মাহমুদ রেজা চৌধুরী
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৪, ০৮:২৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বাংলার মধ্যবিত্তের বিকাশে রামমোহন রায়

মাহমুদ রেজা চৌধুরী
রাজা রামমোহন রায়। ছবি : সংগৃহীত
রাজা রামমোহন রায়। ছবি : সংগৃহীত

রামমোহন রায়; তার চিন্তাও আজকে কতটা প্রাসঙ্গিক! বাঙালি মধ্যবিত্তের ইতিহাসে এই নামের পরিচয়। এখনকার জেনারেশনের অনেকেরই হয়তো এই নামের সাথে পরিচয় নাও থাকতে পারে। যারা চিন্তার চর্চা করেন, তারা হয়তো অনেকে এই নামের সাথে পরিচিত। হঠাৎ করে নামটা মনে আসার কারণ! অনেক কিছুর গাণিতক ব্যাখ্যা বা তেমন কারণ থাকে না। এটাও এক কারণ। বর্তমান সময়ে বাঙালি সমাজে মধ্যবিত্তের ভূমিকা এবং সচেতনতা দেখে, হঠাৎ রামমোহন রায়ের কথা মনে পড়লো। একটা কারণ হতে পারে।

তার সম্পর্কে আগে কিছু পড়েছি। সেই পড়ার কিছু কথা আজকে হঠাৎ অনুভূতিতে নাড়া দিল কেন! তাও জানিনা। তাই মনে হল, পাঠকের সাথে শেয়ার করি। তারাই হয়তো বলতে পারবেন, রামমোহন রায়ের যৌক্তিকতা এখনও আছে কি-না! ভারতে ১৯ শতকের নবজাগরণের জন্ম বৃত্তান্ত এবং তার পরিণত আশা একই বৃন্তে যদি ভাবতে চাই, তাহলে আমাদের চোখ চলে যায় রামমোহন রায়ের দিকেও। বাংলার মধ্যবিত্তের বিকাশে এবং জ্ঞান অর্জনের পথে রামমোহন রায়ের একটা ভূমিকা আছে।

বলা হয়, রামমোহনের জন্মের কিছুকাল আগে বাংলাদেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তার শাসন স্থাপিত করে। ১৮১৪-১৫ সালে তিনি যখন কলকাতায় স্থায়ীভাবে বাস করতে আসেন ততদিনে ওই সময়ের সারা ভারতে ব্রিটিশ আধিপত্য সুনিশ্চিত হয়ে যায়। মূলত এই ঐতিহাসিক পটভূমিকাতেই রামমোহন রায়ের জীবন এবং চিন্তাধারা নিয়ে আলোচনা আবশ্যক।

অনেক সমাজ চিন্তাবিদ মনে করেন যে, ইংরেজের সাথে বাণিজ্যিক ও প্রশাসনিক সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ার ফলে তৎকালীন বাংলাদেশে এক নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জন্ম এবং বৃদ্ধি ঘটে। রামমোহন এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু যেমন দারাকাথনাথ ঠাকুর, বা প্রসন্ন কুমার ঠাকুর, এই নতুন মধ্যবিত্তের ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্বন্ধে সচেতন ছিলেন। Bengal Herald নামে যে পত্রিকা তখন তারা প্রকাশ করতেন, অনেকের মতে, তার পাতায় এর প্রমাণ আছে। ১৮২৯ সালের সম্ভবত ১৩ জুন তারিখে একটা সম্পাদকীয়তে এই ইতিহাস সচেতনতা মনের পরিচয় পাওয়া যায়। সমাজ গবেষক, অম্লান দত্ত তাঁর এক রচনাতে এই কথা উল্লেখ করেন।

স্পেন অথবা পোল্যান্ডে যে অনুরূপ কোন শ্রেণি ওই সময়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি এবং সেই কারণে ওই সব দেশে সামাজিক মুক্তির তেমন সম্প্রসারণ সম্ভব হয়নি। এইসব কথার ইঙ্গিত পাই ওই সম্পাদকীয়তে বলে অনেক সমাজ বিশ্লেষক লেখেন।

