শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১
নোয়া বার্লাটস্কি
প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২৪, ০৬:৪৩ পিএম
আপডেট : ০২ জুলাই ২০২৪, ১১:২০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
সিএনএন এর নিবন্ধ

কর্মস্থলের পরিবেশ বিষাক্ত হওয়া ও ‘কাইন্ডস অব কাইন্ডনেস’

ছবি : প্রতীকী
ছবি : প্রতীকী

করপোরেট বস নন এমন অনেকেই একমত, ম্যানেজার এবং করপোরেশন কখনো কখনো বেশি অর্থ উপার্জনের জন্য কর্মচারীদের সঙ্গে খুবই বাজে আচরণ করেন। যদিও ইয়োর্গোস ল্যানথিমোস তার নতুন ফিল্ম ‘কাইন্ডস অব কাইন্ডনেস’- এ ব্যাপারে আরও একধাপ এগিয়ে গিয়েছেন। মুভিটিতে কর্মক্ষেত্রের গতিশীলতার পেছনে তেমনই একটি গোষ্ঠীর প্রতিফলন ঘটেছে। যেখানে বস ও শ্রমিকদের মধ্যকার সম্পর্কটা সাইকোসেক্সুয়াল (যৌন মানসিকতা) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ল্যানথিমোসের মতে, একজন কর্মচারী হতে হলে তাকেও সেই গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হতে হয়।

তিনটি শর্ট ফিল্মের একটি সংকলন ‘কাইন্ডস অব কাইন্ডনেস’ যেখানে বিভিন্ন পয়েন্টকে উপবৃত্তাকারে তৈরি করে চরিত্রের (এমা স্টোন, জেসি প্লেমন্স, উইলেম ড্যাফো, মার্গারেট কোয়ালি, হং চাউ, জো অ্যালউইন, মামউদু এথি, হান্টার শ্যাফার) দ্বারা সন্নিবেশিত করা হয়েছে। তৃতীয় চলচ্চিত্রটি স্পষ্টভাবে একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী সম্পর্কে, যার সদস্যরা পবিত্র পানি পান, মাছ না খাওয়া এবং শুধু ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গেই যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হতে পারে। দ্বিতীয় চলচ্চিত্রটি একটি অপমানজনক বৈবাহিক সম্পর্ক নিয়ে। যেখানে স্বামী তার স্ত্রীর কাছে আরও বেশি আত্মত্যাগ ও অঙ্গহানির মতো চরম কষ্টদায়ক কর্মকাণ্ডের দাবি করে।

প্রথম শর্ট ফিল্মটি জব সেক্টর নিয়ে। রবার্ট (প্লেমনস) রেমন্ড (ড্যাফো)-এর জন্য কোনো ধরনের পোস্ট-পদবি ছাড়াই একটি অনির্ধারিত করপোরেট চাকরি করেন। রেমন্ড যা বলে তার সব কিছু করাই তার দায়িত্ব। রেমন্ডের পছন্দের পোশাক পরা, রেমন্ড তাকে যে গাড়ি দেয় তা চালানো, রেমন্ড তার জন্য যাকে বেছে নেয় তার সঙ্গে ডেটিং করা, সারাহ (চাউ)-এর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করা, এমনকি রেমন্ডের কথা অনুযায়ী তাকে, সম্ভাব্য মারাত্মক গাড়ি দুর্ঘটনায়ও পড়তে হয়। কিন্তু শেষ দিকে রবার্ট রেমন্ডের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে সে তাকে বরখাস্ত করে। রেমন্ডের দেওয়া অর্থ, উপহার এবং তার আদেশ-নির্দেশ রবার্টের জীবনকে একত্রে আটকে ফেলে এবং এক সময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

