বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ১৯ চৈত্র ১৪৩১
মুজাহিদুল ইসলাম
প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৩, ০২:২৩ পিএম
আপডেট : ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:০৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
বিএনপির মহাসমাবেশ

২৭ জুলাইয়ে কেন মাঠের বাইরে জামায়াত? 

২৭ জুলাইয়ে মাঠের বাইরে জামায়াত। ছবি : সৌজন্য
২৭ জুলাইয়ে মাঠের বাইরে জামায়াত। ছবি : সৌজন্য

গত ১০ দিনে দেশের রাজনীতিতে যেসব ঘটনা ঘটেছে, গত সাড়ে চার বছরে তেমনটি দেখা যায়নি। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) রাজনীতির মাঠ গরম করে রাখলেও মাঠের সঙ্গী জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ও জাতীয় পার্টির উল্লেখযোগ্য কোনো কর্মসূচি চোখে পড়েনি। এমনকি ২৭ জুলাই বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ইসলামী শাসনতান্ত্রিক আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, গণঅধিকার পরিষদসহ অন্যরা কর্মসূচি ঘোষণা করে। তবে এ দিন যেন মাঠের বাইরেই থাকছে দীর্ঘদিনের সঙ্গী জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। জাতীয় পার্টির এ দিন কোনো কর্মসূচি নেই। জামায়াতে ইসলামী ১ আগস্ট সমাবেশের অনুমতি চেয়েছে। ফলে রাজনীতি সচেতনদের প্রশ্ন, জামায়াতে ইসলামী কী ২৭ জুলাই সচেতনভাবে মাঠের বাইরে থাকছে? ২৭ জুলাইয়ের কর্মসূচিতে না থাকলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে একমত দলটি। তাহলে মাঠের রাজনীতিতে কেন ভিন্ন অবস্থানে জামায়াতে ইসলামী! বিষয়টি কী জামায়াতের কৌশল, নাকি সরকারের সঙ্গে সমঝোতার কোনো প্রচেষ্টা, তাও স্পষ্ট নয়।

জামায়াতে ইসলামীর কর্মসূচি দিয়ে শুরু শোকের মাস!

মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) বিকেলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তরে জামায়াতের সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল আগামী ১ আগস্ট সমাবেশের অনুমতির জন্য লিখিত আবেদন নিয়ে ডিএমপিতে যান। তারা রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশের অনুমতি চেয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা, আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ জাতীয় নেতারা ও ওলামায়ে কেরামের মুক্তি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে আগামী ১ আগস্ট বেলা ২টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণ শাখা।

রাজনীতির মাঠে নতুন জামায়াতে ইসলামী

জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ কখনো বিএনপি অথবা আওয়ামী লীগের সঙ্গে এক ধরনের বোঝাপড়া করে রাজনীতি করে আসছে গত প্রায় চার বছর। আদালতের একটি রায়ের ভিত্তিতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন বাতিল করেছিল। বিষয়টি এখন মীমাংসার জন্য উচ্চ আদালতের বিবেচনাধীন। রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে আবার সক্রিয় হওয়া দলটির নেতারা আশা করছেন, নির্বাচন নিয়ে সব পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হলে এবং সবাই তাতে অংশ নেওয়ার পরিবেশ তৈরি হলে তারাও তাদের নিবন্ধন ফেরত পাবেন আইনি প্রক্রিয়াতেই। এরই মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর অপর একটি পক্ষ নতুন দলের নিবন্ধনের আবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এর মাধ্যমে বার্তা মেলে আগামী নির্বাচনে জামায়াতকে অংশগ্রহণের জন্য চেষ্টা করতে পারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

দলের নেতারা বলছেন, এখন দলকে রাজনীতির মাঠে চাঙ্গা ও দৃশ্যমান করাই তাদের মূল লক্ষ্য। আর এর মাধ্যমেই তারা সরকারবিরোধী আন্দোলনে নিজেদের অবস্থানও জোরদার করতে চান। বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী ২০১২ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর থেকে জামায়াত ইসলামী রাজনৈতিকভাবে কার্যত কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে। এরপর নির্বাচন কমিশনে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হওয়ার পর কোনো নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নিতে পারেনি দলটি। এর মধ্যেই তাদের দীর্ঘকালের জোট সঙ্গী বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট থেকেও সরে যেতে হয়েছে জামায়াতকে।

যদিও এটি বিএনপিকে জামায়াত-বিতর্ক থেকে স্বস্তি দেওয়ার কোনো কৌশল কিনা - তা নিয়ে জোর আলোচনা আছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। তবে এসব কিছুকে ছাপিয়ে গত প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নিষ্ক্রিয় থাকার পর গত ১০ জুন ঢাকায় সমাবেশ করে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয় দলটি। বিশেষ করে হঠাৎই কর্তৃপক্ষ সমাবেশের জন্য দলটিকে অনুমতি দেওয়ায় এ নিয়ে নানা ধরনের তর্ক-বিতর্ক শুরু হয় রাজনৈতিক অঙ্গনে।

বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব ও সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা?