রামমোহন স্বভাবতই এই নতুন মধ্যবিত্তের বিকাশ ও বৃদ্ধি চেয়েছিলেন, ঐতিহাসিকদের অভিমত। কিন্তু তিনি আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন যে, এই নতুন শ্রেণীর মানুষ এমন ভাবেই তার সামাজিক ভূমিকা পালন করবে যাতে এই শ্রেণীর বৃদ্ধির সাথে সাথে সারা সমাজে বিশেষত দরিদ্র কৃষকের অবস্থারও একটা উন্নতি হয়। এই প্রসঙ্গে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কথা এসে যায়। সরকার ও জমিদারদের ভিতরে এই বন্দোবস্তের ফলে নতুন মধ্যবিত্তের সুবিধা হয়।

নতুন জমিদারেরাও প্রজাদের উপর খাজনার বোঝা বাড়িয়েই চলেন। অর্থাৎ সরকার জমিদারের কাছে কতটা দাবি করতে পারবেন, সেটা স্থির হয়ে যায়, কিন্তু জমিদার তার প্রজার কাছ থেকে কতটা আদায় করতে পারবেন। তার কোন সীমা নির্ধারিত হয় না। এতে রামমোহনের আপত্তি ছিল। তিনি সরকার এবং ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কাছে এই সুপারিশ করেন যে, জমিদার এবং দরিদ্র কৃষক বা রায়তের ভিতরেও চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের অনুরূপ একটা ব্যবস্থা প্রত্যাবর্তন করা প্রয়োজন যা খাজনার বোঝা এইভাবে বাড়ানো নিষিদ্ধ করতে পারে। ক্রমাগত খাজনা বাড়িয়ে না, উৎপাদন ব্যবস্থার উন্নতি করেই নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণির সম্পদ বৃদ্ধির প্রয়াস করতে হবে।

রামমোহন ছিলেন বেন্থাম, জেমস মিলের সমসাময়িক মানুষ। এঁদের সাথে তাঁর যোগাযোগও ছিল। মতামতের আংশিক মিলও লক্ষ করা গেছে। কিন্তু ব্যক্তিগত সম্পত্তির প্রশ্নে তৎকালীন ব্রিটিশ লিবারেলদের মতামত যতটা অনমনীয় ছিল রামমোহনের তেমন ছিল না। ১৮৩০ সালে সমাজ সংস্কারক এই চিন্তা নায়ক পশ্চিমে যাত্রা করেন, এবং ১৮৩৩ সালে তার মৃত্যু অবধি পাশ্চাত্য দেশে প্রধানত ইংল্যান্ডে ছিলেন।

সেই সময়ে ওই দেশে সমাজতান্ত্রিক নেতা রবার্ট ওয়েনের সাথে রামমোহন রায়ের যোগাযোগ এবং চিন্তা বিনিময় হয়। ওয়েন খ্রিস্টান ধর্ম বিরোধী ছিলেন। সমাজতন্ত্রে তার বিশ্বাস ছিল। বেন্থাম, জেমস মিল, রামমোহন এঁদের সবার সাথে তখন ওয়েনের মতপার্থক্য দেখা যায়। অম্লান দত্ত লেখেন যে, এতে লক্ষ্যণীয় ছিল জেমস মিলের মত লিবারেলদের সাথে ওয়েনের বিরোধ ছিল সমাজতন্ত্র নিয়ে অর্থাৎ ব্যক্তিগত সম্পত্তির প্রশ্ন নিয়ে, ধর্ম নিয়ে না। আর রামমোহন আপত্তি তুলেছিলেন ওয়েনের ধর্ম বিরোধীতার বিরুদ্ধে, সমাজতন্ত্র বিষয়ে না।

