সৈয়দ সাফিউল হাসান চিশতী
প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২৪, ১১:০৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর

২০১৬ সালে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ছবি : সংগৃহীত
২০১৬ সালে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ছবি : সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৮ জুলাই চীন সফরে যাচ্ছেন। টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় আসার পর এ মেয়াদে এটি তার প্রথম চীন সফর। তিন দিনব্যাপী এ সফরটি নানা কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। ভারত সফরের পর পরই চীন সফরটি আন্তর্জাতিক মহলে গুরুত্ব পাচ্ছে। চীনও প্রধানমন্ত্রীর এ সফরটিকে খুব গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে।

গেল জানুয়ারিতে চীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে চীন সফরের আহ্বান জানিয়েছিল। কয়েকদিন আগে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেছেন। সফরে তিনি শেখ হাসিনার সফরের খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

সফরকালের চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। চীনের প্রধানমন্ত্রী লিকিয়াং তাকে স্বাগত জানিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। দুই সরকার প্রধান সহযোগিতার নথিতে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন। দুই দেশের বন্ধুত্বকে কীভাবে আরও গভীর করা যায়, পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে কীভাবে আরও সম্প্রসারিত করা যায়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ইস্যুতে কীভাবে একসঙ্গে কাজ করা যায় এ বিষয়ে তারা মতবিনিময় করবেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সেদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন দুদেশের পারস্পরিক সম্পর্ক সম্মান ও সমতার। নিজেদের স্বার্থ সমুন্নত রেখে বিগত ৪৯ বছর ধরে দুটি দেশ একে অপরকে সহযোগিতা করছে। চীনের ৩টি প্রধান বৈশ্বিক উদ্যেগের বাস্তবায়নে এ সফরটি ভূমিকা রাখবে। চীন বাংলাদেশ সম্পর্ক একটি নতুন উচ্চতায় যাবে। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিসিয়েটিভ এর আওতায় বাংলাদেশে আরও কয়েকটি মেগা প্রজেক্টে চীন বিনিয়োগ করবে এবং বাস্তবায়ন করবে। ইতোমধ্যে চীনের গণমাধ্যমগুলো গুরুত্বের সঙ্গে খবর প্রচার করছে এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও এ বিষয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ এর জুন মাসে চীন সফর করেছিলেন। পরে চীনের রাষ্ট্রপতি ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সফর করেন। শি-এর সেই সফরে ২৪ টি প্রকল্পের বিপরীতে ২৪ বিলিয়ন ডলার ক্রেডিট লাইনের আওতায় অর্থনৈতিক সুবিধা প্রদানের জন্য চীন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিল। গত বছর দুই নেতা ব্রিকস সম্মেলনের সময় সাইড লাইনে মুখোমুখি আলোচনায় বসেন।

ইতোমধ্যে আমরা দেখছি বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। চীন বাংলাদেশের ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিচ্ছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে চীন তাদের অংশগ্রহণ বাড়িয়েছে। এ সম্পকর্কে কেন্দ্র করে চীন বলছে তারা কৌশলগত সহযোগিতার অংশীদারত্বকে ব্যাপকতর কৌশলগত সহযোগিতার অংশীদারত্বের দিকে নিয়ে যেতে চায়।

তবে সম্পর্কের মাত্রা এগিয়ে যেতে হবে বাস্তবতার নিরিখে। দুদেশের সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে নিরাপত্তাও অর্থনীতিকে দেখানো হয় যাকে বিশ্লেষকরা টুইন পিলার বলছেন। অর্থনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বাজেট ঘাটতির বিপরীতে বাংলাদেশ ঋণ চাইবে। অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে পূর্বের মতোই চীনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে। রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত বা শূন্য শুল্কের ক্ষেত্রে তা শতভাগ উন্নীত করা, রপ্তানি পণ্যের সংখ্যা বৃদ্ধি, বিশেষ করে গার্মেন্ট পণ্যকে প্রাধান্য দেওয়া, চীনের মার্কেটে বাংলাদেশের শেয়ার বৃদ্ধি বর্তমানে যা মাত্র ০.০৫ শতাংশ। চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রতি বছরে ২৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা, ঋণের সুদের হার হ্রাস করা, শিক্ষাবৃত্তি বৃদ্ধি করা, ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে প্রক্রিয়া সহজিকরণ, ঋণ ডলারে না নিয়ে চীনা ইউয়ানে নেওয়া এ বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে বলে আশা করা যায়।