চলচ্চিত্রটা ইচ্ছে করেই হয়তো কিছুটা উদ্ভটভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। কারণ, সত্যিকার অর্থে অফিসের বসরা কখনোই প্রতিটা ক্ষেত্রে তার কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করেন না এবং তারা এটাও কখনো চান না, তার কর্মীরা নিজেদের বিপদের মধ্যে ফেলুক। তারা মৌখিক ঘোষণা দিয়ে কিংবা প্রকাশ্যে ভালোবাসার প্রদর্শনীও করেন না। অতএব এটা পরিষ্কার, আপনার প্রশ্নের উত্তরটাও যতটা হওয়া উচিত তারচেয়ে অনেক বেশি অস্পষ্টই পাবেন। উদাহরণস্বরূপ, রবার্টের ওজন নিয়ে রেমন্ড কিছুটা ঘোরের আচ্ছন্ন (তিনি মনে করেন পাতলা পুরুষরা হাস্যকর)। অনেক কর্মস্থলে কর্মচারীদের খাদ্যাভ্যাসের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপের বিষয়টিও প্রতিফলিত হয়, যা আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করে। যেমন স্বাস্থ্য বিমার স্বল্প প্রিমিয়াম — এক্ষেত্রে যদি কর্মীরা ওজন কমান বা বেশি ব্যায়াম করেন। যদিও এসব কর্মসূচিকে সিনেমাটিতে অনেক বড় করে দেখানো হয়েছে।

একইভাবে, রেমন্ড রবার্টকে সন্তান ধারণ করা থেকে বিরত থাকা, এমনকি তার নিজের স্ত্রীর সঙ্গে প্রতারণা করতে সন্তান ধারণে বারণ করা এবং তার স্ত্রীকে চিকিৎসা দেওয়ার কথাও বলেন। এখানে দীর্ঘ ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে বস- গর্ভবতী নারী কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য এবং চাকরিচ্যুত করায় অংশ নেন। অবশ্যই, কর্মকর্তারা প্রায়ই কর্মচারীদের তাদের স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষার ঝুঁকি নিতে বলেন। উদাহরণস্বরূপ, করোনা মহামারির সময় তাদের অফিসে গিয়ে স্ব-শরীরে কাজ করতে বাধ্য করেন।

ম্যানেজার এবং নিয়োগকর্তারা কর্মচারীদের যৌন জীবনে কুৎসিত উপায়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন এবং করেনও বটে। খামারের কাজ এবং গৃহকাজে নিয়োজিত শ্রমিক থেকে শুরু করে হলিউড পর্যন্ত পেশার বিশাল পরিসরে কর্মক্ষেত্রে হয়রানি একটি বিস্তৃত সমস্যা। প্রযোজক হার্ভে ওয়েইনস্টেইনের মতো নামিদামি ব্যক্তিদের যৌন লালসার কারণে হলিউডে যৌন হয়রানির ব্যাপক অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে যখন হলিউড অভিনেতারা কথা বলা শুরু করেন, তখন কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি সম্পর্কিত #MeToo একটি আন্দোলন হিসেবে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করে।

‘কাইন্ডস অব কাইন্ডনেস’ সিনেমায় রেমন্ড নানা উপায়ে রবার্টের জীবনে একজন পরিচালকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তাকে কী করতে হবে, কী বলতে হবে, কী পরতে হবে, কী গাড়ি চালাতে হবে সবই তিনি বলে দেন। এমনকি হলিউডের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি, যারা তাদের অধীনস্তদের ওপর ছড়ি ঘোরান এবং তাদের দ্বারা বিকৃত যৌন চাহিদা পূরণ করেন। তাদের মতো রেমন্ডও রবার্টসের সঙ্গে বিকৃত যৌনচারের দাবি করেন।

আমরা জানি না, রেমন্ডের ব্যবসা কী এবং রবার্ট কীভাবে তাকে অর্থ উপার্জনে সহায়তা করেন তাও অস্পষ্ট। কিন্তু এটা পরিষ্কার, এখানে মুনাফা মুখ্য বিষয় নয়। বরং তার পরিবর্তে, রেমন্ডের মোটিভেশন দেখে মনে হয়, তিনি কেবল রবার্টকে (এবং তার অন্যান্য অনুগতদের) তার নির্দেশ পালন করাতেই পছন্দ করেন।

আবারও বলতে হয়, গতিশীলতার একটি সত্য বলয় রয়েছে। কর্মস্থলে না গিয়ে বাসা থেকে কাজ করানোর ফলে অফিস ভাড়া এবং অফিস স্থানান্তর খরচের সাশ্রয় হয়। এ ছাড়া যেসব কর্মীরা বাসা থেকে কাজ করেন তারা কিছুটা কম বেতনেও সন্তুষ্ট থাকেন। কিন্তু জেপি মরগ্যান (JPMorgan) এর জেমি ডিমন এবং টেসলার এলন মাস্কের মতো মালিকরা বলছেন, তারা কর্মচারীদের অফিসে বসে কাজ করাকেই পছন্দ করেন। কারণ, কাজের গতি বৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মীরা সক্রিয়তাও বৃদ্ধি পায়। অনেক মালিক বা কর্মকর্তা আছেন, যারা কর্মীদের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ করতে চান, যা তাদের আরও ক্ষমতাবান করে তোলে। রেমন্ডদের মতো বিশ্বে কঠিন প্রকৃতির কিছু মানুষের আমাদের বাকিদের নিয়ন্ত্রণ করার যে ফ্যান্টাসি রয়েছে তা বিরক্তিকর, তবে তা অবাক করা ব্যাপার নয়।