উল্লেখিত ঐতিহাসিক পরিস্থিতি এবং সেই সাথে মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে তার অবস্থান সচেতন ভাবে স্বীকার করে নিয়েও রামমোহন এমন নীতির সন্ধান ও সমর্থন করেছিলেন যাতে মধ্যবিত্তের ক্রিয়া-কর্মে ও উদ্যোগে সমাজ তৎসময় উপকৃত হয়। ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার মেনে নিয়েও তিনি সেই অধিকারকে বৃহত্তর ধর্ম ও আদর্শের অধীনে রাখতে চেয়েছিলেন।

সংক্ষেপে, বাস্তব পরিস্থিতিকে মেনে তার প্রয়াস ছিল সেই পরিস্থিতিতে আবদ্ধ হয়ে না পড়া। বরং সেই পরিস্থিতিকে অতিক্রম করে যাওয়ার মতো আদর্শ সম্ভব মত সম্মুখে রেখে চলতে চেয়েছিলেন রামমোহন রায়। তাই অনেকের মতে, রামমোহনের সাথে তার ধর্মচিন্তা অবিচ্ছেদ্য।

যেই ভারতবর্ষে রামমোহন রায়ের জন্ম, সেই দেশের সাথে ইংল্যান্ডের একটা বড় পার্থক্য ছিল, ভারত বহু ধর্মের দেশ, ইংল্যান্ডে মূলত একটাই ধর্ম। ধর্মকে অবলম্বন করে কিছু গুরুতর সমস্যা রামমোহন স্বদেশে লক্ষ্য করেছিলেন। এক, বিভিন্ন ধর্ম সম্প্রদায়ের ভেতর সদভাবের অভাব। ছিল হিন্দু মুসলমানের বিরোধী সম্পর্ক। শিখ সম্প্রদায়ের সঙ্গেও মুসলমানদের সংঘাত। এই বিষয়গুলি রামমোহনের চিন্তায় প্রভাব ফেলে। এর মধ্যে তখন ব্রিটিশ ভারতে খ্রিস্টান ধর্মের চ্যালেঞ্জ এবং যুক্তিবাদী দর্শনের আহবান আসে। এই যুক্তিবাদ রামমোহনের কাছে এসে পৌঁছায় প্রথমে ইসলামী সূত্র, মুতাজিলা ঐতিহ্য থেকে এবং পরে পাশ্চাত্য দর্শনের মাধ্যমেও।

তবে রামমোহন সম্পর্কে খুব সামান্য যে পড়াশোনা তাতে মনে হয়, রামমোহনকে তার ধর্মীয় দ্বান্দ্বিকতা বা চিন্তা থেকে বোঝাও কঠিন। তবে রামমোহনের এক জাতীয় দেশপ্রেম আছে যাতে আত্মসমালোচনার অভাব। এই সীমাবদ্ধ দেশ প্রেম নিজ ধর্ম ও সংস্কৃতির কোন ত্রুটি স্বীকার করতে রাজি না। হিন্দু ধর্মের কোন দিকে কোনো নূন্যতা আছে, আমাদের সংস্কৃতি কোন অংশে দুর্বল। অনেক দেশ প্রেমিকরা প্রতিবাদ করা কর্তব্য মনে করেন। রামমোহনের ভেতর এই জাতীয় সংকীর্ণতাও ছিল না। হিন্দু ধর্ম এবং খ্রিস্ট ধর্মের তুলনামূলক বিচারে তিনি অহেতুক পক্ষপাতিত্ব থেকে মুক্ত ছিলেন। ফলে ভিন্ন সংস্কৃতি এবং ভিন্ন ধর্ম থেকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা গ্রহণ করে স্বধর্ম এবং নিজ দেশের সংস্কৃতির রূপান্তরে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করা তাঁর পক্ষে সহজ ছিল বলে ইতিহাসবিদরা মনে করেন।

