লুক ম্যাকগি
প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:২৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
সিএনএন থেকে অনূদিত

নির্বাচনে জয়ী ব্রিটেনের কিয়ার স্টার্মারের সামনে এবার আসল পরীক্ষা

ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। ছবি : সংগৃহীত
ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। ছবি : সংগৃহীত

বৃহস্পতিবার ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে কিয়ার স্টারমারের ঐতিহাসিক বিজয় তাকে এমন এক স্তরের ক্ষমতা প্রদান করেছে, যা মাত্র পাঁচ বছর আগেও একজন লেবার নেতার পক্ষে অকল্পনীয় ছিল। ১৭০টিরও বেশি সংসদীয় আসনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করা দলটিকে পূর্বসূরি জেরেমি করবিন মাত্র সাড়ে চার বছর নেতৃত্ব দেওয়ার সময় তিনি দলটিকে একটি প্রজন্মের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ পরাজয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন।

তবে, স্টার্মার তার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা দিয়ে নয়, ভোটাররা তার পরিবর্তনের অঙ্গীকারে আস্বস্ত হয়েই তাকে নির্বাচিত করেছেন। এটা কোনো গোপন বিষয় নয়, বিপুল সংখ্যক ভোটার ব্যক্তি স্টারমারকে ভোট দেননি, বরং তারা গত ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা কনজারভেটিভ পার্টির কবল থেকে মুক্তি পেতে এবং বিশৃঙ্খল দিনগুলোর অবসান ঘটিয়ে দেশে যাতে শান্তি ফিরিয়ে আনা যায়, সে লক্ষ্যেই তারা তাকে ভোট দিয়েছেন। দেশটিতে পরিবর্তনের জন্য জনগণ যে ভোট দিয়েছে, তাকে নানা দিক থেকে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। কারণ এই মুহূর্তে যুক্তরাজ্য অনেক ভুল সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যেমন, যুক্তরাজ্যে কয়েক মিলিয়ন চিকিৎসক নিয়োগের জন্য অপেক্ষমাণ। জীবনযাত্রার ব্যয়-সংকটে ইউরোপ যখন জর্জরিত, তখন ব্রিটেনে অনেককেই ঘর গরম করবে নাকি খাবে সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে দোটানায় পড়তে হয়েছে। এ ছাড়া অভিবাসন সংকট, বিশেষ করে অনিয়মিত অভিবাসী ডানপন্থি ভোটারদের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেয়।

আরও অনেক উদাহরণ রয়েছে কিন্তু একটি বিষয় নিয়ে অনেকের মধ্যেই যে ধারণাটা পরিষ্কার তা হলো- কেবল দেশ হিসাবে যুক্তরাজ্য ভালোভাবে কাজ করে না। যদি ২০১৬ সালের ব্রেক্সিট নিয়ে অনুষ্ঠিত ভোটের ব্যাপারে কিছু বলার থাকে, সেটি হলো ব্রিটিশদের বড় একটি অংশ দেশটির সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর বিরক্ত ছিল। অন্য কিছু না হলেও, স্টারমারকে অন্তত ব্রিটেনের জনগণকে তার শাসনামলে আরও ভালো জীবনযাপনের নিশ্চয়তা দিতে হবে। তবে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও তাকে বেশকিছু বিষয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।

এটা কোনো গোপন বিষয় নয় যে, সরকারের কোষাগারে খরচ করার মতো বিপুল অর্থ নেই। অন্যদিকে, তিনি কর বাড়ানোর ব্যাপারে ঢিলেঢালা প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। তার নির্বাচনী প্রচারের একটি বড় অংশ ছিল- জনসাধারণকে এই বলে বোঝানো যে, তাদের অর্থের মাধ্যমে লেবার পার্টিকে বিশ্বাস করা যেতে পারে। জনগণের সীমিত অর্থ এবং আয়- ব্যয়ের ভারসাম্যের সংমিশ্রণ বজায় রাখাসহ স্টারমারের জন্য আরো কয়েকটি মূল চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তার নিজের দলের মধ্যেই কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে, বিশেষ করে যারা বিশ্বাস করে যে তার বর্ণবাদী হওয়া উচিত। অবশ্যই, লেবার সদস্য ও কর্মীরা দীর্ঘ ১৪ বছর পর কনজারভেটিভ পার্টিকে ক্ষমতার বাইরে দেখতে পেয়ে খুশি। তবে কেউ কেউ, বিশেষ করে দলের বাম ঘরানার সদস্যরা চান না যে, তুমুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা যেন মধ্যপন্থার নীতিকে নষ্ট করে না দেয় এবং এর ফলে পাঁচ বছর পর যাতে আবারও ডানপন্থিরা ক্ষমতায় ফিরে আসতে না পারে।