কারণ এর আগে পুলিশ যেমন দলটিকে কোথাও কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি, তেমনি পুলিশের বাধার কারণে এর কর্মী সমর্থকরাও প্রকাশ্যে কোথাও বৈঠকেরও সুযোগ পাননি। আবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকেই বহুবার দলটিকে নিষিদ্ধ করে আইন করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

সেই দলটি একটি প্রতিনিধি দল যখন সমাবেশের জন্য পুলিশ কমিশনারের অফিসে যান - তখনই এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীর বক্তব্যও মানুষের দৃষ্টি কাড়ে। মূলত সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মার্কিন এ নীতি চাপে ফেলায় রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন সহজ হবে বলে মনে করেছেন দলটির নেতারা। যদিও সরকারের একটি অংশের সঙ্গে যোগসাজশেই জামায়াত মাঠে নেমেছে এমন প্রচারণাও আছে, যা আওয়ামী লীগ ও জামায়াত উভয়েই প্রত্যাখ্যান করেছে। যদিও রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই।

জামায়াত চাইছে নিজেদের তৎপরতা দৃশ্যমান করতে এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটসহ বিরোধী দলগুলো সরকারবিরোধী যে আন্দোলনের সূচনা করেছে - সেখানে নিজ অবস্থানে থেকে সামিল হতে, যাতে করে জামায়াতও নিজেদের অবস্থান ধরে রেখে নিবন্ধন আদায় করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে নিতে পারে।

কেন ২৭ জুলাই মাঠে নেই জামায়াতে ইসলামী?

নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতির মাঠে শক্ত অবস্থান তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েই জামায়াতে ইসলামী এগুতে চায়। সে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি আসবে দলের পক্ষ থেকে। পাশাপাশি দলীয় কার্যক্রমও চাঙ্গা করার চেষ্টা হবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে। তবে তারা সরকারকে রাগিয়ে কোনো কার্যক্রম করতে চান না। সমঝোতার ভিত্তিতে দলকে এগিয়ে নেওয়াই এখন তাদের লক্ষ্য বলে মনে হচ্ছে।

টিকে থাকার কৌশলের অংশ হিসেবে সরকারের সঙ্গেও দলটির সমঝোতা হয়েছে বলে একটি অংশ ইঙ্গিত দিয়েছে। সেখানে ‘ডোন্ট ডিস্টার্ব’ নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। অতীতে প্রকাশ্যে সরকার ও ভারতবিরোধী হয়ে আক্রোশ প্রকাশ করলেও এখন থেকে সেটি আর করা হবে না। ইসলামের মৌলিক কোনো বিষয়ে আঘাত না এলে তারা রাস্তায় নামবে না। সরকারকে কোনো ধরনের চাপে রাখবে না। তবে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে রাজনৈতিক ইস্যু ও পরিস্থিতিতে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করে যাবে সাংগঠনিক অংশ হিসেবে।

জামায়াত নেতারা বলছেন, শীর্ষ নেতাদের হারানোর পর দলে কিছুটা শূন্যতা রয়েছে। চৌকস নেতার বড় সংকট আছে। আধ্যাত্মিক নেতাও কম। কিন্তু তাদের গতানুগতিক কর্মসূচির মাধ্যমে দলীয় আদর্শিক মাঠ ঠিক রেখেছে। গতানুগতিক কাজ রাজনীতি দুটো প্ল্যাটফরমই ঠিক রেখেছে। তাদের বর্তমানে জনশক্তি সুরক্ষা ও সম্পদ রক্ষার বিষয়গুলো এখন কিছুটা মজবুত আছে। এখন আর অদৃশ্যভাবে কোনো কিছুতে আঘাত আসছে না। নীরবে তারা দলীয় কর্মসূচি করে যাচ্ছে পরিকল্পনার আলোকে।

দলটির নীতিনির্ধারকদের বক্তব্য আন্দোলনের কর্মী আছে; কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃত্বশূন্যতা রয়েছে। সে জন্য তারা কোনো কিছুতে প্রতিবাদে যাবে না। তবে কোনো কারণে যদি বিএনপি জোট থেকে বের করে দেওয়াও হয়. তাহলে সাময়িক অসুবিধার মধ্য দিয়ে তারা দলকে নতুনভাবে তৈরি করে নেবে।

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মধ্যরাতে ঘরে ঢুকে প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণ, অতঃপর...

আমরা কখনো বলিনি আগে নির্বাচন পরে সংস্কার চাই : মির্জা ফখরুল

পাইরেসি রুখতে শাকিবের বার্তা

বিএনপি নেতাকে কোপালেন যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতকর্মীরা

সীমান্তে ভারত-পাকিস্তান সেনাদের গোলাগুলি

তমার জন্য রাফী লাকি : নিশো 

চিপস কিনতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার ৬ বছরের শিশু

ঢাকাসহ পাঁচ বিভাগে বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস 

পরকীয়ার অভিযোগে খুঁটিতে বেঁধে প্রবাসীর স্ত্রীসহ যুবককে নির্যাতন

সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর জঙ্গিবাদের উত্থান হয়নি : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

১০

সম্প্রীতির অনন্য নজির, ঈদে এবার হিন্দুদের শরবত খাওয়াল মুসলিমরা

১১

দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করলে সরকার হার্ডলাইনে যাবে : উপদেষ্টা মাহফুজ

১২

লি‌বিয়ায় অপহৃত ২৩ বাংলাদেশি উদ্ধার

১৩

সন্ধ্যা থেকে ১২ ঘণ্টা গ্যাসের স্বল্পচাপ থাকবে যেসব এলাকায়

১৪

মেসিবিহীন আর্জেন্টিনার ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে অভিনব কীর্তি

১৫

চট্টগ্রামে বাস-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ১০

১৬

আবারও বিশ্বকাপ ট্রফির সঙ্গে মেসি

১৭

দুদিনে নিহত ১৩, চট্টগ্রামের জাঙ্গালিয়া যেভাবে মরণফাঁদ হয়ে উঠলো

১৮

অনেক ভুল করেও রিয়াল ফাইনালে ওঠায় আনচেলত্তির স্বস্তি

১৯

মাকে নিয়ে পার্কে ঘুরলেন তারেক রহমান

২০
X