রামমোহন রায় যদিও হিন্দু ধর্মের ও সমাজের ভেতর থেকেই কাজ করতে চেয়েছেন তবুও প্রথম জীবনের বৃহত্তর সমন্বয়ের আদর্শ তিনি শেষ অবধি ত্যাগ করেন নাই। হিন্দু ও মুসলমানদের ভিতরে বিরোধ তিনি অতিক্রম করতে চেষ্টা করেছেন উল্লেখযোগ্যভাবে। সেই সময়ের ইতিহাস বলে। হিন্দু সমাজের ভেতর থেকে কাজ করেও সমস্ত সম্প্রদায়িক সীমা অতিক্রম করতে তিনি আগ্রহী ছিলেন। রামমোহন বিশ্বাস করতেন যে, প্রত্যেকটা মানুষের মানব পরিচয় মূল্যবান। মানুষের সংস্কৃতিকে আরো ভালোভাবে জানা, মানবজাতির হিতসাধন করা, এটাই ছিল রামমোহন রায়ের লক্ষ্য।

অনেকের মতে, রামমোহন রায়ের নিজস্ব পথ, চেনাও কঠিন। কারণ তার ৩০ বছর বয়সের চিন্তা আর চল্লিশের ভাবনা এক ছিল না বলে অনেকেই বলেন। রামমোহন রায়ের জীবনে ধর্মচিন্তার একটা গ্রন্থ আছে। এখানে দেখা যায়, তিনি বিশ্বের প্রধান ধর্মগুলিকে যুক্তিবাদের সাহায্যে বিচার করতে চাইছেন। রামমোহন রায়ের মতে, প্রতি ধর্মে কিছু সারবস্তু থাকে, আর কিছু থাকে অসার বা অনিষ্টকর। বিভিন্ন ধর্মের ভিতর ভিন্নতা দেখা দেয় তার আচার এবং ভ্রান্ত কুসংস্কার নিয়েও। বিভিন্ন ধর্মের মিল তাদের সত্য বস্তুতে। যেখানে মিল সেখানেই তাদের সর্ব মানবীয় এবং যুক্তির গ্রাহ্যতা থাকে। এই বিষয়টাতেও অনেক ভিন্ন মত এবং চিন্তা আছে। যা অস্বীকার করা যায় না।

আঠারো ও ঊনিশ শতকে যে মানবতাবাদী এবং মানবিক সংস্কৃতিতে আগ্রহী চিন্তার আন্দোলন, পাশ্চাত্য দেশের কিছু মনীষীর ভেতর দেখা যায়; এর সাথে যুক্ত ছিলেন রামমোহন। রামমোহনের জীবনের শেষ ভাগে তাঁর সম্বন্ধে লিখতে গিয়ে একজন ফরাসি ভারতবিদ্যাবিদ সেই মানবধর্মী চিন্তার আন্দোলন সম্বন্ধে আলোকপাত করেন। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যকে মিলিয়ে রামমোহন সম্বন্ধে তাঁর অভিমতে বলেন, রামমোহনের মতোই তিন বিপুল আগ্রহ সহকারে মানব সভ্যতা সম্বন্ধে বৃহত্তর, মহত একটা দৃঢ়তায় অন্তর্দৃষ্টি লাভের জন্য ইউরোপীয় সভ্যতা এবং জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চায় ব্রতী হয়েছেন। উল্লেখিত চিন্তাবিদ বলেন, আমরা ইউরোপিয়ানরাও একইভাবে মানব জাতি সম্পর্কে বৃহত্তর এবং উচ্চতর ধারণা অর্জন করার জন্যই এশিয়ার সভ্যতা এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানসমূহের অনুশীলনে প্রবৃত্ত হয়েছি। তাঁর মতে, মনুষ্যত্বের কোন বিভাগ নেই।