তাদের এই উদ্বেগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন নাও হতে পারে। এবারের নির্বাচনের গল্পটি স্টারমারের ভূমিধস বিজয় হলেও, মূলত কনজারভেটিভ পার্টির বিরোধীদের ভোট কয়েক ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো, কঠোর-ডানপন্থি রিফর্ম ইউকে পার্টি নেতা এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের বন্ধু নাইজেল ফারাজের নেতৃত্বে ১৪ শতাংশ ভোট পাওয়া। রিফর্ম পার্টি সরকারের কর্মকাণ্ডের ওপর ব্যাপক ভয়ঙ্কর আঘাত হানার মাধ্যমে কনজারভেটিভ পার্টির কাছ থেকে অনেক ভোটই ছিনিয়ে নিয়েছে। এটা খুবই সম্ভব যে, স্টারমার এখন ক্ষমতায় থাকায় ফারাজ এবং তার অনুসারীরা তাদের সহিংস রাজনীতির মনোযোগ লেবার পার্টির দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারে। স্টারমার যদি তার মধ্যপন্থি নীতির ব্যাপারে অনঢ় থাকেন, তাহলে এটা দেখতে পাওয়া খুব কঠিন হবে না যে, কনজারভেটিভ পার্টির মতো রিফর্ম পার্টিও লেবার পার্টির সরকারকে নানাভাবে তকমা দেওয়া শুরু করবে। এক্ষেত্রে তারা ব্রিটেনের জনগণের সামনে কিছু জনপ্রিয় বক্তব্য উপস্থাপন করবেন, যা তাদের মাঝে পরিষ্কার আবেদন তৈরি করবে।

অন্যদিকে, সংখ্যাগরিষ্ঠতা স্টারমারকে ডাউনিং স্ট্রিটে পৌঁছে দিয়েছে এবং তার বার্তার ওপর একারণেই জনগণ আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছে যে, তিনি স্থিতিশীল এবং দায়িত্বশীল হবেন। অর্থপূর্ণ পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে কেবল প্রসারিত চিন্তার দ্বারা দৃঢ় অবস্থানে থাকা সহজ কাজ নয়। দায়িত্ব নেওয়ার পর হয়তো স্টার্মারকে শিগগিরই কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যা তাকে তার অঙ্গীকার থেকে বিচ্যুত করতে পারে।

অভিবাসন প্রত্যাশিদের রুয়ান্ডায় পাঠাতে গত এপ্রিলে কনজারভেটিভ পার্লামেন্ট বিতর্কিত একটি পরিকল্পনার অনুমোদন করে এবং রুয়ান্ডাকে একটি নিরাপদ তৃতীয় দেশ হিসেবে ঘোষণা করে। কর্তৃপক্ষ মে মাস থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আটক করতে শুরু করে। এর আগে যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টকে পাশ কাটিয়ে এ সংক্রান্ত বিলটি পার্লামেন্টে তোলা হয়৷ সুপ্রিম কোর্ট সরকারের ওই সিদ্ধান্তকে মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে বেআইনি ঘোষণা করে।

ক্ষমতা গ্রহণের পরই স্টারমার অভিবাসন প্রত্যাশিদেরকে রুয়ান্ডায় নির্বাসনের কনজারভেটিভ পার্টির সিদ্ধান্ত বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। অধিকার সংস্থাগুলো তার এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। শনিবার প্রথম সংবাদ সম্মেলনে স্টার্মার বলেন, ‘রুয়ান্ডা স্কিমটি শুরুর আগেই সেটি মৃত এবং সমাধিস্থ হয়েছে। এটি কখনোই প্রতিবন্ধক ছিল না।’

তবে, এটা স্বাভাবিক এবং বেশিরভাগ সরকারকেই ক্ষমতায় থাকাকালীন কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দিতে হয়। কিন্তু এতে তার নিজের ঘাঁটি কিছুটা নড়বড়ে হয়ে পড়ে। সৌভাগ্যবশত, স্টারমারের জন্য তার ব্যয় করার মতো প্রচুর রাজনৈতিক মূলধন রয়েছে। তবে, তাকে এখন যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তা হলো- তিনি কার পেছনে সেই মূলধন ব্যয় করবেন।

মূল : লুক ম্যাকগি; ভাষান্তর : মোহসিন কবির

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কুমির ভেবে ঘড়িয়াল বেঁধে রাখলেন স্থানীয়রা

ইতিহাসের এই দিনে আলোচিত যত ঘটনা

টাঙ্গাইলে কুকুরের কামড়ে শিশুসহ আহত ২১

রবিবার রাজধানীর যেসব এলাকায় যাবেন না

বন্যা মোকাবিলা ও পুনর্বাসনে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের বৈঠক

খুবিতে তৃতীয় নৈয়ায়িক ন্যাশনাল্সে চ্যাম্পিয়ন চবি

গণহত্যায় জড়িতদের বিচার দাবি সমমনা জোটের

সিলেট কারাগারেই চিকিৎসা চলছে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নানের

৬ কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ : মাহফুজ

রায় দিয়ে ‘বাবার ট্রাস্টে’ টাকা নেন বিচারপতি

১০

‘সাংবাদিকরা সমাজে মেডিয়েটরের ভূমিকা পালন করে থাকেন’

১১

দুর্গাপূজায় সনাতনীদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে বিএনপি : মাহবুবের শামীম

১২

নাসা স্পেস অ্যাপস প্রতিযোগিতায় ঢাকা বিভাগে চ্যাম্পিয়ন জবি

১৩

ষড়যন্ত্র বানচালে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে : প্রিন্স

১৪

কার হাতে কত সোনার মজুত?

১৫

পিএসসির চাকরির পরীক্ষা নিয়ে সমন্বয়ক সারজিসের স্ট্যাটাস

১৬

যে কোনো সময় ইরানে হামলা চালাবে ইসরায়েল

১৭

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ঢাকার শাখা ব্যবস্থাপক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

১৮

লন্ডন থেকে দেশে ফিরছেন টুকু

১৯

কলেজ অধ্যক্ষকে বাঁচাতে ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি

২০
X