। স্বাস্থ্যকর্মীদের ন্যায্য অধিকার বঞ্চিত রেখে স্বাস্থ্য বিভাগের উন্নয়ন সম্ভব নয়।

এরই মধ্যে সম্প্রতি সিএইচসিপিদের ১৪ গ্রেড থেকে অবনমন করে ১৬ গ্রেডে নিয়ে গেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু যোগ্যতা দেখানো হয়েছে সেই স্নাতক পাস। হিসেব অনুযায়ী, ১৬ গ্রেডের চাকরির যোগ্যতা থাকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস।

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জামায়াত রাজনীতিকে ব্যবসা হিসেবে নেয় না : সেলিম উদ্দিন

২৩ রানের জন্য ফেরারি মিস আর্যবীরের

বড় যুদ্ধ বাধলে যেসব দেশকে পাশে পাবে রাশিয়া

মেসির কণ্ঠে বার্সেলোনার প্রশংসা

‘জনগণের বিরুদ্ধে গেলে সরকারকে এক সেকেন্ডও দেওয়া হবে না’

আইসিসির চুক্তিতে সই করা ১২৪ দেশে গেলেই গ্রেপ্তার হবেন নেতানিয়াহু

বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে জনগণ উদগ্রীব : আমান

নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে যাব : ধর্ম উপদেষ্টা

নির্বাচনী সংস্কার সবার আগে দরকার : এ্যানি 

গুমের সঙ্গে জড়িতরা রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না : প্রেস সচিব

১০

এক ইলিশের দাম ৬ হাজার টাকা

১১

ইয়াং অ্যাক্টিভিস্ট সামিট ২০২৪ লরিয়েট সম্মাননা পেলেন বাংলাদেশি তরুণ

১২

ছায়ানটের লোকসংগীত আসরে দেশসেরা ৫ গীতিকবির গান

১৩

চাঁদাবাজদের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে পুলিশে দিন : হাসনাত আবদুল্লাহ

১৪

বিপ্লবী সরকারের উপদেষ্টা হবেন বিপ্লবী : রিজভী 

১৫

ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে বোলিংয়ে টাইগাররা

১৬

নাটোরে আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ

১৭

স্বামীকে মৃত দেখিয়ে ভুয়া মামলা, স্ত্রীসহ ৩ জন পুলিশ হেফাজতে

১৮

মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ : ধর্ম উপদেষ্টা

১৯

হঠাৎ কেন ইউরেনিয়ামের মজুত বাড়াল ইরান

২০
X