যেই বিসিএস পরীক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি হয়ে বিভাগের লেখাপড়াকে বাদ দিয়ে বিসিএস পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সত্যিকারের লেখাপড়াকে প্রায় ধ্বংস করে ফেলেছে, সেই বিসিএস পরীক্ষার এখন যেই লোমহর্ষক দুর্নীতির কাহিনি শুনে মনে হচ্ছে ওদের অনেকের তো আমও গেল ছালাও গেল। কী ভুলের মধ্যে ছিল আমাদের ছাত্রছাত্রীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে পড়তে যাওয়ার জন্য ভোর সকালে লাইন দিতে দেখতাম। পুরো লাইব্রেরি থাকতো বিসিএস চাকরিপ্রত্যাশীদের দখলে। সেখানে নিয়মিত শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরিতে জায়গা পেত না। আর এখন পিএসসির অধীনে নানা চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের লোমহর্ষক কাহিনি শুনছি। সৎ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কী পরিমাণ প্রতারণা করা হয়েছে ভাবুন তো।
কোনো একটি দুইটি পরীক্ষা না। গত এক বছর ২ বছরের ঘটনা না। ৩৩তম বিসিএস থেকে ৪৪তম বিসিএস পরীক্ষা ধরে এই প্রশ্নপত্র ফাঁস ঘটে চলেছে। ভাবতে পারেন কত শত কর্মকর্তা প্রশ্ন ফাঁস দিয়ে চাকরি পেয়েছে? এরা তো চাকরি পাওয়ার পরদিন থেকেই লেগে যাবে প্রথমে প্রশ্ন কেনার টাকা ওঠাতে ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে। আর একবার শুরু করলে এর মাত্রা কেবল বাড়বেই। দেশে যে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে তার পেছনে এটিও একটি বড় কারণ।
তাহলে এ থেকে মুক্তির উপায় কী? কোনো সহজ সরল উপায় নাই। কঠোর সব পদক্ষেপ ছাড়া এ থেকে উত্তরণের কোনো পথ খোলা নেই। এই ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদাহরণকে কাজে লাগানো যেতে পারে। সাংবাদিক গোলাম মর্তুজা তার এক পোস্টে এটি তুলে ধরেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন ২০১৮ সালের দিকে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনার অভিযোগের সত্যতা সামনে আসে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তখন খুব কঠোর একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তারা এটা নিশ্চিত করেছিল— যে বা যারা এই প্রক্রিয়ায় ভর্তি হয়েছিল সেসব শিক্ষার্থীকে চিহ্নিত করে তাৎক্ষণিক ৮৭ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তাদের অনেকে ১ম, ২য়, ৩য়, এমনকি ৪র্থ বর্ষে এসেও বহিষ্কৃত হয়েছিল। এর মধ্য দিয়ে জনসাধারণের কাছে যে বার্তাটা গেছে তা হলো, ফাঁস হওয়া প্রশ্নে ঢাবিতে ভর্তি হতে পারলেও একদিন না একদিন সেটা প্রকাশ পাবে এবং সেদিন বহিষ্কৃত হতেই হবে।
ঠিক একইভাবে পিএসসির ফাঁসকৃত প্রশ্ন পেয়ে যারা যারা চাকরি পেয়েছে তাদেরকে তো চিহ্নিত করে তাদেরকে শুধু চাকরিচ্যুত না বরং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। একইসঙ্গে প্রশ্ন ফাঁসকারীদের তালিকা করে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত কর্মচারী ও অফিসারকে চিহ্নিত করে তাদেরকে চাকরিচ্যুত শুধু না রাষ্ট্রীয় আইনে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এই সিদ্ধান্তের কোনো বিকল্প নাই। পিএসসি চেয়ারম্যান, ও সদস্যসহ সকলকেই এই বিচারের আওতায় আনতে হবে। মগের মুল্লুক পেয়ে গেছিল। প্রশ্নফাঁসের পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেয়ে ঘুষ-দুর্নীতি আর রাষ্ট্রীয় নানা সুবিধা নিয়ে দেশটাকে হায়েনার মতো খামচে ধরেছিল।
পুরো পিএসসিকে এখন নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে। ধরে নেওয়া যায় এখানকার সবাই হয় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত ছিল না হয় এদের সহযোগী ছিল কিংবা এদের অন্যায় কাজ দেখে বা জেনেও চুপ ছিল। (অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুনের ফেসবুক পোস্ট থেকে নেওয়া)
ড. কামরুল হাসান মামুন : অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মন্তব্য করুন