কনস্ট্রাকশন সুপার পাওয়ার খ্যাত চীনের কাছে অবশ্যই আরো কয়েকটি ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নিশ্চয়ই অর্থায়ন চাইবে। পদ্মা সেতুর রেল সংযোগের সাথে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর এবং কুয়াকাটা পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ আরেকটি মেট্রোরেল প্রকল্পে চীনের কাছে অর্থায়ন চাওয়া হবে বলে জানা গেছে। তিস্তার ক্ষেত্রে আমাদের চাহিদার বিপরীতে চীনের কাছে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আহবান করা যেতে পারে। অথবা তিস্তা সমস্যার সমাধানে প্রকল্প বাস্তবায়নে ভারতের সাথে যৌথ বিনিয়োগ প্রস্তাব আহ্বান করা যেতে পারে এবং সেটা অবশ্যই হতে হবে আমাদের চাহিদার বিপরীতে।

সামরিক ক্ষেত্রে চীনের অর্থায়ন হ্রাস পেলে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় তবে অবশ্যই বাণিজ্যকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি, কৃষি যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রেও চীনকে আমরা সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিতে পারি। পরিবেশসংক্রান্ত ইস্যুগুলোতে দুদেশ কিভাবে একসঙ্গে কাজ করতে পারবে এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। ব্রিকস এর পরবর্তী সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তিতে চীনের একনিষ্ঠ সমর্থন অথবা প্রকল্প ভিত্তিক ক্ষেত্রগুলোতে ব্রিকসভুক্ত দেশের সাথে কাজ করার ক্ষেত্রে চীনের সমর্থন বা প্রস্তাব আদায়, বেসিক গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশের পরিবেশগত ইস্যু নিয়ে আলোচনা সুযোগ, জলবায়ু পরিবর্তন ফান্ডে চীনের অনুদান এবং ক্ষেত্র বিশেষে সুদহীন অর্থায়ন নিয়ে আলোচনা সময়ের দাবি। বড় ধরনের সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পে বাংলাদেশ চীনের কাছে অর্থায়ন চাইতে পারে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের চীনকে সরাসরি মধ্যস্থতার প্রস্তাব ও বাংলাদেশ দিয়ে রাখতে পারে।

আগামী বছর চীন বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তি হতে যাচ্ছে। এ পর্যায়ে চীন বাংলাদেশের সম্পর্কের সহযোগিতার ক্ষেত্রে আরো সম্প্রসারিত হোক এটাই প্রত্যাশা।

লেখক : সৈয়দ সাফিউল হাসান চিশতী, সাবেক ছাত্রনেতা, পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক আমরা ক’জন মুজিব সেনা, আহ্বায়ক, চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ।

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বন্যার পানিতে খেলতে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ, ২ দিনেও সন্ধান মেলেনি যুবকের

৩ দিন পর করতোয়ায় ভেসে উঠল কলেজছাত্রের মরদেহ

পাচারের কথা বলে ৩ নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ

গুনে গুনে ঘুষ নেওয়া সেই মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে মামলা

ইসরায়েলকে যেভাবে প্রাণঘাতী যুদ্ধে প্রলুব্ধ করেছে হামাস

কোপায় ব্যর্থতার পরও নিরাপদ ব্রাজিল কোচ

রংপুরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

মিরসরাইয়ে অবৈধ বালু উত্তোলনে জরিমানা

কোটার বিরুদ্ধে এবার মাঠে নামছে বুয়েট শিক্ষার্থীরা

১০

দাফনের ৮ মাস পর কবর থেকে বৃদ্ধার লাশ উত্তোলন

১১

খুলনায় দুদি‌নের ব‌্যবধা‌নে যুবলীগের আরেক নেতা খুন

১২

ভারি বর্ষণ হতে পারে যেসব বিভাগে

১৩

সাংবাদিকের ওপর আ.লীগ নেতার আতর্কিত হামলা

১৪

কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ

১৫

সিলেটে বন্যার মধ্যেই বৈরী পরিস্থিতিতে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু মঙ্গলবার

১৬

ডাকাতি হলেও মোবাইল হারানোর জিডি নিল পুলিশ

১৭

২১ কোটি ৬০ লাখ টাকায় বিক্রি নেপোলিয়নের পিস্তল

১৮

কারবালায় সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্বে ইমাম হোসাইনের (রা.) নেতৃত্বে সত্যের বিজয় ঘটেছে

১৯

বিএনপির হাইকমান্ডের সঙ্গে মিডিয়া সেলের মতবিনিময়

২০
X