সমাজ সংস্কারক হিসাবেও রামমোহন তাঁর নিজ সময়ে এবং স্বদেশে অগ্রগণ্য হলেও সেখানে তিনি একা ছিলেন না। তবে যুগ সচেতন বিশ্ব মানবতার বোদ্ধারুপে তৎকালীন ভারতে তার সাথে তুলনীয় অন্য কাউকে দেখা যায় না। দেশপ্রেম আরো অনেকের মধ্যে ছিল, কিন্তু দেশপ্রেম এবং আন্তর্জাতিকতার ভেতর অবিরত আত্মিক সম্পর্ক স্থাপনে তিনি অদ্বিতীয় ছিলেন বলেই অনেকেই মন্তব্য করেন। যুক্তিবাদী বা ধার্মিক হিসেবে উল্লেখযোগ্য নামের অভাব নাই। কিন্তু এই দুইয়ের ভেতরে সমন্বয় সাধনের প্রচেষ্টার উৎকৃষ্ট উদাহরণ, রামমোহন।

রামমোহনের জাগতিক উপলব্ধির জগতে আধ্যাত্মিকতার একটা বিশেষ স্থান ছিল। এই উপলব্ধির আলোতে তিনি যথাসাধ্য তার পরিণত ধ্যান ধারণা রচনা করেন। রামমোহনের সম্বন্ধে তাঁর সহকর্মী উইলিয়াম অ্যাডাম বলেন, Love of freedom was perhaps the strongest passion of his soul. যে মুক্তি তিনি নিজের জন্য চেয়েছিলেন সব মানুষের জন্যই আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন সেই গভীরতর সম্পূর্ণতার মুক্তি, আত্মার জ্যোতিকে শ্রদ্ধার সাথে স্বীকৃতি জানিয়ে, যুক্তিকে অগ্রাহ্য করা নয়, বরং তাকে সাবধানে সঙ্গে নিয়ে। এমন একটা বিরল সংযোগই কিন্তু ভারতীয় নবজাগরণের কেন্দ্রস্থিত আদর্শ। যদিও নবজাগরণের ধারা বারবার বিচিত্র পথে এই কেন্দ্রবিন্দু থেকেও দূরে সরে গেছে বহুবার। তবু যে কোন অদৃশ্য শক্তির আকর্ষণে সেই ধারা কিছু নতুন ভাষা ও উচ্চারণ নিয়ে সময়ের পলিমাটি বহন করে, আবারো মূল আদর্শের দিকেই ফিরে আসতে চায়। এইসব চিন্তা মধ্যবিত্তের ইতিবাচক বিকাশের সাথেও যুক্ত।

রামমোহন চেয়েছিলেন ধর্ম ও যুক্তির পরস্পর নির্ভর একটা সংযোজন। যে জন্য রবার্ট ওয়েনের ধর্মত্যাগী সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনকে তিনি সম্পূর্ণ সমর্থন করতে পারেন নাই। ব্যক্তির বৈষয়িক স্বার্থের সাথে বৃহত্তর মানব সমাজের স্বার্থের যদি দ্বন্দ্ব দেখা দেয়, তাহলে কোন যুক্তিতে ব্যক্তি তার বৈষয়িক স্বার্থ ত্যাগ করতে চাইবে? বলা হয়ে থাকে যে, সমাজে স্বার্থের হানি হলে তাতে ব্যক্তির বৈষয়িক স্বার্থ অবশেষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ব্যক্তি সমষ্টির কাছে এই যুক্তি আদরনীয়, কিন্তু ব্যক্তি বিশেষের কাছে এটা গ্রহণীয় নাও হতে পারে। খুব কম সময় দেখি, উচ্চতর কোন আদর্শের জন্য ব্যক্তি নিজের ছোট স্বার্থ ত্যাগ করে একটা গভীরতর তৃপ্তি লাভ করে বটে। কিন্তু এই ধরনের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি তেমন প্রসারিত না, আধুনিক কিন্তু অআত্মনির্ভরশীল মধ্যবিত্ত সমাজ।

উল্লেখিত কথাগুলি মনে হওয়ার কারণ, আমাদের বাংলাদেশে আমাদের স্বাধীনতার পর পর যে মধ্যবিত্ত সমাজকে দেখে আসছি। এদের মধ্যে নতুন চিন্তা ও ইতিবাচক সংস্কার। এইসবের প্রতি আমাদের স্বাধীনতা উত্তর মধ্যবিত্তের ভূমিকাটা খুবই দুর্বল। আমাদের সমাজে একজন রামমোহনের প্রয়োজন খুব বেশি বলেও মনে হচ্ছে। যদিও এর সম্ভাবনা খুবই কম। তবে স্বপ্ন দেখতে তো আপত্তি নাই।