যদিও রেমন্ড এবং রবার্টের সম্পর্কের ব্যাপারে সত্যিকার বিরক্তিকর বিষয় হলো, রবার্ট রেমন্ডের মতোই এতে বিনিয়োগ করেছেন। যখন রেমন্ড তাকে কী করতে হবে তা বলছে না, রবার্ট তখন অথৈ সমুদ্রে পড়ে যায়। এমনকি বারে কোনো ধরনের মদ অর্ডার করতে হবে তাও সে বুঝতে পারে না। রবার্ট শুধু রেমন্ডের হুকুম পালনই নয়, সে তার ভালোবাসাও কামনা করেন। রবার্টকে বরখাস্ত করার আগ মুহূর্তেও রেমন্ড রবার্টের ঠোঁটে চুমু খায়। এরপর রবার্ট প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর, তিনি রেমন্ডকে চুম্বনের চেষ্টা করলেও তাকে ফিরিয়ে দেন।

অনেক মানুষ, এমনকি বেশিরভাগই মানুষই তাদের কাজ নিয়ে খুশি নন। ২০২২ সালে পরিচালিত এক জরিপ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের এক তৃতীয়াংশ কর্মীর মতে, তারা অধীনতা অনুভব করেন। তাদের বেশিরভাগ মানুষ ব্যক্তিগত নির্দেশনার জন্য তাদের বসের জন্য অপেক্ষা করেন না বা এ ব্যাপারে অনেকেরই আগ্রহ কম। তবে, তা সত্ত্বেও মালিক এবং সফল ব্যবসায়ী গুরুদের একটা ধর্ম আছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রহস্যের শুরুটা হয়েছিল, তিনি নিজেই নিজেকে গণমাধ্যম এবং টেলিভিশন রিয়েলিটি শোতে একজন সফল ব্যবসায়ী হিসাবে দাবি করেন। অন্যদিকে, অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ওজনিয়াক বলেছেন, মাস্ক এবং স্টিভ জবসকে তাদের ভক্তরা ধর্মীয় নেতাদের মতো শ্রদ্ধা করেন।

সিএনএন অবলম্বনে অনূদিত। অনুবাদ: মোহসিন কবির।

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রোনালদোকে হারাতে চান এমবাপ্পে

বেলিংহ্যামের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিল রিয়াল

জাতীয় পর্যায়ে একক অভিনয়ে প্রথম হওয়ায় নিশাত তাছনিমকে সংবর্ধনা

অপরাধী থেকে ধর্মগুরু বনে যাওয়ার রোমহর্ষক কাহিনী

কোটাবিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা

ঢাকায় বাসচাপায় মোটরসাইকেল চালক নিহত

মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের দাবি

চলন্ত ট্রেন আটকে দিল আন্দোলরত শিক্ষার্থীরা

বিদেশি শিক্ষার্থীদের সুখবর দিল ডেনমার্ক

উইম্বলডনের তৃতীয় রাউন্ডে জোকোভিচ

১০

চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে / ৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ঘিরে অস্বস্তি

১১

বিশ্বরেকর্ড হয়নি, তবে ৫৯২ রান তুলে টাই করেছে গ্লামারগন

১২

মানবতাবোধ কোনো ধর্ম দেখে না : মেয়র আইভী

১৩

অধ্যক্ষের ছেলের বিয়েতে বাধ্যতামূলক ৫০০ টাকা চেয়ে নোটিশ

১৪

জাবি শিক্ষার্থীদের ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ

১৫

উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে পররাষ্ট্র সচিব

১৬

সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ বন্ধু নিহত

১৭

পবিপ্রবিতে চতুর্থ দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন

১৮

মালয়েশিয়ায় আন্তর্জাতিক খাদ্য ও পানীয় মেলায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ 

১৯

ইসরায়েলের লেবাননে হামলার ভয়ংকর পরিণতি জানাল ইরান

২০
X