রামমোহন রায়ের ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত পরিসরে আলোচনা অসমাপ্ত। কারণ রামমোহনের আলোচনা আরো দীর্ঘ। বেশ ইন্টারেস্টিং। কন্ট্রাডিকটেরিও। আলোচনা করতে গেলে মানবেন্দ্রনাথের চিন্তাধারা প্রসঙ্গেও কথা চলে আসে। মানবেন্দ্রনাথ রায়ের জাতীয়তাবাদ থেকে মার্কসবাদের আলোচনা। কারণ বিষয়গুলির একটার সাথে আরেকটা খুব ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত বলেও মনে হয়।

আজকের মধ্যবিত্ত সমাজে এইসব চিন্তার কোন টেবিল আলোচনা বা কোন একাডেমিক আলোচনা হয় না বললেই চলে। না হওয়ার একটা কারণ, অনেক ক্ষেত্রে আমাদের সমাজ চিন্তাবিদরাও দেশ, সমাজ ও ধর্ম নিয়ে অনেকেই অহেতুক স্পর্শকাতর মন্তব্য এবং উগ্রতা প্রকাশ করি। এটা মধ্যবিত্তদের মধ্যেই বেশি হয়। আজকে আমাদের মধ্যবিত্তদের অনেক ব্যাপারে ন্যাশনাল অধঃপতন চিত্রের সামনে দাঁড়িয়ে, এলোমেলো এইসব কথার সাথে উল্লেখিত ব্যক্তিত্বদের কথা মনে পড়ে।

মাহমুদ রেজা চৌধুরী : সমাজ ও রাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষক

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নায্য পেনাল্টি দেওয়া হয়নি ব্রাজিলকে, কনমেবলের ভুল স্বীকার

সিনিয়র ক্রিকেটারদের কারণেই পাকিস্তানে পরিবর্তন সম্ভব নয়!

কোয়ার্টার ফাইনালেই ক্রুসকে অবসরে পাঠাতে চায় স্পেন

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা মিথ্যা : বরকত উল্লাহ বুলু

মালয়েশিয়ায় প্রবাসীদের জন্য এনআইডি কার্যক্রম বিষয়ক মতবিনিময় সভা

অপুকে ছাগলের বাচ্চার সঙ্গে তুলনা করলেন বুবলী

উইম্বলডন ২০২৪ / দ্বিতীয় রাউন্ডে জোকোভিচ, ভন্দ্রোসোভার বিদায়

আওয়ামী লীগ নয়, জিয়া, খালেদা, এরশাদ দেশ বিক্রি করেছেন : প্রধানমন্ত্রী

ফল উৎসব আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ : আব্দুস সালাম 

সমুদ্রসম্পদ আহরণে সব সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে : বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী

১০

এমপি আনার হত্যা, যেভাবে পালিয়ে যান ফয়সাল

১১

নতুন ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দুই কোরিয়ার

১২

যমুনার গর্ভে বিলীন ৫ শতাধিক বাড়িঘর

১৩

প্রধানমন্ত্রীর বেইজিং সফরে উন্নয়ন ইস্যু প্রাধান্য পাবে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

১৪

মুম্বাইয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রোহিতদের সংবর্ধনা

১৫

এমপি আনার হত্যা : এবার ফয়সালের দোষ স্বীকার

১৬

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী

১৭

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করার পরিকল্পনা নেই : জনপ্রশাসনমন্ত্রী

১৮

দেশকে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দিয়েছে সরকার : নিতাই রায়

১৯

সুনীল অর্থনীতিকে মূল অর্থনীতিতে কাজে লাগাতে হবে : প্রতিমন্ত্রী

২০
X